রবিবাসরীয়
সারা সপ্তাহের হাড় ভাঙা খাটুনির পরে আজও আমাদের মনে অনুরণন তোলে ছুটির দিন রবিবার। এ যেন এক অখন্ড অবসর! রবিবাসরীয় সকালে গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে কাগজে চোখ বুলিয়ে আজও বাঙালি মধ্যাহ্নভোজ সারেন সরু চালের ভাত আর কচি পাঁঠার মাংস দিয়ে। বাস্তবে রবিবার মানেই যেন এক সবপেয়েছির দেশ! সপরিবারে কাছেপিঠে ঘুরে আসতে মন চায়। কিন্তু প্রথম কবে শুরু হয়েছিল এই সাপ্তাহিক ছুটির দিন ? সে বহুদিন আগেকার কথা। ব্রিটিশরা তখন এদেশে জমিয়ে রাজত্ব করছিল। প্রসঙ্গত, ভারতে ব্রিটিশরা প্রায় দু’শো বছর রাজত্ব কায়েম করেছিল। তদানীন্তন সময়ে কিন্তু ভারতীয় শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটির দিন বলে কিছু ছিল না। সপ্তাহের সাত দিনই তাদের কাজে যোগদান করাটা বাধ্যতামূলক ছিল। সারা সপ্তাহের হাড় ভাঙা খাটুনির পরে শ্রমিকদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। এ হেন পরিস্থিতিতে এগিয়ে এলেন বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা শ্রী নারায়ণ মেঘাজি লোখান্ডে মহারাষ্ট্রের থানের বাসিন্দা ছিলেন । তাঁকেই শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ বলা হয়। তিনি শ্রমিকদের স্বার্থে ব্রিটিশদের কাছে অনুরোধ জানান যে, ভারতীয় শ্রমিকদের সপ্তাহে অন্তত একদিন ছুটি দেওয়া হোক । আর যেহেতু রবিবার হিন্দু দেবতা ‘খন্ডকার’ এর জন্মদিন, তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার করা হোক । কিন্তু ব্রিটিশরা তাতে কর্ণপাত করেনি। ওদিকে কিন্তু খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী দেশগুলোতে তদানীন্তন সময়ে রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল। আর এ দেশে ফি রবিবার ব্রিটিশরা চার্চে গিয়ে প্রার্থনা করতেন। এদিকে নারায়ণ মেঘাজী লোখন্ডে কিন্তু দমবার পাত্র নন। তিনি ভারতীয় শ্রমিকদের স্বার্থে আন্দোলন চালিয়ে গেলেন। দীর্ঘ সাত বছর টালবাহানার পরে অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! ১৮৯০ সালের ১০ জুন প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার ধার্য করে ব্রিটিশরা। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি ! প্রথমদিকে ব্রিটিশরা শ্রমিকদের সবেতন ছুটি দিতে রাজি হয় নি । যদিও সময় গড়ালে সমস্যার সমাধান হয় । ১৮৯৫ সালে ব্রিটিশরা শ্রী নারায়ণ মেঘাজী লোখন্ডে কে ‘ রায়বাহাদুর ‘ উপাধিতে ভূষিত করেন এবং গভীর শ্রদ্ধায় তাঁকে ‘ জাস্টিস অফ পিস ‘ বলে আখ্যায়িত করে । ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হল । ব্রিটিশরা এদেশ থেকে পলায়ন করে। তারপরে কেটে গেছে বেশ অনেক গুলো বছর। কিন্তু সেই রেশটুকু আজও রয়ে গেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন আজও রবিবার। স্কুল, কলেজ , অফিস আদালত বন্ধ। ১৯০৫ সালে ভারত সরকার শ্রী নারায়ণ মেঘাজী লোখন্ডের একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।।