Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মাস্টার অংশুমান || Satyajit Ray » Page 7

মাস্টার অংশুমান || Satyajit Ray

তিনদিন পরে আমার সবচেয়ে মজাদার শুটিং হল পুষ্করের মেলায়। আজ প্রথম আমাকে দুটো পার্টে অভিনয় করতে হল। মোহন আর অমৃতের কথা বলার দৃশ্য দুবার করে তুলতে হল। প্রথমবার আমি মোহন সাজলাম, আর আমার সামনে অমৃতের জায়গায় দাঁড়াল শ্যামসুন্দর বলে আজমীর থেকেই নেওয়া একজন বারো বছরের ছেলে। দ্বিতীয়বার আমি সাজলাম অমৃৎ, আর সেই একই শ্যামসুন্দর দাঁড়াল মোহনের জায়গায়। দৃশ্যটা যখন লোকে পর্দায় দেখবে তখন কিন্তু শ্যামসুন্দরকে দেখাই যাবে না; তার বদলে দেখা যাবে মোহন আর অমৃৎ কথা বলছে।

কিডন্যাপিং-এর দৃশ্যটা যেখানে নেওয়া হল সেখানে মেলার কোনও ভিড় ছিল না; থাকলে খুব মুশকিল হত। জগু ওস্তাদ দিনের বেলা নেশা করেন না। তাই তিনি মগনলালের পার্টে কাজটা ভালই করলেন। তবে যেখানে মগনলাল অমৃৎবেশী মোহনকে কোলপাঁজা করে তুলে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে ফেলছে সেটা জগু ওস্তাদ আরেকটু সাবধানে করতে পারলে। শটটা নেওয়ার পরে আমার কোমরে যে ব্যথাটা আরম্ভ হল, সেটা ছিল প্রায় সন্ধ্যা অবধি।

সন্ধ্যাবেলা সার্কিট হাউসে ফিরে এসে কেষ্টদার সঙ্গে দেখা হল। গত দুদিন সকাল থেকে রাত অবধি সব শুটিংই রাজবাড়িতে হয়েছে। সেখানে কেষ্টদা ছিল, কিন্তু কাজের পরে আমার সঙ্গে আর কথাই হয়নি। রাত করে সার্কিট হাউসে ফিরে বেশ ক্লান্ত লাগায় দুদিনই স্নান করে খেয়েই শুয়ে পড়েছি। আমার কৌতূহল ছিল জানবার জন্য এই দুদিনে কোনও বলার মতো ঘটনা ঘটেছে কিনা। আজ সন্ধ্যায় সে প্রশ্নের উত্তর পেলাম।

কেষ্টদা মুখে গুনগুন করে গান গাইলেও বেশ বুঝতে পারছিলাম ওর মাথায় কী যেন একটা চিন্তা পাক খাচ্ছে, কারণ ওর ভুরুটা ছিল কুঁচকোনো।

তোমাকেই খুঁজছিলাম, বলল কেষ্টদা।

কী ব্যাপার? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

ব্যাপার গুরুতর।

কেন বলো তো?

তোমরা তো এ-দুদিন শুটিং করছিলে রাজবাড়িতে; আমার তো সারাদিন কাজ নেই, তাই এদিক-ওদিক ঘুরছিলুম। আজমীরের কিছু দেখবার জিনিসও দেখে নিলুম। কাল রাত্তিরে আটটা নাগাদ একবার গিয়েছিলুম বাজারে। ভাবলুম ঠাণ্ডা পড়েছে, গরম চায়ে একটু গলাটা ভিজিয়ে নিই। চায়ের দোকানটা তার আগের দিনই দেখা ছিল। যাই হোক, দোকানের বাইরে বেঞ্চিতে বসে চা খাচ্ছি, এমন সময় পাশের দোকান থেকে দেখলাম দুজন লোক বেরোলো। দোকানটা মদের। দুটো লোকের মধ্যে একটা হল তোমাদের জগু ওস্তাদ, আর আরেকটাকে রাজবাড়িতে দেখেছি। চাকরের কাজ করে। নাম বোধহয় বিক্রম। চাকরটাকে ওস্তাদের সঙ্গে দেখেই মনের ভেতর একটা সন্দেহ ধক করে উঠেছে। ওরা দুজন কিন্তু বাইরে এসে চলে গেল না; কথা বলতে বলতে গেল দোকানের পিছন দিকে অন্ধকারে।

কী ঘটছে জানার জন্য প্রচণ্ড আগ্রহ হওয়াতে আমিও বেঞ্চি ছেড়ে উঠে খুব সাবধানে এগিয়ে গেলুম যেদিকে ওরা গেছে সেইদিকে। দুটো দোকানের মাঝখানে একটা গোরুর গাড়ি দাঁড়ানো ছিল। সেটার পাশে গা ঢাকা দিয়ে কয়েক পা এগোতেই জগু ওস্তাদের গলা পেলুম। বুঝলুম সে বিক্রম লোকটাকে কোনও একটা কাজে সাহায্য করার কথা বলছে। সেটা করে দিলে জগু তাকে মোটা টাকা বকশিশ দেবে। কত টাকা সেই নিয়েও কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি হল, শেষটায় এক হাজারে রফা হল। বুঝতেই পারছ, রাজবাড়ি থেকে কিছু চুরি করার তাল করছে ওরা। চাকরটাই চুরি করে জিনিসটা জগু ওস্তাদকে এনে দেবে, আর তার জন্য এক হাজার টাকা পাবে।

আমার কাছে এক ধাক্কায় সব জিনিসটা পরিষ্কার হয়ে গেল। নীলকান্তমণি। জগু ওস্তাদের সামনে অনেকবার মণিটার কথা হয়েছে। সেটা যে কত দামি তা সে জানে। সেইটে সে বিক্রমের সাহায্যে হাতাবার তাল করছে। আর সেটা জেনে গেছে কেষ্টদা।

নীলকান্তমণির ব্যাপারটা কেষ্টদাকে বলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি যে ওদের কথা শুনেছ সেটা ওরা টের পায়নি তো?

মনে তো হয় না, বলল কেষ্টদা, আমি বেশিক্ষণ থাকিনি। গোলমালটা কোথায় বুঝেই আমি সটকে পড়েছি। এখন কথা হচ্ছে, এ ব্যাপারে কী করা যায়?

তুমি কি মনে করো ব্যাপারটা বিশুদাকে বলা উচিত? কেষ্টদা মাথা নাড়ল। তাতে সুবিধা হবে না। জগু ওস্তাদের কাজ এখনও বাকি আছে। ওর যদি একদিনও শুটিং না হত তা হলে ওকে বাদ দিয়ে অন্য লোক নেওয়া যেত। কিন্তু এখন ও কনটিনিউইটি হয়ে গেছে।

কী হয়ে গেছে?

কনটিনিউইটি। তার মানে ওকে নিয়ে তিনদিন কাজ হবার ফলে ওই ছগনলাল গুণ্ডা হয়ে গেছে। ওর বদলে অন্য লোক নিতে গেলে তাকে নিয়ে ওই তিনদিনের কাজ আবার নতুন করে করতে হবে। তাতে লাখ টাকা লোকসান। জগু লোকটা জোর পাচ্ছে শুধু এই কারণেই। ও জানে যে ওকে ছাড়া চলবে না। সেই সুযোগে লোকটা এই বদমাইশিটা করার তাল করছে।

তা হলে?

তা হলে মুখ বন্ধ করে বসে থাকা, আর প্রাণপণে আশা করা যাতে ওরা চুরিটা না করতে পারে। যে-মণিটার কথা বলছ সেটা কত বড়?

প্রায় একটা পায়রার ডিমের মতো।

কত দাম তা কিছু বলেছে?

বলেছে দামের কোনও হিসেব নেই। যাকে বলে অমূল্য।

বোঝো!

কেষ্টদা গম্ভীর মুখ করে চলে গেল।

রাত্তিরে খাবার পর ঘুমোত যাবার আগে একবার বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। বাইরে ঝলমলে চাঁদনি রাত, লেকের জলটা চিকচিক করছে, এমন সময় একটা শব্দ শুনে পিছনে ফিরতে হল।

বারান্দায় লোক এসেছে।

জগু ওস্তাদ। আমি তো অবাক! লোকটা যে আমারই দিকে আসছে! আমার সঙ্গে ওর কী দরকার থাকতে পারে? আর এখন তো নেশা করেছে–সমস্ত বারান্দা দুর্গন্ধে ভরে যাবে।

না, গন্ধ তো নেই। আজ দিব্যি সুস্থ লাগছে ভদ্রলোককে।

কেমন আছিস তুই?

এ আবার কী প্রশ্ন!

আমি বললাম, কেন, ভালই তো আছি।

দুপুরে শট-এর পর দেখছিলাম কোমরে হাত বুলোচ্ছিস। বেশি চোট লাগেনি তো?

না, না। এখন আর ব্যথা নেই।

ভেরি গুড। ভাবনা হচ্ছিল তোর জন্য, তাই ভাবলাম একবার খোঁজ নিই।

আমি ভাল আছি।

জগু ওস্তাদ চলে গেল।

আজ যে মানুষটাকে একদম অন্যরকম বলে মনে হল।

কেষ্টদা ঠিক শুনেছিল তো?

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress