একাদশ পরিচ্ছেদ – অন্য চেষ্টা
এবার তারাকে উদ্ধার করিয়া রায়মল্ল সাহেব আর বুঁদিগ্রামে ফিরিয়া গেলেন না।
পর্ব্বতের অপর পারে সমতল ভূমিখণ্ডে একটি ক্ষুদ্র নগর। এই স্থানে তারার পৈতৃক বাসবাটী ছিল। সে বাটী প্রকাণ্ড— রাজ-রাজড়ার ন্যায় সমস্ত আস্বাব। লোকজন, গাড়ী, ঘোড়া প্রভৃতি একজন ধনাঢ্য লোকের যাহা কিছু আবশ্যক, তারার পিতার তাহা সকলই ছিল। হায়, কার ধন কে পায়। সে রাজৈশ্বর্য্য এখন জগৎসিংহ ভোগ করিতেছে।
রায়মল্ল সাহেব এই নগরে উপস্থিত হইয়া তারাকে খুব নির্জ্জন স্থানে পুলিশের তত্ত্বাবধানে রক্ষা করিয়া তারার সম্পত্তি পুনরুদ্ধারে যে যে লোক এবং যে যে প্রমাণ সংগ্রহ করা আবশ্যক, তজ্জন্য ব্যস্ত হইলেন।
জগৎসিংহ বাটীতে ফিরিয়া, কেমন করিয়া রায়মল্ল গোয়েন্দার হস্তে নিস্তার পাইবে, তাহাই চিন্তা করিতে লাগিল।
তাহার প্রথম লক্ষ্য হইল, রঘু ডাকাতের উপরে। একমাত্র রঘু ডাকাতই তারার সমস্ত বিষয় জানে। সে রঘু ডাকাতই ত এখন রায়মল্লের চক্রে বন্দিভাবে জেলখানায় পড়িয়া আছে। বিপদে পড়িয়া সে হয় ত সকল কথা স্বীকার করিয়া ফেলিতে পারে। জগৎসিংহ সন্ধান লইতে লাগিল, রঘু ডাকাত এখন কোন্ কারাগারে বন্দী। দুইদিন পরে সে প্রকৃত সন্ধান পাইল। ঘুষ দিয়া রঘু ডাকাতকে উদ্ধার করিতে চেষ্টা করা, আর স্বেচ্ছায় ধরা দেওয়া একই কথা। এই বিবেচনায় সে সে পথ অবলম্বন করিল না। সে অনেক চেষ্টায় রঘু ডাকাতের তুল্যাকৃতি একটা লোক ঠিক করিল। সে- ও দস্যুদলস্থ লে।ক; নগরে থাকিয়া রঘু ডাকাতকে লুঠের সন্ধান প্রদান করিত। দস্যুগণের এরূপ সংবাদদাতা নগরে নগরে, গ্রামে গ্রামে অসংখ্য থাকে। সে লোকটিও সেইরূপ প্রকৃতির একজন। রায়মল্ল গোয়েন্দার চেষ্টাতে এখন চারিদিকে দস্যুদল ধরা পড়িতেছে দেখিয়া, সে আর সেরূপ কাৰ্যে বড় হাত দিতে সাহস করিত না; অথচ অন্নাভাবে তাহার পেট চালান দায় হইয়া উঠিয়াছিল।
জগৎসিংহ তাহাকে বলিল, “তুই একটা কাজ করতে পারিস্? আমি তোকে পাঁচ হাজার টাকা দেবো।”
যে পঞ্চাশ টাকা একসঙ্গে কখনও দেখে নাই, তাহার পক্ষে পাঁচহাজার টাকা কুবেরের ভাণ্ডার তুল্য বলিয়া বোধ হয়। মনে করিল, “আমি পাঁচ হাজার টাকা পেলে একেবারে রাতারাতি বড় মানুষ হ’ব।” আশ্চর্য্য ও আনন্দিত হইয়া সে জিজ্ঞাসা করিল, “কি কাজ করতে হবে?”
জগৎ। বাপু হে, “জেল খাটতে হবে।”
সে কিছু বুঝিতে পারিল না। টাকার নাম শুনিয়া সে এত উন্মত্ত হইয়াছিল যে, কারণ জিজ্ঞাসা না করিয়া সে জেলে যাইতে প্রস্তুত হইল।
জগৎসিংহ তাহাকে আপন বাটীতে লইয়া গেল। সেইখানে তাহাকে সমস্ত কথা বুঝাইয়া বলিল। সে তাহাতে স্বীকৃত হইল।