Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রসিক লাল || Mallik Kumar Saha

রসিক লাল || Mallik Kumar Saha

রসিক লাল

কোন কিছু আরম্ভ করিয়া শেষ করিবার ইচ্ছা সকলের মধ্যে থাকে না। যাহারা মনে করেন শুরু যখন হইয়াছে শেষ নিশ্চয়ই হইবে। তাহারা নিজের উপর এক প্রকার বিশ্বাস হারাইয়া ফেলিয়াছেন। ফলতঃ, কার্য সিদ্ধির বদ্ধপরিকর চেষ্টা নিজের উপর হইতে অন্যের হাতে আসিয়া পৌঁছায়। আর এইখানেই ‘নানা মুণির নানা মত’ কথাটি যথার্থতা লাভ করিয়া ব্যক্তি বিশেষের উপর আকড়াইয়া থাকে। আর সেই ব্যক্তি যদি গ্রাম্য পরিবেশের সহজ সরল কোন যুবক হইয়া থাকে তাহা হইলে সে সকলের হাসি ঠাট্টার পাত্র হইয়া পড়ে। ‘রসিকলাল’ হইল এমনই এক যুবক যাহার সহিত আর সকলে কথা না বলিয়া থাকিতে পারিত না। ছোট বড় সকলেই বিবিধ প্রসঙ্গে কিছু না কিছু জিজ্ঞাস করিয়া উত্তর শুনিবার আশায় থাকিত। এক সকালে রসিকলাল বাড়ীর বাহিরে আসিতেই একজন জিজ্ঞাসা করিল:

“রসিকলাল দাদা, শুনতে পেলাম তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে?”
—যতদূর আমার বিশ্বাস, তুমি যা শুনেছ তা সত্য বলে মনে হয় না। তাছাড়া দাদার সঙ্গে হাট-বাজার করে যে সামান্য টাকা রোজগার করি তা দিয়ে সবেমাত্র মাথায় সিঁথি কাটতে শিখেছি। পেকেটে ঝনঝন করে খুচরো পয়সা এখনো বাজে না, যা দিয়ে তোদেরকে চার-পয়সার চকলেট কিনে খাওয়াতে পারি।

এইভাবে এক-পা দুই-পা করিয়া গলির মোড়ে আসিতেই আর একজন জিজ্ঞাসা করিল: “আর তুমি যাই বল না কেন রসিক দাদা, আজকাল তোমার মুখখানা ভারী পরিষ্কার দেখাচ্ছে। ব্যাপারটা কি?”

“ব্যাপার আর কিছুই না ভাই, ঐ গত কয়েকদিন থেকে বৌদির এক কৌটা হতে মাখনের মত কিছু মাখলাম, তার থেকেই কিছু ফল এসেছে হয়তো। এখন বুঝতে পারছিস তো কেন বিয়ে করি না। বউ যখন এসে বলবে, আমার জন্য বাজার থেকে স্নো, পাউডার, লিপস্টিক আনতে ভুলো না যেন। তখন তো আর বলতে পারব না যে পকেটে ঝনঝন করে পয়সা বাজে না। কাজেই এখন পর্যন্ত কোন ষোড়শীর হাত আজীবন হাতে রাখতে পারব বলে সাহস করিনি।”

একবার পাড়ায় রাষ্ট্র হইয়া গেল যে রসিকলাল এক পাত্রীর সন্ধানে ভিন্ন গ্রামে যাইবার দিন স্থির করিয়াছে। আর যায় কোথায়— তখনই একদল ছেলে আসিয়া রসিকলালকে ঘিরিয়া ধরিয়া মিষ্টি খাইতে চাহিলে সে তাহার কারণ জানিতে চাহিল। তাহাদের মধ্যে সর্বাগ্রে যাদব বলিল।

“দেখ্ বাবা, আমাদের রসিক দাদা দেখছি একেবারে অবোঝ। মিষ্টির কথা বলতেই একেবারে প্রসঙ্গ ত্যাগ করে বসল। এভাবে আর কতকাল ডুবে ডুবে জল খাবে? বয়স তো আর কম হলো না। দু-কুড়িতে এসে ঠেকেছে।

উত্তম বলে উঠল: আমরা দাদার কাছের লোক। প্রকৃত বয়স নাই বা বললাম, তাই বলে কি রসিক দাদার বিয়ে হবে না?
খোকন বলল: রসিকলাল দাদা, তোমাকে বয়স নিয়ে এতসব ভাবতেই হবে না। আমরা বয়স বাড়াতেও পারি, আবার ইচ্ছে করলে কমাতেও পারি। ওসব আমাদের উপর ছেড়ে দাও। আমাদের আবদার মিটিয়ে দিলে তোমার বয়স ‘এককুড়ি দশ’ এর পার হতেই দিব না।

রসিকলাল একটু হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিল: আমার বয়স নিয়ে তোরা এত উল্টো পাল্টা কি ভাবছিস্? ব্যাপারটা একটু খুলে বলবি?

একথা শুনে যাদবের মুখে এক ছন্দ এল “মিষ্টি তুমি নাই বা দিলে, থাক তোমার পকেট ভারী,

বল তুমি যাবে কবে বৌদি আনতে শ্বশুর বাড়ী।”

রসিকলাল ছেলেদের ঠাট্টার কথা একটু দেরীতে বুঝিল। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধির বিকাশ সকলের একই প্রকারে ঘটে না। তাই সময় মতো সঠিক সিদ্ধান্ত লইতে না পারিলে অনেকের কাছে তামাসার পাত্র হওয়া স্বাভাবিক। বাহাদুরি দেখাইয়া দৃষ্টান্ত স্থাপন করিতে পারিলেই সকলের প্রত্যাশা পূর্ণ হয়। রসিকলাল পাড়ার ছেলেদের এই স্নেহপূর্ণ সম্পর্ক ছিঁড়িয়া ফেলিতে চাহে না। বরং এক প্রকার আনন্দ অনুভব করে। অনুভবে যাহাদের কাছের বলিয়া মনে হয় তাহারা কখনও বিরক্তির কারণ হইতে পারে না। এই উপলব্ধি রসিকলালের স্বভাবে বিদ্যমান। সে ভাতৃতুল্য ছেলেদের উত্তর করিল : গাছে কাঁঠাল আর গোঁফে তেল।

যাদব বলিল: আমরা ভেবেছি এবার তাহলে তোমার বিয়ের বরযাত্রী যাব, আর
তুমি বলছ তোমার হাতে কোন কনের খবর নেই।

উত্তম বলিল: এই যাত্রায় তাহলে আমাদের আর মিষ্টি খাওয়া হল না। খোকন বলিল কিন্তু মনে রেখো রসিকদাদা, আমরা তোমাকে কিছুতেই ছাড়ছি না।

এইভাবেই কয়েকটি মাস বিগত হইয়া গেল। অবশেষে সত্যিই এক সম্বন্ধের খবর আসিয়া রসিকলালের দরজার কড়া নাড়িল। রূপ ও গুণের কথা শুনিয়া বাড়ীর সকলে এক শুভদিনে কন্যার বাড়ী আসিয়া উপস্থিত। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক লম্বা ঘোমটা মাথায় মেয়ে আসিয়া বড়দের প্রণাম করিয়া জড় পদার্থের ন্যায় শান্ত হইয়া চেয়ারে বসিল। অনেক কষ্ট করিয়াও পাত্রীর মুখখানি দেখিতে না পাইয়া রসিকলাল বলিল:

“দুর্গাপূজার এখনও অনেক বাকি। এ নবপত্রিকা ‘কলাবউ’ কোথা থেকে এসে
পড়ল।” ঠিক সেই সময় ঘোমটা খুলিয়া ফুটফুটে মুখখানি বাহির করিয়া একগাল হাসিয়া উত্তর করিল “কলাবউ হতে যাব কেন? আমি লক্ষী। শ্রী সাগর সেনের কন্যা।”

পাত্রের বৌদি তখন উঠিয়া গিয়া মেয়েটির চিবুকে ডান হাতখানি স্পর্শ করিয়া বলিলেন: “ভারী সুন্দরী। এক কথায় অপরূপা। শুনেছি তোমার একজন বোন আছে।”

—হ্যাঁ, আছে।

একগাল হাসিয়া মৃদু কণ্ঠে রসিকলাল কহিল: তার নাম নিশ্চয়ই ‘সরস্বতী’—

লক্ষ্মী এক নিঃশ্বাসে বলিল: একি আশ্চর্য! আপনি একেবারে ঠিক বলেছেন। আমি এক্ষনি ডাকছি। সরস্বতী—

মুহূর্তেই লক্ষ্মীর পাশে সরস্বতী আসিয়া উপস্থিত। অবিকল চেহারা— মনে হইল একই ছাঁচে নির্মিত। কণ্ঠস্বরেও কোন তফাত নাই। রসিকলালের রসিকতা করিবার মতো যোগ্য সম্বন্ধ আসিয়াছে বটে। পাত্র পক্ষের ভাবে ও ভাষায় মনে হইল দুইজনকেই তাহাদের দারুণ পছন্দ। রসিকলালের জন্য এই দুইজনের মধ্যে কে সর্বপ্রকারে মানানসই হইবে তাহা স্থির করা সকলের পক্ষে সেই সময় কষ্টকর হইয়া দাঁড়াইল।

বাড়ীতে আসিবার পর সকলে রসিকলালের ছোট্ট ভাতুষ্পুত্রকে জিজ্ঞাসা করিল : কি রে রতন, কাকীমাকে কেমন দেখলে? শুনলাম দু-জনকে দেখেছ? কাকে বেশী পছন্দ বলে মনে হলো তোমার?

ছোট্ট রতন একটু চুপ থাকিয়া চিন্তা করিয়া বলিল: দুজনকেই আমার বেশ পছন্দ। তবে পরের জনের বাম চোখ একেবারে স্থির ছিল। একটুও নড়াচড়া করেনি।
রতন এর মা জিজ্ঞাসা করিল: ঠিক দেখেছিস তো রতন?

—হ্যাঁ মা, একেবারে ঠিক বলছি।

অতঃপর খবর লইয়া দেখা গেল যে সরস্বতীর বাম চোখটি পাথরের। কাজেই লক্ষ্মীকে রসিকলালের পাশে যে বেশ মানাইবে তাহাতে আর কাহারো কোন সঙ্কোচ রহিল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *