একটা ঝড়-বৃষ্টির রাতে উড়ন্ত এক নারী নেমে এসেছিল এখানে।
সে বললো: বাতাস, ঝড়কে শান্ত হতে বলো
সে বললো: মেঘ, ফিরিয়ে নাও তোমার বৃষ্টি।
এসপ্লানেডে যেখানে লেনিন ছিল এতোদিন
সে দাঁড়ালো সেখানে, এক ফুঁয়ে সমস্ত ধুলোবালি, দারিদ্র্য
মেট্রোর জঞ্জাল সরিয়ে
ঝলমল করে উঠলো নিউ ইয়র্কের মতো একটা শহর।
সেই নারী এক এক করে পোশাক খুলে বললো, তাকাও ভারতবাসী
এই আমার জঙ্ঘা
এই আমার নাভি
এই আমার স্তন
এতো সুন্দর স্তন তোমরা কি আগে কখনো দেখেছো?
তাকাও ভারতবাসী
আমি দু’পা ফাঁক করে দাঁড়ালাম
এইখানে আমার হীরে
হীরে ঢেকে রাখা আধখাওয়া একটা আপেল
কয়েক সহস্র মানুষের দাঁত বসেছে এখানে
তবু পুরোটা আপেল কেউ খেতে পারেনি এখনো।
গরিব, কৃষ্ণাঙ্গ ভারতবাসী তাকাও
এই আমার বাঁ-হাত
সাপের পেটের মতো ঠাণ্ডা আমার তালু
হিব্রু ভাষায় অজস্র সংকেত লেখা আছে সারা হাতে
এই আমার ডান হাত
ডানহাতে লেখা কয়েকটা গরিব দেশের নাম, কয়েকটা টেলিফোন নম্বর
যারা আমার ন্যাংটো ছবি, পায়ুছিদ্রের ছবি
কোটি কোটি টাকা দিয়ে কিনতে চেয়েছিল।
কিন্তু তোমরা এতো টাকা পেলে কোথায়?
এতো বস্তি তোমাদের, আমার ছবি দিয়ে কি করবে তোমরা?
আমার পেছনে এসে দাঁড়াও
আমার পিঠ লক্ষ করো
এই পিঠ আপাতত শেষ চন্দ্রালোক
তোমাদের গণেশ পাইনকে নিয়ে এসো, উল্কি আঁকুক আমার পিঠে
আমি কোন দেবী নই, আমারও পাকস্থলী আছে, আমারও জ্বর হয়
অথচ অনেকেই আমাকে ডাইনি বলে আড়ালে
তারা আমার দু’পায়ের ফাঁকে
আধখাওয়া আপেল দেখে পালিয়ে গিয়েছে।
আমি কখনো কোন গরিব দেশ দেখিনি
এই প্রথম দেখছি
শুনেছি তোমরা ভলো করে খেতে পাও না
অথচ তোমাদের কাগজে কাগজে আমার ছবি
আমার বুকের মাপ
কোমরের তিল তোমাদের মুখস্থ
অথচ দিকে দিকে বস্তি পোড়ার গন্ধ, তিল পোড়ার গন্ধ।
কিন্তু আমাকে পুড়িয়ে ফেলার আগে
আমাকে দুচোখ দিয়ে দেখো
তাতে পাপ হবে না
এই আমার বুক,
আমার বুকের দুটি কৃষ্ণকালো বোঁটা
কিন্তু এখানে কোন মাতৃদুগ্ধ নেই
কেউ আমাকে কোনদিন মা বলে ডাকেনি
শিশুর চোখে আমি কোন মানবী না
আমার চোখ পাথরের
কিন্তু সূচঁ ফুটিয়ে দেখো
বেরিয়ে আসবে কয়েক বছরের জমে থাকা জল
হাত পা ইস্পাতের
নাভিমূল গন্ধক
মাথার চুল পারমাণবিক ভস্ম
বম্বেতে আমি দু মিনিটের জন্যে নেমেছিলাম
সেখানে একটি পথের শিশুকে
তুলে নিয়ে আমাকে ছবি তুলতে বলা হলো
কিন্তু শিশুটি আমাকে দেখে চিৎকার করে উঠলো
আমার এই সুন্দর শ্বেতাঙ্গ শরীরে
অসংখ্য কামড়ের দাগ
জিভের লালার দাগ
বাঁধানো দাঁতের দাগ
এমনকি চাবুকের দাগ, সুক্ষ ব্লেড দিয়ে চিরে দেওয়া
যা কোন ক্যামেরা ধরতে পারেনি
হয়ত বম্বের ওই পথের শিশুটি দেখতে পেয়েছিল
তা না হলে বেচারা ওরকম কেঁদে উঠলো কেন?
হে গরিব শিক্ষিত ভারতবাসী তাকাও
তোমরা আমার ছবি ছাপাও এতো, কেন ছাপাও?
এসো আমাকে ধরে দেখো, স্পর্শ করে দেখো
তোমরা ওভাবে দূরে দাঁড়িয়ে কেন
তোমরা কি এবার কেরোসিন ঢেলে দেবে আমার গায়ে?
পুড়ক, পুড়ে যাক আমার শ্রোণীদেশ
আমার বুক, আমার পিঠ, মাথার চুল
কিন্তু আমার দুপায়ের ফাঁকে
আধখাওয়া আপেল কখনো আগুনে পোড়েনি
তোমরাও পারবে না একে বিনাশ করতে।
ধন্যবাদ ভারতবর্ষ, ধন্যবাদ বোম্বাই কলকাতা, ধন্যবাদ
ঐ পথের শিশুটিকে
যে আমার প্রকৃত শরীর দেখে ভয়ে কেঁদে উঠেছিল।