Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়াবী || Panchkari Dey » Page 82

মায়াবী || Panchkari Dey

অন্তঃপুরের পশ্চাদ্ভাগে একটি অনতিবৃহৎ পুষ্করিণী, এবং তাহার চারিদিকে নানাবিধ ফলের গাছ। বাহিরের লোকের দৃষ্টি তন্মধ্যে প্রবিষ্ট হইতে না পারে, এমনভাবে সেই স্থানটা চতুৰ্দ্দিকে উচ্চ প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। এই পুষ্করিণীটি অন্তঃপুরস্থ স্ত্রীলোকদিগের জন্যই ব্যবহৃত হইত।

গোপালচন্দ্র ও দেবেন্দ্ৰবিজয়কে সঙ্গে লইয়া অরিন্দম এই ছোট বাগানটি বেশ করিয়া পর্যবেক্ষণ করিতে লাগিলেন। যথাস্থানে উপস্থিত হইয়া অরিন্দম স্থির হইয়া দাঁড়াইলেন। সেখানে অনেকগুলি মানকচুগাছ সুপ্রশস্ত পত্রে অনেকটা স্থান অধিকার করিয়াছিল? তন্মধ্যে দুই-তিনটি গাছ অন্যান্য গাছগুলিকে ছাড়াইয়া অত্যন্ত সতেজ হইয়া উঠিয়াছিল। অরিন্দম গোপালচন্দ্রকে বলিলেন, “অন্যান্য গাছগুলি অপেক্ষা এই দুই তিনটি গাছ অধিক তেজাল দেখিতেছি।”

গোপালচন্দ্র বলিলেন, “হাঁ, ঐ গাছগুলি আলাদা জাতের। রাম সনাতন নামে আমারই একজন প্রজা তার মামার বাড়ী থেকে আমাকে এনে দিয়েছে। চলুন, ঐ দিক্‌টা আপনাকে দেখাইয়া আনি।” অরিন্দম বলিলেন, “না, আমাকে আর কোথাও যাইতে হইবে না। এইখানে আমার কাজ মিটিবে। একটা কথা হইতেছে, মহাশয়, আপনার এই মানকচু গাছগুলি আমাকে বাধ্য হইয়া নষ্ট করিতে হইতেছে; আপনার কোন আপত্তি আছে কি?”

গোপালচন্দ্ৰ হাসিয়া বলিলেন, “বিলক্ষণ, আপনি ত বড় মজার লোক!”

বলিতে না-বলিতে অরিন্দম দু-তিনটি গাছ টানিয়া তুলিয়া ফেলিলেন। তেমন বেশী বলপ্রয়োগও করিতে হইল না। গোপালচন্দ্র “করেন কি” “করেন কি” বলিয়া সাতিশয় অধীর হইয়া উঠিলেন।

অরিন্দম গোপালচন্দ্রের মুখের দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ এবং একবার “চুপ করুন”, বলিয়া তাঁহার ধৈর্য্যবিধান করিলেন। তাহার পর কটিদেশ হইতে একখানি দীর্ঘফলক ছুরিকা বাহির করিয়া সেইখানটা খনন করিতে লাগিলেন।

দেখিয়া শুনিয়া গোপালচন্দ্রের মুখ শুকাইয়া এতটুকু হইয়া গেল। এবং তাহার হাত পা কাঁপিতে লাগিল। এক পা এক পা করিয়া—তিনি পশ্চাতে সরিতে লাগিলেন। সেদিকে অরিন্দমের দৃষ্টি ছিল তিনি বলিলেন, “মহাশয়, পলাইবেন না—স্থির হ’য়ে দাঁড়ান; নতুবা এই দেখিতেছেন? (পিস্তল প্রদর্শন) এক পা সরিলে, গুলি করিয়া পা ভাঙিয়া দিব।”

গোপালচন্দ্র বলিলেন, “না, পালাব কেন, ভয় এত কিসের? পুলিসের লোক হলেও আপনি আমাদেরই উপকারী বন্ধু।”

অরিন্দম হাসিয়া বলিলেন, “তা ত বটেই! (দেবেন্দ্রবিজয়ের প্রতি) এই পিস্তলটা তুমি ঠিক করিয়া ধরিয়া থাক, সাবধান, উনি এক পা সরিলে তৎক্ষণাৎ গুলি করিবে।”

দেবেন্দ্রবিজয় এ অদ্ভুত রহস্যের মম্মোদঘাটন করিতে না পারিয়া, বিস্মিত হইয়া অরিন্দমের নিকট হইতে পিস্তল গ্রহণ করিলেন। অরিন্দম দ্রুতহস্তে ছুরিকার দ্বারা মৃত্তিকা খনন করিয়া তুলিতে লাগিলেন। দুই-তিনটি মানকচুর গাছ টানিয়া তুলিয়া ফেলিতে সেই স্থানটা পূর্ব্বেই অনেকটা গভীর হইয়াছিল; এক্ষণে অল্প পরিশ্রমে অরিন্দম স্বকার্য্য উদ্ধার করিলেন। অনতিবিলম্বে সেখান হইতে তিনি একটি মনুষ্যের বাহুর সম্পূর্ণ কঙ্কাল বাহির করিলেন। অঙ্গুলি অবধি স্কন্ধদেশের সন্ধিস্থল পৰ্য্যন্ত লইয়া সেই কঙ্কাল।

সেই কঙ্কাল দেখিয়া অরিন্দম আনন্দিত হইলেন; দেবেন্দ্রবিজয় শিহরিয়া উঠিলেন, এবং গোপালচন্দ্র—তাঁহার চোখে সমুদয় পৃথিবী ঘুরিতে লাগিল।

গোপালচন্দ্র সহসা প্রকৃতিস্থ হইয়া, কৃত্রিম বিস্ময়ের সহিত বলিলেন, “একি ব্যাপার! এ হাড় এখানে কে আনিল? রাধামাধব!”

অরিন্দম বলিলেন, “আর কে আনিবে? আপনি আনিয়াছেন—এ কাজ আপনারই। মনে পড়ে না, ফুলসাহেব প্রদত্ত রোহিণীর মৃত্যুর প্রমাণ?”

গোপালচন্দ্র আকাশ-বিচ্যুতের ন্যায় বলিলেন, “সে কি কথা! আপনি মিথ্যাকথা বলিতেছেন।”

অরিন্দম বলিলেন, “হাঁ, আমাদের দু’জনের মধ্যে একজন যে খুব মিথ্যাবাদী, তা’ আপনি যেমন বুঝিতে পারিতেছেন, আমিও তেমনি বুঝিতে পারিতেছি। এখন বাধ্য হইয়া আপনার হাতে আমাকে হাতকড়ি লাগাইতে হইল।”

হাতকড়ির নাম শুনিয়া, গোপালচন্দ্র তাঁহার সুবৃহৎ ভুঁড়ি নাচাইয়া লাফাইয়া উঠিলেন। অরিন্দম দেবেন্দ্রবিজয়কে ইঙ্গিত করিলেন, দেবেন্দ্রবিজয় গোপালচন্দ্রের হস্তদ্বয় দৃঢ়ভাবে ধরিয়া ফেলিলেন। এবং অরিন্দম হাতকড়ি লাগাইয়া দিলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *