Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়াবী || Panchkari Dey » Page 22

মায়াবী || Panchkari Dey

অরিন্দম তখন অনেকটা সুবিধা বোধ করিলেন। যে উদ্দেশ্যে তিনি ভাল করিয়া মৃতবৎ মাটিতে পড়িয়াছিলেন, তখন তাহা সহজেই সফল করিতে পারিবেন বলিয়া ণা হইল। তিনি ক্ষীণকণ্ঠে আবার জল চাহিলেন। ব্রাহ্মণী জল আনিতে উঠিলে অরিন্দম কাতরকণ্ঠে বলিলেন, “আপনি বসুন, যেমন বাতাস করিতেছেন, করুন। আমার সমস্ত শরীরটা কেমন যেন ঝিম্ ঝিম্ করছে। মা! আপনি আমার আর জন্মের মা ছিলেন। আপনি আমার প্রাণরক্ষা করলেন।”

স্ত্রীলোকের মন নরম কথায় সহজে ভিজে, কাজেই ব্রাহ্মণী সেইখানে বসিয়া আরও জোরে বাতাস করিতে লাগিলেন। এইরূপে আবার কিছুক্ষণ কাটিল। অরিন্দম আবার জল চাহিলেন। এইবার ব্রাহ্মণী আর একজনকে ডাকিয়া, তাহার হাতে পাখা দিয়া, বাতাস করিতে বলিয়া নিজে জল আনিতে গেলেন।

যে এখন পাখা লইয়া বসিল, অরিন্দম দেখিলেন, এ সেই অপরূপ লাবণ্যময়ী। দেখিয়া চিনিলেন তিনি দুইবার তাহাকে বাতায়নে দাঁড়াইয়া থাকিতে দেখিয়াছিলেন। অতি মৃদুস্বরে বলিলেন, “গোঁসাই মহাশয় তোমার কে হ’ন্‌?”

সে কোন উত্তর করিল না; পূর্ব্ববৎ বাতাস করিতে লাগিল।

অরিন্দম পূর্ব্ববৎ মৃদুস্বরে নিজেই সে প্রশ্নের উত্তর করিলেন, “বোধহয়, কেহই না; বোধহয় কেন, নিশ্চয়ই তোমার কেহ নহেন। আমি তোমার বিষয়ে কিছু কিছু জানি।”

শুনিয়া ব্যজনকারিণী সুন্দরীর ভয় হইল। সে পাখা ফেলিয়া, উঠিয়া যাইবার উপক্রম করিল।

অরিন্দম বলিলেন, “ভয় নাই—আমি তোমার শত্রু নই, আমার কাছে কোন কথা গোপন করিয়ো না। তোমার উপরে আবার এক ভয়ানক ষড়যন্ত্র চলিতেছে। শীঘ্রই তুমি এমন বিপদে পড়িবে যে, তাহা হইতে তখন উদ্ধারের আশামাত্র থাকিবে না।”

ব্যজনকারিণী কি করিবে, স্থির করিতে না পারিয়া আবার বসিল।

অরিন্দম বলিলেন, “তুমি গোরাচাঁদ বলিয়া কাহাকেও চেন কি? আমার কাছে লুকাইয়ো না।”

গোরাচাঁদের নাম শুনিয়া সেই নবীনার মুখ শুকাইল;আবার সে উঠিয়া যাইবার উপক্রম করিল। অরিন্দম বলিলেন, “ব’সো, আমার দ্বারা তোমার উপকার ভিন্ন কোন অপকার হইবে না, নিশ্চয় জানিয়ো। আমার কাছে লুকাইয়ো না—তাহা হইলে তুমি ভাল কাজ করিবে না। আমাকে বিশ্বাস কর। গোরাচাঁদকে তুমি চেন কি?”

নবীনা বলিল, “চিনি।”

অরিন্দম আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেশবচন্দ্র নামে কোন জমিদারকে চেন?”

নবীনার শুষ্ক মুখ আরও শুকাইল। কম্পিতকণ্ঠে সে বলিল, “হাঁ চিনি।”

অরিন্দম বলিলেন, “তুমি শীঘ্রই আবার তাহাদিগের হাতে পড়িবে। তোমার গোস্বামী এই ষড়যন্ত্রে আছেন; গোরাচাঁদ নামে লোকটা কাল সন্ধ্যার পর এখানে এসে গোঁসাই মহাশয়ের সঙ্গে গোপন পরামর্শ করে গেছে; আজ রাত্রেই তোমাকে আবার তাহাদিগের হাতে পড়িতে হইবে। এই পত্রখানি দেখিলেই বুঝিতে পারিবে।” একখানি পত্র বাহির করিয়া নবীনার হাতে দিলেন। পত্রখানি এইরূপ,–

“মহাশয়,

যদিও আপনার সহিত আমার পরিচয় নাই; কিন্তু গোরাচাঁদের মুখে আপনার সম্বন্ধে যেসকল কথা শুনিলাম, তাহাতে আপনাকে একজন মহৎ ব্যক্তি বলিয়া বুঝিতে পারি। শুনিলাম, রেবতীর কাকা গোপাল চন্দ্র বসু আপনার হস্তে রেবতীকে সমর্পণ করিবেন মনস্থ করিয়াছেন। রেবতীর নাকি এ বিবাহে মত্‌ নাই, সেইজন্য তিনি এই শুভ বিবাহ যাহাতে গোপনে সম্পন্ন হয়, সেজন্য রেবতীকে আপনার বাগান-বাটীতে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন। তথা হইতে আপনার অসাক্ষাতে রেবতী পলাইয়া আসিয়াছে। বেশী বয়স অবধি মেয়েদের অবিবাহিত রাখাই এইসকল গোলযোগের একমাত্র কারণ। সেইজন্য আমাদের শাস্ত্রে মেয়েদের যত অল্প বয়সে বিবাহ দিতে পার, ততই মঙ্গল বলিয়া উল্লেখ আছে। বেশী বয়স হ’লে মেয়েরা নিজে নিজে পছন্দ করতে শিখে, পাত্রাপাত্র বুঝে না। আপনার সম্বন্ধে রেবতী আমাকে অনেক মিথ্যাকথা বলিয়াছিল, আমি সেসকল বিশ্বাস করিতে পারি নাই। যাহা হউক, যাহাতে এ বিবাহ সুসম্পন্ন হয়, তাহাতে আমিও ইচ্ছুক। আর গোরাচাঁদের মুখে আপনার যেরূপ বিষয়-ঐশ্বর্য্যের কথা শুনিলাম, তাহাতে রেবতীর সৌভাগ্য বলিতে হইবে। রেবতী এখন আমার কাছে আছে, গোরাচাঁদ আড়াই শত টাকা দিয়া রেবতীকে আমার নিকট হইতে লইয়া যাইতে চাহিয়াছিল;কিন্তু এসকল বিবাহের কাজে ত গুরু-বরণ ইত্যাদিতে দুই-চারি শত টাকা আমার পাইবারই কথা, তা’ছাড়া আমি যে রেবতীকে সন্ধান করিয়া ধরিয়া রাখিলাম, তাহার জন্য আপনার মত জমিদারের নিকটে কি আর কিছু আশা করিতে পারিব না? আপনি পত্র প্রাপ্তে ৫০০ পাঁচশত টাকা গোরাচাঁদের হাতে পাঠাইয়া দিবেন। আমি তাহার সহিত তখনই রেবতীকে পাঠাইয়া দিব। ইতি–

আশীর্বাদক
শ্ৰী যদুনাথ শৰ্ম্মা।”

পাঠক মহাশয়কে আর বিশেষ করিয়া বুঝাইতে হইবে না যে, এই রেবতীই জীবন পালের বাগান হইতে মোহিনীর সহায়তায় দুর্বৃত্ত কেশবচন্দ্রের হাত হইতে মুক্তি পাইয়া সেইদিন রাত্রে ঝড়বৃষ্টি মাথায় করিয়া গোঁসাইপাড়ার পথ জানিতে বলাই মণ্ডলের দোকানে উপস্থিত হইয়াছিল, এবং ইহারই রক্তাক্ত বস্ত্রাদি দেখিয়া পরদিন গ্রামমধ্যে একটা হুলস্থুল পড়িয়া গিয়াছিল। যে ব্যক্তি সেইদিন রাত্রেই রেবতী চলিয়া আসিলে অল্পক্ষণ পরেই বলাই মণ্ডলের দোকানে গিয়া বালিকার সন্ধান করিয়াছিল, এবং পরদিন রাত্রে অরিন্দমকে জনমানবশূন্য প্রান্তরের মধ্যে লইয়া গিয়া হত্যা করিতে চাহিয়াছিল, সে সেই কেশবচন্দ্রের বিশ্বস্ত অনুচর—সেই গোরাচাঁদ ব্যতীত আর কেহই নয়

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *