রামায়ণ : আদিকাণ্ড – হরিদ্বার, পাতাল ও ত্রিবেণী ইত্যাদিতে গঙ্গার ভ্রমণ ও মহাদেব কর্ত্তৃক গঙ্গার বেগ ধারণ
ভগীরথ সুমেরু হইতে গঙ্গা নিয়া।
কৈলাস পর্ব্বতে গঙ্গা মিলিল আসিয়া।।
কৈলাস হইতে পড়ে পৃথিবী উপরে।
তাঁর ভরে বসুমতী টলমল করে।।
বেগবতী হয়ে গঙ্গা চলে রসাতলে।
যোড়হাতে দাণ্ডাইয়া ভগীরথ বলে।।
পাতালেতে হইল তোমার আগুসার।
হইবে কেমনে মম বংশের উদ্ধার।।
গঙ্গা বলিলেন, বাপু শুন নরপতে।
পৃথিবী আমার বেগ না পারে সহিতে।।
শিব যদি আসিয়া সহেন জলধার।
তবে পারি ক্ষিতিতে করিতে অবতার।।
গঙ্গার চরণে পুনঃ করিয়া প্রণতি।
আরবার গেল যথা দেব পশুপতি।।
এক বর্ষ করিল শিবের আরাধন।
মহেশ বলেন পুনঃ এলে কি কারণ।।
ভগীরথ বলে, গঙ্গা দিলা নারায়ণ।
পৃথিবী ধরিতে বেগ না পারে কখন।।
তুমি যদি আসি শিরে ধর জলধার।
পৃথিবীতে হয় তবে গঙ্গা-অবতার।।
গৌরীর সহিত তবে নাচে ত্রিলোচন।
তোমা হৈতে পাব আজি গঙ্গা দরশন।।
পাতিলেন মস্তক শঙ্কর সমাদরে।
পড়িলেন পতিত পাবনী শম্ভুশিরে।।
শিবের মাথার জটা বড় ভয়ঙ্কর।
বেড়ান জটার মধ্যে দ্বাদশ বৎসর।।
ভগীরথ বলেন মা একি ব্যবহার।
আমার কেমনে হবে বংশের উদ্ধার।।
গঙ্গা বলিলেন বাপু শুন ভগীরথ।
জটা হৈতে বাহির হইতে নাহি পথ।।
ভোলানাথ বলিয়া ডাকেন যোড়হাত।
ধ্যানভঙ্গ হইল, চাহেন বিশ্বনাথ।।
মহেশ চিরিয়া জটা দিলেন গঙ্গারে।
সেইখানে তীর্থ যে হইল হরিদ্বারে।।
যেবা নর স্নান দান করে হরিদ্বারে।
তার পুণ্যসীমা ব্রহ্মা বলিতে না পারে।।
এক ধারা গেল গঙ্গা পাতাল মণ্ডলে।
ভোগবতী বলি নাম হৈল রসাতলে।।
পশ্চাতে চলেন গঙ্গা ভগীরথ আগে।
মিলিলেন আসি গঙ্গা ত্রিবেণীর ভাগে।।
সরস্বতী গঙ্গা আর যমুনার পানী।
এই তিন ধারা বহে নামেতে ত্রিবণী।।
মকরে প্রয়াগে যেবা নর স্নান করে।
সর্ব্ব পাপে মুক্ত হয়ে যায় স্বর্গপুরে।।
আগে যায় ভগীরথ শঙ্খ বাজাইয়া।
বারাণসীপুরে গঙ্গা উত্তরিল গিয়া।।