Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ম্যানহাটানে মুনস্টোন || Sujan Dasgupta » Page 12

ম্যানহাটানে মুনস্টোন || Sujan Dasgupta

স্যাম ওয়াকার ভারতীয় ক্রিশ্চান, জাম্বিয়াতে মানুষ। শুধু নামে নয়, চেহারা দেখলেও পরিষ্কার বোঝা যাবে না যে, স্যাম ভারতীয়। চুলগুলো কোঁকড়া-কোঁকড়া, ঠোঁটটা পুরু – মোটেও টিপিক্যাল ভারতীয় চেহারা নয়। বয়সে আমাদের থেকে বেশ কয়েক বছরের ছোটই হবে মনে হল।
আমি স্যাম ওয়াকারকে প্রশ্ন করলাম, “মিস্টার প্যাটেলকে ধরার চেষ্টা করছিলেন কেন?”
স্যাম যে উত্তরটা দিলেন, সেটা একদমই আশা করি নি। বললেন, “একটা মুনস্টোনের খোঁজে।”
কথাটা শুনে আমি আর প্রমথ মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম।
আমি শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললাম, “দেখুন, শুধু আপনি নন, একাধিক লোক এই মুনস্টোনটার ব্যাপারে গত কয়েকদিন ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এটা এত কী মহামূল্য জিনিস আমাকে বলবেন?”
আরও অনেকে মুনস্টোনটার খোঁজ করছে জেনে স্যাম ভীষণ আশ্চর্য হল। তবে আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম। যে মুনস্টোন নিয়ে এত গণ্ডগোল, সেটা বহুদিন আগে এক জুলু প্রিন্সের কাছ থেকে স্যামের বাবা পান। মাস কয়েক আগে কিছু টাকার প্রয়োজন হওয়ায় স্যাম ওটা পাঁচ হাজার ডলারে কিরিট প্যাটেলকে বিক্রি করে দেয়। ক’দিন আগে নাটালের এক জেমস ডিলার হঠাৎ স্যামকে ফোন করে জানতে চায় ওই মুনস্টোনটা স্যামের কাছে আছে কি না! তার জন্য ১৫ হাজার পর্যন্ত সে দিতে রাজি! ফোনটা পেয়েই স্যাম কিরিট প্যাটেলকে ফোন করে। কিন্তু কিরিট প্যাটেল এর মধ্যেই ওটা আর কাউকে বেচে দেয়েছেন! স্যাম তখন ওঁকে নাটালের ডিলারের টাকার অঙ্কটা বলে। কিরিট প্যাটেল বলেন যে, টাকার অ্যামাউণ্টটা আর কাউকে না জানাতে। উনি দু-চার পয়সা বেশি দিয়ে আবার ওটা কেনার চেষ্টা করবেন। তারপর বিক্রি করে যে লাভটা হবে, ওঁরা দু’জন সেটা ভাগ করে নেবেন। এই হল ঘটনা।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আপনাকে কি মিস্টার প্যাটেল বলেছিলেন যে, কাকে ওটা বিক্রি করেছিলেন?”
স্যাম উত্তর দিলেন, “না”।
“এখানকার এই ফোন নম্বরটা আপনাকে কে দিল?”
“মিস্টার প্যাটেল। আমাকে বুধবার ফোন করে বলেছিলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে এই নম্বরে ফোন করতে। তার মধ্যেই উনি খবরটা পেয়ে যাবেন।”
ইট ইজ এ বিলিভেবল স্টোরি।
প্রমথ বলল, “সবই বুঝলাম। কিন্তু যেটা বুঝলাম না, সেটা হল, আপনি সেদিন আচমকা ফোনটা ছেড়ে দিলেন কেন?”
স্যাম ওয়াকার লজ্জা পেলেন। বললেন, “আপনি ফোন ধরেছিলেন বুঝি! আই অ্যাম সরি। মিস্টার প্যাটেল ডেড শুনে ভেবেছিলাম, কেউ নিশ্চয় প্র্যাক্টিক্যাল জোক করছে!”

অবিনাশ এই ফাঁকে নিজের ঘরে গিয়ে কয়েকটা সোয়েটার আর কোট নিয়ে এসেছে দেখলাম। প্রমথ জিজ্ঞেস করল, “কী ব্যাপার, তুমি ওগুলো নিয়ে কোথায় চললে?”
“ভাবছি কয়েকদিন হোটেলেই থাকব।”
“নিজের অ্যাপার্টমেণ্টে ছেড়ে হোটেলে থাকবে?” আমি অবাক হয়ে বললাম।
অবিনাশ সোজাসুজি জবাব দিল না। তবে অনুমান করলাম যে, প্রমথ যে-কারণে নিজের ঘরে থাকছে না, ওরও বোধ হয় সেই একই কারণ। ভূতের ভয়েই সবাই গেল!
আমি ভদ্রতা করে জিজ্ঞেস করলাম যে, গাড়ি করে ওকে পৌঁছে দেব কিনা। ও বলল যে, মালপত্র ডেলিভারি করার জন্য ও এক সপ্তাহের জন্য একটা গাড়ি ভাড়া করেছে। সুতরাং যানবাহনের কোনও অসুবিধা নেই। বাঁচিয়েছে! এই শীতে আমার এতটুকু বেরোতে ইচ্ছে করছিল না।

একেনবাবু এলেন সেই সন্ধ্যায়। প্রমথটার কাণ্ড, একেনবাবু বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই বলল, “কি মশাই, আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে আপনারা দু’জন যে বেশ গোয়েন্দাগিরি করে বেড়াচ্ছেন!”
আমি আর একেনবাবু দু’জনেই অপ্রস্তুত!
“ছি ছি, কি যে বলেন স্যার! হঠাৎ মাথায় খেয়াল চেপেছিল, আপনি হাসাহাসি করবেন বলে আর জানাই নি!” বলে আমার দিকে একটা অনুযোগপূর্ণ দৃষ্টি দিলেন।
“না জানিয়ে ভুল করেছেন,” প্রমথ কপট গাম্ভীর্য দেখিয়ে বলল। “জানালে অনেকগুলো দরকারি তথ্য দিতে পারতাম। যেমন, …” এই বলে প্রমথ গড়গড় করে ব্রিজ শাহর ফোন থেকে শুরু করে অবিনাশের সঙ্গে আমাদের দেখা হওয়া পর্যন্ত প্রচণ্ড ডিটেলে আওড়ে গেল। তারপর একেনবাবুকে একটু খোঁচাল, “এবার বলুন পার্টনার বাছতে ভুল করেছেন কিনা?”
একেনবাবু দমবার পাত্র নন। বললেন, “আপনি আপনার এক্সপেরিমেণ্ট নিয়ে এত ব্যস্ত থাকলে আমি কী করতে পারি স্যার?”
এরকম হাসি ঠাট্টার মধ্যে দিয়েই এ ক’দিনের লুকোচুরির ব্যাপারটা চলে গেল। ভাগগিস প্রমথটা হড়বড় করে বলে ফ্যালে নি যে, আমি একেনবাবুকে সন্দেহ করছিলাম! তা হলে সত্যই ভারি লজ্জায় পড়তে হত!
প্রমথ একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা, আপনি যখন সিওর এটা মার্ডার, তাহলে পুলিশকে সেটা জানালে হয় না?”
একেনবাবু বললেন, সেটা হবে স্যার খোদার ওপরে খোদকারি। তার আগে আর-একটু আঁটঘাট বাঁধা দরকার। মানে একজন সাসপেক্ট, কিছু এভিডেন্স।”
“অবিনাশ নিশ্চয় একটা সাসপেক্ট।” প্রমথ বলল।
“শিওর স্যার। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, হি লুকস টু মাচ লাইক এ সাসপেক্ট।”
“তার মানে?”
“ভেবে দেখুন স্যার, অবিনাশবাবু যদি সত্যই খুন করতে চাইতেন, তা হলে এইভাবে লুকিয়ে এসে, কোনও রকম অ্যালিবাই ছাড়া খুন করে, তারপর হঠাৎ উদয় হওয়াটা মোটেই স্মার্ট মুভ নয়।”
“তা ঠিক, কিন্তু এও তো হতে পারে যে, ডিটেকটিভরা ঠিক আপনার মতই ভাববে বলে অবিনাশ প্ল্যান করে এটা করেছিল?”
“আপনার সঙ্গে স্যার কথায় পারা মুশকিল। না, মেনে নিচ্ছি যে, অবিনাশবাবুকে আমরা বাদ দিতে পারি না।”
“হাউ অ্যাবাউট স্যাম ওয়াকার?” আমি প্রশ্ন তুললাম, যদিও আমার মন বলছিল যে, লোকটা মোটেও ক্রিমিন্যাল টাইপের নয়।
“পসিবল,” প্রমথ বলল, “ও হয়ত অবিনাশের পার্টনার ইন দ্য ক্রাইম।”
“ভাল কথা,” আমি একেনবাবুকে বললাম, “আপনি মিস্টার প্যাটেলের ডায়রিটা পড়েছেন?”
“ভালো করে নয় স্যার, তবে পাতা উলটেছি।”
“একটা ইণ্টারেস্টিং জিনিস দেখলাম, শুক্রবারের সমস্ত এনট্রি ডায়রি থেকে ছেঁড়া।”
“এক্সেলেণ্ট অবজারভেশন স্যার। সেটা একটু অনুসন্ধান করার জন্য একবার কুইন্সে যাওয়া দরকার।”
“কুইন্সে?” আমি খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
“জাস্ট এ হাঞ্চ স্যার। ডায়রির মধ্যে একটা পার্কিং-এর টিকিট পেয়েছিলাম। সেটার ওপরে পিঙ্ক এলিফ্যাণ্ট রেস্টুরেণ্টের ছাপ, আর যে ডেটটা স্ট্যাম্প করা – সেটা হল ফেব্রুয়ারি ৯, ১৯৯০, অর্থাৎ শুক্রবার। আমি আজ নিউ ইয়র্ক সিটির টেলিফোন গাইড থেকে দেখলাম, রেষ্টুরেণ্টটা হচ্ছে কুইন্সে-এ।”
“ওয়েট এ মিনিট, টিকিটতো পার্কিং লট থেকে গাড়ি বের করার সময় জমা দিতে হয়, সেটা ডায়রির মধ্যে এলো কি করে?”
একেনবাবুকে একটু হতভম্ব দেখে আমি পার্কিং ডিসকাউন্টের ব্যাপারটা এক্সপ্লেইন করলাম। প্রাইভেট পার্কিং কোম্পানির সঙ্গে রেস্টুরেন্টের অনেক সময় ডিল থাকে খরিদ্দারদের কাছ থেকে কম পার্কিং ফি নেবার জন্যে। সেইজন্যেই বিল পে করার সময় ক্যাশিয়ারকে পার্কিং টিকিটটা দিলে সে তার ওপর রেস্টুরেন্টের ছাপ মেরে দেয়। পার্কিং অ্যাটেন্ডেন্ট সেই ছাপ দেখলে ডিসকাউণ্ট দেয়। কিন্তু টিকিটটা পার্কিং অ্যাটেন্ডকেই জমা দিতে হয় – ওদের হিসেব রাখার জন্যে।
“তাই নাকি স্যার! তাহলে তো আরও ওখানে যাওয়া দরকার।”
“কখন যেতে চান?” প্রমথ জিজ্ঞেস করল।
“শুভস্য শীঘ্রম স্যার। এখন যাওয়া যায় না?”
“অন্ধকার হয়ে আসছে, এখন যাবেন? কুইন্স এমনিতে খুব আনসেফ নয়, কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা আছে,” আমি সতর্ক করলাম।
“আজ যাওয়াটাই ভাল স্যার। কারণ আজও শুক্রবার। উই মে গেট সাম ক্লু কেন ডায়রির পাতাগুলো ছেঁড়া হয়েছিল।”
প্রমথ বলল, “ইশশ্, আমার এত যেতে ইচ্ছে করছে! কিন্তু একবার ল্যাবে না গেলেই নয়। আর ফিরতে ফিরতে দেরি হয়ে যেতে পারে।”
“তাহলে তো মুশকিল স্যার।”
“আমি যেতে পারি,” আমি বললাম।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *