Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ম্যানহাটানে মুনস্টোন || Sujan Dasgupta » Page 3

ম্যানহাটানে মুনস্টোন || Sujan Dasgupta

সাতদিনও হয় নি একেনবাবু এসেছেন, কিন্তু এর মধ্যেই ওঁর অনর্গল বাক্যবাণে আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে সবে রান্না চাপিয়েছি, একেনবাবু কিউ-টিপ দিয়ে কান খোঁচাতে খোঁচাতে এসে বললেন, “আপনাদের ‘ইন্ডিয়া অ্যাব্রড’ পেপারটা ওল্টাচ্ছিলাম স্যার। আপনি দেখেছেন, একজম ইন্ডিয়ান বিজনেসম্যান দিনে দুপুরে মার্ডারড?”
খবরটা চোখে পড়েছে। এক ভারতীয় অ্যান্টিক ডিলার খুন হয়েছেন হিট এন্ড রান অ্যাকসিডেন্টে, অর্থাৎ মোটর গাড়ী এসে চাপা দিয়ে চলে গেছে। কিন্তু সে নিয়ে আলোচনার এতটুকু ইচ্ছে বা উৎসাহ আমার ছিল না।
“কি মনে হয় স্যার, রেশিয়াল অ্যাটাক?”
আমি হ্যাঁ হুঁ কিছুই করলাম না। একেনবাবুর বকবকানি অবশ্য তাতে থামল না।
“লোকাটার ব্যাগে নাকি হাজার ডলার ক্যাশ পাওয়া গেছে। সেইজন্যেই পুলিশ সন্দেহ করছে রবারি নয়। তবে একটা জিনিস একেবারে অ্যাবসার্ড স্যার।”
“কি অ্যাবসার্ড?” কথা বাড়ানোর ইচ্ছে ছিল না, তাও মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল।
“এই এত ক্যাশ নিয়ে ঘোরা। নিউ ইয়র্কে যখন এত মাগিং হয়, তখন এসব নিয়ে ঘুরে বেড়ানো কেন?”
আমার বিরক্তি লাগল। বললাম, “কেন, কলকাতা কিংবা মুম্বাইয়ে ছিনতাই হয় না?”
“না স্যার নিউ ইয়র্কের মত হয় না।”
“কে বলেছে আপনাকে? এখান থেকে কত লোক দেশে গিয়ে টাকা খুইয়েছে জানেন? আমাদের অবিনশই তো গতবার দেশে এয়ারপোর্ট থেকে বেরোতে পর্যন্ত পারল না‌, ড্রাইভার্স লাইসেন্স, ক্রেডিট কার্ড সব কিছু গন! কি প্রচণ্ড ঝামেলা! যার জন্যে এবার ও সব কিছু এখানে রেখে গেছে।“
অবিনাশ প্রমথর রুমমেট। এই কিছুদিন হল দেশে বেড়াতে গেছে।
একেনবাবু দমলেন না। “গ্র্যান্ট ইউ স্যার, পিক পকেটে আমরা টপে আছি। কিন্তু মার্ডার ছিনতাইয়ের ব্যাপারে নিউ ইয়র্কের কাছে স্যার আমরা শিশু। এই দেখুন না, কলকাতায় বছরে খুন হয় একশো জনের মত, আর নিউ ইয়র্কে আড়াই হাজার! অথচ প্রায় সমান সমান পপুলেশন।”
“কোথায় শুনলেন কথাটা?”
“কাল টিভিতে বলছিল স্যার,” উজ্জ্বল মুখে খবরের অথেন্টিসিটি প্রমাণ করলেন একেনবাবু।
কি শুনতে কি শুনেছেন কে জানে! কিন্তু আমি আর কথা বাড়ালাম না।
“আচ্ছা স্যার, প্রমথবাবু বলছিলেন, এখানে ভারতীয় অ্যান্টিক ডিলার নাকি গোনাগুনতি?”
এই ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অর্থ হয় না। চুপ করে রইলাম।
“ইট মেকস সেন্স স্যার। ইন্ডিয়া গভর্নমেন্ট যা কড়াকড়ি করে! ভালো অ্যান্টিক দেশ থেকে আনতে হলে চুরি করে পাচার করা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।”
“আপনি কি মিন করছেন,” আমি বিরক্ত হয়ে বললাম। “অ্যান্টিক বিজনেসে যারা আছে, তারা সব চুরি করছে?”
“না, না, তা নয় স্যর। অ্যান্টিক ডিলার মাত্রই চোর নয়। আমি বলছি চোর হলে সে ভালো অ্যান্টিক ডিলার হতে পারে।“ চোখ বুজে সিগারেটে শেষ টানটা দিলেন একেনবাবু।
“দিস ইস মাই লাস্ট ওয়ান স্যার।“ ফাঁকা প্যাকেটটা আমাকে দেখিয়ে বাইরের ঘরের সোফায় গিয়ে বসলেন। “আই কুইট সিগারেট। আর জ্বালাব না আপনাকে।”
আমার অ্যাপার্টমেন্টে একটা বড় ঘরের একদিকে কিচেন-কাম-ডাইনিং এরিয়া, অন্যদিকে বসার ঘর। সুতরাং কিচেন থেকেও গলাটা একটু তুলে বসার ঘরের লোকদের সঙ্গে কথা বলা চলে।
আমি বললাম, “গুড ডিসিশন। তবে আমাকে জ্বালানোর প্রশ্ন নয়, ইট ইজ গুড ফর ইয়োর হেলথ।”
“আচ্ছা এই ক্রেডিট কার্ড জিনিসটা ফ্যান্টাস্টিক, তাই না স্যার?” প্লাস্টিকের একটা পাৎলা কার্ড, তার ওপর আপনার নাম আর নম্বর এম্বস করা। অথচ তাই দিয়ে আপনি হাজার হাজার ডলারের জিনিস কিনে ফেলছেন!”
“তা ফেলছি, তবে সে টাকা পরে দিতেও হচ্ছে। সময় মত না দিলে উইথ হেভি ইন্টারেস্ট।”
“তা বটে। তবে কি ওয়ার্ল্ড স্যার, আর আমরা কোথায় পড়ে আছি! পকেটে ক্যাশ না নিয়ে বাজারে যাওয়ার জো নেই।”
“কেন, আমাদের দেশেও তো ক্রেডিট কার্ড চলছে।”
“কি যে বলেন স্যার, কিসের সঙ্গে কিসের তুলনা! কজনের আছে কার্ড? আমাদের দেশে এসব সত্যি করে চালু হতে বহুদিন লাগবে। ব্লিক ফিউচার স্যার, ব্লিক ফিউচার।” বলে ঘন ঘন কয়েকবার পা নাচালেন একেনবাবু। “আচ্ছা স্যার, ফিউচারের কথায় মনে পড়ে গেল। আপনার এক বন্ধু ফরচুন টেলার না?”
“বন্ধু নয়, এককালে আমার এখানে কিছুদিন ছিলেন। আপনাকে তাঁর কথা কে বলল?”
“প্রমথবাবু। বলছিলেন ওঁর কথা নাকি খুব ফলে। তাছাড়া গ্রহ দশা কাটানোর জন্যে উনি নাকি রত্ন-ফত্ন প্রেসক্রাইব করেন – খুব এফেক্টিভ জুয়েল।”
“এফেক্টিভ কিনা জানি না, গ্রহ-রত্ন দেন বলে শুনেছি।“
“আপনি মনে হচ্ছে এসবে খুব একটা বিশ্বাস করেন না, ঠিক কিনা স্যার?”
“”না,” সত্যি কথাই একেনবাবুকে বললাম।
“যাঃ, তাহলে তো ওঁর কাছে যাওয়ার কোনো অর্থ হয় না।”
“কি মুশকিল, আপনার ইচ্ছে হলে আপনি নিশ্চয় যাবেন। আমার বিশ্বাস-অবিশ্বাসে আপনার কি এসে যায়!”
“তা না স্যার, আসল কথা – না থাক গে। প্রমথবাবুর বোধহয় একটু উইকনেস আছে – তাই না স্যার?”
“হ্যাঁ, প্রমথ কিছুটা বিশ্বাস করে।”
“তবে যাই বলুন স্যার, নীলা হ্যাস পাওয়ার। সকলকে স্যুট করে না অবশ্যি। যাদের করে – তাদের একেবারে ফরচুন এনে দেবে।“
কি অসম্ভব বক বক করতে পারে লোকটা, তাই ভাবছিলাম।
আমার মনের কথাটা একেনবাবু শুনতে পেলেন কিনা জানি না, কিছুক্ষণের মধ্যেই বকবকানি থামিয়ে দেখলাম ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ নিয়ে চুপ করে বসলেন। বাঁচা গেছে!
আমি রান্নায় মন দিলাম। কিন্তু কতক্ষণ? এবার একেনবাবুর প্রশ্ন, “আচ্ছা স্যার, কেউ যদি কার্ড চুরি করে বহু টাকার জিনিস কিনে ফেলে?”
আমি অবাক হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ওঁর দিকে তাকালাম।
“মানে আমি ক্রেডিট কার্ডের কথা বলছি,” একেনবাবু চিন্তার সূত্র ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করলেন।
“আপনি এখনো ঐ নিয়ে চিন্তা করছেন! আমি তো ভাবছিলাম আপনি নিউ ইয়র্ক টাইমস পড়ছেন!”
“পড়ছিলাম। কিন্তু নিউজ কিস্যু নেই, যতসব বস্তা পচা খবর! দেখুন না, এখনও সেই স্মিথসোনিয়ানের স্পেস মিউজয়াম থেকে চুরি নিয়ে পাতা ভর্তি! স্যার, দুটো স্পেস-স্যুট চুরি গেল কি গেল কিনা, হু কেয়ারস? কিন্তু একটা জলজ্যান্ত ইন্ডিয়ান রাস্তার ওপরে মার্ডারড হল, তার কোনও উল্লেখ নেই! টোটালি বায়াসড স্যার, টোটালি বায়াসড।”
কথাগুলো বলে একেনবাবু নিজের ঘরে চলে গেলেন। একটু বাদেই দেখি ছোট ছোট পাথর ভর্তি একটা জুতোর বাক্স হাতে নিয়ে ফিরে এসেছেন।
“আচ্ছা, এই পাথরগুলো কেমন লাগছে স্যার? কাল বেয়ার মাউন্টেন থেকে নিয়ে এসেছি।”
“ সুন্দর,” প্রায় না দেখেই বললাম আমি।
“প্রমথবাবুকে সারপ্রাইজ দেব বলে নিয়ে এলাম।”
“প্রমথ পাথর নিয়ে কি করবে?”
“কেন স্যার, ওঁর ক্যাকটাস গাছগুলোর নীচে ছড়িয়ে রাখবেন।”
এবার ভালো করে তাকালাম। না, পাথরগুলো সত্যিই সুন্দর। প্রমথ নিঃসন্দেহে খুব খুশি হবে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *