Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়াবী || Panchkari Dey » Page 79

মায়াবী || Panchkari Dey

অরিন্দম যোগেন্দ্রনাথকে এ শুভসংবাদ দিবার জন্য দেবেন্দ্রবিজয়কে থানায় পাঠাইলেন। এক ঘণ্টার মধ্যে যোগেন্দ্রনাথ পাঁচ-সাতজন পাহারাওয়ালাকে সঙ্গে লইয়া উপস্থিত হইলেন; দেখিয়া শুনিয়া তিনি অসংখ্য ধন্যবাদের সহিত অরিন্দমের সুখ্যাতি করিতে লাগিলেন।

যোগেন্দ্রনাথ সকলকে থানায় লইয়া চলিলেন। অরিন্দম ও দেবেন্দ্রবিজয় সঙ্গে চলিলেন। দেবেন্দ্রবিজয় ও যে পাঁচ-সাতজন পাহারাওয়ালা যোগেন্দ্রনাথের সঙ্গে আসিয়াছিল, তাহারা ফুলসাহেব ছাড়া অপর দস্যুদিগকে লইয়া আগে চলিয়া গেল। তাহাদিগের পশ্চাতে ফুলসাহেবকে লইয়া অরিন্দম ও যোগেন্দ্রনাথ থানার দিকে অগ্রসর হইয়া চলিলেন।

তখন রাত্রি প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে। দূরবর্ত্তী আমগাছের ঘন পল্লবের ভিতর হইতে দুটো- একটা কোকিল ডাকিতে আরম্ভ করিয়াছে, এবং বাঁশঝাড়ের ভিতর দিয়া শেষরাত্রির স্নিগ্ধ বাতাস সর্ সর্ শব্দে বহিয়া যাইতেছে; এবং অন্ধকারস্তূপবৎ গাছের ভিতরে অসংখ্য খদ্যোৎ জ্বলিতেছে, পথে জন-প্ৰাণী নাই। এমন সময়ে কে ওই পিশাচী নিকটবর্ত্তী বৃক্ষান্তরাল হইতে ছুটিয়া বাহির হইয়া চক্ষুর নিমেষে একখানা দীর্ঘ ছুরিকা ফুলসাহেবের বক্ষে আমূল বিদ্ধ করিয়া দিল। তাড়াতাড়ি যোগেন্দ্ৰনাথ যেমন সেই নরহন্ত্রীকে ধরিতে যাইবে, সে তেমনি ক্ষিপ্রহস্তে সেই ছুরিখানা নিজের বুকে বসাইয়া দিল। এবং একটা খিল খিল খিল কলহাস্যে সুপ্ত নিশীথিনী অন্ধকার-নিস্তব্ধ-বুক দীর্ণ-বিদীর্ন করিয়া যেন তেমনি একখানা শাণিত ক্ষিপ্র ছুরির ন্যায় তীব্রবেগে খেলিয়া গেল। আমগাছে কোকিল থামিয়া গেল; এবং বাতাস যেন রুদ্ধ হইয়া গেল, এবং আকাশের সমস্ত নক্ষত্র নিদ্রাহীন নির্নিমেষ নতনেত্রে রাক্ষসী নিশার এই একটা ক্ষুদ্র অভিনয়ের প্রতি নীরবে চাহিয়া রহিল। প্রলয়ঙ্করী নিশার শোণিতাক্ত মূর্ত্তির সমক্ষে, এবং তাহার শব্দহীন গাম্ভীর্যের মধ্যে পড়িয়া এবং তাহার এই দুর্নিরীক্ষ্য বিভীষিকার মধ্যে পড়িয়া শাসনভীত অপরাধী ক্ষুদ্র বালিকার ন্যায় সমগ্র প্রকৃতি থর্ থর করিয়া কাঁপিতে লাগিল এবং চারিদিক ছম্ ছম্ করিতে লাগিল।

ফুলসাহেবের সর্ব্বাঙ্গ প্লাবিত করিয়া রক্তস্রোত ছুটিতে লাগিল—তখনই সেখানে সে লুটাইয়া পড়িল। যাহার ছুরির আঘাতে জীবনের সহিত ফুলসাহেবের বন্দিত্ব মোচন করিয়া দিতেছে, অরিন্দম তাহার ভাব-ভঙ্গিতে চিনিতে পারিলেন—সে সেই মোহিনী।

মোহিনী নিজের বুকে যে আঘাত করিয়াছিল, বাধাপ্রাপ্ত হইয়াও তাহা সাংঘাতিক হইয়াছিল। যোগেন্দ্রনাথ ও অরিন্দম তাহাকে ধরিয়া ফেলিলেন, এবং তাহার হাত হইতে সেই রক্তাক্ত ছুরিখানা কাড়িয়া লইলেন। ফুলসাহেবের রক্তস্রাব কিছুতেই বন্ধ হইল না। সে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হইতে লাগিল। আবদ্ধ হস্তে তালি দিতে দিতে, হাসিতে হাসিতে মোহিনী ফুলসাহেবকে বলিল, “কেমন, বিনোদ! আমি কি মিথ্যাকথা বলি? দেখ দেখি, কেমন সুখ! এই না হ’লে মজা!”

মোহিনী খুব হাসিতে লাগিল।

ফুলসাহেব বলিল, “মোহিনী, তুমি আমার যথেষ্ট উপকার করিলে, অরিন্দমের ফাঁসী-কাঠের অপেক্ষা তোমার ছুরি অনেক ভাল।” তাহার পর অরিন্দমকে ডাকিয়া বলিল, “অরিন্দম, আমি ত এখনই মরিব—তা’ বলিয়া মনে করিও না, তুমি নিরাপদ হইতে পারিলে। জুমেলিয়া এখনও বাঁচিয়া আছে সুবিধা পাইলে সে একদিন তোমাকে হত্যা করিবে। সে কোথায় লুকাইয়া আছে, আমি জানি না। জুমেলিয়াকে সাবধান—এখন হইতে তাহার সন্ধান কর—বিশেষতঃ তোমাদের উপরে তার বড় রাগ আছে—সে প্রতিজ্ঞা করিয়াছে, তোমাদের রক্ত দর্শন করিয়া ছাড়িবে। *আমি ত মরিতে বসিয়াছি এখন বুঝিতে পারিয়াছি—এত চেষ্টা করিয়া দেখিয়াছি—অধর্ম্মের জয় কিছুতেই হইবার নয়।”

অজস্র রক্তস্রাবে ফুলসাহেবের সর্ব্বাঙ্গ শীঘ্রই অবসন্ন হইয়া আসিল। চক্ষুর দীপ্তি ম্লান হইয়া গেল এবং গলায় ঘড়ঘড়ি উঠিল। ফুলসাহেব মৃত্যুর পূর্ব্বে অনেকক্ষণ অরিন্দমের মুখের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল; সে দৃষ্টিতে এরূপ বুঝাইল, যেন অরিন্দমকে তাহার আরও কি বলিবার ছিল; বলা হইল না—ফুলসাহেব তখন বাক্ শক্তি রহিত এবং কণ্ঠাগত প্রাণ। দুই-একবার কথা কহিবার জন্য মুখ খুলিল—কোন কথা বাহির হইল না; একটি অব্যক্ত শব্দ হইল মাত্র; তাহার অনতিবিলম্বে দুর্দান্ত ফুলসাহেব এ সংসার হইতে চির-বিদায় গ্রহণ করিল কিন্তু তাহার সেই সকল ভীষণ কীৰ্ত্তি-কাহিনী অনেকেরই মনে চিরজাগরূক থাকিবে।

যথেষ্ট রক্তপাতে মোহিনীর মত্যুকালও যথেষ্ট সংক্ষিপ্ত হইয়া আসিতে লাগিল। রক্ত কিছুতেই বন্ধ হইল না। ফুলসাহেবের মৃত্যুর অনতিবিলম্বে মোহিনীরও মৃত্যু হইল।

তাহার পর অরিন্দম ফুলসাহেবের জামার পকেট হইতে দুইটি বিষ-কাঁটা ও কয়েকখানি পত্ৰ বাহির করিলেন। পত্রগুলি একান্ত প্রয়োজনীয়। অরিন্দম পত্রগুলি পড়িয়া যোগেন্দ্রনাথের হাতে দিলেন। যোগেন্দ্রনাথও পাঠ করিয়া মত প্রকাশ করিলেন, “পত্রগুলি প্রয়োজনীয় বটে। এতদিনের পর এ গভীর রহস্যপূর্ণ প্রহেলিকা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হইল।”

ফুলসাহেব ও মোহিনীর মৃতদেহ থানায় চালান দেওয়া হইল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress