Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মামন : পর্ব – ১১ (Mamon)

মহেশ বলল সে নিশ্চয়ই একটা সমাধান বের করবে, মামন কি করতে চায় তা আগে জানাক, আপাতত বাড়িতে ফিরতে হবে। দেরি হয়ে যাবে না হলে। তাই আলোচনা মুলতুবি রেখে ওরা ফেরার পথ ধরল।

বাড়িতে এসে মহেশ কাজের লোকদের কাছে জানতে চাইল পিঙ্কি উঠেছে কি’না, ওঠেনি শুনে মামনকে বলল সে যেন রেডি হয়ে নেয়, পার্লার, দোকান সামলাতে হবে, যদিও মহেশ সঙ্গে থাকবে ।

দুজনে একসঙ্গে নাস্তা করে রুটিন কাজে বের হল। মহেশ বলে গেল পিঙ্কি উঠলে ওকে যেন ফোন করে।
মামনের আজ মেজাজটা খুব ফুরফুরে, শরতের মেঘহীন আকাশের মত নীল। এতদিন থাকার ফলে আর ইচ্ছের জোরে মামন কাজ চালানোর মত হিন্দী বলতে পারত আর পার্লারের একটা মেয়ে, মায়া , ওকে খবরের কাগজ থেকে অক্ষর শেখায়। গাড়ি করে যেতে যেতে মামন হিন্দীতে মহেশের সঙ্গে পার্লার সংক্রান্ত কিছু আলোচনা করে নিল। আজ পিঙ্কি নেই, মামনের অবাধ স্বাধীনতা। পিঙ্কি পার্লার বা দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে সবসময় দাঁত মুখ খেঁচিয়ে, খোঁচা দিয়ে কথা বলত। মামন ঠিক এর উল্টো, কিছু প্রবলেম হলে সে তার সাধ্যমত খিচুড়ি ভাষা দিয়ে তাদের বোঝাত। আজ তারা যখন জানতে পারল যে পিঙ্কি না’ও আসতে পারে, খুব আনন্দ পেল, তাদের বক্তব্য নতুন দিদি এলে ওরা কাজ করতে উৎসাহ পায়।

বিকেলে গুলাটি এলেন, এসে যথারীতি হাই ভেনাস, আজ মামনের আর দোকান যাবার তাড়া নেই। পিঙ্কি যে আসতে পারছে তা মহেশ জানিয়ে দিয়েছে। তার নাকি শির পাকড় লিয়া। মামন একটু আধটু কেতা শিখেছে, এগিয়ে গিয়ে গুলাটিকে হাগ দিল। কিছুক্ষণ বাদে অবাক গুলাটি মামনের কাছে জানতে চাইল সে দোকানে যাবে না ! উত্তর মামন দেবার আগে মায়া বলে উঠল মালকিন আসবে না, দিদি আজ এখানেই থাকবে। শুনেই গুলাটি মামনকে ডেকে বলল – চল ওপরে রেস্টুরেন্টে যাই, আড্ডা মারি। মামন বিপদে পড়ল, স্বাধীনতার অপব্যবহার হবে না তো, মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল – ম্যাম, পার্লার ফেলে সে যাবে কি করে আবার প্রয়োজন হলে দোকানেও যেতে হবে। গুলাটি হুম বুঝলাম বলে ফোন বের করে কাকে যেন ফোন করে কিছুক্ষণ কথা বলল একটু দূরে সরে, চাপা গলায়। তারপর এক গাল হেসে বলল ভেনাস চল পারমিশন পেয়েছি, মানে – মামন অবাক। আরে মহেশ আছে তো। মামন বুঝতে পারল তবুও , ফ্রেশ হবার নাম করে ওয়াশরুমে গিয়ে মহেশকে ফোন করে পারমিশন চাইল। মহেশ বলল সে যেতেই পারে তবে গুলাটি মদ অফার করবে, মামন যদি খায় তার দায়িত্ব মহেশ নেবে না। মামন আশ্বস্ত করল যে সে আজ পর্যন্ত মদ জিভে ঠেকায় নি। মহেশ ওকে আরও বলল প্রয়োজন হলে মায়া ওকে ফোন করবে আর মামন যেন সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে। ‘ওকে’ বলে মামন চোখে মুখে হালকা জল ছিটিয়ে এল।

ক্যা ভেনাস, ফিউচার কা বারে মে কুছ সোচা – মার্টিনিতে আলতো চুমুক দিয়ে গুলাটির প্রশ্ন। কি বলবে মামন, থতমত খেয়ে গেল । কি বলবে সে। কিছুই তো ভাবেনি। তার ওপর এ কদিন যা ঝড় গেল, আবার মহেশের ব্যবহারও তাকে ভাবাচ্ছে। আবার উত্তরহীন হয়েও থাকা যাবে না। সামান্য ভেবে ডিপ্লোম্যাটিক উত্তর দিন – কেন গুলাটি কি এখান থেকে চলে যাবে কোথাও ? আসলে মামন চাইছে আগে মহেশের সঙ্গে একটা ফয়সলা। গুলাটি বলল ঠিক তা নয় ,ওর কাছে একজন আর্মির বড় অফিসার ফেঁসেছে। ব্যাটা হরিয়ানার, সলিড মাল্লু আছে, দিলদরিয়া, আসলে মামন শিক্ষিত হলেও ওর শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে এখানে কাজ পাবে না তার মূল কারণ ভাষা । এদিকে কলকাতাতে ফিরতে পারবে না , সেখানেও তার কেউ নেই। ঠিক এই জায়গাতে মামন থমকে গেল , গুলাটি তো ঠিক বলছে। কলেজের প্রফেসর বা স্কুলের দিদিমনিদের নম্বর নেই যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে, যদি একটা কিছু উপায় হয় ! নিজের ওপর খুব রাগ হতে থাকে, কেন যে মরতে তখন মোবাইল কিনল না ! থাকলে …..। আর এখানে ….. পুরো সমাজটা যেন মহিলাদের বেশ্যা বানিয়েই ছাড়বে। এ কেমন মানসিকতা । কান মাথা গরম হয়ে গেল। ফের পরীক্ষা !! এখন একমাত্র মহেশ ভরসা। রাতে কথা বলে দেখে নিক ওর বক্তব্য কি !

গুলাটি আরও বলে গেল সে তাকে বুদ্ধি দেবে, সবসময় পাশে থাকবে, একশ ভাগ গ্যারান্টি সে দিচ্ছে যে তিন বছরের মাথাতে মামনের নূন্যতম এই শহরে একটা স্টান্ডার্ড ফ্ল্যাট আর ব্যাঙ্কে যদি না লাখ খানেক জমা করাতে পারে তার নামে যেন মামন একটা কুকুর পোষে। তাও তো জেবরের কথা সে বলে নি। এরপর ভেবে দেখুক মামন। ভোঁ ভোঁ করছে মামনের মাথা।

বাড়ি ফেরার সময় গাড়িতে মহেশ বলল খুব আড্ডা দিলে আজ, তা কি বলল সে। মামন গুম খেয়ে রয়েছে। মহেশের কাছে জানতে চাইল সে আজ রাতে মামনের সঙ্গে জরুরি আলোচনা করতে পারবে কি ? আজ, মহেশ একটু ভেবে বলল কাল যদি সে করে, না আজই- মামনের ইস্পাত কঠিন গলা। মহেশ অবাক, বলল মামনের কি হয়েছে ,এমন ভাবে কথা বলছে কেন ? বিক্ষুব্ধ মামন বলে উঠল তার এখনও কিছু হয়নি, তবে হতে পারে। মহেশ ওর হাতটা ধরে বলেছিল সে যেন নিশ্চিন্তে থাকে ,মহেশ কালকের মত রাতে আসবে তবে দরজা যেন খোলা থাকে।

বাড়ি ফিরে মামন দেখল ড্রইংরুমে পিঙ্কি বসে ফোনে কার সঙ্গে যেন কথা বলছে, মামন ভদ্রতা করে বলল পিঙ্কির শরীর এখন কেমন, পিঙ্কি কোন উত্তর না দিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গি করে বসে রইল। মামনের এমনি মাথা গরম ছিল পিঙ্কির এই কাজে তা শতগুণ বেড়ে গেল, তবুও নিজের বর্তমান অবস্থার কথা ভেবে চুপ করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে নিজের ঘরে চলে গেল।। বেশ কিছুক্ষণ বাদে একটা চেঁচামেচি শুনে ঘরের বাইরে এসে দেখল মহেশ আর পিঙ্কির ঝগড়া চলছে । কান পেতে শোনার চেষ্টা করে বুঝল ঝগড়ার কেন্দ্রবিন্দু সে। মামন ঘরে এসে সুভদ্রাকে ডেকে এককাপ চা আনতে অনুরোধ করল অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে কারণ সে আগে কোনদিন এই ধরনের কাজের কথা সুভদ্রাকে বলেনি। সুভদ্রা বলল দিদি তোমার জন্য আমি জান দেব, তুমি তো জান বর্ষা বেটি আমার প্রাণ, এমন করে কথা বলবে না গো, একটু বোসো আমি নিজে চা করে আনছি। পাঁচ মিনিট বাদে সুভদ্রা চা নিয়ে এল , ততক্ষণে মামন শুনছে পিঙ্কির চিল চিৎকার, মহেশের গলা পাচ্ছে না। মামন সুভদ্রার কাছে জানতে চাইল বাইরে এখন কি হচ্ছে, উত্তর পেল সাহেব ঘরে আছে ম্যাডাম আজও মদ নিয়ে বসেছে আর নিজের মনে দুনিয়ার সবাইকে খিস্তি দিয়ে চলেছে।

মানসিক অবস্থা মামনের এমন ছিল যে রাতে কিছুই খেল না, সুভদ্রা অনেক অনুরোধ করল, মহেশ ফোন করে বলল, কিন্তু আজ তার জেদ চেপেছে সেই ছাত্রী থাকাকালীন যেমন চাপত ভাল রেজাল্ট করার জন্য। ইতিমধ্যে জড়ানো গলায় পিঙ্কির দুর্বোধ্য কথা শুনতে পাচ্ছে মামন। সুভদ্রা মাঝেমাঝে এসে পিঙ্কির আপডেট দিয়ে যাচ্ছে। একসময় সবার খাওয়া মিটল, বাড়ির সব আলো নিভল, যে যার মত শুতে গেল, আধো অন্ধকারে কৌতুহলী মামন দেখতে গেল ড্রইংরুমের অবস্থা, দেখল পিঙ্কি আজ ঘরে যায়নি, সোফাতেই শুয়ে আছে, জামাকাপড়ের তাল ঠিক নেই শুধু একটা কাজের মেয়ে দড়ি (শতরঞ্চি) পেতে নিচে শুয়ে আছে। পিঙ্কির এই হাল দেখে মামনের হাসি পেল। চুপচাপ ওপর থেকে দেখে ঘরে চলে এল ,আজ আর দরজা বন্ধ নেই ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress