Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ম্যানহাটানে মুনস্টোন || Sujan Dasgupta » Page 10

ম্যানহাটানে মুনস্টোন || Sujan Dasgupta

সকালে ব্যোমশেলটি ফাটিয়ে একেনবাবু কেটেছেন, ফিরতে ওঁর নাকি আজ সন্ধে হবে। আমার মাত্র আজ একটা ক্লাস। সেটা সেরে অফিসে এসে কাগজপত্রগুলো ব্রিফ কেসে ঢোকাতে গিয়ে দেখি মিস্টার প্যাটেলের খাতাটা! নিশ্চয় তাড়াহুড়ো করে বেরোবার সময় অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে ওটাকে ঢুকিয়ে ফেলেছিলাম! খাতাটা বের করে একটু পাতা ওলটালাম। প্রতি পাতার ওপরে হাতে লেখা একটা তারিখ। প্রথম তারিখ দেখলাম ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৯। শেষ লেখা মাত্র কয়েকদিন আগের, ১০ ফেব্রুয়ারির। খুবই নিরস দিনপুঞ্জী। ১ সেপ্টেম্বরের পাতায় লেখা:

কাল সিডের বাড়িতে ব্রিজ খেলতে গিয়েছিলাম। আমি-সিড ভার্সাস সিদ্দিকি-কে.জি.। আমরা দুটো রাবার জিতেছি। বাজি ধরে খেলা উচিত ছিল! সিড একটা বড়সর কিছুর প্ল্যান করছে। ঠিক কি বলল না। তবে ইট ইজ ভেরি ভেরি বিগ – ও নিজে সামলাতে পারবে না। হি নিডস হেল্প – আমায় দলে নিতে চায়। সিড-এর বাড়িতে এই শেষ ব্রিজ খেলা। এর পর অন্য কোথাও।
গোপালরাজ বলেছে আমার চিঠি পায় নি। হি ইস লাইং।
আজ ৯টায় কে.জি.-র বাড়ি যাচ্ছি। একটা ভালো অপরচুনিটি আছে। মার্জিন নিয়ে সমস্যা হবে, কারণ কে.জি. পনেরো পার্সেন্ট চাচ্ছে!

অন্যান্য তারিখেও এরকমই এনট্রি। শেষ লেখাটা মাত্র এক লাইনের – বিশ্বাস করতে পারছি না সিড এভাবে চলে গেল! কোথায় গেল, কেন গেল – তার কোনও উল্লেখ নেই। সত্যি কথা বলতে কি, চাঞ্চল্যকর কিছুই চোখে পড়ল না, যা নিয়ে পরে অনুসন্ধান চালান যায়। হঠাৎ খেয়াল করলাম ৮ সেপ্টেম্বর মিস্টার প্যাটেল কিছু লেখেন নি। কিন্তু অবাক লাগল যখন দেখলাম যে, ১৫ সেপ্টেম্বরেও কোনও কিছু লেখা নেই। ইণ্টারেস্টিং, পনেরো হচ্ছে আটের সাত দিন পরে। পনেরোর সঙ্গে সাত যোগ করলে দাঁড়ায় বাইশ। আমি ২২ তারিখে কি লিখেছেন দেখতে গিয়ে দেখলাম যে, ওই তারিখেও কোনও এনট্রি নেই! ২৯ তারিখও শূন্য। ক্যালেণ্ডারে দেখলাম, ৮ সেপ্টেম্বর হচ্ছে শুক্রবার। অর্থাৎ কোনও শুক্রবারই ডায়রিতে কিছু লেখা হয় নি! এবার খাতাটাকে একটু ভালো করে পরীক্ষা করলাম। আমেরিকাতে এধরণের খাতার খুব চল – রিং বাইণ্ডার দেওয়া খাতা। রিং-এর ভেতরে দেখলাম কাগজের কিছু-কিছু আঁশ তখনও লেগে! তার মানে কেউ খাতা থেকে কিছু কাগজ ছিঁড়েছে! কিন্তু কে এবং কেন? এক হতে পারে যে, ওই বিশেষ দিনগুলোতে এমন কিছু ঘটেছিলো – যেটা কিরিট প্যাটেল আর কাউকে জানতে দিতে চান নি! কিন্তু তাই যদি হবে, তাহলে উনি সেগুলো লিখেছিলেন কেন? তবে কি আর কেউ কাগজগুলো ছিঁড়েছে? কিরিট প্যাটেলকে ব্ল্যাকমেল করার জন্য, বা কোনও রকমের এভিডেন্স লুকোনোর জন্য? কিন্তু সেক্ষেত্রে কাগজগুলো না ছিঁড়ে পুরো খাতাটা চুরি করাই তো বুদ্ধিমানের কাজ হত! তখনই আমার মনে সন্দেহটা এল। একজনই এগুলো ছিঁড়তে পারেন, এবং সম্ভবত সেই জন্যেই উনি মিস্টার প্যাটেলের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাহলে কি একেনবাবু….!

আমি জানি যে-ভাবে চিন্তা করছি, একমাত্র সন্দেহ-বাতিকগ্রস্থ লোকরাই সে-ভাবে চিন্তা করবে। কিন্তু কিছুতেই আমি নিজেকে বোঝাতে পারলাম না যে, হ্যাঁ, একেনবাবু যদি পাতাগুলো ছিঁড়ে থাকেন, তাহলে ইণ্টারেস্টিং কিছু আবিষ্কার করেছেন বলেই ছিঁড়েছেন। এর মধ্যে গুপ্ত কোনও ব্যাপার জড়িত নেই। তবু কেন জানি আমার মনে হল কোথাও কোনও কনস্পিরেসি আছে! আর আমি যত ভাবলাম, ততই ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠল। মিস্টার প্যাটেলের বাড়ি গিয়ে একেনবাবু ভীষণভাবে কিছু একটা জিনিস খুঁজছিলেন। ডায়রিটা পাওয়ার পরই মনে হল, যেন ওঁর কাজ শেষ হয়েছে। ওঁর পক্ষে খাতাটা গায়েব করা অসম্ভব, যেহেতু আমি সেটা দেখেছি। কিন্তু পাতাগুলো ছেঁড়া কিছুই কঠিন নয়। আমি যখন স্নান করছিলাম, তখনই হয়ত ছিঁড়েছেন! কিন্তু কেন? তার উত্তর অবশ্যই আমার জানা নেই। তবে এই প্রথম আমি উপলব্ধি করলাম যে, একেনবাবু লোকটি কে, কী করেন, কেন এদেশে এসেছেন – সে সম্পর্কে আমি প্রায় কিছুই জানি না। উনি আমার ছেলেবেলার বন্ধু রনুর পরিচিত, গভর্ণমেণ্টে কিছু একটা করেন, এবং এদেশে কোনও কাজের সূত্রেই এসেছেন। অথচ খতিয়ে দেখতে গেলে এই জানাটা এত সুপারফিশিয়াল যে, প্রায় কিছুই জানি না বলাটা অত্যুক্তি নয়। নিজের সম্পর্কে যে-কোনও কথাই উনি অদ্ভুতভাবে এড়িয়ে যান! এতদিন পর্যন্ত ওঁকে দেখে আমার মনে হত যে, উনি হলেন র্যা ন্ডাম কৌতুহল, আর অফুরন্ত অসংলগ্ন প্রশ্নের ঝুরি! ভদ্রলোকের মননশক্তি বা বুদ্ধি সম্পর্কে উচ্চ ধারণা দূরে থাক, প্রায়েই মনে হয়েছে এরকম একটা গবেট লোক এতকাল করে খাচ্ছে কী করে! কিন্তু এই মুহুর্তে আমার যে চিন্তা, সেটা একেনবাবুর বুদ্ধি নিয়ে নয়। উনি যে অত্যন্ত বুদ্ধিমান লোক, সে সম্পর্কে এখন আর আমার এতটুকু সন্দেহ নেই। আমার চিন্তা হচ্ছে – কেন সেই বুদ্ধিটাকে উনি কাউকে জানতে দিতে চান না? এটা মোটেই বিনয় নয়, এটা হল চতুরতা। এই ভাবে বোকা সাজার পেছনে আসল মতলবটা কি? মিস্টার প্যাটেলের হত্যাকারীর সঙ্গে ওঁর কি কোনও কানেকশন আছে? পুলিশের কাছ থেকে এভিডেন্স লুকোবার জন্য কি উনি পাতাগুলো ছিঁড়েছেন? কেন উনি মিস্টার প্যাটেলের বাড়িতে আমাদের ওই অভিযানটা প্রমথকে জানাতে দিতে চান নি? উনি তদন্ত চালাবার ভান করে আমাকে নানান তথ্য দিচ্ছেন, কিন্তু পুলিশকে কোনও কথা জানাচ্ছেন না – কেন?

আমি ঠিক করলাম প্রমথকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলব। এ-ব্যাপারে আমাদের একটা জয়েণ্ট স্ট্র্যাটেজি দরকার। প্রমথর ল্যাব আমার অফিসের খুব কাছেই, দুটো বিল্ডিং পরে। কয়েক মিনিট মাত্র লাগে যেতে। প্রমথ ল্যাবেই ছিল। আমি প্রথমেই মিস্টার প্যাটেলের বাড়িতে আমাদের অভিযানের কথাটা বললাম। তারপর একেনবাবুর রহস্যজনক আচরণ, প্লাস, প্রমথকে যে এগুলো উনি জানতে দিতে চান না, সেটা বললাম। প্রমথ প্রথমে হাঁ করে শুনছিল। তারপর হঠাৎ হাসতে শুরু করল।
“হাসছিস কেন ওরকম,” আমি কিছু বুঝতে না পেরে ওকে ধমক লাগালাম।
“হাসছি একেনবাবুর খ্যাপামি, আর তোর বুদ্ধুমি দেখে!”
“তার মানে?”
“ক’দিন আগে একেনবাবু আমাকে বলছিলেন, ‘সার, একটা কথা খুব প্রাইভেটলি বলছি।’ আমি ওঁকে থামিয়ে বলেছিলাম, ‘একদম না। আমার পেট ভীষণ পাত্লা। দেখতে-না-দেখতে হাজার লোককে বলে ফেলব।’ আমার মনে হয় সেই শুনেই ভদ্রলোক একটু সতর্কতা নিয়েছেন। কিন্তু তোদের বলিহারি, এরকম ভাবে কারোর বাড়িতে বেআইনী প্রবেশের শাস্তি কী জানিস?”
তা আর জানি না! কিন্তু আমার আসল চিন্তার এখনও সুরাহা হচ্ছে না। প্রমথকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, একেনবাবু ঠিক কী করেন বলে তোর ধারণা?”
“ইণ্ডিয়া গভর্ণমেণ্টের লোক, সেটা আমি শিওর। ইনফ্যাক্ট গতকাল ইণ্ডিয়া কনসুলেটের দিলীপ দোশি বলে একজনের সঙ্গে আলাপ হল। সে একেনবাবুকে বেশ ভালভাবে চেনে। ওর কথা শুনে মনে হল যে, উনি বেশ উঁচু পদেই কাজ করেন।”
“আর একটু ভাল করে খোঁজ নিতে পারিস?”
“তা পারি, কিন্তু তোর ওকে এত সন্দেহ হচ্ছে কেন?”

আমি ডায়রির ছেঁড়া পাতার কথাটা তখনও প্রমথকে বলি নি। সেটা বলতেই প্রমথ বলল, “তোর মুণ্ডু! হোয়াই উইল হি ডু দ্যাট?”
“আই অ্যাম নট সিওর। মে বি কোনও এভিডেন্স লুকোতে!”
“ওয়েল আই অ্যাম সিওর অফ ওয়ান থিং, দ্যাট ইউ অ্যান ইডিয়াট! পুলিশ কেস ক্লোজ করে দিয়েছে। উনি যদি সত্যিই দোষী হন, তাহলে তো ওঁর চুপচাপ থাকার কথা। ডায়রি চুরি করে, তার পাতা ছিঁড়ে – সেটা তো খেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বার করার মত ব্যাপার হবে! তোর মাথায় আছে কী – অ্যাঁ? যাক সে কথা, এদিককার খবর শুনেছিস! অবিনাশ ইজ নাউ এ ভেরি রিচ ম্যান!”
“তার মানে?”
“ব্রিজ শাহ অবিনাশের অ্যাড্রেসটা ভেরিফাই করতে ফোন করেছিলেন, তখন জানলাম। মিস্টার প্যাটেলের সমস্ত সম্পত্তির মালিক হচ্ছে অবিনাশ। আর গেস ওঁর এস্টেটের ভ্যালুয়েশনটা কত?”
“আই ডোণ্ট নো! কত, চারশো…পাঁচশো…?”
“কুল থ্রি মিলিয়ন ডলার্স!”
“থ্রি মিলিয়ন!” আমি প্রচণ্ড অবাক হলাম। “লোকটার এত টাকা ছিল?”
“তুই তো একেবারে ভিরমি খাচ্ছিস! আরে বাপু, বিজনেস মানেই মানি।”
“অবিনাশ খবরটা জানে?”
“ঠিক বুঝলাম না। আরেকটা কনফিউশন। অবিনাশের এক মামা আজ সকালে দেশ থেকে ফোন করেছিলেন অবিনাশের সঙ্গে কথা বলতে।। এখনো এখানে আসে নি শুনে অবাক হলেন। কারণ অবিনাশ নাকি গত শনিবারে আমেরিকা রওনা দিয়েছে।”
“তা কী করে হয়! সেক্ষেত্রে তো ওর এখানে পৌঁছে যাবার কথা! অবশ্য ইউরোপে যদি স্টপ ওভার নেয়, তাহলে অন্য কথা।”
“স্ট্রেঞ্জ ব্যাপার হল যে, ও আমেরিকার ডিরেক্ট ফ্লাইটই ধরেছিল। সেক্ষেত্রে রবিবার দুপুরে, অর্থাৎ চার দিন আগেই ওর এখানে পৌঁছনোর কথা!”
আমি তখন প্রমথকে বললাম সকালবেলায় একেনবাবুর গুলি আবিষ্কারের ঘটনাটা, আর সেই সঙ্গে ওঁর মার্ডার থিওরিটা।
প্রমথ থ হয়ে শুনল! তারপর বলল, “গড! এতো গভীর গাড্ডা রে! তারমানে একজন সাসপেক্ট অন্তত আছে যার মিস্টার প্যাটেলকে মারার মোটিভ ছিল। আর সত্যই যদি চার দিন আগে এখানে ও এসে থাকে, তাহলে ওর অপরচুনিটিও ছিল।
“আমাদের অবিনাশ মার্ডারার! দ্যাটস ননসেন্স!” আমি বললাম।

প্রমথর এক্সপেরিমেণ্ট প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমরা দু’জনে একসঙ্গেই বাড়ি ফিরলাম। এলিভেটরের জন্য অপেক্ষা না করে আমরা সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলাম। হঠাৎ প্রমথর অ্যাপার্টমেণ্ট থেকে কারও গলা ভেসে এল। প্রথমে ভেবেছিলাম একেনবাবুর। কিন্তু তারপর খেয়াল হল, ওঁর তো দেরি করে ফেরার কথা! আমাদের উচিত ছিল ওপরে গিয়ে পুলিশকে ফোন করা। কারণ ভেতরে কে আছে, লোকটা সশস্ত্র কিনা, কিছুই জানি না। কিন্তু প্রমথ গোঁয়ারের মত চাবি ঢুকিয়ে দ্যুম করে দরজাটা খুলে ফেলল। দু’জনেই সবিস্ময়ে যাকে দেখলাম, সে হল অবিনাশ!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *