Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়াবী || Panchkari Dey » Page 84

মায়াবী || Panchkari Dey

বেণীমাধবপুরের গোলযোগ মিটাইয়া অরিন্দম দেবেন্দ্রবিজয়কে লইয়া রঘুনাথপুরে আসিলেন। রঘুনাথপুর অরিন্দমের স্বদেশ। বেণীমাধবপুর হইতে হুগলী জেলায় ফিরিতে হইলে রঘুনাথপুরের নিকট দিয়াই আসিতে হয়। রঘুনাথপুরের মধ্যে অরিন্দম সর্ব্বাপেক্ষা সমৃদ্ধি সম্পন্ন। সেখানে তাঁহার যথেষ্ট ভূসম্পত্তিও আছে। তা’ ছাড়া তাঁহার বসত বাড়ীখানিও প্রকাণ্ড। তেমন প্রকাণ্ড দ্বিতল অট্টালিকা সে গ্রামের মধ্যে আর একখানিও নাই। বাটীর পশ্চাদ্ভাগে লতাকুঞ্জবিশোভিত সুরম্য উদ্যান। উদ্যানে মৎস্যসঙ্কুল, স্বচ্ছবারিপূর্ণ সুবৃহৎ সরোবর। মোট কথা, এক সমৃদ্ধিসম্পন্নের যাহা কিছু আবশ্যক, অরিন্দমের তাহা সকলই ছিল।

দেবেন্দ্রবিজয় সেইখানে দুইদিন কাটাইলেন। খাওয়া-দাওয়ার ধূমটা রীতিমতই চলিল। চোর ডাকাত ধরার ন্যায় অরিন্দমের মাছ-ধরার সখ অত্যন্ত প্রবল ছিল। তিনি প্রত্যহ প্রাতে ছিপ্ লইয়া বসিয়া মৎস্যকুল ধ্বংস করিতেন।

একদিন পূর্বাহ্ণে নয়—অপরাহ্ণে অরিন্দম দেবেন্দ্রবিজয়কে বলিলেন, “তুমি যেকালে দুইদিনেই বাড়ী যাইবার জন্য এত উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিয়াছ, তখন কাল প্রতুষেই রওনা করা যাইবে। তাহা হইলে আজ রাত্রের ভোজনের বন্দোবস্তটা পরিপাটি রকমের হওয়াই আবশ্যক। যেমন করিয়া হ’ক্, আজ খুব কম করিয়া চার-পাঁচটি বড় মাছ ধরা চাই। ছিপ্ লইয়া তুমি বাগানে যাও, চার ফেলিয়া ঠিকঠাক্ হইয়া ব’স—আমি এখনই যাইতেছি।”

দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “আজ আর থাক্ না।”

অরিন্দম বলিলেন, “সে কি হয়, কাল যখন প্রাতে একান্তই রওনা হইতে হইবে, তখন আর না ধরিলে চলিবে কেন? তুমি যাও, আমি এখনই যাইতেছি।”

দেবেন্দ্রবিজয় মৎস্য ধরিবার উপকরণাদি লইয়া প্রস্থান করিলেন। ইহাতে অরিন্দমের একটা উদ্দেশ্য আছে।

উদ্যানের ছায়াস্নিগ্ধ স্বচ্ছ সরোবর পত্রান্তরালচ্যুত সূর্য্যরশ্মিপাতে তক্ তক্ করিতেছে। বায়ুহিল্লোল- বিচলিত বীচিমালা হইতে অনুক্ষণ রবিকিরণ সহস্র-খণ্ডে প্রতিফলিত হইতেছে। এবং সদ্যঃপ্রস্ফুটিত পুষ্পের সৌরভে সমুদয় উদ্যান ভরিয়া গিয়াছে।

দেবেন্দ্রবিজয় ধীরপদবিক্ষেপে ঘাটের নিকটে গিয়া দেখিলেন, স্বচ্ছ কম্পিত জলে পা দুইখানি ডুবাইয়া নিম্নের মগ্নপ্রায় সোপানের উপরে বসিয়া এক অন্দ্যিসুন্দরী নবীনা অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া ছিল, অদূরস্থিত এক আমগাছের ছায়াচ্ছন্ন নিভৃত শাখায় বসিয়া যে একটা সুকণ্ঠ পাপিয়া তাহার বিরহাকুল অশ্রান্ত বেদনা-গীতিতে উদ্যান প্লাবিত করিতেছিল, তাহার নিরলস দৃষ্টি, সেই ঝঙ্কৃত পাপিয়ার প্রতি সংস্থাপিত ছিল, সুতরাং সে দেবেন্দ্রবিজয়কে দেখিতে পায় নাই।

দেবেন্দ্রবিজয় দেখিলেন, সেই মূৰ্ত্তিমতী সৌন্দর্য্য রাণীর মেঘের মত নিবিড়, শৈবালের ন্যায় তরঙ্গায়িত, এবং ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ, বিমুক্ত কেশদাম গুচ্ছে গুচ্ছে পৃষ্টদেশ ব্যাপিয়া লুণ্ঠিত এবং জলসিক্ত হইতেছে। সেইরূপভাবে সেখানে দাঁড়াইয়া থাকা একান্ত গর্হিত মনে করিয়া দেবেন্দ্রবিজয় যেমন পশ্চাতে ফিরিবেন, একখণ্ড শুষ্কপত্রের উপরে তাঁহার পাদক্ষেপ হওয়ায় একটা শব্দ হইল। নবীনা তাড়াতাড়ি সেইদিকে চাহিয়া দেখিল। দেখিল—দেখিয়া মুখ দিয়া তাহার কথা সরিল না। তাহার ভাব দেখিয়া এমন বোধ হইল, সে উঠিবে—ডুবিবে—কি পলাইবে, কিছুই ঠিক করিতে পারিতেছে না।

দেবেন্দ্রবিজয়ও সেই নিরুপমার মুখের দিকে চাহিয়া মুগ্ধ, বিস্মিত, বিহ্বল এবং স্তম্ভিত। বিস্ময়াকুল দেবেন্দ্রবিজয় ব্যাকুলকণ্ঠে তাহাকে বলিলেন, “তুমি—তুমি এখানে!”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *