Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রঙের ছোঁয়া || Samarpita Raha

রঙের ছোঁয়া || Samarpita Raha

আমরা এক ভাই ও এক বোন।আমি পঞ্চম শ্রেণী ও ভাই দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে তখন বাবা ডাকাতদের ধরতে গিয়ে ওদের গুলিতে প্রাণ হারান ।

বাবা যেহেতু পুলিশে চাকরি করতেন আর বাবা কাজ করতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ দেন তাই মাকে একটি চাকরি দেওয়া হয়।আমরা কাজের লোকের হাতে মানুষ হতে থাকি।আমাদের হঠাৎ জীবন প্রখর তাপে ঝলসাতে থাকে। ঐ বয়সে হঠাৎ পিতৃহারা। মা ও সারাদিন পরিশ্রম করে তেতে থাকতেন। কিছু করলেই ঠাস।

মা অফিস করে এসে বাড়িতে সাদা শাড়ি পড়ত।মায়ের মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে পনেরোতে বিয়ে হয়েছিল।মামার বাড়িতে মা যেত না কারণ মায়ের সৎ মা এমনি ভালো ছিল না তারপর আমাদের দাদু ও মায়ের কষ্টে হঠাৎ মারা যান।মা ছাব্বিশ বছর বয়সে সব হারিয়ে ফেলে।

মায়ের এক মাষ্টার মশাই আমাদের পড়াতেন।মা মাষ্টারমশাইকে বলত স‍্যার ওদের দায়িত্ব নিন।যা টাকা লাগবে দেব।
মা বলতেন মায়ের মাধ্যমিকের সময় মায়ের স‍্যার স্কুলে ইংরেজী পড়াতেন।

আমি আর ভাই মাষ্টারের বাড়ি হোলি খেলতে যেতাম।একবার মনে আছে তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী।রঙ খেলে এসে মাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম।
তবে মাষ্টারমামাই শিখিয়ে দিয়েছিলেন।ও পায়ের একটু রঙের ছোঁয়া দিতেই আমাকে মা টেনে এমন চড় মেরেছিল ..মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বার হতে থাকে।মায়ের সাদা থানটা ছোপ ছোপ লাল হয়ে গেছিল
সেদিন মাষ্টারমামা মার উপর তেড়ে গিয়ে বলেছিল …নিজের জীবন শেষ করেছ ওদের জীবন ও শেষ করছ!!তোমার জীবনটা সাদা থান করে ফেললে।একটু রঙের ছোঁয়া পেতে ইচ্ছা করে না!!
এই বয়সে তোমার বিয়ে করা উচিত।
সৎমার কাছে কি আর শিখেছ!!

তারপর মাষ্টারমামা চলে যাবার পর মা কেঁদে বলেছিল।তোরাই বল আমি বিয়ে করলে সৎ বাবা তোদের আমার সৎমার মতো অত‍্যাচার করবে।তারপর তোরা যখন বড় হবি তখন তোদের বিয়ে দিতে পারব না।

তারপর মাষ্টারমামা আমাদের বাড়িতে পড়াতে আসে নি।আমি আর ভাই পড়তে যেতাম।
এই করে আমি কলেজে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পাশ করি।সাউথ পয়েন্ট স্কুলে শিক্ষকতা ও করি।প্রাইভেটে এম -এ ও পড়ছি।ভাই ও ইংরেজি তে অনার্স নিয়ে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ পড়ে।আমরা আসলে মাষ্টারমামার মতো হতে চেয়েছি।

আমার মার থেকে আমি ষোল বছরের ছোট।ভাই ঊনিশ বছরের ছোট।এর মধ্যে আমার হঠাৎ ইঞ্জিনিয়ার ছেলের সাথে বিয়ে হয়।
আমার তেইশ তখন মা ঐ চল্লিশের কাছাকাছি ।আমার শ্বশুর ও শাশুড়ি ছিলেন না ..তাই বর আমার মাকে খুব ভালো বাসত।

বর মাকে আমাদের বিয়ের ছয় মাস বাদে বলে মা আপনাকে বিয়ে দেব।মা প্রচন্ড রেগে যেতেই ।জামাই বলে আমি ও সোমা লন্ডনে চলে যাব ।ভাইকেও নিয়ে যাব।

তখন আপনি একা থাকবেন কি করে?
আপনার চিন্তা ছিল মেয়ের বিয়ে কি করে দেবেন!!
এখন তো আপনি রঙিন শাড়ি পড়তে পারেন।
মা বলে রঙিন পড়ব ঠিক আছে।
তবে বিয়ে কাকে করব বলো!
সমাজ কি বলবে!
ওদিকে মাষ্টারমামা ও পয়তাল্লিশে অবিবাহিত।আমরা বুঝতাম মায়ের জন্য।
মাকে ভালোবাসি বলবার আগেই মার বিয়ে হয়ে যায়।
এবার মার বিয়ে কোন দিনক্ষণ না দেখে হোলি এক সপ্তাহ আগে দেওয়া হয়।
হালকা সানাই এর সুরে আমি গাড়ি থেকে বর নামিয়ে গাড়ি চাকায় জল দিয়ে বাবা বরণ করি।আমি ভাই ও জামাই মিলে মায়ের বাসরে অনেক গান গাই।
জামাই বলে মেয়ে দাস, ছেলে রায়, মার পদবি কর হলো।এই নিয়ে খুব হাসাহাসি।
ভাই হঠাৎ বলে মাষ্টারমামা তুমি কিন্তু ভাই বোন কিনো না।তাহলে আমার ভাই বা বোনের পদবি কর হয়ে যাবে ।
মা কিছু বলবার আগেই আমরা পালাই।

হোলির সকালে দেখি মা ও বাবা রঙ খেলায় ব‍্যস্ত।
বাবা গান গাইছেন -রাঙিয়ে দিও যাও যাও যাবার বেলায়।মা ও গলা মেলাচ্ছিল।

মা কে এত খুশি দেখে আমাদের চোখে জল এসে যাই।এতদিন মা কত কষ্টে ছিল।একটু রঙের ছোঁয়া পেয়ে মা খিলখিল করে হাসছে।
জামাই— মা ও বাবাকে পুরী যাবার টিকিট ও থাকার ঘর বুকিং করেছে।
কথায় আছে যম জামাই ভাগনা
কেউ হয় না আপনা।।
এক্ষেত্রে তো জামাই নিজে দাঁড়িয়ে শ্বাশুড়ির বিয়ে দিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress