Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মামন : পর্ব – ৩ (Mamon)

নদী যেমন তার যাত্রাপথে এককূল ভাঙলে অন্যকূল গড়ে দেয় সেই অঙ্ক ধরলে মামনের জীবনটা একটা নদী, রাণা ওর কূল ভেঙে দিলেও অপর পাড় ঠিক করলেন রূপালী বৌদি, এও যেন বিধাতার খেলা। তবে এটাও ঠিক অন্য কূল যা নদী নতুন করে তৈরি করল তা কি বাসযোগ্য ! মানুষের জীবনে বিধাতার থেকেও বেশি কর্মঠ সময়, নতুন তীর আবাদের কতটা যোগ্য তার উত্তর একমাত্র সময়ই দিতে পারে ।

আগের দিন বর্ষার জন্মদিন গেছে, রাণা যথারীতি মদ্যপ হয়ে মাঝরাতে ঘরে এসেছে, মামন শুধু একটু অনুযোগ করে বলেছিল যে আজ তাদের মেয়ে, যে তাদের ভালোবাসার – চাহিদার ফসল, তাকে কি একটু সময় দিতে পারত না রাণা ? ব্যাস আর যায় কোথায় অশ্রাব্য খিস্তি আর লাথি কিল চড় শুরু করল রাণা। একসময় মামনের মনে হল তার প্রাণশক্তি শেষ হয়ে আসছে, ঠিক ওই সময়ই বর্ষা কেঁদে উঠতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে বর্ষাকে কোলে তুলে রাণাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে ফ্ল্যাটের বাইরে চলে আসে। কয়েক মুহুর্ত, মামন ভাবে চলে তো এল , এরপর ! বেশি ভাবা নয়, এক ছুটে ওপর তলায় গিয়ে রূপালী বৌদির ফ্ল্যাটের বেল বাজায়। অল্প কথা, রুদ্র মুর্তি ধরে রূপালী, মামনকে প্রায় টানতে টানতে নিচে এনে রাণার ফ্ল্যাটের দরজা খুলে চিৎকার করে বলতে থাকে রাণা যত বড়ই উঁচু তলার লোক হোক সে নিজেও কম যায় না। আজ রাতে মামন তার ফ্ল্যাটে থাকবে, রাণা যদি বিন্দুমাত্র ডিস্টার্ব করার চেষ্টা করে তবে উনি সরকারের সর্বোচ্চ তলায় যাবেন , তখন বোঝা যাবে কে দৌড়য় আগে। না কোন গালাগাল নেই ছিল শুধু হাড় হিম করা হুমকি, যে কোন কারণেই হোক রাণা ওই হুমকির কাছে মিইয়ে গেল।

দেখো মামন , আমি তোমাকে বেশি দিন রাখতে পারব না, আইনগত জটিলতা আছে। রাণা একদিন হয়ত মদের ঘোরে চুপ থাকল , এটাই কিন্তু শেষ বলে ধরবে না , এইটুকু বলে রূপালী ফের বলল একটু ভাবতে দাও। তুমি কি কিছু খেয়েছ ? মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে কিছুই খাওনি। বাচ্চাটা কি দুধ পেয়েছে, তুমি না খেলে দুধ আসবে কোথা থেকে, দাঁড়াও। উনি ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম করে মামনকে খেতে দিয়ে পরম মমতায় বর্ষাকে কোলে তুলে নিলেন।
মামন খেয়ে এল। উনি বললেন – মামন আমি বেশিদিন তোমাকে রাখতে পারব না, আবার এটাও চাইনা যে তুমি ওর সঙ্গে থাকো। যেভাবেই হোক তোমাকে বর্ষার জন্য বাঁচতে হবে।

অনেক ভাবনা চিন্তার শেষে ঠিক হল ওনার এক ঘনিষ্ঠ ছত্রিশগড়ের রায়পুরে থাকেন, মামনকে ওখানেই পাঠিয়ে দেবেন, আর মামন ওখানেই নতুন করে বাঁচার অর্থ শিখুক। যেমন ভাবনা, সঙ্গে সঙ্গেই রূপালী ওনার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে ফোন করে মামনের এপিসোড কিছুটা বলে মামন যে কাল পরশুই এখান থেকে রওনা হবে তা জানিয়ে দিল। মামন একটু আশার আলো দেখলেও একটা খটকা লাগল – সব কথা হিন্দীতে হলেও বৌদি তাকে ” চিকনা ” কেন আর ” কাম পে লাগা লেনা, উসুলি হোগা , পর নুকসান মত করনা, সাথ মে বাচ্চা হ্যায়, মেরা ওয় বহোত প্যায়ারি” , কেন বলল? একটু আধটু হিন্দী তো সে’ও জানে।

নদী তার যাত্রাপথের প্রথম দিকে বিধ্বংসী থাকে, ভাঙে আর গড়ে। শেষের দিকে সে মোহনাতে যখন মিশতে যায় তখন তার ব্যপ্তি হয় বিশাল আর থাকে শান্ত, কিন্ত যখন বর্ষার জলে সে ফুলে ফেঁপে ওঠে ! তার দুর্বার রূপ যারা দেখেছে তারাই জানে ।
রূপালীর কথায় আজ মামন ভরসা পেল, একজন অনাত্মীয় যে ভাবে তাদের বুকে টেনে নিল তা তার কাছে স্বপ্নাতীত ।
এর মধ্যে রাণা রূপালীর ফ্ল্যাটের বাইরে থেকে চেঁচিয়ে গেছে। তার মূল বক্তব্য – মামন যেন আর ফেরৎ না আসে । অবশ্যই খিস্তি সহযোগে।

মামন এই যে টিকিটের টাকা দিলাম, এইটা ধার, যেদিন রোজগার ঠিক মত করবে ফেরৎ দিও। মুম্বাই মেলে বসাতে গিয়ে রূপালীর বক্তব্য। আর এই নাও মোবাইল, পয়সা ভরা আছে, এই সুইচটা টিপলে আমার নাম আসবে তখন এইটা টিপে দেবে, আমি কথা বলব।
রাণা মামনকে কোনও রকম আধুনিক সুযোগ হাতে তুলে দেয়নি, তাই মামনের কাছে মোবাইল ফোন একটা আশ্চর্যের বিষয়।
আর শোনো, কাল সকাল থেকে ফোনে বলবে কোন স্টেশন এল , আমি সেই মত ব্যবস্থা নেব- রূপালীর কথা।

ট্রেনে চাপার আগে রূপালী একটা চিঠি রাণার উদ্দেশ্যে লিখিয়েছিল , যার মূল বক্তব্য ছিল যে মামন রাণার অত্যাচারে আজ নিরুদ্দেশ হচ্ছে স্বেচ্ছায়, এর দায়বোধ একমাত্র রাণার। সে যেন না খোঁজে আর ওই চিঠির কপি স্থানীয় থানাতে আর রূপালীকে ফরওয়ার্ড করে দেয়। সমস্ত পোস্ট রূপালীই করবে , এইটা ঠিক করে নিয়েছিল দুজনে।
ট্রেন ছাড়ল, মামনের গন্তব্য — অজানাপুর – রায়পুর ।

নমস্তে দিদি ম্যায় হুঁ মহেশ, আপকা খিদমৎগার, আপকা মালকিন সুমঙ্গলা কা হাসব্যান্ড, মামনকে থুড়ি মামনদের রায়পুর স্টেশনে ট্রেন থেকে নামাতে এসে এক ঋজু চেহারার ঝকঝকে ভদ্রলোক, পরনে খুব দামি জামা প্যান্ট, কথাগুলো উনি বললেন। পরবর্তী গন্তব্য ওনাদের বাড়ি। বাড়ি নয় যেন রাজপ্রাসাদ। মামন হাঁ করে দেখছিল, সঙ্গে লাগেজ তেমন কিছুই নেই, বর্ষাকে কোলে নিয়ে হাঁটছিল আর চারপাশ দেখছিল। এ যেন এক স্বপ্নের দেশ।
সুমঙ্গলা, প্রচন্ড সুন্দরী হলে কি হবে ব্যবহারে অত্যন্ত বাস্তবের খতিয়ান। বয়স মামনের থেকে বেশ কম। হাসি মুখে ওদের রিসিভ করলেও মামনের মনে হল জোর করে হাসছেন উনি। কাজের মেয়েকে ডেকে উনি মামনদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে নিয়ে যেতে বলে ঝরঝরে বাংলাতে বললেন ওরা ফ্রেস হয়ে খাবার ঘরে যেন আসে সেখানে সুমঙ্গলা আর মহেশ অপেক্ষা করছে। ওর মুখে বাংলা শুনে মামন অবাক, তাই দেখে সুমঙ্গলা বলল সে আদতে বাঙালি এবং কলকাতার মেয়ে বিয়ে হয়েছে অবাঙালি মহেশের সাথে, ওরা রায়পুরের আদি বাসিন্দা। অনেক আলোচনা আছে মামন যেন বাচ্চাকে নিয়ে স্নান সেরে তাড়াতাড়ি খাবার ঘরে আসে আর সুভদ্রা, কাজের মেয়েটি আপাতত ওর কাছে থাকবে, মামনের কিছু প্রয়োজন হলে ওকে যেন বলে, ও অল্প অল্প বাংলা বুঝতে পারে, না হলে সে আর মহেশ তো আছেই।

খাবার ঘরে ওরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মামনের ইতিহাস জানল। তারপর মহেশ ভাঙা বাংলা আর হিন্দী মিশিয়ে বলল তারা হয়ত মামনের শিক্ষা অনুযায়ী তেমন কিছু করে উঠতে পারবে না তবে দিদিকে বাঁচতে তো হবে, বাচ্চাকেও বড় করতে হবে। ওরা একটু নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দেখবে কি করা যায়। আপাতত ওরা একটু বিশ্রাম নিক। হটাৎই মহেশ মামনের বয়স জানতে চাইল, মামনের উত্তর শুনে বলল তার তো মামনকে দেখে পঁচিশ বছর মনে হচ্ছে, তারপরেই সুমঙ্গলার দিকে তাকিয়ে বলেছিল – আপ সে ভি খুবসুরৎ হ্যায়। সুমঙ্গলা বলেছিল তাহলে মহেশ তাকে তালাক দিয়ে মামনকে নিয়েই যেন থাকে সে নিজের জন্য কাউকে খুঁজে নেবে। ওদের স্বামী স্ত্রীর এই খুনসুটি মামনের ভাল লেগেছিল । তখন তো মামন বোঝেনি ঈশ্বর তার জীবনের গতিপথ কোন দিকে ঘোরাবেন !

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *