মায়ের মন
তন্দ্রা র বিয়ে হয়েছিল আজ ত্রিশ বছর হল। স্বামী একজন আর্টিস্টসুন্দর ছবি আঁকে। নিজের পছন্দের বিয়ে। প্রথম প্রেমের ফলশ্রুতি দুজনের চার হাত এক হল। একটা ভালবাসার শান্তিনীড় গড়ে উঠেছিল। হঠাৎ সেখানে যবনিকা। তন্দ্রার কোলে এলো ফুটফুটে ছেলে। আদরে আবদারে সকলের ভালোবাসা য় ছেলে বড় হতে লাগল। মায়ের স্বপ্ন গুলো যেন ছেলের উপর দিয়েই পূর্ণতা পেল। তাইতো দীপের মা হয়ে তন্দ্রা গর্বিত। এ্যথলেটস, গান, নাটক, আবৃত্তিতে ছেলেকে পারদর্শী করে তোলার চেষ্টা করল। স্যার বলেন, দীপের মধ্যে ভগবান প্রদত্ত ক্ষমতা আছে, তাইতো ও সকলের সেরা। তবে শান দেওয়ার প্রয়োজন আছে। এসব শুনে তন্দ্রার গর্ব হত বৈকি। তন্দ্রা চাইতো প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠুক। সবাই যেন ওকে দেখে খুশি হয়। বিধাতার লিখন খন্ডাবে কে? তাইতো দুর্দিন ঘনিয়ে এলো খুব শীঘ্রই। সংসারের বাঁধন টা গেল আলগা হয়ে। আজ দীপ অনেক বড়। বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে। অবশ্য আর মায়ের প্রয়োজন বোধ করেনি। ঠাকুরমা, কাকা, কাকিমা পিসি এরাই আজ ওর অভিভাবক। তন্দ্রা গিয়েছিল বিয়ের কদিন আগে। ওরা তন্দ্রাকে বিয়ের মধ্যে রাখতে রাজি নয়। খুব ধুমধাম করে বিয়ে হলো ছেলের। বগলা মায়ের মন্দিরে সারাক্ষণ তন্দ্রা প্রার্থনা করল ওরা যেন খুব সুখী হয়। মা গিয়ে বাধা দেবেএই ভাবনায় ওরা বিয়ে বাড়িতে পুলিশ রেখে দিল। জেমা এতদিন বড় করল, তার জন্য পুলিশ রাখতে হয়? এটা কিরকম সমাজ? চোখের জলে মায়ের বুকফাটা কান্না আকাশ বাতাসে ভরে উঠলো। তন্দ্রার মনে হয়েছিল, বুকটা চিরে যন্ত্রণাটা কে বাইরে বের করে দি। তবু মায়ের মন, চাইছিল একবার যাই আশীর্বাদ করে আসি। না সে সুযোগ আর ঘটেনি। তিনশো লোকের মাঝে কারোর মনে পড়েনি যন্ত্রণা ক্লিষ্ট মায়ের কথা।