Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মামন : পর্ব – ৮ (Mamon)

সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারল না মামন। আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না। একটা জোর ধাক্কা খেতেই ঘুম ভাঙল মামনের, সামনে সুমঙ্গলা ওরফে পিঙ্কি। গলায় ঝাঁজ নিয়ে সে তার বক্তব্য রাখল ঠিক আধ মিনিটে। মহারাণীর যদি এত ঘুমের নেশা থাকে তবে কালকেই যেন কলকাতাতে ফিরে যায়, এখানে ঘড়ি ধরে চলতে হবে। ও দোকানে যাচ্ছে, মামন সি এন জি ধরে যেন আধঘন্টার মধ্যে চলে আসে। পিঙ্কি ঘর ছেড়ে যেতেই সুভদ্রা এল, কোলে বর্ষা। মামন হাত বাড়িয়ে ওকে নিয়ে একটু আদর করে ফ্রেশ হতে বাথরুমে চলে গেল। দশ মিনিট, ড্রেস করে ব্রেকফাস্ট করতে গিয়ে দেখে মহেশ বসে কাগজ পড়ছে, মামনকে দেখে মুখ টিপে হেসে বলল – সে কি বলবে, গুড মর্নিং না গুড আফটারনুন। লজ্জিত মামন বলল রাতে তার ঘুম হয়নি ঠিক মত তাই ভোররাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, স্যরি। কোন ভনিতা ছাড়াই মহেশ বলে উঠল মাথাতে টেনশন ভর্তি থাকলে ঘুম আসবে কি করে, সে তো গতকালই জানতে চেয়েছিল মামনের কি হয়েছে, মামন উত্তর দেয়নি, সে’ও কিছু করতে পারল না। বেকার বকা খেল। তারপরই উঠে এসে মামনের পাশের চেয়ারে বসে ওর বাঁহাতটা ধরে বলেছিল মামন এখানে নিশ্চিন্তে থাকবে, ওর যদি কোনও রকম কিছু প্রবলেম হয় সরাসরি রাতে যেন মহেশকে বলে, মহেশ চেষ্টা করবে প্রবলেম সলভ করতে। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলল যে সুমঙ্গলার জন্য নয় মামন এখানে আছে মহেশের জন্য। শুধু মামন একা নয় এখানে যারা আছে সবাই। তারপর ক্ষমা চাইল পিঙ্কির রাফ ব্যবহারের জন্য। উঠে দাঁড়িয়ে মামনের কাঁধটাতে হালকা ভাবে চেপে ধরে বলল – ফিকর মত করো, ম্যায় আপকা সাথ হুঁ অর রহুঙ্গা ভি, ইয়ে হামেশা দিলমে রাখনা। মহেশের ব্যবহারে মামনের মনে হল লোকটা যথেষ্ট আন্তরিক ভাবেই কথা বলছে, সে উত্তেজিত হয়ে বলে ফেলল আজ রাতে কি সে মহেশের সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে পারে। মহেশ একটু চিন্তা করে বলল সে রাত একটার পরে মামনের ঘরেতেই আসবে, দরজা যেন খোলা রাখে মামন আর তারা দুজন বাদে এই কথা অন্য কেউ জানলে মামনের বিপদ হবে। মামন সম্মত হল। মহেশকে কথাটা বলে মামন একটু হাল্কা বোধ করল।

সেদিন আরও একটা ঘটনা ঘটল এমন যার জন্য মামন বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিল না। তখন বিকেল প্রায় শেষ গুলাটি এলেন, মামনকে ডেকে বললেন তিনি এসে গেছেন, মামন তার চাকরি বাঁচাক দোকানে গিয়ে। অবাক মামন, স্বাভাবিক ব্যবহার তো গুলাটি করলেন না, তবে কি অভিমান না মামনের ব্যবহারে অপমানিত হয়েছেন ! মাথা নীচু করে মামন বলেছিল – মজবুর হুঁ ম্যাম, মেরা হাল তো আপ জানতি। গুলাটি একটা অর্থপূর্ণ হাসি দিয়ে বলেছিলেন- তকদীর ইনসান খুদ বানাতে হ্যায়, ওকে আপ যাইয়ে, নোকরি বাঁচানে কা গম্ভীর সাওয়াল হ্যায়। মন খারাপ করে মামন দোকানে বসে আছে। পিঙ্কি সব দেখেও মামনকে পাত্তা দিচ্ছে না, মামনের মনে হল একদিক থেকে ভাল। হটাৎই মহেশ হন্তদন্ত হয়ে এসে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে হুকুম দিল সবকিছু গুছিয়ে দোকান যেন পাঁচ মিনেটে ঝকঝকে হয়ে যায়। সকল স্টাফ যেন একটু মেকাপ করে নেয়, বড়া সাব আসছেন। পিঙ্কিকে বলল সে যেন আগে গিয়ে জলদি চলে আসে, সাবকে স্বাগতম জানাতে হবে। পিঙ্কি একছুটে চলে গেল পার্লারের দিকে, তারপর মামনকে বলল সে’ও যেন ছুটে যায়। মামন বাধ্য মেয়ের মত চলে গেল। পাঁচ মিনিট লাগল না, হাল্কা টাচ দিয়ে মামন দোকানে এল, ওকে দেখে সুমঙ্গলা চাপা গলায় বলে উঠল – ডাইন। মহেশ সঙ্গে সঙ্গে ততোধিক চাপা সুরে বলল পিঙ্কি যদি ব্যবহার ঠিক না করে তাহলে রাতেই গলা টিপে মারবে। এই কথাবার্তা মামন শুনতেই পেল না।

দোকানে প্রবেশ করলেন গুলাটি, আজ ওনাকে অপরূপা লাগছে, মামন মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওনার দিকে। উনি এসে মামনকে পাত্তা না দিয়ে মহেশ আর পিঙ্কির সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে দামি দামি জামা কাপড় বাছতে বসলেন। মামন এককোণে চুপ করে বসে সব দেখতে লাগল। একটা চাপা গুঞ্জন শুনে সবার সঙ্গে মামন উঠে দাঁড়াল। দোকানে এলেন ছোটবেলার ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা আলেকজান্ডারের মত এক সুপুরুষ। গুলাটি প্রায় ছুটে গিয়ে অন্তরঙ্গতার সঙ্গে ওনার হাত ধরে অনুযোগ করল এত দেরি করে আসার জন্য। উনি স্মিত হেসে বললেন সরকারী দপ্তর, আম আদমির নোকর , ছুটি কি সহজে মেলে। তা উনি কি কিছু পছন্দ করেছেন। জলদি বের হলে জলদি জলদি ডিনার করতে করতে কথা বলবে। গুলাটি দু তিনটে ড্রেস পছন্দ করে সরিয়ে রেখেছিলেন, সেগুলো দেখিয়ে ওনার কোনটা পছন্দ তা বাছতে বলতে উনি খুব জোর হেসে উঠে বললেন একটা জামা যে বাছতে পারে না সে তার ভুল ধরে কেন, দেরি কেন হল এইবার যেন সকলে বোঝে, গুলাটি একটু ন্যাকামি করে আদুরে বেড়ালের মত ওনার পিঠে একটা হালকা ঘুঁসি মেরে বলে উঠেছিলেন- যাও দুষ্টু, উনি আরও জোরে হেসে উঠেছিলেন। তারপর স্বাভাবিক গলায় বলেছিলেন একটা কেন তিনটেই প্যাক করে দিক মহেশরা। গুলাটি বলেছিলেন না দুটো তাহলে উনি নেবেন, আর অন্যটা- ভদ্রলোক প্রশ্ন করাতে গুলাটি উঠে দাঁড়িয়ে মামনদের দিকে তাকিয়ে জোরে বলেছিলেন- ডিয়ার ভেনাস একবার এদিকে এস। ইতস্তত করতে মহেশ ওকে ডেকে নিল। মামন যেতেই গুলাটি ভদ্রলোককে বললেন- দ্যাখো আমার ভেনাসকে, সি ইজ সো চার্মিং যে বলে বোঝাতে পারব না একটা আমি ভেনাসকে গিফট করব। ভদ্রলোক মামনের দিকে তাকিয়ে গুলাটিকে প্রায় বাহুলগ্না করে বলেছিলেন- ওয়ান্ডারফুল, অ্যামেজিং বিউটি। মামন লজ্জা পেয়ে নীচু স্বরে বলেছিল থ্যাঙ্কস স্যার।

মামন মাটিতে মিশে যাচ্ছে, কোথায় সে আর কোথায় গুলাটি। যাই হোক উপহার নিল, মহেশের কথা মেনে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। এইবার ওই ভদ্রলোক লজ্জিত হলেন। ওনারা চলে যাচ্ছেন সবাই গেট অবধি ছাড়তে গেল, তখনই মামন দেখল বাইরে প্রচুর পুলিশ। ওনারা বের হতেই মামন বুঝল এরা এদের সিকিউরিটি। বাই বাই করে গাড়িতে ওঠার আগে হটাৎই গুলাটি পিঙ্কিকে প্রশ্ন করল মামন তার সঙ্গে কথা বললে তার আপত্তি কেন হয়। সে আগে মাসে চারবার আসত, এখন পনের কুড়িদিন আসে এবং তার মূল কারণ হল ভেনাস, পিঙ্কি যদি এই নীতি নিয়ে চলে তাহলে উনি আসা বন্ধ করে দেবেন শুধু নয় ওনার গ্রুপের আর কেউই আসবে না, বলেই মহেশের দিকে তাকিয়ে বলল সে যেন পিঙ্কিকে বোঝায়, ব্যবসা কাদের সঙ্গে করছে তা যেন ওকে ভাল মত বুঝিয়ে দেওয়া হয়। মামন দেখল পিঙ্কির মুখ রাগে লাল, মহেশ কিন্তু অমায়িক ব্যবহার করল গুলাটি আর মামনের সঙ্গে। ওদের গাড়ি বেরিয়ে যেতেই পিঙ্কি বোম ফাটাল – ডাইন তুই কমপ্লেন করেছিলি তাই আজকে আমাকে সবার সামনে অপমান করল। তুই বাড়ি ছেড়ে আজকেই বেরিয়ে যা। মামন কিছু বলার আগেই রুখে দাঁড়াল মহেশ। সবার সামনেই জোর গলায় বলল – কার বাড়ি? মালিক ঠিক করবে কে থাকবে আর কে থাকবে না। জাস্ট শাট আপ । অপমানিত মামনের দুচোখ বেয়ে তখন জলের ধারা।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress