মামন : পর্ব – ১৭ (Mamon)
মামন যে বাড়ি ফিরবে না সেই কথাটা ফোন করে মহেশকে জানিয়েছিল, পরেরদিন সন্ধ্যেতে সরাসরি পার্লারে গেল, ফেরৎ এল মহেশ, পিঙ্কির সাথে। আগে গাড়ির পেছন সিটে পিঙ্কি আর মামন বসত,ইদানিং সে সামনে বসে, মহেশ পিঙ্কির সাথে পেছনে। গাড়িতে টুকটাক কথা মহেশ বলছিল , মামন শুধু তাল মেলাচ্ছিল। রাতে দরজায় টোকা শুনেই মামন বুঝল মহেশ। মহেশ ভেতরে ঢুকেই ভনিতা ছাড়া জানতে চাইল মামনের গতরাতে না আসার কারণ, মামনের উত্তর, মদ সে আগে কোনদিন খায়নি, কাল চৌহানের চাপে খেয়ে শরীর খারাপ লাগছিল। কোথায় ছিলে , মহেশের পরের প্রশ্নের উত্তরে মামন বলল চৌহানের ফ্ল্যাটে, শুনে মহেশ গম্ভীর গলায় হুম বলে একটা পজ্ দিয়ে বলেছিল সে আশা করবে গতরাতে মামন এমন কিছু নিশ্চয়ই করেনি যার থেকে এইটা প্রমাণিত হয় যে গুলাটির চক্করে সে পড়েনি। মহেশের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে মামন উত্তর দিল, সে বাচ্চা নয়, তার ভাল মন্দ বোধ আছে, সেই দিয়ে সে হাঁটতে জানে, তার কাজকর্মে গুলাটির রোল নেই, মহেশ নিশ্চিন্তে থাকতে পারে। মহেশ ঘর ছাড়ার আগে ,ঠিক আছে এইভাবেই থেক বলল।
দুদিন বাদে চৌহান মামনকে একটা চিঠি দিল মুখবন্ধ খামে। কৌতুহলী মামন খুলে দেখে রাণা ইংরাজি বাংলা মিশিয়ে তাকে যৎপরোনস্তি খিস্তি দিয়েছে ,কারণ মামন চাইলেই যে কাজটা করতে পারত তা ইচ্ছে করে করেনি, এই বেশ্যামাগীর জন্য তার কেরিয়ার শেষ হয়ে গেল ইত্যাদি প্রভৃতি। মামনের মুখ থেকে বেরিয়ে এল, সন অফ অ্যা বিচ।চৌহান কি করে চিঠি পেল জানতে চাওয়াতে শুনল গতকাল রাণা চৌহানকে এইটা দিয়েছে তার একঘন্টা আগে চৌহান রাণাকে জানায় সে কাজটা রাণাদের কোম্পানিকে দিতে পারছে না। কেন কি লিখেছে তোমার হাসব্যান্ড , চৌহান জানতে চাইলে মামন- ও কিছু নয় বলে উড়িয়ে দিতে চাইল, চৌহান শুধু মুখ টিপে হেসে বলল আপকা মর্জি।
দিন কাটছে গতানুগতিক ভাবে। চৌহান এখন জব্বলপুর আর রায়পুর, ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে। দীর্ঘদিন ধরে রুক্ষ মাটি যেমন বর্ষার জল পেলে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে আরও বৃষ্টি চায়, মামন ঠিক ততটাই তার কাম বাসনা মেটাতে চাহিদা বাড়াতে শুরু করলে কি হলে আপাদমস্তক মিলিটারির ডিসিপ্লিনে ভরা চৌহান ঠিক মত ম্যানেজ করত দূরে সরে , মামন রাগ করলে নাক টিপে, গাল টিপে , জড়িয়ে ধরা বা একটা কিস করে অবস্থা সামাল দিত।
কেটে গেল দেড় বছর, মামন চৌহানের দৌলতে এবং গুলাটির কথা মেনে এই রায়পুর শহরের অভিজাত একটা কমপ্লেক্সে দেড় হাজার স্কোয়ার ফিট ফ্ল্যাটের মালকিন, ব্যাঙ্কে লাখ দশেক, গয়নার বাজার দাম প্রায় পাঁচ লাখ, বর্ষা শহরের নামকরা মন্টেসরিতে পড়ছে। মহেশ আরও কাজ পেয়ে এখন ভীষণ ব্যস্ত, আর তার এই লক্ষ্মীলাভের জন্য সে যে মামনের কাছে ঋণী সেকথা বারবার বলে, আরও বলে মামন যার সঙ্গে ইচ্ছে যা ইচ্ছে করুক কিন্তু বেশ্যা যেন না হয়। মামন হাসে, সে তো তাদেরও অধম। ভগবানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সবসময়ই আউট অফ সিলেবাস আসে। বেশ চলছিল মামনের, সহ্য হল না ভগবানের। দিল শাস্তি। আচমকাই চৌহান বদলি হল দিল্লীতে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে। আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে যোগ দিতে হবে , চব্বিশ ঘণ্টার ডিউটি। মামন আতান্তরে, এরপর তার কি হবে ?
ঈশ্বর কি সবসময়ই জেতে ! নাহ্ কখন কখন ইচ্ছেশক্তির জয় হয় বৈকি।মামন যখন ঈশ্বরের ওপর থেকে ফের একবার তার বিশ্বাস তুলে নিচ্ছি তখনই ঘটনাটা আচমকাই ঘটে গেল যার জন্য মামন বিন্দুমাত্র মানসিক প্রস্তুতি নেয় নি। এখানেও তাই হলো। শেষ মিলনরাতে চৌহানের আক্ষেপ, আর ইচ্ছে করলেও ভেনাস আর দেখা করতে পারবে না বা সে নিজেও আসতে পারবে না। আবেগঘন রাতে চৌহান আর মামন শারীরিক সম্পর্ক শিকেতে তুলে সারারাত প্যাঁচা প্যাঁচানি হয়ে গল্প পরিকল্পনা if not but what, এই হতে পারে ,সেই হতে পারে করে কাটিয়ে দিল। পরের দিন দুপুরে চৌহানের ফ্লাইট। বিদায় নেবার সময় আদ্যন্ত মিলিটারি ম্যান চৌহান সিভিলিয়ান হয়ে গেল আর মামন, তার চোখের জল বাঁধ ভেঙে পড়েই চলল। সুভদ্রা এখন মামনের কাছে থাকে, মহেশকে বলে মামন ওকে নিয়ে এসেছে। বর্ষার পুরো দায়িত্ব সুভদ্রার, বর্ষাও ওর কাছে লক্ষ্মী হয়ে থাকে ।চৌহান চলে যাবার পরে মামন গুলাটিকে ফোন করে ডেকে নিল। গুলাটি আসতে দুই বন্ধু মদ নিয়ে বসে নানান আলোচনা করতে করতে সময় কাটিয়ে দিল। সন্ধ্যেবেলাতে গুলাটি চলে গেলে মামন বড্ড একা হয়ে গেল। মামন মদের গ্লাসে ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছে আর ভাবছে what next , যদিও গুলাটি বলে গেছে সে দেখছে কি করতে পারে। ফ্ল্যাটের বেল বাজল, সুভদ্রা এসে জানাল মহেশ এসেছে, ওকে শোবার ঘরে আনতে বলল মামন। মহেশ এসে যথারীতি সিগারেট ধরিয়ে খাটের এক কোণে বসে বলল সে সব জানে, চৌহান সাব চলে যেতে তার লোকসান হল। কেন , মামন জানতে চাওয়াতে মহেশ বলল ব্যবসাগুলো কি আর বাড়বে, উনি থাকলে নতুন নতুন অর্ডার পেত মহেশ। হুম বলে উঠল মামন। মহেশ বলে চলেছে মামন না থাকলে মহেশের এই অর্ডারগুলোও আসত না। যাই হোক মামন এখন কি করবে কিছু ভেবেছে। যাইই রোজগার মামন করুক না কেন, বসে বসে খেলে রাজার সিন্দুকও ফাঁকা হয়ে যায়। সে কিছুই ভাবেনি আপাতত, মামনের ছোট উত্তর শুনে মহেশ বলল, স্বাভাবিক, তবে সে কি করতে চায় তা যেন দু তিন দিনের মধ্যে মামন মহেশকে জানায়, মহেশ অকৃতজ্ঞ নয়,নতুন ব্যবসাগুলো সব মামন এনেছে, আর অনেকদিন আগে সে মামনকে বলেছিল যে তার একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে মামনকে নিয়ে। আগে মামন জানাক, সে অবশ্যই জানাবে মামনকে তার পরিকল্পনার কথা। সেই পুরোনো কাসুন্দি, ওফ, মামনের এমনিতেই মেজাজ ভাল নেই তার ওপর মহেশের বোরিং কথাবার্তা। মামন দস্তুরমত বিরক্তি দেখিয়ে হাত জোড় করে মহেশকে বলল সে যেন তার এই পরিকল্পনা ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখে, যখন ডবল হয়ে ফেরৎ পাবে তখনই যেন মামনকে বলে, যত্তসব। মহেশ রাগল না, মুচকি হেসে বলল তাই হবে জি। চলে গেল। মামন আর সেদিন রাতে কিছুই খেল না, তার ভরসা এখন গুলাটি ।