Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রাজযোটক || Satyajit Chowdhury

রাজযোটক || Satyajit Chowdhury

রাজযোটক

মহামারীর জন্য বছর দুই কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। ক্লাস সিক্সে পড়া ছেলে স্বপ্নীল বায়না করছিল গ্রীষ্মের বন্ধে কোথাও নিয়ে যেতে। গিন্নি:রাধিকারও তাতে নীরব সমর্থন ছিল। বাঙালির প্রিয় বেড়ানোর জায়গা হলো — দী-পু-দা। দীঘা পুরী দার্জিলিং। সবচেয়ে সহজ ছিল দীঘায় যাওয়া। রিজার্ভেশনের বিশেষ ঝামেলা নেই। চারচাকা একটা জোগাড় করে বেরিয়ে পড়লেই হল। একটু খোঁজ নিলে থাকার জায়গারও অভাব হয় না। তাই হলো – শনি রবির ছুটি মিলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম দীঘার উদ্দেশ্যে।

বেলা ১১ টা নাগাদ দীঘা পৌঁছে হোটেলে চেকইন সেরে হাজির হলাম সমুদ্র সৈকতে। ছেলের আর তট সই ছিল না। কখন সমুদ্র দেখতে যাবে। সমুদ্র সৈকতে যেতেই মন ভরে গেল। প্রচুর পর্যটকের ভিড় জুটেছে বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত জুড়ে। চারপাশে যেন মেলা বসেছে।

সবেমাত্র সমুদ্রের উত্তাল স্রোতে ছেলে, আমি ও গিন্নি গা ভাসিয়ে দিয়েছি। হঠাৎ শুনতে পেলাম নারীকন্ঠে কে যেন আমাকে ডাকছে। ‘ সুজিতদা, ও সুজিতদা!’ কোন দিক দিয়ে আওয়াজ আসছে, ঠিক ঠাহর করতে না পেরে এদিক-ওদিক দেখছি। হঠাৎ চোখে পড়ল, শঙ্খ বিক্রি করা দোকানগুলির সামনে দাঁড়িয়ে হাত তুলে এক মহিলা আমাকে ডাকছে ।

একটু এগিয়ে যেতেই চিনতে পারলাম আমাদের বন্ধু নিরঞ্জনের বোন মীনাক্ষী, তার বর-কাম-আমাদের আরেক বন্ধু রূপম, তাদের বারো বয়সের ছেলে সৈকত এবং আট বছরের কন্যা তিন্নি। সবাই স্নান সেরে ভেজা কাপড়ে হোটেলে ফিরছে। আমাদের দেখতে পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

অনেকদিন পর ওদের সাথে দেখা হলো । জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম। ওরা এখন মেদিনীপুরে থাকে। আজ সকালেই দীঘাতে এসেছে।

মীনাক্ষী রূপমকে দেখলে আমার খুব ভালো লাগলো । দুজনেই বেশ সুন্দর হাসিখুশি প্রাণবন্ত জুটি। যেন রাজযোটক। এখনও মনে পড়ে, দুজনের বিয়েটাকে নেহাত দুর্ঘটনা বলা যায়। নিয়তির কি গোপন ইচ্ছায় অসম্ভব কাজও সম্ভব হতে পারে। ওরাই তার জীবন্ত উদাহরণ।

তবে ব্যাপারটা খুলেই বলি। তখন আমি, রূপম এবং নিরঞ্জন সবেমাত্র বছরখানেক হয়েছে ব্যাংকের চাকরি পেয়েছি। বহরমপুরের আশেপাশে পোস্টিং। তাই বহরমপুরে মেস করে থাকি। বেশ আনন্দেই ব্যাচেলর জীবন কাটাচ্ছিলাম। একদিন নিরঞ্জন এসে বলল, ‘শুন সুজিত, রূপম! বাবা খবর পাঠিয়েছে, বোন মীনাক্ষীর বিয়ে ঠিক হয়েছে আগামী মাসে। পাত্র এলআইসির ডেভেলপমেন্ট অফিসার । তোদের দুজনকেই যেতে বলেছে।’ আমরা সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম। এমন সুযোগ কেউ ছাড়ে?

কিন্তু শেষ মুহূর্তে আমার আর যাওয়া হয়ে উঠল না। বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি দেশের বাড়ি বাঁকুড়ায় যেতে হলো। নিরঞ্জনের সঙ্গে শুধু থাকলো রূপম। বিয়ের তিনদিন আগে ওরা চলে গেল বিয়ের যাবতীয় জোগাড়যন্ত্র করতে। ক্রমে বিয়ে বাড়ি আত্মীয়স্বজনের কথাবার্তায় মুখরিত হয়ে উঠলো।

বিয়ের একদিন আগে এমন একটা ঘটনা ঘটলো, তারজন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। নিরঞ্জনের মোবাইলে অজানা নম্বর থেকে মেসেজ আসলো। ‘ আপনার বোনকে কোথায় বিয়ে দিচ্ছেন, একবার খবর নিয়ে দেখেছেন কি। ও একটা লম্পট। আমার সর্বনাশ করেছে।’ সঙ্গে একটি অশ্লীল ছবি, ছবির নায়ক হবু জামাই । বিয়েবাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেল। এত কিছু জানার পর কার সাধ্য নিজেদের মেয়েকে এমন পাত্রে বিয়ে দেয়। কিন্তু মেয়ে যে লগ্নভ্রষ্টা হবে। কে বিয়ে করবে মীনাক্ষীকে। সবকিছু দেখতে পেয়ে রূপম আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলো না। সামনে এগিয়ে এসে বললো, ‘ আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে, তবে আমি মীনাক্ষীকে বিয়ে করতে রাজী।’ তাই শুনে বিয়েবাড়িতে আনন্দের সীমা থাকলো না । মহিলাদের উলুধ্বনিতে চারিদিক মুখরিত হয়ে উঠলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress