মামন : পর্ব – ১৮ (Mamon)
চৌহানের চলে যাবার পরে কেটে গেল দুমাস, গুলাটি মামনের কোন নতুন বাবু জোগাড় করে উঠতে পারল না, মুখে বলছে চেষ্টা করছে, মামনের কিন্ত এখন সন্দেহ হচ্ছে। কেন’না গুলাটি উঠতে বসতে মহেশের নামে গালাগাল দেয় অথচ মহেশ মামনের কাছে ভদ্রলোক,মামন প্রথম প্রথম গুলাটির কথা মানত এখন মানতে কষ্ট হয়, যতই হোক তার চরম বিপদের দিনে মহেশই তো পাশে দাঁড়িয়েছিল। আজ পর্যন্ত মহেশ তার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেনি , গুলাটির এত রাগ কেন মহেশের ওপর, মামন বুঝতে পারে না। এইসময় এল সুযোগ, মহেশ দেশের বাড়ি যাবে কিছু কাজ নিয়ে, মামন জানতে পেরে গোঁ ধরল সেও যাবে, এদিকে মহেশও নেবে না। যতই জমিদারি থাকুক, জায়গাটা কিন্তু গ্রাম, সংস্কারে ভোগে সবাই, মামন যদি বর্ষাকে নিয়ে যায় তবে কথা উঠবে, এ কে , মহেশের কাছে এসে খোঁচাবে, মহেশ তখন কি উত্তর দেবে ? মহেশের এই কথাগুলো মামনের কাছে যুক্তিপূর্ণ মনে হল না তাই জেদ গেল বেড়ে। মামন পাল্টা যুক্তি দিল মহেশ একটা কাজ করুক, ও বেশ কিছু বন্ধু বান্ধব পরিবারসহ নিয়ে চলুক, দল বড় হলে কে কার বউ আর কে কার মরদ ,গ্রামের লোকেরা এইটা বোঝার আগেই ওরা ফেরৎ আসবে, যেখানে মহেশ বলছে তিন কি চার দিনের মধ্যে ওর কাজ মিটে যাবে। মহেশ পড়ল আতান্তরে। দেখছি ,বলে বিদায় নিল। কয়েকদিন পরে মহেশ এসে বলল সে মামনের কথা মেনে নিয়ে বেশ কিছু বন্ধু ও তাদের পরিবার যাতে যায় সেই ব্যবস্থা পাকা করেছে তবে মামনের হাসব্যান্ড কাজে আছে রায়পুরের বাইরে সে এক দু দিনে ওদের সঙ্গে জয়েন করবে আর ……মামন মহেশকে থামিয়ে বলল – আমার হাসব্যান্ড মানে ! মহেশ একটু দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলল , এর মানে বলতে হবে ? সকলেই পরিবার নিয়ে যাচ্ছে সেখানে মামন শুধু বর্ষাকে নিয়ে যাচ্ছে , সকলের তো একটা স্বাভাবিক কৌতুহল থাকবে ওর হাসব্যান্ড নিয়ে, আগের থেকে বা যেচে বলতে হবে না , কেউ জানতে চাইলে বলবে। বুঝলাম, মামনের উত্তর , কিন্তু সে তো নেই, তাই আসবেও না, তখন প্রশ্ন এলে কি বলব ? আরে বাবা এই কথাটা চেপে বসার আগেই তো চলে আসব আমরা, আর তোমার হাসব্যান্ড কি করে জানতে চাইলে বলবে ব্যবসা করে, মহেশের প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা।কিসের ব্যবসা , মামন প্রশ্ন করতেই মহেশ রেগে বলল – ডেডবডি সাপ্লাই করে , আরে ওখানে কারুর সময় নেই তোমার বরকে খোঁজার বা তার কি ব্যবসা তা ভেরিফাই করার , তারপরেই মুখ ভেঙচে মহেশ বলল যা মন চায় তাই বলবে, হলো এবার ! মামন নীরবে ঘাড় নাড়ল। আরও শুনে নাও, এই যে তুমি আমার দেশে যাবে এই কথাটা গুলাটি যেন না জানতে পারে, জানলেই ও পিঙ্কিকে বলে দেবে আর আমার বাঁশ হবে। তোমরা মেয়েরা পেটে কথা রাখতে পার না, সব উল্টি করে দাও। বুঝলে কিছু ! মহেশের প্রশ্ন । বুঝলাম তো অনেক কিছুই কিন্তু গুলাটি তো চারবেলা ফোন করে , এখানে না বলেই আসে , সেরকম জানতে চাইলে কি বলব ! মামন আলতো করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল। বোঝো ঠ্যালা, শালা এর জবাব তৈরি কর, আজ আর ভাবতে পারছি না। কাল বলব, বাই। মহেশ চলে গেল।
যা ভেবেছিল মামন তাই হল, জব্বলপুর থেকে প্রায় পঞ্চাত্তর কিলোমিটার দূরে ভূমকাতে মহেশের জমিদারি। মামন এখানে আসার আগে গুলাটিকে বলেছিল যে তার এক প্রফেসর কাজ নিয়ে বৌকে নিয়ে নাগপুরে এসেছে, উনি ফেসবুক থেকে মামনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মামন তার অবস্থা জানায়, উনি দেখা করতে বলেছেন , মামন তাই তিন চারদিন নাগপুরে থাকবে। গুলাটি, আচ্ছা হ্যায় বলে থেমে গিয়েছিল। আজ সে whatsapp-এ ভিডিও কল করেছে, মামন না দেখে ধরেছে, আর যায় কোথায়, গুলাটির প্রশ্নবাণ তো নয় পুরো গোয়েন্দা দপ্তর, এত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন শুরু করল যে মামনের কবরে যাওয়াটা নিশ্চিত। তবুও মামন মনের জোর এক করে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিল, আর তখনই মামনের মনে প্রশ্ন এল গুলাটি মহেশকে কেন পছন্দ করে না। মামন ঠিক করল রাতে মহেশকে বলবে।
শুনিয়ে, গুলাটি ইক রেন্ডি থি, আজ উয় জাঁহা হ্যায়, আমার জন্য হয়েছে, আরও অনেক কথা বলতে পারি কিন্তু বলব না, শুধু জেনে রাখ বড়া সাবকে মারার জন্য ও আমাকে সুপারি দিতে এসেছিল। আমি অকৃতজ্ঞ নই, রাজি হইনি। তাই ওর এত রাগ আমার ওপর। সুপারি মানে? মামনের প্রশ্ন। মহেশ যা ব্যাখ্যা দিল, শুনে মামন ‘থ’। বাপরে এরা তো ভয়ঙ্কর প্রাণী। এরা শুধু মেয়েদের বেশ্যা বানেতেই জানে না, হাসতে হাসতে মানুষ খুনও করতে পারে, মামনের গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল, বুঝতে পেরে মহেশ ওকে বুকে জড়িয়ে বলল – কেন এত চিন্তা করছ, তোমার পাশে তো আমি আছি । মামন ফের একটা উষ্ণ প্রস্রবণের সামনে এসে দাঁড়াল।