Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়াবী || Panchkari Dey » Page 18

মায়াবী || Panchkari Dey

সেইদিন অপরাহ্ণে অরিন্দম একাকী বাহির হইলেন। যদুনাথ গোস্বামীর বাটী অভিমুখে চলিলেন। সেখানে উপস্থিত হইতে বেলা পড়িয়া আসিল। যদুনাথ গোস্বামীর বাড়ীখানি একতল, ছোটবড় চারি-পাঁচটি ঘর আছে; ঘরগুলি পুরাতন, বাহিরের চারিদিকে লোণা ধরিয়াছে। একদিক্ হইতে লাউগাছ, আর একদিক্ হইতে কুমড়াগাছ, এদিক্ হইতে পুঁই, ওদিক্ হইতে ধুঁধুল, শিম্‌, শশাগাছ ছাদে উঠিয়া সমুদয় ছাদ ব্যাপিয়াছে—শেষে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় ছাদের চারিদিক দিয়া ঝুলিয়া পড়িয়াছে।

সেইসকল দেখিতে দেখিতে অরিন্দমের দৃষ্টি একটি উন্মুক্ত ক্ষুদ্র গবাক্ষের উপরে গিয়া পড়িল দেখিলেন, তিনি দেখিতে না দেখিতে একটি স্ত্রীলোক সেখান হইতে চকিতে সরিয়া গেল। বিদ্যুৎত্ত বোধ হয়, তেমন চকিতে মিলায় না। সেই নিমেষমাত্র সময়ে যাহা দেখিলেন, তাহাতে অরিন্দমের অনুভব হইল, স্ত্রীলোকটির বয়স বেশী নয়, আশ্চর্য্যরূপ সুন্দরী, মুখখানি অতীব সুন্দর; কিন্তু যেমন সুন্দর তেমন যেন প্রফুল্ল নহে। আবার তাহাকে দেখিবার জন্য অরিন্দম কিছুক্ষণ সেইদিকে নিমেষশূন্য দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিলেন—আর তাহাকে দেখিতে পাইলেন না। ভাবিলেন, “কে ইনি? হয় ত যদুনাথ গোস্বামীর কন্যা হইবেন;কিন্তু বলাই মণ্ডলের নিকটে শুনিয়াছি, যদুনাথ গোস্বামী নিঃসন্তান। এক স্ত্রী ব্যতীত সংসারে তাঁহার আর কেহই নাই। অনেক ব্রাহ্মণ কুলগোত্রের জোরে জীবনের শেষ সীমায় উপস্থিত হইয়াও বিবাহ করিয়া থাকেন, বিশেষতঃ পঞ্চাশের অদৃষ্টে এখনও গোস্বামী মহাশয়ের পাদস্পর্শ লাভ হয় নাই। তাহা হইলে এখন যাঁহাকে দেখিলাম, তিনি কন্যা না হইয়া বৃদ্ধস্য তরুণীভার্য্যা হইতে পারেন।”

অরিন্দম এইরূপ ভাবিতেছেন, এমন সময়ে সেই উন্মুক্ত গবাক্ষেআর একটি বর্ষীয়সী স্ত্রীলোককেও দেখিতে পাইলেন। তিনিও একবার অরিন্দমের দিকে চাহিয়া তখনই তথা হইতে অন্তর্হিত হইলেন। অরিন্দমের সংশয় আরও বাড়িল। ভাবিলেন ইনিই গোস্বামী মহাশয়ের গৃহিণী হইবেন; ইহার পূর্ব্বে যাহাকে দেখিলাম, সে নবীনা কে? গোস্বামী মহাশয়ের সঙ্গে তাঁহার কি সম্পর্ক?

সেখানে সেরূপভাবে অধিকক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকা ভদ্রোচিত কাৰ্য্য নহে বুঝিয়া, অরিন্দম তথা হইতে চলিয়া আসিলেন। কেননা সে দিক্‌টা যদুনাথ গোস্বামীর ভিতর-বাটীর পশ্চাদভাগ। অরিন্দম তখন একবার গোস্বামী মহাশয়ের সহিত দেখা করিবার জন্য সদর বাটীর সম্মুখে আসিলেন। সেদিকের সমুদয় গবাক্ষ ও দ্বার দেখিলেন। সেখানে আসিয়া কাহাদের কথোপকথনের অস্ফুট শব্দ তাঁহার শ্রুতিগোচর হইল, তখন তিনি একটি রুদ্ধ জানালার পার্শ্বে কান পাতিয়া দাঁড়াইলেন। দুই- একটি কথা শুনিয়া বুঝিতে পারিলেন, ভিতরে আর এক ভয়ানক ষড়যন্ত্রের আয়োজন হইতেছে। তখন তাঁহার মনে আর কোন সন্দেহ রহিল না। জানালার ফাঁক দিয়া দেখিলেন, সেই ঘরে দুইটি লোক বসিয়া। একজনকে চিনিলেন, যদুনাথ গোস্বামী; অপর লোকটি অপর দিকে, মুখ ফিরাইয়া বসিয়া ছিলেন, তাঁহাকে চিনিতে পারিলেন না।

প্রায় একঘণ্টা কাটিয়া গেল, তথাপি যদুনাথ গোস্বামীর সহিত সেই অপরিচিতের সেইরূপ গুপ্তপরামর্শ চলিতে লাগিল। অরিন্দম অনন্যমনে বাহিরে দাঁড়াইয়া শুনিতে লাগিলেন;ক্রমশ‍ই তাহাতে অধিকতররূপে তাঁহার চিত্তাকৃষ্ট হইতে লাগিল। যখন ভিতরে সেই গুপ্তমন্ত্রণার শেষ হইয়া আসিল, অরিন্দম বাহিরে একবার চাহিয়া দেখিলেন সন্ধ্যা অনেকক্ষণ চলিয়া গিয়াছে;এবং শুক্লাষ্টমীর অর্দ্ধ চন্দ্র মধ্যগগন ছাড়াইয়া পশ্চিম আকাশে অনেকদূর অবধি নামিয়াছে। তাহার দূরে ও নিকটে জ্যোৎস্নাসমুজ্জ্বল তরল শ্বেতাম্বুদখণ্ডগুলি নিৰ্ম্মল আকাশের বুকে ভাসিয়া বেড়াইতেছে।

অরিন্দম সেই জানালার ছিদ্রপথে দেখিলেন, তখন গোস্বামী ঝুঁকিয়া প্রদীপের সম্মুখে একখানি পত্র লিখিতেছেন; সেই অপরিচিত ব্যক্তি তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে, তাহার মুখের একপার্শ্ব দীপালোকে স্পষ্ট দেখা যাইতেছে। লোকটা দেখিতে একান্ত কুৎসিত, গঠন-প্রণালী দীর্ঘ ও বলিষ্ঠ। অরিন্দম তাহাকে চিনিতে পারিলেন না; কখনও কোথায় দেখিয়াছেন, এমনও বোধ হইল না। কোন্ উদ্দেশ্যে পত্রখানি লেখা হইতেছিল, অরিন্দম বুঝিতে পারিয়াছিলেন; ইতিপূর্ব্বে তাহাদিগের মন্ত্রণার মধ্যে ঐ সম্বন্ধে কথা উঠিয়াছিল।

পত্র লেখা হইলে সেই অপরিচিত লোকটি সেখানি বুকপকেটে রাখিয়া দিল। অরিন্দম তাহা দেখিলেন। বুঝিলেন, লোকটি এখনই বাহিরে আসিবে; এইজন্য তিনি সেখান হইতে একটু দূরে একটি বটগাছের আড়ালে সরিয়া দাঁড়াইলেন। তখন সেই লোকটি বাহিরে আসিল, একটু দূরে দাঁড়াইয়া বাড়ীখানি একবার ভাল করিয়া দেখিয়া লইল, তাহার পর আপনার গন্তব্যপথ ধরিল। অরিন্দম তাহার অনুসরণ করিলেন। তাহার অপেক্ষা দ্রুত চলিতে লাগিলেন। ক্রমে ক্রমে তাহার সন্নিকটবর্ত্তী হইলেন। সেই অপরিচিত লোকটি দুই-একবার তাঁহার দিকে চাহিয়া দেখিল, কোন কথা কহিল না—অরিন্দমও না।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress