Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়াবী || Panchkari Dey » Page 74

মায়াবী || Panchkari Dey

এই অপ্রত্যাশিতপূৰ্ব্ব ঘটনাটা অরিন্দমের নিরতিশয় অদ্ভুতরসাত্মক বলিয়া বোধ হইল। কথায়- বার্তায় পূর্ব্বেই তাঁহার ধারণা হইয়াছিল যে, মোহিনীর পাগলের ছিট্‌ আছে। এখন তাহাকে পথের উপর দিয়া সেরূপভাবে ছুটিতে দেখিয়া, সে ধারণাটা কিছুমাত্র অমূলক নহে বলিয়া বুঝিতে পারিলেন। তাহা হইলেও অরিন্দম তাহার কথাগুলি উন্মাদের খেয়াল মনে না করিয়া, সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিলেন। যদিও তাঁহার ন্যায় সাহসী, সুচতুর ও সদ্বিবেচক ব্যক্তির পুরুষকার অপেক্ষা দৈবের উপর নির্ভর করা একান্ত নিন্দার কথা; তাহা হইলেও তিনি অনেক স্থলে দৈবের উপরেই সমধিক নির্ভর করিতেন। তিনি জানিতেন, এবং এমন অনেক হইতেও দেখিয়াছেন যে, প্রথমে দৈবাৎ এমন এক- একটি ছোট ঘটনা ঘটে যে, এক সময়ে তাহার পরিণাম অদৃষ্টপূর্ব্ব গুরুতর হইয়া উঠে।

তিনি সেই অপরিচিতা উন্মাদিনীর কথায় একান্ত আস্থা স্থাপনপূর্বক দস্যুদল দলনের অচিন্তিতপূর্ব এক বৃহৎ আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হইলেন। আয়োজনটা নূতন রকমের, তাহাতে প্রচুর আমোদ আছে, এবং ভয়, পরিশ্রম খুব কম আছে।

তিনি যোগেন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করিতে থানায় উপস্থিত হইলেন। যোগেন্দ্রনাথ তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অরিন্দম যোগেন্দ্রনাথকে ফুলসাহেবের এই নতূন কল্পনার কথা বলিলেন বটে, কিন্তু নিজে তাহাকে ধরিবার জন্য যে উপায় স্থির করিয়াছেন, সে সম্বন্ধে কোন কথা তাঁহার নিকট প্রকাশ করিলেন না।

যোগেন্দ্রনাথ বলিলেন, “ব্যাপার ত বড় সহজ নহে, তোমার বাড়ীতে ডাকাতি। এইবার তোমার বিদ্যাবুদ্ধি বাহির হইয়া পড়িবে।”

অরিন্দম বলিলেন, “তেরোজন ডাকাতকে ভয় করিতে অরিন্দমের এখনও শিক্ষা হয় নাই। কথাটা যদি ঠিক হয়, তা’ হলে কাল দেখবে, অরিন্দম তেরোজনকেই অয়ষ্কঙ্কণভূষিত ক’রে এখানে চালান্ দিয়েছে।”

যোগেন্দ্র। অরিন্দমবাবু, এ কি তুমি যে-সে তেরোজন মনে করেছ? ফুলসাহেব ত তার মধ্যে আছেই; তা’ ছাড়া ফুলসাহেবের পছন্দ করা বারোজন। মনে থাকে যেন, তাদের এক-একজন দ্বিতীয় ফুলসাহেব।

অরিন্দম। নিঃসন্দেহ।

যো। তবে?

অ। তবে আবার কি?

যো। এখন কি উপায় স্থির করেছ?

অ। আত্মরক্ষার না তাদের বন্দী করবার?

যো। দুই বিষয়েই।

অ। এখনও অনেক সময় আছে, একটা না একটা উপায় স্থির করতে পারব

যো। সময় আর কোথায়? আজ রাত্রেই ত তা’রা আসবে। এখন কতগুলি লোক আমাকে দিতে হবে, বল দেখি?

অ। একজনও না।

যো। (সবিস্ময়ে) সে কি!

অ। লোক নিয়ে আমি কি করব?

যো। একাই বা কি করবে?

অ। যতদূর সাধ্য।

যো। কি পাগলের মত কথা বল, মানে হয় না। ভেবে ভেবে, আর ঘুরে ঘুরে তোমার মাথাটা একেবারে বিগড়ে গেছে দেখছি, অরিন্দমবাবু!

অ। (সহাস্যে) তা’ হবে!

যো। তোমার সকল কথায় পরিহাস। কাজের কথায় পরিহাস করা বুদ্ধিমানের লক্ষণ নয়। তুমি একা সেই তেরোজনের কিছুই করতে পারবে না।

অ। দেবেন্দ্রবিজয় আছে।

যো। সেদিনকার ঘটনায় তার বলবুদ্ধির অনেক পরিচয় পাওয়া গিয়াছে; সেদিনকার মত আজ আবার সে তোমার সাহায্য করতে গিয়ে, তোমার বিপদ্ আর একদিকে না বাড়িয়ে দিলে হয়।

অ। নূতন লোক। তা’ যা’ই হোক্, দেবেন্দ্ৰবিজয়ের মুখ-চোখের ভাব আর কথাবার্তা শুনে তার মাথাটা যে পরিষ্কার আছে, তা’ বেশ বুঝতে পারা যায়। আমার সঙ্গে এই দুইমাসে ঘুরে ঘুরে গোয়েন্দাগিরি শিখতে তার একটু ইচ্ছা হয়েছে। মাথা পরিষ্কার না থাকলে এ জঘন্য কাজে সহজে কাহারই ইচ্ছা হয় না। যে একটু বুদ্ধিমান্, যে একটু চতুর, যে একটু বলবান্, এসব কাজে সে একটু আনন্দ বোধ ক’রেই থাকে।

যো। না হয়, তোমার দেবেন্দ্রবিজয় চতুর, বুদ্ধিমান্, বলবান্ সবই। তা’ হলেও দুইজনে কি সেই তেরোজনের সমকক্ষ হ’তে পারবে? বিশেষতঃ সেই তেরোজনের মধ্যে আবার স্বয়ং ফুলসাহেবের সম্পূর্ণ অস্তিত্ব রয়েছে।

অ। একদিন আমি একা একুশজনের যে দুর্দ্দশা করেছিলাম, তা’ বুঝি তোমার মনে নাই!

যো। তা’ জানি, তোমার বুদ্ধি বল অলৌকিক, কিন্তু ফুলসাহেব বড় সহজ লোক নয়, তাই বলিতেছি।

অ। একটা বিষয়ে আমি তোমার সাহায্য চাই। কতকগুলি ইলেকট্রীক ব্যাটারী আবশ্যক। সন্ধ্যার পূর্ব্বে সংগ্রহ করতে পারবে?

যো। ইলেকট্রীক ব্যাটারী নিয়ে কি হবে?

অ। (সহাস্যে) একটু বিজ্ঞানের চর্চ্চা করা যাবে।

যো। তোমার অন্ত পাওয়া ভার—তুমি লোকটা একান্ত দুৰ্জ্জেয়।

অ। তোমার কাছেও?

যো। তা, বৈকি! ইলেকট্রীক ব্যাটারী ছাড়া আর কিছু চাই?

অ। আর চৌদ্দ জোড়া হাতকড়ি ও বেড়ি। যেন সকলগুলি বেশ মজবুত হয়।

যো। একটা বেশি কেন?

অ। যদি সেই তেরোজনের সঙ্গে আমার বাড়ীতে জুমেলিয়ারও শুভ পদার্পণ হয়। তা’ না হ’লেও ফুলসাহেবের জন্য জোড়া-দুই হাতকড়া আবশ্যক করে।

যো। অরিন্দমবাবু, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তোমার কথাগুলো আমার বড় ভাল ঠেকছে না। বেশি না হয়—আমি থানা থেকে বারোজন লোক দিচ্ছি, আজ রাত্রের জন্য তোমার বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে রেখে দাও, এসময়ে অনেক কাজে লাগবে।

অ। একজনও না। আমাকে কি তোমার বিশ্বাস হয় না?

যো। তোমার যা’ খুসী, তা’ কর, আমি আর কোন কথা বলব না।

অ। আমি উঠলেম—আর সময় নষ্ট করব না। ইলেকট্রীক ব্যাটারী আর হাতকড়ি ও বেড়িগুলো যত শীঘ্র পার, পাঠিয়ে দিয়ো।

যো। আধ ঘণ্টার মধ্যেই পাবে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress