Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ম্যানহাটানে মিস্ট্রি মার্ডার || Sujan Dasgupta » Page 6

ম্যানহাটানে মিস্ট্রি মার্ডার || Sujan Dasgupta

এর মধ্যে একটা কাজে আমি বেশ কয়েক দিন বাইরে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে শুনি ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট একটা মাফিয়া মার্ডার নিয়ে এত হিমশিম খাচ্ছেন যে বল্লভ শাহের কেসটাতে সময় দিতে পারছেন না। নিজের অ্যাসিস্ট্যান্টদের ওপরও বোধহয় খুব একটা আস্থা নেই, তাই একেনবাবুর সাহায্য চেয়েছেন। একেনবাবু যে নিউ ইয়র্ক পুলিশের কনসালটেন্ট সেটা পরিষ্কার করে আমাদের কখনো বলেননি, আশ্চর্য লোক একটা!

বল্লভ শাহের মেয়ে সুজাতা এখন নিউ ইয়র্কে, বাবার মৃত্যুর খবর পেয়েই মনে হয় এসেছিল। তদন্তের স্বার্থে তার সঙ্গে একেনবাবুকে কথা বলতে হবে। দেখা করার কথা ‘রাজারানি’র হেড অফিসে। মুশকিল হল সেখানে যেতে আবার এক বার ট্রেন পালটাতে হয়। নিউ ইয়র্কের সাবওয়েতে একেনবাবু এখনও মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে যান, তাই আমাকে ধরলেন সঙ্গে যাবার জন্য।

সুজাতা অফিসে বসে আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছিল। রোগা ছোট্টখাট চেহারা, সুন্দরী বলা যাবে না, কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত ঝকঝকে চোখ-মুখ। আত্মপ্রত্যয়ের ছাপ সেখানে সুস্পষ্ট।। প্রাথমিক পরিচয়পর্ব শেষ হলে ওর বাবার মৃত্যু নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে বল্লভ শাহ সম্পর্কে ভালো ভালো দু-চারটে কথা যা শুনেছি সেগুলো বললাম। সুজাতা তাতে কতটা কান দিল বুঝলাম না। উলটে আমি এখানে কতদিন আছি, পড়াতে কেমন লাগছে ইত্যাদি মামুলি কিছু প্রশ্ন করল। এরই মধ্যে একেনবাবু, “আপনি কি স্যার,” বলে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন। কথাটা বলেই অবশ্য বুঝতে পারলেন গোলমাল করে ফেলেছেন! তাই তাড়াতাড়ি শুধরে নিয়ে বললেন, “ … আই মিন ম্যাডাম। আপনি কি ম্যাডাম এবার নিউ ইয়র্কে ফিরে আসার কথা ভাবছেন?” একেনবাবুর দুর্গতিতে মজা লাগল। আমি আর প্রমথ ওঁর এই ‘স্যার’ ‘স্যার’ বলা বন্ধ করানোর প্রচুর চেষ্টা করেছি। আমেরিকাতে নাম ধরে ডাকাই দস্তুর। সম্মান জানাতে হলে মিস্টার অমুক ডাকলেই যথেষ্ট। এরকমভাবে ‘স্যার’ ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ কেউ বলে না! প্রতি বারই আমাদের জ্ঞান দেওয়া শেষ হলে একেনবাবু মাথা চুলকোতে চুলকোতে বলেছেন, ‘কী করব স্যার, ওগুলো আমার চাইল্ডহুড হ্যাবিট!”

সুজাতা বলল, “প্লিজ, আমাকে সুজাতা বলে ডাকবেন।”

“থ্যাংক ইউ স্যার, মানে মিস সুজাতা,” কাঁচুমাচু হয়ে বললেন একেনবাবু।

সুজাতার ভুরু একটু যেন কোঁচকাল। “শুধু সুজাতা। আই প্রেফার প্লেন অ্যান্ড সিম্পল ‘সুজাতা’। থ্যাংক ইউ।”

কার মুখ দেখে আজ উঠেছেন একেনবাবু!

“ও হ্যাঁ,” একেনবাবু নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, “আচ্ছা, আপনি কি এখানে থাকবেন?”

“মানে?”

“বলতে চাচ্ছিলাম ম্যা… মানে কোম্পানিটা চালাতে?”

“না, সেরকম কোনো প্ল্যান আমার নেই।”

“তার মানে, যেখানে আছেন সেখান থেকেই বিজনেসটা চালাবেন?”

“না।” সুজাতা খুব সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল।

“তাহলে এটা চালাবে কে ম্যাডাম?” একেনবাবু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

আমার সঙ্গে সুজাতা মোটামুটি নর্মালি কথা বলছিল। কিন্তু একেনবাবুর ‘স্যার’, ‘ম্যাডাম’, ‘মিস’-এর ফুলঝুরিতে নিশ্চয় একটা নেগেটিভ রিয়্যাকশন হয়েছে। কাঠ কাঠ উত্তর দিল, “মিস্টার সেন, আপনার বোধহয় জানা নেই আমার সঙ্গে বাবার সম্পর্ক মোটেই মধুর ছিল না। তাই এই ব্যাবসা চলবে কি চলবে না, সে নিয়ে আমার কোনো দুশ্চিন্তা নেই।”

“আই সি,” একেনবাবু মাথা চুলকোলেন। “তার মানে কি বিজনেসটা আপনি বেচে দেবেন, মিস শাহ?”

কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে সুজাতা বলল, “ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট আমাকে বলেছিলেন, আপনি বাবার মৃত্যু নিয়ে তদন্ত করতে আসছেন। তাই আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু যেসব প্রশ্ন আপনি করছেন, সেগুলো নিতান্তই ব্যক্তিগত। আর আমার বিশ্বাস, দে আর নট রেলেভেন্ট ফর দিস ইনভেস্টিগেশন।” সুজাতার গলার স্বর আরও কঠোর।

“আই অ্যাম সরি, মিস শাহ। ইউ আর রাইট, ইউ আর অ্যাবসোলিউটলি রাইট। এগুলো জাস্ট আমার কৌতূহল। আপনাকে জিজ্ঞেস করা উচিত হয়নি। আর আমার এই ‘স্যার-ম্যাডাম’ বলাটাও আপনি মাপ করে দেবেন।”

“দ্যাটস ওকে।”

“থ্যাংক ইউ। সত্যি কথা বলতে কি স্যার, মানে ম্যাডাম, আমার শুধু কয়েকটা প্রশ্নই আছে। প্রথম প্রশ্ন, আপনি নিউ ইয়র্কে কবে এলেন?”

“মঙ্গলবার বিকেলে।”

“মানে আপনার বাবার মৃত্যু হবার আগে?”

“হ্যাঁ।”

“কেন এসেছিলেন জানতে পারি কি, অবশ্য যদি পার্সোনাল কিছু না হয়।”

“না, কোনো ব্যক্তিগত ব্যাপারে নয়, এসেছিলাম ওয়াইল্ড-লাইফ সোসাইটির একটা কনফারেন্সে।”

“আই সি। তার মানে মঙ্গলবার থেকেই আপনি কনফারেন্সে?”

“কনফারেন্স আরম্ভ হবে এই সোমবার থেকে। আমি পুরোনো বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাব বলে ক’দিন আগেই এসেছি।”

“বুঝলাম, মিস শাহ। আচ্ছা, ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট আমাকে বলেছেন, বুধবার সকালে খুব ভোরে আপনি হোটেল থেকে আপনার স্কুলের এক বন্ধুর কাছে যান, সেখানেই সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটান। ইজ দ্যাট রাইট?”

“হ্যাঁ, আমি অর্চনার বাড়িতে ছিলাম। সেখানে ডিনার খেয়ে রাত ন’টা নাগাদ বাড়ি ফিরি।”

“পুরো সময়টাই ওখানে ছিলেন?”

“হ্যাঁ।”

“জিজ্ঞেস করতে খুব খারাপ লাগছে মিস, আপনার বাবার মৃত্যুর খবর কি ওখানেই টিভি-তে পেলেন?”

“না, পরে জেনেছি।” বোঝাই যাচ্ছে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে সুজাতার খুবই কষ্ট হচ্ছে।

“থ্যাংক ইউ মিস। আরও কয়েকটা প্রশ্ন আমাকে করতে হবে, আসলে আমাদের কাজটা বড্ড নচ্ছার। মঙ্গলবার আপনি কোথায় ছিলেন স্যার, আই মিন মিস শাহ?”

“হোটেলেই ছিলাম, কয়েক ঘণ্টার জন্যে একটু শপিং করতে বেরিয়েছিলাম।”

“কারোর সঙ্গে কি দেখা হয়েছিল আপনার, শপিং করার সময় বা হোটেলে?”

“হ্যাঁ, অরুণভাই হোটেলে দেখা করতে এসেছিল।”

“অরুণভাই মানে মিস্টার অরুণ শেঠ?”

“হ্যাঁ।”

“উনি আপনার কে হন?”

“মামাতো ভাই।”

“ক’টার সময়?”

“রাত আটটা নাগাদ।”

“আই সি।” একেনবাবু ঘাড় চুলকোলেন কিছুক্ষণ। তারপর হঠাৎ বললেন, “আমি কিন্তু একটু কনফিউজড।”

সুজাতা শাহকে বিরক্তিভরে তাকাতে দেখে নিজেকে ব্যাখ্যা করলেন একেনবাবু, “আই মিন ম্যাডাম, আপনার এই হোটেলে এসে ওঠার ব্যাপারটা। আপনার বাবার সঙ্গে না হয় আপনার বনে না, কিন্তু আপনার মামাতো ভাই মিস্টার শেঠের এখানে যখন বাড়ি আছে… কিছু মনে করবেন না ম্যাডাম, এবার একটা পার্সোনাল কোয়েশ্চেন করছি, এটা কিন্তু রেলেভেন্ট। আপনাদের ভাই-বোনের মধ্যে সম্পর্কটা কেমন, মানে এতদিন কেমন ছিল?”

সুজাতা একটু চুপ করে থেকে বলল, “খুবই বাজে। আমার মায়ের মৃত্যুর পর থেকে ওর সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না।”

“তাহলে অরুণবাবু হঠাৎ আপনার সঙ্গে দেখা করতে এলেন কেন?”

এতক্ষণ নিজের ইমোশন চেপে রেখে সুজাতা প্রায় যন্ত্রের মতো কথোপকথন চালাচ্ছিল। এই প্রথম ওর মুখ-চোখ দেখে মনে হল সেটা যেন ধীরে ধীরে সামলানোর বাইরে চলে যাচ্ছে।

“অরুণভাই আমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছিল।”

“কীসের জন্যে ম্যাডাম?”

সুজাতা শাহ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল। তারপর বলল, “এ লং স্টোরি, মিস্টার সেন। যাঁরা এর মধ্যে জড়িত ছিলেন তাঁরা আর নেই, হোয়াটস দ্য পয়েন্ট?”

“বিশ্বাস করুন স্যার, আই মিন মিস সুজাতা, ইট কুড বি ভেরি ইম্পর্টেন্ট। কেন উনি ক্ষমা চাইতে এসেছিলেন?”

হঠাৎ দেখলাম সুজাতার মুখটা লাল, চোখ জলে ভরে আসছে। আস্তে আস্তে বলল, “আমার সব সময়েই মনে হত আমার মায়ের মৃত্যুর সঙ্গে বাবা সামহাউ জড়িত। মায়ের মৃত্যুর পর পরই আমি অরুণভাইকে সেটা বলেছিলাম। সে সময়ে অরুণ ভাই ওয়াজ ক্লোজ টু মি। ও কথাটা শুনে আমার ওপর ভীষণ রেগে গিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল! আমি নিজেও বুঝতে পেরেছিলাম ওরকম চিন্তা করা পাপ, বাট আই কুডন্ট হেল্প ইট। তারপর থেকে অরুণভাইয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই আমার ছিল না। এবার অরুণভাই কোত্থেকে জানি খবর পায় আমি হোটেলে এসে উঠেছি। মঙ্গলবার রাত্রেই আমার কাছে ও আসে, এতদিন যোগাযোগ রাখেনি বলে অনেক ক্ষমা চায়। তারপর বলে ও এখন নিশ্চিত, আমার মায়ের মৃত্যুর জন্যে বাবাই দায়ী। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, কীভাবে ও সেটা জানল?

“ও বলল, হিসেবের কাগজপত্র থেকে। তারপর যা বলল তা হচ্ছে, বাবা নাকি কমিউনিটির চেনাজানা প্রায় সবার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন বড়োসড়ো রিটার্নের লোভ দেখিয়ে। একজন তো তাঁর স্ত্রীর বিয়ের সমস্ত গয়না বন্ধক রেখেছিলেন বাবাকে ধার দিতে। তারপর নানান কারচুপি করে তাদের কারোর টাকা শোধ না করে কোম্পানিকে লাটে তুলেছিলেন। মা সেটা ধরতে পেরে বাবাকে চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন যে করে হোক সব ধার শোধ করে দেবার জন্য। আই গট সো আপসেট, আর কোনো প্রশ্ন আমি করতে পারিনি, কেঁদে ফেলি। অরুণভাইও আমার সঙ্গে কাঁদতে থাকে। উই ক্রায়েড অ্যান্ড ক্রায়েড।” সুজাতা শাহ আর নিজেকে সামলাতে পারল না, ফুঁপিয়ে উঠল। দেখি ওর চোখ থেকে টস টস করে জল পড়ছে।

আমি স্তব্ধ! একেনবাবুও কেমন জানি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছেন। আর কোনো প্রশ্ন না করে, ‘সরি’,‘টরি’ বলে বিদায় নিলেন।

‘রাজারানি’র অফিস থেকে বেরিয়ে আমরা সাবওয়ে স্টেশনের দিকে হাঁটা দিলাম। একেনবাবু দেখলাম গম্ভীরভাবে কিছু ভাবছেন। আমার সুজাতার জন্য খুব খারাপ লাগছিল। কী নিদারুণভাবে বাবা-মা দু-জনকেই ও হারাল! যাই হোক এসব কাজে ইমোশনাল হলে চলে না। জীবন থাকলেই মৃত্যু থাকতে হবে, আমি নিজেকে বোঝালাম। ডেথ ইজ এ পার্ট অফ লাইফ। গীতার কয়েকটা শ্লোক মনে করার চেষ্টা করছিলাম। ‘নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি, নৈনং দহতি…।” দূর, এই হাড়-কাঁপানো ঠান্ডায় ওসব কী আর মনে আসে! চিন্তায় অবশ্য ছেদ পড়ল একেনবাবুর আত্ম-সমালোচনায়।

“বুঝলেন স্যার, আমার ‘স্যার’ বলাটা একটু কনট্রোল করতে হবে। মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এত ভুল করি, লজ্জা লাগে।”

“আপনারও লজ্জা লাগে তাহলে!” না খুঁচিয়ে আর পারলাম না।

“কেন স্যার, আমি কি এতই নির্লজ্জ?”

“তা নয়, তবে শুধু স্যার নয়, ‘মিস’ বলাটাও আপনাকে ছাড়তে হবে।”

“কেন স্যার, ‘মিস’ কথাটাতে ভুল কোথায়?”

“ভুল কিছু নয়, কিন্তু মহিলা যদি বিবাহিত হন তাহলে একটু এমব্যারাসিং হবে! তার থেকে ‘মিজ’ বলুন না, এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারবেন!”

“এইটে মোক্ষম বলেছেন স্যার, আজকাল বোধহয় ‘মিজ’ কথাটা খুব চলছে।”

“ঠিক, ম্যাডামটা একটু বেশি ভারিক্কি হয়ে যায়…”

আমাদের মিস, মিজ আর ম্যাডামের আলোচনা হয়তো আরেকটু চলত, কিন্তু এর মধ্যে শুনলাম, “হ্যালো মিস্টার সেন, হাউ আর ইউ?”

তাকিয়ে দেখি দিলীপ কাপাদিয়া।

“আপনি এখানে স্যার?” একেনবাবু জিজ্ঞেস করলেন।

“ক্যামেরা প্রো-তে এসেছিলাম কয়েকটা লেন্সের খোঁজ করতে। ভালোই হল দেখা হয়ে, আপনাকে আমি ফোন করতে যাচ্ছিলাম।”

“কী ব্যাপার স্যার?”

“মুনস্টোন মিস্ট্রি সলভ করার পর ডব্লুসিবিএস টিভি আপনার যে ইন্টারভিউ করেছিল, আপনার পারমিশন না পেলে ওরা রিলিজ করবে না। আমি কনসেন্ট ফর্মটা আনিয়ে রেখেছি, তাতে আপনার সইয়ের দরকার।”

“নো প্রবলেম স্যার। আপনি ফর্মটা মেল করে দিন, আমি সই করে ফেরত পাঠিয়ে দেব।”

“তা করা যায় অবশ্যি, কিন্তু শুভস্য শীঘ্রম। আপনারা এখন কোথায় যাচ্ছেন?”

“বাড়ি,” আমি জবাব দিলাম।

“গাড়ি নিয়ে এসেছেন?”

“না, সাবওয়ে ধরে এসেছি।”

“তাহলে আমার গাড়িতে আসুন। আমার অফিসে কাগজপত্রগুলো আছে। আপনার সই করা হয়ে গেলে, আমিই গাড়ি করে আপনাদের বাড়ি পৌঁছে দেব।”

মিস্টার কাপাদিয়ার গাড়ি রাস্তার উলটো দিকে পার্ক করা। রাস্তা ক্রস করতে

করতে উনি বললেন, “আচ্ছা কী কাণ্ড বলুন দেখি!

“কী কাণ্ড স্যার?”

“এই বল্লভ শাহের মার্ডার! পুলিশ তো আমাকেই প্রায় এক ঘণ্টা জেরা করল!”

“সে কি স্যার?” একেনবাবু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

“না না, আমাকে সাসপেক্ট করে নয়,” দিলীপ কাপাদিয়া আমাদের আশ্বস্ত করে বললেন। “আমি তো সেদিন ওয়াশিংটন ডিসি-তে। ওদের জেরা সব অরুণ শেঠকে নিয়ে।”

“আপনি মিস্টার শেঠকে চেনেন নাকি?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“নট ভেরি ওয়েল। কিন্তু অবিনাশের বাড়িতে ওর সঙ্গে আমার মায়ের আলাপ হয়েছিল গত বছর। সেই সূত্রে মাঝেমধ্যে আমার বাড়িতে এসেছে।”

“আপনার কী মনে হয় স্যার, উনি কি গিল্টি?”

“কে জানে মিস্টার সেন! সামহাউ আই ডোন্ট থিংক সো। কিন্তু ও যখন স্বীকার করেছে, তখন আমার বিশ্বাস-অবিশ্বাসে কী এসে যায়, তাই না?”

“তা ঠিক স্যার। ব্যাপারটা ভারি কনফিউজিং।”

দিলীপ কাপাদিয়ার অফিস হল ম্যানহাটানে, ফর্টি-থার্ড আর ফিফথ-এর ওপর ছ’তলায়, রাস্তার দিকে মুখ করে। ছোট্ট অফিস, কিন্তু ভারি সুন্দর করে সাজানো, আর ওয়েল ইকুইপড়। একটা আইবিএম-এর পার্সোনাল কম্পিউটার, ক্যানন কপিয়ার-কাম-ফ্যাক্স মেশিন, এটিএনটির মার্লিন টেলিফোন সেট— সবই টপ অফ দ্য লাইন। ঘরের দুই কোণে দামি সেরামিক পটে দুটো বিশাল ইন্ডোর রাবার প্ল্যান্ট, আর দেয়াল জুড়ে অজস্ৰ ফোটো। ফোটোগুলো দেখলে বোঝা যায় রাজনৈতিক ও সিনেমা জগতের অনেক নামকরা লোকের সঙ্গে দিলীপ কাপাদিয়ার দহরম-মহরম! এ ছাড়া নানান ফোটোগ্রাফি আর ভিডিয়োর জিনিসে ভরতি। ক্যামেরা, হাজার গণ্ডা লাইট, বড়ো বড়ো ফিল্টার, রিফ্লেক্টিভ বা ডিফিউজার আমব্রেলা— ঠিক কী বলে ওগুলোকে তাও জানি না, আরও কীসব যেন!

দিলীপ কাপাদিয়া আমাদের বসিয়ে রেখে, ‘এক্সকিউজ মি ফর এ মিনিট’ বলে কোথায় জানি গেলেন! আমি এই ফাঁকে ঘুরে ঘুরে ফোটোগুলো দেখছি, একেনবাবু ওদিকে অ্যাজ ইউজুয়াল খুটখাট শুরু করেছেন। আই ক্যান নেভার ফিগার হিম আউট! এদিকে গ্যাজেটকে ভয় পান, কিন্তু পুশ-বাটন দেখলেই দুম করে সেটা এক বার টিপে দেবার অভ্যাস ওঁর গেল না! কিছুর মধ্যে কিছু না, ডিজিটাল টেবিল ক্লকের কোন বাটনটা টিপলেন জানি না, হঠাৎ টাইম-ডিসপ্লেটা ব্লিংক করতে আরম্ভ করল! তখন ভয় পেয়ে আর্তনাদ করে উঠলেন, “স্যার, এটা একটু ঠিক করে দিন।”

ওঁর ধারণা আমেরিকার সমস্ত গ্যাজেটেরই নাড়িনক্ষত্র আমার জানা। ক্লকটা নিয়ে ধস্তাধস্তি করছি হঠাৎ টেলিফোনে ডায়ালের আওয়াজ। তাকিয়ে দেখি সেটের লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে-তে ২৬২-৭৪২৪ ফুটে উঠেছে। আর একেনবাবু ভীষণ নার্ভাস হয়ে আর্তস্বরে বলছেন, “কী করে এটা বন্ধ করব, স্যার?”

তাড়াতাড়ি ফোনটা হুক থেকে তুলে আবার নামাতেই কানেকশনটা কেটে গেল।

“ভুলে স্যার রিডায়াল’ বাটনটা টিপে ফেলেছি,” কাঁচুমাচু মুখে বললেন।

“কিছুতে হাত দেবেন না তো মশাই! আপনার হ্যাপা সামলাতেই আমার হার্ট অ্যাটাক হবে বুঝতে পারছি!”

ভাগ্যিস দিলীপ কাপাদিয়া এর মধ্যেই ফিরে এলেন।

“সরি টু কিপ ইউ ওয়েটিং,” বলে মিস্টার কাপাদিয়া ড্রয়ার থেকে কনসেন্ট ফর্মটা বার করতে করতে বললেন, “দিস ইজ দ্য প্লেস, হোয়্যার আই জেনারেট মাই ক্রিয়েটিভ আইডিয়াজ। আমার মেইন স্টুডিও থার্টি থার্ড স্ট্রিটে।”

“ভারি সুন্দর অফিস।” আমি মন্তব্য করলাম।

“তবে স্যার, বড্ড কমপ্লিকেটেড গ্যাজেটে ভরতি। আমার আবার গ্যাজেট দেখলেই নার্ভাস লাগে।” বুঝলাম একেনবাবুর ভয় তখনও যায়নি! দিলীপ কাপাদিয়ার মুখে মুচকি হাসি, “তাই নাকি!”

“আপনি কি স্যার রোজই এখানে আসেন?”

“রোজ না হলেও একদিন অন্তর তো আসিই। তবে ইন্টারেস্টিংলি আজ এলাম প্রায় এক হপ্তা বাদে… শুটিং-এর কাজ চলছে ওয়াশিংটন ডিসি-তে, ডাবিং আর এডিটিং-এর সব কাজ মেইন স্টুডিওতে। নিন, এবার এই ফর্মের প্রথম পাতায় একটা ইনিশিয়াল দিন আর পরের পাতায় যেখানে ক্রস চিহ্ন দেওয়া আছে সেখানে সই করুন, তাহলেই আপনার ছুটি।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *