রাজা রামমোহন রায়
রাজা রামমোহন রায় ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দের আজকের দিনে (২২ মে) হুগলী জেলার রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত রাজা রামমোহন রায় ছিলেন বাংলা তথা ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত। উনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে পাশ্চাত্য শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার সংস্পর্শে এসে বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবনে পুনরায় যে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হয়, তাকেই বাংলার নবজাগরণ বলা হয়। তাঁর সময় থেকে বাংলা তথা ভারতে নবজাগরণের সূত্রপাত হয়। বেদ, বাইবেল, কোরান, পুরাণ, উপনিষদ, গীতা, ভাগবত, জেন্দাবেস্তা, ত্রিপিটক ইত্যাদি সকল ধর্মশাস্ত্র গভীর মনোনিবেশ সহকারে অধ্যয়নের পর তিনি এই সত্যে উপনীত হয়েছিলেন যে সকল ধর্মই মূলত এক। একই ঈশ্বরে বিশ্বাস সকল ধর্মের মূল কথা। রাজা রামমোহন রায় হিন্দুধর্মকে সংস্কারমুক্ত করার জন্য ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে ‘আত্মীয় সভা’ গঠন করেন। ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে তিনি একে ‘ব্রাহ্মসভা’য় পরিণত করেন। ১৮২৮ সালে এই সভা ‘ব্রাহ্মসমাজ’ নামে পরিচিত হয়। ব্রাহ্মসভার মূল বক্তব্য ছিল, ঈশ্বর এক ও অভিন্ন, সকল ধর্মের মূল কথা এক। তিনি মনে করেছিলেন ব্রাহ্ম আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতীয়গণের মধ্যে ধর্মগত ভেদাভেদ দূর হবে। রাজা রামমোহন রায় এইভাবেই সমাজ সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। ভারতীয় নারীদের জন্য তাঁর অবদান হল সতীদাহ প্রথার অবসান ঘটানো। তৎকালে হিন্দু সমাজে মৃত স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় বিধবাদের পুড়ে মরতে হত। এই সহমরণকে ‘সতীদাহ প্রথা’ বলা হয়। তাঁর প্রচেষ্টায় বড়লাট লর্ড বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে ‘সপ্তদশ-বিধি’ নামে আইন পাস করে এই বর্বর ‘সতীদাহ প্রথা’ নিষিদ্ধ করেন। রাজা রামমোহন রায় বিশ্বাস করতেন যে, পাশ্চাত্য শিক্ষার দ্বারাই ভারতীয়দের উন্নতি সম্ভব। তাই ভারতে রসায়ন শাস্ত্র, শারীরবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র প্রভৃতি শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারি ‘হিন্দু কলেজ’ (পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্সি কলেজ ও বর্তমানে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি নামে পরিচিত) স্থাপন করেন। বাংলা গদ্য সাহিত্যে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি ধর্ম সংস্কারর জন্যও গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। সেগুলি বাংলা গদ্যের বিকাশে সহায়ক হয়েছিল। তিনি গৌড়ীয় ব্যাকরণ রচনা করেন। ১৮৩৩ সালের সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখে বাংলার এই মহান পণ্ডিত এবং সমাজ-সংস্কারক ইংল্যান্ডে মৃত্যুবরণ করেন।