Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রাতের মানুষ || Syed Mustafa Siraj

রাতের মানুষ || Syed Mustafa Siraj

রাতের মানুষ

ঝুলনপূর্ণিমার রাতে গঞ্জের মেলায় ছোটমামার সঙ্গে কলকাতায় যাত্রা দেখতে গিয়েছিলাম। সন্ধের দিকে বৃষ্টি পড়ছিল। ফেরার সময় দেখি আকাশ ফাঁকা। ঝলমলে চাঁদ কাত হয়ে বাদবাকি জ্যোত্সা ঢেলে নিজেকে খালি করে দিচ্ছে। রাস্তা শুনশান ফাঁকা। মানুষজন মেলায় রাত কাটাতেই আসে। কিন্তু ছোটমামা খুঁতখুঁতে মানুষ।–ঘুম পাচ্ছে বলেই যেখানে-সেখানে শুয়ে পড়তে হবে নাকি? মোটে তো পাঁচ কিমি রাস্তা। চলে আয় টু।

ঘুম-ঘুম চোখে রাস্তা হাঁটা কষ্টকর। তা ছাড়া ছোটমামার চেয়ে আমার পাদুটো বড্ড বেশি ছোট। বারবার পিছিয়ে পড়ছি, আর ধমক খাচ্ছি।

হঠাৎ রাস্তার বাঁকের মুখে গঞ্জের শেষদিকটায় একটা সাইকেলরিকশ দেখা গেল। রিকশটা দাঁড়িয়েই ছিল। তবু ছোটমামা চেঁচিয়ে উঠলেন,-রোখকে! রোখকে।

রিকশওয়ালা হেসে অস্থির। রুখেই তো আছি বাবুমশাই! যাওয়া হবে কোথায়?

আমারও হাসি পাচ্ছিল। ছোটমামার সবকিছুই অদ্ভুত। তো আমরা ঝাপুইহাটি যাব শুনে রিকশওয়ালা খুশি হল। বলল,–চলুন! আমি কাছাকাছি থাকি। ওদিককার প্যাসেঞ্জারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম! খালি-খালি রিকশা নিয়ে বাড়ি ফেরা পোয় না।

রিকশতে উঠে বসলে ঘুমটা আমাকে বাগে পেয়েছিল। কিন্তু ছোটমামার বারবার ধমক এবং পড়ে গিয়ে হাড়গোড় ভেঙে যাওয়ার হুমকি ক্রমশ ঘুমটাকে এলোমেলো করে দিচ্ছিল। কিছুদূর চলার পর রিকশওয়ালা থামাল। ছোটমামা বললেন, কী হল? চেন খুলে গেল নাকি?

রিকশওয়ালা সিট থেকে নেমে বলল, আজ্ঞে না। চক্কোত্তিমশাই হজমিগুলি আনতে দিয়েছিলেন। দিয়ে আসি।

ছোটমামা বিরক্ত হয়ে বললেন, এখানে কোথায় তোমার চক্কোত্তিমশাই?

রিকশওয়ালা কান করল না। রাস্তার ধারে ঝাকড়া একটা গাছের তলায় গিয়ে ডাকল,–চক্কোত্তিমশাই! ঘুমোচ্ছন নাকি?

গাছের ভেতর থেকে খ্যানখেনে গলায় কেউ বলল,–ঘুমোব কী রে বাবা! পেট আইঢাই। এত দেরি করলি কেনরে?

–প্যাসেঞ্জার পেলে তো আসব। এই নিন হজমিগুলি।

–এনেছিস? কই দে-দে। শিগগিরি দে।

রিকশওয়ালা তাকে হজমিগুলি দিয়ে এসে সিটে উঠল। প্যাডেলে চাপ দিল। রিকশর চাকা গড়াল। ছোটমামা বললে, ব্যাপার কী হে রিকশওয়ালা? তোমার চক্কোত্তিমশাই কি গাছে থাকেন নাকি?

–আজ্ঞে ।

–অ্যাঁ? গাছ থাকেন কেন?

–এটাই তো তেনার ডেরা।

–তার মানে?

–মানে নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার কি বাবুমশাই? কঁপুইহাটি যাবেন। পৌঁছে দেব। ব্যস।

ছোটমামা রেগে গেলেন।

–অদ্ভুত তো তোমার কথাবার্তা! রাতবিরেতে গাছের ওপর–

রিকশওয়ালা ওঁকে থামিয়ে দিয়ে বলল, চুপ! চুপ! চক্কোত্তিমশাইয়ের কানে গেলেই কেলেঙ্কারি। আমার কাছ থেকে ততক্ষণে ঘুমটা কেটে পড়েছে। বারবার দেখে আসছি, ছোটমামার সঙ্গে কোথাও রাতবিরেতে বেরোলেই গোলমেলে সব ঘটনা ঘটে। বুঝতে পারি না, রাত এলেই কেন পৃথিবীটা অন্যরকম হয়ে যায়? না কি ছোটমামার ভুলেই রাতটা গোলমেলে হয়ে যায়? কিন্তু তারপর তো ছোটমামা চলে আয় পুঁটু বলে শেষপর্যন্ত উধাও হয়ে যান। ধাক্কাটা সামলাতে হয় আমাকেই। এবার কতদূর গড়াবে কে জানে! বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল।

একটু পরে আবার রিকশ দাঁড়াল এবং রিকশওয়ালা তড়াক করে নেমে গিয়ে ডাক দিল, ঠাকরুনদিদি! অ ঠাকরুনদিদি!

একটা শুকনো গাছের ডাল থেকে নেমে সাদা কাপড় পরা কেউ এগিয়ে এগিয়ে এল। ভুতু এলি? কখন থেকে পথের দিকে তাকিয়ে চোখে ব্যথা ধরে গেল। দোক্তা এনেছিস তো?

–না আনলে ডাকছি কেন? এই নিন।

দোতা নিয়ে ঠাকরুনদিদি ন্যাড়া গাছটার দিকে চলে গেল। ছোটমামা গুম হয়ে বসে ছিলেন। বললেন,–কোনও মানে হয়?

রিকশওয়ালা আবার চুপচাপ রিকশ চালাতে শুরু করল। কিছুদুর গেছি, হঠাৎ কোত্থেকে কেউ হেঁড়ে গলায় ডাকল, ভুতু! অ ভুতু! অ্যাই ভুতো!

ছোটমামা চাপাস্বরে বললেন,–থেমো না, যে-ই ডাকুক।

একটা কালো বেঁটে লোক ধমক দিল,–অ্যাই ব্যাটাচ্ছেলে! কথা কানে যায় না?

রিকশওয়ালা বলল,-রোজ-রোজ বাকিতে জিনিস দেবে নাকি?

–দেবে না মানে? ওর বাপ দেবে। এখনও তেষট্টি টাকা সাতষট্টি পয়সা জমা আছে খাতায়!

–সে আপনি মামলা করে আদায় করুন গে!

লোকটা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেল।–বাজে কথা বলিসনে। আসলে তুই যাসনি দত্তর দোকানে।

কী ঝামেলা করছেন বাবু? গাড়িতে প্যাসেঞ্জার আছে দেখছেন না?

লোকটা প্রায় কেঁদে ফেলল। এখন আমি ঘুমোব কি করে? একগুলি আফিং আমাকে এত রাত্তিরে কে দেবে?

রিকশওয়ালা পরামর্শ দিল, শ্মশানতলায় চলে যান। দারোগাবাবুর কাছে একগুলি পেতেও পারেন।

-–ওরে বাবা! মৌতাত ভাঙলে লকআপে ঢোকাবে।

–তা হলে বরঞ্চ পাঁচুর কাছে যান।

–সে ব্যাটা তো চোর।

–চোর বলেই বলছি। দারোগাবাবুর কৌটো থেকে দু-একটা গুলি সেই হাতাতে পারবে।

লোকটা কিন্তু কিন্তু করে বলল,–তা পাঁচুকে পাচ্ছি কোথায়? ও তো ফেরারি আসামী।

রিকশওয়ালা চাপাস্বরে বলল,–সন্ধেবেলা পাঁচুকে একপলক দেখেছি। মোড়লমশাইয়ের তালগাছের কাছে দাঁড়িয়েছিল। মোড়লমশাই গঞ্জের মেলায় গেছেন। কাজেই পাঁচু নিশ্চয় তেনার ডেরায় ঘুমিয়ে নিচ্ছে।

বেঁটে কালো ছায়ামূর্তিটি তখনই উধাও হয়ে গেল। রিকশওয়ালা প্যাডেলে চাপ দিয়ে বলল, রোজ রাত্তিরে আসার এই এক জ্বালা বাবুমশাই! রাজ্যের লোকের হাজার ফরমাশ।

ছোটমামা গুম হয়ে বসে আছেন। আমি ভাবছি, হঠাৎ আমাকে ফেলে পালিয়ে না যান। বড্ড বেশি গোলমেলে ঘটনা ঘটছে। কিছু দূর যাওয়ার পর রাস্তা বাঁক নিল। এবার দুধারে ঘন জঙ্গল। রাস্তায় চকরাবকরা জ্যোৎস্না পড়েছে।

রিকশাওয়ালা বলল, আর এক জায়গায় একটুখানি থামতে হবে। সিঙ্গি মশাইয়ের নস্যির কৌটোটা দিয়েই আমার ছুটি।

একখানে জঙ্গলটা কিছু ফঁকা। রিকশ সেখানে থামল। রিকশওয়ালা সিট থেকে নেনে রাস্তার ধারে গিয়ে চেঁচাতে থাকল, সিঙ্গিমশাই! সিঙ্গিমশাই।

তারপর সাড়া না পেয়ে এগিয়ে গেল। আর তাকে দেখতে পেলাম না। ভয়ে ভয়ে ডাকলাম, ছোটমামা!

ছোটমামা বিরক্ত হয়ে বললেন,–চুপচাপ বসে থাক। আমাদের বাড়ি পৌঁছনো নিয়ে কথা।

এইসময় কাছাকাছি একটা গাছ থেকে কেউ বলল,-কারা এখানে? ছোটমামা ভারিক্কি চালে বললেন, আমরা।

–আমরা মানে? নাম কী? বাড়ি কোথায়?

ছোটমামা রেগেই ছিলেন। বললেন,–তা জেনে তোমার কাজ কী? কে তুমি? গাছে কী করছ?

–অ্যাঁ! বলে কী। গাছে কী করছি! হি হি হি হি! ন্যাকা!

–খবরদার! বাজে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি।

–এটা বাজে কথা হল? জানোনা গাছে কী করছি?

ছোটমামা খাপ্পা হয়ে বললেন, না। জানি না। আমরা মানুষ। আমরা তোমার মতো রাত-বিরেতে গাছে কাটাই না।

–হি হি হি! প্রথম-প্রথম এই ভুলটা হয়।

–কী ভুল হয়?

–মানুষ-মানুষ ভুল।

–কী অদ্ভুত।

–অদ্ভুত তো বটেই। অদটুকু বাদ যেতে কয়েকটা দিন দেরি, এই যা। তা তোমরা কি ডেরা খুঁজে বেড়াচ্ছ? বোকা আর কাকে বলে? ভুতোর রিকশতে চেপে–হি হি হি! ভুতোটা এক নম্বর ধড়িবাজ। সাবধান করে দিচ্ছি কিন্তু!

ছোটমামা রিকশ থেকে নেমে ঘুষি পাকিয়ে দাঁড়ালেন। –কে হে তুমি! গাছ থেকে নেমে এসো তো দেখি।

আমিও নামতে দেরি করলাম না। ছোটমামার মারামারি করার অভ্যাস আছে। কিন্তু রাতবিরেতে গাছের লোকটার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবেন কি না আমার সন্দেহ। রিকশওয়ালাও আসছে না। মারামারি বাধলে থামাবে কে, এটাই আমার ভাবনা।

ছোটমামা ঘুষি বাগিয়ে এবার হুঙ্কার দিলেন, কাম অন! কাম অন!

গাছের লোকটা বিদঘুঁটে হাসল-হি হি হি হি! ইংরেজির কী ছিরি! কাম অন কী হে ছোকরা? গেট ডাউন! কিন্তু গেট ডাউন করি কী করে? একটা ঠ্যাং-ই যে নেই। থাকলে পরে এতক্ষণ নেমে কানটি ধরে স্ট্যান্ড আপ অন দা বেঞ্চ করিয়ে দিতাম।

পাশের একটা গাছ থেকে কেউ বলল, কী হে পণ্ডিতমশাই? ছাত্র জোটাতে পারলেন নাকি?

–নাহ। গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করা যায় না।

ছোটমামা আর সহ্য করতে পারলেন না। রাস্তার ধারে পাথরকুচির স্তূপ থেকে পাথর কুড়িয়ে ছুঁড়তে শুরু করলেন। আমাকে বললেন,–হাত লাগা পুটু। আমাকে গাধা বলছে! আমাকে ইংরেজি শেখাচ্ছে পাঠশালার পণ্ডিত!

ওদিকে পণ্ডিতমশাইয়ের চেঁচামেচিতে চারদিকে সাড়া পড়ে গেছে। হইহই-রইরই করতে-করতে কালো কালো কারা সব গাছ থেকে ঝুপঝাঁপ করে নেমে দৌড়ে আসছিল। আমি ভয়ে প্রায় কেঁদে ফেললাম, ছোটমামা! এবার ছোটমামার চোখে পড়ল ব্যাপারটা। তারপর যা ভেবেছিলাম এবং বরাবর যা ঘটে আসছে তাই হল। ছোটমামা চলে আয় পুঁটু–বলে রিকশওয়ালা যেদিকে গিয়েছিল, সেই দিকে দৌড়লেন। আমিও দৌড়লাম।

কিন্তু ভাগ্যিস ছোটমামা হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন, তাই সঙ্গ পাওয়া গেল। জ্যোত্সায় একটা ভাঙাচোরা দালানবাড়ি দেখা যাচ্ছিল। বাড়ির দরজায় ছোটমামা ধাক্কা দিতে লাগলেন। একটু পরে ভেতর থেকে সাড়া এল, কে?

ছোটমামা ব্যস্তভাবে বললেন,–আমরা খুব বিপদে পড়েছি। দয়া করে দরজা খুলুন।

–কী বিপদ?

–কারা আমাদের তাড়া করেছে।

–তারা কারা?

–গাছে-গাছে যারা থাকে।

–গাছে থাকে ভূত বনে থাকে বাঘ।
জলে থাকে মাছ মনে থাকে রাগ।

–কী বিপদ! আপনি পদ্য বলছেন নাকি?

–ঠিক ধরেছ। কেমন হয়েছে পদ্যটা বলো?

–খুব ভালো। দয়া করে এবার দরজা খুলুন। ওরা আসছে।

ঘোড়ার যদি পাড়ে ডিম
জলে যদি জ্বলে পিদিম
বলো তবে অতঃ কিম?

ছোটমামার পদ্য লেখার বাতিক ছিল। বলে দিলেন, জাম গাছে ফলবে শিম। খাসা! খাসা! স্বাগত! সুস্বাগত!

দরজা খুলে গেল। ছোটমামা বললেন, আলো নেই কেন? আলো জ্বালুন।

যতবড় কবি দুই হোস না।
যদি না বাসিস ভালো জোসনা
থেকে যাবে কত আফসোস না!
তাই বলি চুপ করে বোস না।

ভদ্রলোক বাইরের দরজা বন্ধ করে দিলেন। জানালা গলিয়ে জ্যোস্না এসে ঘরে ঢুকেছিল। আবছা দেখা যাচ্ছিল–ওঁকে। ঢ্যাঙা, বড়-বড় চুল, পরনে পাঞ্জাবি পাজামা। হাতে একটা বই বা মোটা খাতা। পাতা ওল্টাতে শুরু করলেন। তারপর বললেন,–এই পদ্যটা আরও ভালো।

–একদা এক বাঘের গলায় হাড় ফুটিয়াছিল
সারস পাখি লম্বা ঠোঁটে হাড় তুলিয়া দিল
পুরস্কার চাইলে পরে বাঘ রাগিয়া কহে,
মুন্ডুখানা ফেরত পেলি তা-ই যথেষ্ট নহে?

পাশের ঘর থেকে কেউ বিটকেল গলায় ডাকল,-ঘোতনা। অ্যাই ঘোতনা! কাকে পদ্য শোনাচ্ছিস?

–মানুষকে।

–কয় জন মানুষ?

–দেড়জন।

–ধুস! পোষাবে না।

ছোটমামা বললেন,–কে উনি?

কবি ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে বললেন, আমার দাদার ওই এক স্বভাব। খালি খাই-খাই।

–খাই-খাই মানে?

–দাদার খুব খিদে আর কী! যাক গে। এই পদ্যটা পড়ি…।

সেই সময় বাইরে ডাকাডাকি শোনা গেল,–ছোটবাবু! ছোটবাবু! ছোটবাবু! কবি খাপ্পা হয়ে দরজা খুলে বললেন, কী হয়েছে? চেঁচাচ্ছিস কেন রে ভূতো?

–আমার প্যাসেঞ্জার হারিয়ে গেছে। খুঁজে বেড়াচ্ছি।

–কয় জন?

–আজ্ঞে দেড়জন।

ছোটমামা আমার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিলেন।–চলে আয় পুঁটু!

রিকশওয়ালা আমাদের দেখেই বলে উঠল, সর্বনাশ! কোথায় ঢুকেছিলেন আপনারা! চলে আসুন! চলে আসুন! এ বাড়ির বড়বাবুর বেজায় খিদে।

আমরা তিনজনে দৌড়চ্ছি। পেছনে কবির করুণ আর্তনাদ কানে আসছে, অত ভালো পদ্যখানা শুনে গেল না! আমার যে আবার মরতে ইচ্ছে করছে গো! ও হো হো হো…

ছোটমামা রাস্তার কাছে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, ওহে রিকশওয়ালা! ওরা সব নেই তো?

রিকশওয়ালা হাসল। নাহ! ঘুমিয়ে পড়েছে। ভোস-ভোস করে ঘুমোচ্ছে। শুনতে পাচ্ছেন না?

ছোটমামা কান ধরে শুনে বললে, হুঁ!

আমি তেমন কোনও শব্দ পেলুম না। তবে বাতাসে গাছপালা খুব নড়ছে। নানারকম শব্দও হচ্ছে বটে। কিন্তু ভেস-ভোঁস নয়। শোঁ শোঁ শন শন সর সর খড় খড়। কে জানে বাবা কী।…

এবার আর কোনও গণ্ডগোল হল না। আমাদের গাঁয়ের মোড়ে পৌঁছে দিয়ে রিকশওয়ালা ভাড়া মিটিয়ে নিল।

ছোটমামা জিগ্যেস করলেন, তুমি কোন গাছে থাকো হে?

রিকশওয়ালা বেজায় হেসে বলল, আমি কেন গাছে থাকতে যাব বাবুমশাই? আমার কি ঘরদোর নেই? নামটাই না হয় ভুতো। রাতবিরেতে রিকশ চালাই বলেই তেনাদের সঙ্গে চেনাজানা হয়েছে।

ছোটমামার সন্দিগ্ধস্বরে বললেন,–তুমি মানুষ?

আজ্ঞে ষোলো আনা মানুষ।–বলে সে শেষরাতের জ্যোৎস্নায় রিকশ চালিয়ে কালো হতে-হতে দূরে মিলিয়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress