Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়াবী || Panchkari Dey » Page 73

মায়াবী || Panchkari Dey

দেবেন্দ্রবিজয় আশ্বাসিত ও অনুরুদ্ধ হইয়া এখনও অরিন্দমের বাসায় অপেক্ষা করিতেছেন। যত দিন যাইতেছে, রেবতীর জন্য দেবেন্দ্রবিজয় ততই ব্যগ্র হইয়া উঠিতেছেন। রেবতীর সন্ধানের জন্য অরিন্দমকে কোন কথা বলিলে, অরিন্দম মুখে খুবই আশ্বাস দেন; কিন্তু কাজে তাহার কিছুই হয় না দেখিয়া, দেবেন্দ্রবিজয় মনে মনে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। এমনকি অরিন্দমের সংসর্গ তাঁহার এক-একবার বড় তিক্ত বোধ হইত। সেই সময়ে মনুষ্যোচিত বিরক্তি এবং রেবতী উদ্ধারের জন্য অন্য ডিটেটিভ নির্বাচনের কল্পনাটা তাহার মনের ভিতরে নিরতিশয় প্রবল ও তীব্র হইয়া উঠিত;মুখে কিছুই প্রকাশ করিতেন না। মুখে প্রকাশ না করিলেও মুখের ভাবটা সে-কথাটা যখন-তখন অরিন্দমের নিকট প্রকাশ করিয়া দিত। দুই-একটা কাজেও অরিন্দম তাহা বেশ বুঝিতে পারিতেন; ফুলসাহেবের অনুসন্ধান সম্বন্ধে গোপন কাজ করিতে হইলে দেবেন্দ্রবিজয় পাঁচ-সাতবার ‘হাঁ’ ‘না’ করিয়া কখন কোন কাজে ‘হাঁ’ দিতেন, কখন কোন কাজে ‘না’ দিতেন। এক-এক সময়ে অরিন্দমের মিথ্যা (?) আশ্বাসবাক্যে তাঁহার বিরক্তি ও ধৈর্য্য একেবারে সীমা অতিক্রম করিয়া এতদূরে উঠিত যে, তাহা একটা নীরব ক্রোধে রূপান্তরিত হইয়া যাইত। এবং সেই সঙ্গে দেবেন্দ্রবিজয় গৃহ-প্রত্যাগমনের জন্য বদ্ধ পরিকর হইয়া উঠিতেন। অসহ্য বিরক্তি, দারুণ উৎকণ্ঠা, দুঃসহ উদ্বেগ এবং লুপ্তপ্রায় ধৈর্য্যের মধ্য দিয়া দেবেন্দ্রবিজয়ের দীর্ঘ দীর্ঘ দিনগুলি দীর্ঘতম হইয়া অতিবাহিত হইতেছে।

একদিন দেবেন্দ্রবিজয় কোন কাজে বাহির হইয়াছেন, অরিন্দম মধ্যাহ্ন ভোজনের পর সংক্ষিপ্ত মধ্যাহ্ন-বিশ্রামের আয়োজনমাত্র করিয়াছেন, এমন সময় ভৃত্য আসিয়া সংবাদ দিল, একটি স্ত্রীলোক তাঁহার সহিত দেখা করিতে আসিয়াছে।

অরিন্দম সেই স্ত্রীলোককে সেইখানে লইয়া আসিবার জন্য ভৃত্যকে আদেশ করিলেন।

অনতিবিলম্বে মুখের উপর অনেকখানি ঘোমটা টানিয়া একটি স্ত্রীমূর্ত্তি অরিন্দমের সম্মুখীন হইয়া, গৃহমধ্যে প্রবেশ না করিয়া দ্বার- সম্মুখে বসিয়া পড়িল। তাহার বেশ-ভূষা মলিন এবং বড় অপরিষ্কার দুই-একগুচ্ছ চুল—অতি রুক্ষ, কানের পাশ দিয়া, সম্মুখে আসিয়া পড়িয়াছিল—সে গৌরবর্ণা হইলেও, ভস্মাচ্ছাদিত বহ্নির ন্যায় সে বর্ণে কিছুমাত্র ঔজ্জ্বল্য ছিল না। সে দেহ দাবাগ্নিদগ্ধকিশলয় সদৃশ কেমন যেন বিশুষ্ক ও শ্রীহীন, ঠিক বর্ণনা করা যায় না।

অরিন্দম তাঁহাকে দেখিয়া বিস্মিত হইলেন। তিনি ঘরের ভিতরে শয্যায় শয়ন করিয়াছিলেন উঠিয়া বসিয়া, একটি তাকিয়া টানিয়া তদুপরে দেহভার বিন্যস্ত করিয়া বলিলেন, “কে তুমি?”

ঘোমটার ভিতর হইতে মৃদুস্বরে উত্তর হইল, “আমি ফুলসাহেবের স্ত্রী।”

ফুলসাহেবের স্ত্রী! শুনিয়া বিস্মিত অরিন্দম আরও বিস্মিত হইলেন। কতকটা যেন স্বপ্নের মত বোধ হইল। একবার মনে হইল, ছদ্মবেশে জুমেলিয়া নহে ত? কিন্তু তার কণ্ঠস্বর ত এমন নহে, জুমেলিয়ার কণ্ঠস্বরে এমন একটা তীব্রতা মিশ্রিত আছে যে, একবার শুনিলে চেষ্টা করিয়াও কেহ তাহা সহজে ভুলিতে পারে না। এ কে? সন্দিগ্ধ অরিন্দম কি উত্তর করিবেন, ঠিক করিতে না পারিয়া, ললাট কুঞ্চিত করিয়া অবাঙ্মুখে তাহার দিকে নীরবে চাহিয়া রহিলেন।

অরিন্দমকে নীরব দেখিয়া সেই কৃতাবগুণ্ঠনা রমণী বলিল, “তুমি ফুলসাহবেকে কি জান না?”

অরিন্দম। জানি।

রমণী। আমি তাহার স্ত্রী—আমার নাম মোহিনী।

অরিন্দম। ইহা এখন জানিলাম।

মোহিনী। ফুলসাহেব জেলখানা থেকে পালায়, সে কথা তোমার মনে আছে?

অ। আছে।

মো। সে তোমাকে খুন করবার জন্য যে প্রতিজ্ঞা করেছে, তা’ এখনও তোমার মনে আছে কি?

অ। বেশ মনে আছে।

মো। তবে যে তুমি বড় ভালমানুষটির মত নিশ্চিন্ত হ’য়ে ব’সে আছ?

অ। চিন্তিত হইয়াই বা করিব কি? এই দুইমাস ধরিয়া কিছুতেই তাহার সন্ধান হইল না।

মো। তা’না হলেও তোমার মত একজন বড় গোয়েন্দার চুপ ক’রে ব’সে থাকা কি ভাল দেখায়? দুই মাসে যা’ হয় নাই—দুই দিনে তা’ হতে পারে।

অ। তা’ যেন হ’ল তুমি ফুলসাহেবের স্ত্রী—তা’তে তোমার লাভ কি?

মো। লাভ? অনেক। সে অনেক কথা—সে কথা থাক্। আসল কথাটা আগে শুনে যাও। ফুলসাহেব এখন তোমাকে খুন করবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এইবার সে যা’ হ’ক্, একটা হেস্তনেস্ত না ক’রে ছাড়বে না; তাই আমি তোমাকে সাবধান করে দিতে এসেছি। খুব সাবধান – ফুলসাহেব বড় ভয়ানক লোক! সে শুধু মানুষ না—সে অনেকরকম; সে মানুষও বটে, সে পিশাচও বটে, সে দানবও বটে, সে ডাকাতও বটে, সে খুনেও বটে, সে সাপও বটে—সে বাঘও বটে, একটু অসাবধান হ’লেই হয় সে সাপ হ’য়ে দংশন করবে—না হয় বাঘ হ’য়ে গিলে খাবে—না হয় পিশাচ হ’য়ে ঘাড় মট্‌কাবে! না হয়—

অ। (বাধা দিয়া) আসল কথা কি বলবে বলছিলে না?

মো। হাঁ, মনে আছে। ফুলসাহেব তোমাকে খুন করবার জন্য একদল দস্যু সংগ্রহ করেছে। তা’রা সকলেই তোমাকে খুন করবার জন্য ফুলসাহেবের কাছে শপথ করেছে। একটু অসাবধান হ’লে কখন সে এসে তোমার বুকে ছুরি বসিয়ে দেবে, তুমি তা’ কিছুই জানতে পারবে না। খুব সাবধান – সারা দিনরাত সাবধান—বড় ভয়ানক লোক, তা’রা—সকলেই খুনী, খুন-জখম করতে তাদের একটুও সঙ্কোচ হয় না।

অ। তারা কে জান?

মো। না, তা’রা দু-চারজন নয়, সর্ব্বসুদ্ধ তেরো জন। সকলেই যেন যমের দূত!

অ। তাদের আড্ডা কোথায়, বলতে পার?

মো। আড্ডার কোন ঠিক-ঠিকানাই নাই। যেখানে যখন তারা যেদিন একসঙ্গে জুটে, সেদিন সেইখানে তাদের আড্ডা। তারা সকলেই দিনরাত যে যার চেষ্টায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

অ। সে চেষ্টার লক্ষ্য আমার মৃত্যু, কেমন?

মো। তাতে আর সন্দেহ আছে।

অ। তাদের ভিতরকার আর কোন কথা তুমি জান?

মো। তাদের একটি পরামর্শের কথা আমি নিজের কানে শুনেছি:বড় ভয়ানক লোক তারা—বড় ভয়ানক কথা!

অ। কথাটা কি?

মো। আজ রাত্রে তোমাকে তারা এখানে খুন করতে আসবে।

অ। (বাধা দিয়া) এখানে! আমার বাড়ীতে?

মো। কেন বিশ্বাস হয় না?

অ। সকলেই আসবে?

মো। সকলেই—সকলেই শপথ করেছে।

অ। কখন আসবে?

মো। আজ রাত্রে।

অ। তা’ জানি। কত রাত্রে?

মো। রাত দু’টার পর

অ। বটে!

মো। শুধু নিজেকে রক্ষা করলে হবে না,—দেখ্‌ তাদের ধরতে, তবে জাব— গোয়েন্দার মত গোয়ান্দা বটে! এখন থেকে পুলিসের লোকজন এনে বাড়ীর ভিতরে লুকিয়ে রেখে দাও—আমার পরামর্শ শোন।

অ। তা’ হ’লে ফুলসাহেবও ধরা পড়বে—ফুলসাহেব যে তোমার স্বামী।

মো। ফুলাসাহেব যে আমার স্বামী, সে কথা আর আমাকে এত ক’রে বুঝিয়ে দিতে হবে না। আমি ফুলসাহেবের স্ত্রী—আমি কি জানি না, ফুলসাহেব আমার স্বামী? নামজাদা বুদ্ধিমান গোয়েন্দা হ’য়ে তুমি সহসা এমন নির্বোধের মত কথা কও কেন?

অ। তবে যে তুমি ফুলসাহেবের অমঙ্গল চেষ্টা করছ? কারণ কি?

মো। কারণ, সে আমার পরম শত্রু। মানুষ মানুষের এতদূর শত্রু হ’তে পারে, এ কথা আগে জান্তাম না। ফুলসাহেবের তুমি যেমন শত্রু, তার চেয়ে ফুলসাহেব আমার বেশী শত্রু। যখন সে জেলে গিয়েছিল, তখন একবার আমি সুখী হয়েছিলাম;এখন আমার যন্ত্রণায় বুকটা জ্বলে পুড়ে খাক্‌ হ’য়ে যাচ্ছে!

অ। ফুলসাহেবকে গ্রেপ্তার করলে তুমি সুখী হবে? মো। খুন করলে সুখী হ’ব।

অ। স্বামীর উপরে এত রাগের কারণ কি?

মো। সে কথায় তোমার কোন দরকার নাই, তবে এখন আমি যাই। যা বল্লেম, সব যেন বেশ মনে থাকে।

মোহিনী চকিতে উঠিয়া, অতি দ্রুতপদে তথা হইতে চলিয়া গেল।

অরিন্দম পথের দিক্কার একটা জানালায় মুখ বাড়াইয়া দেখিলেন, মোহিনী তখন ঘোমটা খুলিয়া ফেলিয়াছে—এমনকি অৰ্দ্ধোলঙ্গভাবে সে ছুটিয়া চলিয়াছে। দুই-একজন পথিক পথের ধারে দাঁড়াইয়া, অবাক্ হইয়া মোহিনীর দিকে চাহিয়া আছে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress