Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ম্যানহাটানে মুনস্টোন || Sujan Dasgupta » Page 16

ম্যানহাটানে মুনস্টোন || Sujan Dasgupta

সাতটা বাজতে না বাজতেই দেখি সবাই এসে হাজির। ব্রিজ শাহ এলেন সবার শেষে। একমাত্র উনিই আসবেন কিনা একটু সন্দেহ ছিল, অনেক নাকি কাজের চাপ! তাই বোধহয় সারা মুখে একটা অসন্তোষের ভাব!
প্রমথ একটা দুর্দান্ত ফ্রুট পাঞ্চ বানিয়েছিল। সেটা সার্ভ করার পর বলল, “আপনারা জানেন কিনা জানি না, আমাদের একেনবাবু কিন্তু মিস্টার প্যাটেলের মৃত্যু নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। কিন্তু তার রেসাল্টটা আমাদের এখনও বলেন নি! আপনারা সবাই এলে নাকি বলবেন! এইজন্যই স্পেশালি আপনাদের সবাইকে আজ ডেকেছি।”
ঘোষণাটা শোনা মাত্র সারা ঘর হঠাৎ চুপ হয়ে গেল। অবিনাশ বলল, “আই ডোণ্ট আণ্ডারস্ট্যাণ্ড! আঙ্কল সুইসাইড করেছেন – এ নিয়ে আর আলোচনার কী আছে?”
প্রমথ গম্ভীর ভাবে বলল, “কঠিন প্রশ্ন অবিনাশ। তবে সেটার উত্তর আমি দিতে পারব না, কিন্তু একেনবাবু বোধহয় পারবেন।”
অবিনাশ একেনবাবুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিতেই উনি মাথা চুলকোতে-চুলকোতে বললেন, “আপনি ঠিক বলেছেন স্যার, এটা যদি সুইসাইড হয় তা হলে আলোচনার কিছুই নেই।”
“তা হলে প্রমথ কথাটা তুলছে কেন?” অবিনাশ একেনবাবুর হেঁয়ালিটা ধরতে পেরে প্রশ্ন করল।
“কারণ স্যার, আমার ধারনা এটা সুইসাইড নয়।”
ব্রিজ শাহ এতক্ষণ বিরস মুখ করে পাঞ্চ খাচ্ছিলেন। বিরক্তি না চেপেই বললেন, “নোবডি কেয়ারস হোয়াট ইউ থিঙ্ক মিস্টার সেন! যেটা ম্যাটার করে, সেটা হল পুলিশের কী মত ।”
“অতি অবশ্য স্যার,” একেনবাবু ঘাড় নাড়লেন। “তবে কিনা পুলিশের মতামত তো সব সময় ঠিক নাও হতে পারে!”
“তারমানে আপনার মতটই সব সময় ঠিক!” ব্রিজ শাহর কথায় শ্লেষের ভাবটা সুস্পষ্ট।
“যেতে দিন মিস্টার শাহ,” শৈলেন সাঁপুই স্মিত মুখে বললেন। “একেনবাবুর একটু ডিটেকটিভ সাজার সখ হয়ছে, সাজতে দিন না!”
“আমি কিন্তু ব্রিজ আঙ্কলের সঙ্গে একমত , ” অবিনাশ বলল, “ওঁর কোনও রাইট নেই মনগড়া কতগুলো থিওরি বলে আমাদের সময় নষ্ট করা!”
“দ্যাটস এক্স্যাক্টলি মাই পয়েণ্ট,” ব্রিজ শাহ অবিনাশের সাপোর্ট পেয়ে গলাটা আরও চড়িয়ে একেনবাবুকে বললেন, “আপনার যদি কোনও বক্তব্য থাকে তাহলে পুলিশকে বলুন! খামোখা আমাদের সন্ধ্যাটা নষ্ট করার কোনও মানে হয় না!”
ব্যাপারটা এত তাড়াতাড়ি এরকম সিরিয়াস হয়ে যাবে বুঝি নি। আমি খালি ভাবছি, একেনবাবু এখন কী করবেন! একেনবাবু কিন্তু একবারেই উত্তেজিত হলেন না। খুব শান্ত ভাবে আমাকে আর প্রমথকে বললেন, “আসুন স্যার, ওভেন থেকে খাবারগুলো বার করি, ওঁদের নিশ্চয় খিদে পেয়ে গেছে!”
একেনবাবুকে এরকম পিছপা হতে দেখে আমি তো অবাক! প্রমথও বলল, “সে কি! রেসাল্টটা তাহলে কখন জানব?”
একেনবাবু উদাসীন ভাবে বললেন, “আমার মনে হয় স্যার, মিস্টার প্যাটেলকে নিয়ে আলোচনায় ওঁদের একটা সমস্যা আছে। জোর করে কি কোনও ফল হবে?”
স্যাম ওয়াকার আসা পর্যন্ত নমস্কার, কেমন আছেন, ইত্যাদি ছাড়া একটা কথাও বলেন নি। তিনি হঠাৎ বললেন, “মিস্টার সেন, আমার কিন্তু আপনার কথা শুনতে আপত্তি নেই।”
“থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। কিন্তু মিস্টার শাহ আর অবিনাশবাবুর যে আছে!”
প্রমথ এবার অবিনাশকে চেপে ধরল, “তোমার আপত্তির কারণটা কী অবিনাশ? তোমার কি ভয় পাবার কোনও কারণ আছে?”
অবিনাশ তাতে ভীষণ চটে গেল। “হোয়াট ড্যু ইউ মিন! ভয় পাব কেন, আমি কি খুন করেছি?”
“না করলে এত প্রবল আপত্তির তো কোনও কারণ আমি দেখছি না!”
অবিনাশের মুখ দেখে মনে হল, খুন যদি সত্যিই ওকে করতে হয়, তাহলে প্রমথকেই করবে!
ব্রিজ শাহ বললেন, “অলরাইট, লেট আস গেট ইট ওভার উইথ। আপনার যা বলার বলুন, কিন্তু মেক ইট শর্ট।”
“থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।”

আবহাওয়াটা একটু ঠাণ্ডা হয়েছে দেখে আমি খাবারগুলো আনতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু অতিথি সৎকার করার কোনও উপায় আছে, প্রমথ আমাকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে সোফায় বসিয়ে দিল। শুধু তাই নয় নিজেও গ্যাঁট হয়ে বসে বলল, “নিন মশাই, শুরু করুন।”
প্রমথ অনুমতি দিতেই একেনবাবু ঘাড়টা ঘষতে-ঘষতে শুরু করলেন, “আগে কয়েকটা ফ্যাক্ট আপনাদের সামনে রাখছি স্যার। মিস্টার প্যাটেলের মৃত্যুর খবর অবিনাশবাবু জেনেছেন শুক্রবার, ‘ইণ্ডিয়া অ্যাব্রড’ পড়ে। মিস্টার সাঁপুই জেনেছেন বৃহস্পতিবার, আমাদের কাছ থেকে। মিস্টার ওয়াকারও বৃহস্পতিবার খবরটা জেনেছেন, যদিও প্রমথবাবুর কাছে খবরটা শুনে উনি বিশ্বাস করেন নি। আমি আর প্রমথবাবু জেনেছি বুধবার রাত্রে, বাপিবাবু আমাদের আধ ঘাণ্টাটাক পরে। এখন পর্যন্ত যা বললাম, তাতে কি কোনও ভুল আছে স্যার?”
কেউ যখন প্রশ্নের কোনও উত্তর দিলেন না, তখন একেনবাবু বললেন, “তার মানে স্যার, আমি এখন পর্যন্ত কোনও কিছু ভুল বলি নি। শুধু যেটা আমার জানা নেই, সেটা হল মিস্টার শাহ কখন খবরটা পেয়েছিলেন।”
“আমি জেনেছি বৃহস্পতিবার দুপুরে, পুলিশের কাছ থেকে,” ব্রিজ শাহ গম্ভীর মুখে বললেন।
“তাহলে আপনিও বুধবার নন।”
“দ্যাটস কারেক্ট, কিন্তু আপনার বক্তব্যটা কী?” ব্রিজ শাহ একটু অসহিষ্ণু ভাবে বললেস
“বলতে চাচ্ছি স্যার যে, আমি, প্রমথবাবু, আর বাপিবাবু ছাড়া, আর কেউই এখানে মিস্টার প্যাটেলের মৃত্যুর খবর বৃহস্পতিবারের আগে জানতেন না।”
“তাতে সমস্যাটা কী?”
ব্রিজ শাহর প্রশ্নটা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে অবিনাশের দিকে মুখ ফিরিয়ে একেনবাবু বললেন, “স্যার, প্রমথবাবু আর বাপিবাবুর কাছে শুনেছি যে, আপনি আপনার আঙ্কলের হয়ে অনেক জায়গায় জিনিস ডেলিভারি করতে গিয়েছিলেন। কথাটা কি ঠিক?”
“হ্যাঁ, গিয়েছিলাম।”
“কি করে গেলেন আপনি, মানে কিসে চড়ে?”
“একটা গাড়ি ভাড়া করেছিলাম।”
“গাড়িটা কবে ভাড়া নিয়েছিলেন স্যার?”
“বৃহস্পতিবার।”
“বৃহস্পতিবার! মানে আপনার আঙ্কল যেদিন মারা যান, তার পরের দিন?” একেনবাবু যেন বেশ আশ্চর্য !
“হোয়াই ডু ইউ লুক সো সারপ্রাইজড? আমি তখন জানতাম না যে, আঙ্কল মারা গেছেন।”
“না, তা নয়। কিন্তু আপনি সিওর স্যার যে, বৃহস্পতিবারের পরে, মানে শুক্রবার গাড়ি ভাড়া নেন নি?”
অবিনাশ কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল, “আপনি এরকম সিলি প্রশ্ন করছেন কেন? বৃহস্পতিবার সকালে আমি গাড়ি ভাড়া করে জিনিসগুলো ডেলিভার করি। ইনফ্যাক্ট সেই গাড়িতেই শুক্রবার মিস্টার ওয়াকারকে সঙ্গে নিয়ে আমি এ বাড়িতে আসি। প্রমথ আর বাপির সঙ্গেও সেদিন আমাদের দেখা হয়। এই সিম্পল জিনিসটা আমার মনে থাকবে না!”
“আই সি। তারমানে স্যার, আপনি গাড়ি ভাড়া করেছেন বৃস্পতিবার, আর শুক্রবারের আগে এখানে আসেন নি। অ্যাম আই রাইট?”
“এলে নিশ্চয় বলতাম। এর মধ্যে এত গোলমালের কি আছে?”
“না, না, স্যার, গোলমালের প্রশ্ন নয়। আই অ্যাম সরি, এবার ব্যাপারটা আমার কাছে ক্লিয়ার হয়েছে।”
অবিনাশ দেখলাম ব্রিজ শাহর দিকে তাকিয়ে একটু হতাশ ভাবে মাথা নাড়ল।
একেনবাবু তাতে ভ্রুক্ষেপ না করে কান চুলকোতে-চুলকোতে বললেন, “একটা জেনারেল কোয়েশ্চেন স্যার, আমাকে একটু বলবেন, কি ভাবে এদেশে গাড়ি ভাড়া করা যায়?”
অবিনাশ প্রমথর দিকে তাকিয়ে বলল, “ডু আই হ্যাভ টু অ্যানসার দিস?”
প্রমথ দেখলাম একটু অস্বস্তি বোধ করছে। আমার তো বাস্তবিকই লজ্জা লাগছে একেনবাবুর আর্গুমেণ্টের বহর দেখে! প্রমথই দেখলাম শেষমেষ জবাব দিল, “গাড়ি ভাড়া করা এদেশে খুবই সিম্পল একেনবাবু। দরকার শুধু আপনার ড্রাইভার্স লাইসেন্স, আর ক্যাশ বা ক্রেডিট কার্ড।”
“ক্যাশ না হয় কোনমতে জোগাড় করা গেল। কিন্তু ড্রাইভার্স লাইসেন্সও দেখাতে হয় নাকি?”
“নিশ্চয়, নইলে আপনার হাতে গাড়ি ছেড়ে দেবে কেন!”
“তাহলে তো গাড়ি ভাড়া করাটা খুব সিম্পল ব্যাপার নয় স্যার, কারণ লাইসেন্সটা তো লাগবে!”
ব্রিজ শাহ আর চুপ করে থাকতে পারলেন না, “ইজ দ্যাট এ বিগ ডিল?”
“ইট ইজ এ বিগ ডিল স্যার, ভেরি বিগ ডিল। কারণ আমি এখন সত্যই কনফিউজড!”
“ফর হোয়াট?”
“কারণ স্যার অবিনাশবাবুর লাইসেন্সটা ছিল এই অ্যাপার্টমেণ্টে। দেশে যাবার আগে পিক পকেট হবার ভয়ে উনি ওটা এখানে রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু যেটা সমস্যা,সেটা হল স্যার উনি শুক্রবারের আগে এখানে আসেন নি। অথচ গাড়ি ভাড়া করেছিলেন বৃহস্পতিবার। এবার আপনিই বলুন, ব্যাপারটা কি কনফিউজিং নয়?”

ঘরে নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যাচ্ছে না। অবিনাশ আমার ঠিক পাশেই বসে। ওর হাতটা এত কাঁপছে যে, গেলাসের ভেতর পাঞ্চটা চলকে-চলকে উঠছে! অবিনাশ যে ডাহা মিথ্যে বলেছে, তাতে সন্দেহ নেই!
একেনবাবু এবার অবিনাশকে উদ্দেশ্য করে বললেন,”আপনি কিন্তু স্যার কনফিউশানটা রিজলভ করলেন না! আপনি কি এসেছিলেন বুধবার রাত্রে?”
অবিনাশ এবার মুখ খুলল। প্রায় কাঁদো-কাঁদো ভঙ্গিতে বলল, “হ্যাঁ, আমি এসেছিলাম। কিন্তু… কিন্তু আমার আসার আগেই আঙ্কল মারা গিয়েছিলেন! মিস্টার সেন, বিশ্বাস করুন, ইউ গট টু বিলিভ মি!”
একেনবাবু দেখলাম একেবারে নির্বিকার। বললেন, “আপনি কি স্যার একটু বলবেন এক্স্যাক্টলি কি ঘটেছিল?”
অবিনাশ ভীষণ ঘামছে। একটু-একটু হাঁপাচ্ছেও। বলল, “আমি এসেছিলাম বুধবার রাত্রে। না এসে উপায় ছিল না। লাইসেন্স ছাড়া আমি একেবারে হোটেলের মধ্যে আটকা! যেসব জায়গায় আঙ্কল আমাকে যেতে বলেছেন, গাড়ি ছাড়া সেসব জায়গায় যাওয়া ইমপ্র্যাক্টিক্যাল। তাই আমি আঙ্কলকে ফোন করেছিলাম, যদিও আঙ্কল কোনও রকম যোগাযোগ রাখতে আমাকে বারণ করেছিলেন। যাইহোক, আঙ্কল বলেছিলেন ন’টার আগেই আসতে, কারণ তারপরেই প্রমথ এসে যাবে। ঝড়বৃষ্টির জন্য আমার ট্যাক্সি পেতে একটু দেরি হয়েছিল। আমি সোয়া ন’টা নাগাদ এসে পৌঁছই। আমার চাবি ছিল, তাই বেল না বাজিয়েই অ্যাপার্টমেণ্টে ঢুকি। কারও সাড়াশব্দ না পেয়ে, সোজা নিজের ঘরে যাই। আমার লাইসেন্সটা ছিল নাইট টেবিলের ড্রয়ারে, সেটা তুলে নিই। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আঙ্কল বোধহয় বাথরুমে, কারণ দরজাটা বন্ধ ছিল। কিন্তু আমার ঘর থেকে যখন বেরোচ্ছি, তখনই ডাইনিং টেবিলে বীভৎস দৃশ্যটা আমার চোখে পড়ে! আই গট প্যানিকড, আমি একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে হোটেলে ফিরে যাই। ইট মে সাউণ্ড অড , বাট দ্যাটস এক্স্যাক্টলি হোয়াট আই ডিড।”
“তারপর স্যার কী করলেন?”
“তারপর? ওয়েল, সারারাত আমার প্রায় শকের মধ্যেই কাটে। সকাল হতে না হতেই আমি বেরিয়ে একটা গাড়ি ভাড়া করি। কেন করি, তার জবাব দিতে পারব না। সত্যি বলতে কি, আমার যে কি করনীয়, কিছুই তখন ভেবে উঠতে পারছিলাম না! ও হ্যাঁ, রাস্তা থেকে ফোনে ব্রিজ আঙ্কলকে একবার ধরার চেষ্টা করি, কিন্তু ওঁকে অফিসে পাই না। তখন ঠিক করি, যতক্ষণ ব্রিজ আঙ্কলকে না ধরতে পারছি, ততক্ষণ আঙ্কলের কাজগুলো করে যাব। আমি হোটেলে ফিরে এসে মাল তুলে ডেলিভারি দিতে ফিলাডেলফিয়াতে যাই। সেখান থেকে ফিরে দুপুর নাগাদ আমি ব্রিজ আঙ্কলকে ধরতে পারি। ব্রিজ আঙ্কল আমাকে উপদেশ দেন, পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে। কারণ আমিই হব ন্যাচেরাল সাসপেক্ট – মোটিভ এবং অপরচুনিটি, দুটোই আমার আছে বলে।”
“আর-একটা প্রশ্ন, আপনি কি অ্যাপার্টমেণ্টের দরজাটা বেরোবার আগে লক করে গিয়েছিলেন স্যার
“আমার মনে নেই, তখন আমার মাথার ঠিক ছিল না। শুধু মনে আছে দরজার নবটা, আমি রুমাল দিয়ে মুছেছিলাম। আমি জানতাম যে, পুলিশ ফিঙ্গার প্রিণ্ট নেবে। আই ওয়াজ স্কেয়ার্ড।”
“আই সি,” বলে একেনবাবু একটা সিগারেট ধরিয়ে চোখ-মুখ কুঁচকে কয়েকটা টান দিলেন। তারপর ব্রিজ শাহকে প্রশ্ন করলেন, “মিস্টার প্যাটেলের এই অ্যাপার্টমেণ্টে আসার পর ওঁর সঙ্গ কি আপনার কথা হয়েছিল?”
“হ্যাঁ, বুধবার উনি আমাকে ফোন করেছিলেন।” ব্রিজ শাহর মুখে কিন্তু সেই বিরক্তিভাবটা নেই। বেশ ভেবেচিন্তে সতর্কভাবে উত্তরটা দিলেন।
“কোনও বিশেষ কারণে কি?”
“ওয়েল,” ব্রিজ শাহ একটু ইতঃস্তত করলেন। তারপর বললেন, “আমার এক ক্লায়েণ্টকে কিছুদিন আগে উনি একটা মুনস্টোন বিক্রি করেছিলেন, সেটা উনি আবার কিনে নিতে পারেন কিনা খোঁজ করতে।”
“খোঁজটা কি পেয়েছিলেন?”
“হ্যাঁ, সেদিন বিকেলেই পেয়েছিলাম।”
“মিস্টার প্যাটেল কি সেটা জানতেন স্যার?”
“না, কিরিটভাইকে সেটা জানানোর সুযোগ হয় নি।”
“আই সি। বৃহস্পতিবার সকালে আপনি কোথায় ছিলেন স্যার?”
“আমার অফিসে।”
“ভেরি পাজলিং স্যার!”
“কি পাজলিং?” ব্রিজ শাহর ভুরুটা কোঁচকালো।
“এই যে আপনার বৃহস্পতিবার মিস্টার প্যাটেলকে ফোন না করাটা! আমার কিন্তু ধারণা ছিল স্যার, আপনার কথার নড়চড় হয় না। এই দেখুন না, আপনি আমাকে সেদিন ফোন করবেন বলেছিলেন, একদম ঠিক ঠিক সময় করেছিলেন। আই ওয়াজ রিয়েলি ইমপ্রেস্ড স্যার। আমি প্রমথবাবু আর বাপিবাবুকে সেকথা বলেওছি। ঠিক কিনা?”
আমি আর প্রমথ নীরবে মাথা নাড়লাম।
“আই ডোণ্ট আণ্ডারস্ট্যাণ্ড আপনি কি বলছেন।” ব্রিজ শাহর গলাটা একটু যেন ভীত শোনাল।
“আই থিঙ্ক ইউ আণ্ডারস্ট্যাণ্ড স্যার।” একেনবাবু এক মুখ ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, “মিস্টার প্যাটেল আপনার একজন পুরনো ক্লায়েণ্ট। তিনি আপনাকে বিশেষ করে বলেছিলেন বৃহস্পতিবার সকালে ফোন করতে। এতে কোন ভুলচুক নেই স্যার – প্রমথবাবুর নিজের কানে শোনা। আপনি ইনফরমেশনটা জোগাড় করলেন, কিন্তু ফোন করলেন না। বলুন স্যার, এটা কি পাজলিং নয়?”
ব্রিজ শাহ একেবারে স্তম্ভিত! আমি ব্রিজ শাহর মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে ভাবছি একেনবাবু কি করে সূত্রগুলো পর-পর সাজিয়ে এগোচ্ছেন!
একেনবাবু খুব শান্ত স্বরে বললেন, “স্যার, আপনার এই অস্বাভাবিক আচরণের শুধু একটাই উত্তর। আপনি জানতেন যে, মিস্টার প্যাটেল আর বেঁচে নেই। তারমানে, হয় আপনি বুধবার রাত্রে অবিনাশবাবুর মত এখানে এসেছিলেন, নয় ওঁর খুনের ব্যাপারে আপনার কোনও হাত ছিল।”
“অ্যাবসল্যুটলি নট, আই হ্যাভ নাথিং টু ডু উইথ হিস ডেথ!” ব্রিজ শাহ প্রতিবাদ করে উঠলেন। তারপর গলার স্বরটা নামিয়ে বললেন, “হ্যাঁ, মুনস্টোনটা হঠাৎ হাতে এসে যাওয়ায়, ওঁকে সেটা দিতে বুধবার রাত্রে এখানে আমি এসেছিলাম ঠিকই। বাট ইট ওয়াজ টু লেট, হি ওয়াস অলরেডি ডেড!”
একেনবাবু সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে ফেলে পাঞ্চের গ্লাসে চুমুক দিয়ে আরও কি জানি একটা প্রশ্ন ব্রিজ শাহকে করতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তাড়াতাড়ি পাঞ্চটা গিলতে গিয়ে বিষম টিষম একাকার! বিষমের ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই বাইরে হলওয়ের ফায়ার অ্যালার্মটা বেজে উঠল। দরজার বাইরে থেকে বেশ কয়েকজনের চেঁচামেঁচি শুনলাম, ‘ফায়ার, ফায়ার’ বলে। আমার দৃষ্টি বিভ্রম কিনা জানি না। মনে হল একটু ধোঁয়াও যেন দরজার ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢুকছে! না দেখার ভুল নয়, ধোঁয়া সত্যিই ঢুকছে। আমি আর প্রমথ পাশাপাশি দেয়াল ঘেঁসে বসে। প্রমথর পাশে একেনবাবু , তার পাশে অবিনাশ। সামনে লম্বা কফি টেবিল। আমাকে উঠতে হলে তিনজনকে ডিঙিয়ে যেতে হয়। আমি অবিনাশকে চিৎকার করে বললাম, “জানলা খোল।” অবিনাশ দেখলাম ঘাবড়ে পাথর হয়ে গেছে! স্যাম ওয়াকারের অবস্থাও তথৈবচ। প্রমথটা লাফিয়ে উঠে পড়েছিল বটে, কিন্তু একেনবাবু প্রমথকে জড়িয়ে ধরে, ‘ব্যস্ত হবেন না, ব্যস্ত হবেন না’ বলে এমন হৈচৈ জুড়লেন যে, প্রমথ জানলার কাছে যাওয়া দূরে থাক কফিটেবিলের চৌহদ্দিও পার হতে পারল না! একেনবাবুর মাথা রহস্যসন্ধানের ব্যাপারে সাফ হলেও, এদেশে আগুন লাগলে কয়েক মিনিটের মধ্যে বাড়িগুলোর যে কি দশা হয় – সে সম্পর্কে ওঁর কোনও ধারণাই নেই! আমি ওদের সবাইকে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে এলাম। আমায় দেখে অবিনাশও উঠল। ব্রিজ শাহ বাইরে ঘরের একটা জানলা নিয়ে ধস্তাধস্তি শুরু করেছেন। মিস্টার সাঁপুই চট করে দৌড়ে গিয়ে কিচেনে ডাইনিং টেবিলের সামনের জানলাটা খুলে ফেলেছেন। মুশকিল হচ্ছে, ফায়ার এস্কেপটা বাইরের ঘরের জানলা দুটোর নিচে। কিচেনের জানলা দিয়ে ফায়ার এস্কেপ-এ পৌঁছতে হলে প্রায় টার্জানের মত লাফ দিতে লাগে। তেমন লাফ দেবার ক্ষমতা এখানে কারোরই নেই, তার ওপর বাইরে যা অন্ধকার! এই দুর্যোগে দেখলাম শৈলেন সাঁপুইয়ের মাথাই একমাত্র কাজ করছে। অবিনাশ বাইরের দরজা খুলতে যাচ্ছিল। শৈলেন সাঁপুই বাধা দিলেন, “দরজা খুলবেন না, আগুন ভেতরে ঢুকে পড়বে।” ব্রিজ শাহ তখনও বাইরের ঘরের জানলা খুলে উঠতে পারেন নি দেখে আমি ঘরের অন্য জানলাটা খুলতে গেলাম। শৈলেন সাঁপুই চেঁচিয়ে বললেন, “ওগুলো জ্যাম, ছেড়ে দিন! একটা দড়ি জোগাড় করুন শিগগিরি!”
পরের মুহূর্তে যেটা ঘটল সম্পূর্ণ অভাবনীয়! একেনবাবু মুখে আঙুল দিয়ে সিটি বাজালেন, আর দেখলাম বাইরের দরজা খুলে ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট ঘরে ঢুকছেন!
ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট ভারি গলায় বললেন, “এভরিথিং ইস ওকে, আপনারা সবাই বসুন।”
আমরা এবার সবাই হতভম্ব! প্রমথ জিজ্ঞেস করল, “হোয়াট অ্যাবাউট দ্য ফায়ার অ্যালার্ম?”
ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট চোখ টিপে বললেন, “জাস্ট রিল্যাক্স, দেয়ার ইজ নো ফায়ার।”
বললেই কি রিল্যাক্স যায় নাকি! কিন্তু ক্যাপ্টেন একেবারে আঙুল নির্দেশ করে সবাইকে বসালেন। তারপর বললেন, “আপনারা হয়ত ভাবছেন, কেন আমি এখানে হঠাৎ এলাম। কারণ হচ্ছে, কতগুলো নতুন তথ্য আবিষ্কৃত হওয়ায় মিস্টার প্যাটেলের কেসটা আমরা আবার ওপন করেছি।”

এতক্ষণ তদন্ত চলছিল ঠিকই, কিন্তু সেটা পুলিশের কারবার ছিল না, মনে হচ্ছিল শুধু ধাঁধার জট খোলা হচ্ছে। এই সিচুয়েশনটা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি সিরিয়াস। সবাই চুপ করে অপেক্ষা করছি ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট আর কী বলেন শোনার জন্য।
একেনবাবু দেখি চেয়ার থেকে চট করে উঠে কানে-কানে ক্যপ্টেন স্টুয়ার্টকে কিছু একটা বললেন। ক্যাপ্টেন মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন, তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনারা হয়ত জানেন না, এই কেসটার তদন্ত বেশ কিছুদিন যিনি চালাচ্ছেন, তিনি হলেন কলকাতার গোয়েন্দা মিস্টার একেন্ড্রা সেন। নিউ ইয়র্কের পুলিশ কমিশনারের স্পেশাল ক্রাইম গ্রুপের উনি একজন ভিজিটিং মেম্বার। আমি এখানে শুধু মিস্টার সেনকে সাহায্য করতে এসেছি।” তারপর একেনবাবুর দিকে তাকিয়ে ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট বললেন, “ইট ইজ অল ইওরস একেন্ড্রা।
“থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। জাস্ট ফর ইওর ইনফরমেশন,” একেনবাবু ব্রিজ শাহ আর অবিনাশকে দেখিয়ে ক্যাপ্টেনকে বললেন, “মিস্টার শাহ আর অবিনাশবাবু স্বীকার করেছেন যে, বুধবার রাত্রে, অর্থাৎ মিস্টার প্যাটেল যে-রাত্রে মারা যান, ওঁরা এখানে এসেছিলেন। কিন্তু দুজনেই নাকি মিস্টার প্যাটেলকে মৃত অবস্থায় দেখেন। যে-কোনও কারণেই হোক ওঁরা পুলিশকে খবরটা জানান নি!”
“আই সি!”
ব্রিজ শাহ কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট হাত তুলে ওঁকে থামিয়ে দিলেন। “প্লিজ, প্রসিড একেন্ড্রা।”
একেনবাবু শুরু করলেন, এই কেসটাতে একটা জিনিস আমার খুব পাজলিং লাগছিল, সেটা হল এই মুনস্টোনের ব্যাপারটা। মিস্টার ওয়াকার মিস্টার প্যাটেলেকে একটা মুনস্টোন বিক্রি করেছিলেন। সেটা উনি আবার কিনে নিতে চাইছিলেন। এ পর্যন্ত অবশ্য কোনও সমস্যা নেই। মুনস্টোনটা হাত বদল হবে, আর সেই সুযোগে কয়েকজন ব্যবসায়ী লাভবান হবে, এটাই তো ব্যবসার নিয়ম। কিন্তু এমন সময় এক তৃতীয় ব্যক্তির উদয় হল। এই তৃতীয় ব্যক্তির মুনস্টোনটা এত ভীষণ ভাবে দরকার যে, সেটা না পেলে যে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে – সেটার ইঙ্গিত দিতেও সে পিছপা নয়! আমি বলছি স্যার, এই চিঠিটার কথা।”
একেনবাবু ওঁর সার্টের পকেট থেকে মিস্টার প্যাটেলের অ্যাপার্টমেণ্ট থেকে পাওয়া চিঠিটা দেখালেন।
“চিঠিটা একটু সাংকেতিক।

Mary owns one nice stone
Sounds music to my ear!
I must have it, else Mary dies.

প্রথমে পড়ে একটু উদ্ভট লাগলেও, একটু খুঁটিয়ে পড়লে বোঝা যাবে যে, প্রথম লাইনে মুনস্টোনের কথা বলা হচ্ছে। Mary owns one nice stone – প্রত্যেকটা শব্দের প্রথম অক্ষরগুলো দেখুন স্যার। এম ও ও এন, তারপর স্টোন, অর্থাৎ, মুনস্টোন। ঠিক কিনা স্যার? আর শেষটা বোঝা খুব একটা কঠিন নয়। মুনস্টোনটা না পেলে পত্রলেখক খুন করার হুমকি দিচ্ছেন! যাইহোক স্যার, এই চিঠিটা কিন্তু আমাকে খুব পাজলড করল। মুনস্টোন এমন কি মূল্যবান জিনিস হতে পারে, যার জন্য কেউ এরকম একটা চিঠি লিখবে! মিস্টার ওয়াকার কাছে শুনলাম, নাটালের এক ডিলার এর জন্য পনেরো হাজার ডলার দিতে রাজি। আমার কাছে সে-টাকার অঙ্কটা বিরাট মনে হলেও, নিউ ইয়র্কের বিজনেসম্যানদের কাছে তো সেটা সত্যি নয়! ইতিমধ্যে আমি একটা জিনিস আবিষ্কার করলাম। সেটা হল, পিঙ্ক এলিফ্যাণ্টে মিস্টার প্যাটেল যাঁদের সঙ্গে তাস খেলতেন, সেই দলে যিনি ‘বস’ বলে পরিচিত – তিনিই এই চিঠিটা পাঠিয়েছিলেন। ইণ্টারেস্টিংলি স্যার, এই চিঠি পাঠানোর অল্প আগে পিঙ্ক এলিফ্যান্ট রেস্টুরেন্টে এই বস-এর সঙ্গে সিড বলে একজনের কথাকাটি হয়। এই সিড কে সেটা আমি উদ্ধার করি ওখানকার ওয়েটারের দেখানো একটা ছবি থেকে। সিড হলেন সহদেব ভারওয়ানি। আমি ধরে নিচ্ছি স্যার, আপনারা সবাই সহদেব ভারওয়ানিকে চেনেন।”
স্যাম ওয়াকার বললেন, “ভারওয়ানি, মানে যিনি অ্যাণ্টিক ডিলার ছিলেন?”
“রাইট স্যার। এই সহদেব বস-এর বদলে কার্টের সঙ্গে ডিল করবেন হুমকি দেন। কার্ট হলেন মিস্টার কিরিট প্যাটেল। তার ফলটা স্যার আপনারা সবাই জানেন। এঁদের দুজনের কেউই আর বেঁচে নেই। প্রশ্ন হল, এঁরা দুজনেই কি প্রাণ দিলেন মাত্র ১৫ হাজার ডলারের মুনস্টোনের জন্য? ইট ডাস নট মেক সেন্স – অ্যাবসোল্যুটলি নো সেন্স! তার থেকেও বড় কথা হোয়াই সাচ সিক্রেসি? একটা মুনস্টোনের জন্যে এরকম একটা সাংকেতিক চিঠি লেখার কি দরকার? আর এমন কি মহামূল্য জিনিস ওটা, যার জন্যে প্রাণের ভয় দেখানো হচ্ছে? তারপর আমি রিয়্যালাইজ করলাম পিঙ্ক এলিফ্যান্টের ঘটনার সঙ্গে নাটালের সেই মুনস্টোনের কোনও যোগ নেই, কারণ স্যাম ওয়াকারকে মিস্টার প্যাটেল বুধবার ফোন করে বলেছিলেন বৃহস্পতিবার বিকেলে এই অ্যাপার্টমেন্টের নম্বরে ফোন করতে। তারমধ্যে তিনি মুনস্টোনের খবরটা দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সেই মুনস্টোনের সঙ্গে মিস্টার ভারওয়ানির যোগ থাকতে পারে না, কারণ এর বেশ কয়েকদিন আগেই তিনি মারা গেছেন। তাহলে চিঠির মুনস্টোনটা কি?
আসলে কনফিউসনটা হল, একটা নয় স্যার, এই কেসে দু-দুটো মুনস্টোন জড়িত! একটা মূল্যবান, কিন্তু আর-একটা প্রায় অমূল্য! প্রথমটার কথা আমরা এখানে সবাই জানি, কিন্তু দ্বিতীয়টা কি? দ্যাট ওয়াজ মাই পাজল স্যার। আর সেটাই ক্রিস্টাল ক্লিয়ার হয়ে গেল, ব্রুস স্প্রিংস্টিনের রক কনসার্ট শুনতে গিয়ে। হঠাৎ খেয়াল হল, আরে, রক আর স্টোন তো একই জিনিস! সাংকেতিক চিঠিটিতে কিন্তু হিণ্টও ছিল, মিউজিক টু মাই ইয়ার! না,মুনস্টোন নয়, চিঠিতে হয়েছিল মুনরকের কথা। হ্যাঁ স্যার, মুনরক ! যার জন্য পৃথিবীর বড় বড় কালেক্টররা লক্ষ লক্ষ ডলার দিতে দ্বিধা করবে না!”
“মানে স্মিথসোনিয়ানের সেই চুরি?” প্রমথ সবিস্ময়ে বলল।
“আই থিঙ্ক সো স্যার। আমার ধারণা সহদেব ভারওয়ানিই সেটা করেছিলেন, আর চুরি করার আইডিয়াটা দিয়েছিলেন বস। এ নিয়ে বস-এর সঙ্গে আগেই একটা ডিল হয়েছিল। গোল পাকাল কাজটা সেরে সহদেব যখন অরিজিন্যাল ডিলের ডবল টাকা চাইলেন। না পেলে বসকে বিক্রি না করে মিস্টার প্যাটেলকে বিক্রি করবেন – এমন ইঙ্গিত দিলেন। সহদেব প্রাণ দিলেন বস-কে অমান্য করার জন্য। যেটা জোর করে বলতে পারব না, সেটা হল মিস্টার প্যাটেলকে কেন মারা হল! হয়ত বস ভেবেছিলেন যে, মিস্টার প্যাটেলের কাছে মুনরকগুলো আছে; অথবা সন্দেহ করেছিলেন যে, মিস্টার প্যাটেল নোজ টু মাচ অ্যাবাউট হিজ ইনভলভমেণ্ট ইন দ্য ক্রাইম। আমার ধারণা মিস্টার সাঁপুই সেটা আমার থেকে ভাল বলতে পরবেন। ঠিক কিনা স্যার?” শৈলেন সাঁপুইয়ের দিকে তাকিয়ে একেনবাবু তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন।
শৈলেন সাঁপুইয়ের মুখ দেখলাম একেবারে পাথরের মতো। দাঁত চেপে তাচ্ছিল্যভরে বললেন, “ইউ আর এ ফুল একেনবাবু। ইউ হ্যাভ নো প্রুফ!”
“আই মে বি এ ফুল স্যার, কিন্তু হ্যাণ্ড রাইটিং এক্সপার্টরা প্রমাণ করতে পারবেন, চিঠিতে এই অ্যাপার্টমেণ্ট নম্বর ৩০৪-টা আপনার নিজের হাতের লেখা।” চিঠিটা দেখিয়ে একেনবাবু বললেন।”
“তাতে কিছুই প্রমাণ হয় না। ওই চিঠিটা আমি যদি লিখেও থাকি, সো হোয়াট? আপনার কি প্রুফ আছে যে, আমি এখানে এসে মিস্টার প্যাটেলকে খুন করেছি! আমি আবার আপনাকে বলছি, আপনার কোনও প্রমাণই নেই!”
“আই অ্যাডমিট স্যার, আমার আগে ছিল না।” একেনবাবু মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন। “কিন্তু এখন স্যার আছে।”
সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে আছি একেনবাবুর পরের কথাগুলো শোনার জন্য।
“মিস্টার সাঁপুই, আপনি একটু আগে ফায়ার অ্যালার্ম শুনে আপনার চেয়ারের একদম পাশে দু-দুটো জানলা থাকা সত্বেও, অতদূরে গিয়ে কিচেনের জানালাটা খুললেন কেন? সেটা কি খুব আনইউজুয়াল নয় স্যার – হাতের ডগায় দু-দুটো জানলা ছেড়ে দূরের জানলাটা গিয়ে খোলা! শুধু তাই নয় স্যার, আপনি বাপিবাবুকে বললেন, ওগুলো, মানে বাইরের ঘরের জানালাগুলো, সব জ্যাম! আপনি কী করে সেটা জানলেন স্যার? আপনি তো ওগুলো খোলার কোনও চেষ্টাই করেন নি! যদি না স্যার, ক’দিন আগে সে-চেষ্টা আপনি করে থাকেন। আমি বলি স্যার, বুধবার রাত্রে কি হয়েছিল। ও-দুটো জানলা আপনি খোলার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু খুলতে পারেন নি। কিচেনের জানলাটা খুলল। তাই মিস্টার প্যাটেলকে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে ওঁকে হত্যা করলেন। তারপর কিচেনের জানলা খুলে, ওঁর হাতে রিভলবারটা ধরিয়ে দিয়ে বাইরে একটা গুলি ছুঁড়লেন, যাতে হাতে বারুদের গুঁড়ো দেখে সবাই সুইসাইড বলে মনে করে। আমি কি খুব ভুল বলছি স্যার?”
“ইট ইজ এ ট্র্যাপ!” শৈলেন সাঁপুই মুখ বিকৃত করে চেঁচিয়ে উঠলেন, “আপনাদের হোল ফায়ার বিজনেস ইজ এ ট্র্যাপ!”
“ইউ আর রাইট স্যার,” একেনবাবু মাথা চুলকোতে-চুলকোতে স্বীকার করলেন।
“এণ্ড এ রিয়েল গুড ওয়ান”, ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট শৈলেন সাঁপুইয়ের হাতে হাতকড়া লাগাতে-লাগাতে বললেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *