Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মানুষ পাচার (২০০৭) || Samaresh Majumdar » Page 3

মানুষ পাচার (২০০৭) || Samaresh Majumdar

শুভেন্দুশেখরবাবু বললেন, নিমাকে এ-বাড়িতে আনার অনুমতি দেওয়া যে খাল কেটে কুমির আনা, তা জানতাম না অর্জুন।

সমস্যাটা কী?

আবদার! তাকে গাড়ি ভাড়া করে দিতে হবে এবং সেই গাড়িতে চেপে সে নর্থ বেঙ্গল চষে বেড়াবে ছোকরাকে খুঁজে বের করার জন্য।

ওই জন্যই তো উনি এসেছেন।

হ্যাঁ। আমি তাকে বলেছি, নভেন্দুকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব তুমি নিয়েছ। কয়েকটা দিন অপেক্ষা করলেই সে হদিশ পেয়ে যাবে। তখন যা ইচ্ছে, তাই করতে পারো। কিন্তু এমন অবাধ্য মেয়ে, আমার কথা শুনতেই চাইছে না। হাত নাড়লেন ভদ্রলোক, দ্যাখো, ওকে বুঝিয়ে বলতে পারো কিনা? বলে দিয়ো, ওসব করতে হলে এ-বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে।

অর্জুন শান্ত গলায় বলল, উনি অত দূর থেকে এসেছেন নভেন্দুকে খুঁজে বের করতে। বাড়িতে না বসে থেকে যদি সেই চেষ্টা করেন, তা হলে আপনি আপত্তি করছেন কেন? আপনিও তো নভেন্দুর ঠিকানা চান। আমি আর নিমা যদি দু’রকমভাবে খোঁজাখুঁজি করি, তা হলে…

জ্ঞান দিয়ো না আমাকে। আজ সকালে শিলিগুড়ির আকাশবাণীর খবরে শুনেছি, ওই যে ড্রাইভারটা, কী নাম যেন, হ্যাঁ, ননীগোপাল, তার ডেডবডি পাওয়া গিয়েছে কাঠামবাড়ির কাছে। তুমি বলেছিলে, লোকটাকে পাবলিক মারধর করেছিল বটে, কিন্তু মেরে ফেলতে চায়নি। রাইট?

হ্যাঁ। টাকা আদায় করার জন্য।

তা হলে চিকিৎসা হলে মারা যেত না। মরল কেন?

আমরা নানারকমের অনুমান করতে পারি। সত্যি ঘটনাটা জানি না।

ওয়েল। এই মেয়েটাও আমার বাড়িতে থেকে ওসব করতে গিয়ে মারা যেতে পারে। আমি তা চাই না। আবার ওর আসল মতলবটা কী, তাও তো আমার জানা নেই। ভাল না মন্দ তা ঈশ্বর জানেন! বাড়িতে থাকলে চোখের উপর থাকবে, তাতে স্বস্তি পাব। তুমি ওকে বুঝিয়ে বলো। বেল টিপলেন শুভেন্দুশেখর। সঙ্গে সঙ্গে কাজের লোকটি দেখা দিল। শুভেন্দুশেখর জিজ্ঞেস করলেন, মেমসাহেব কী করছে এখন?

ঘুমোচ্ছেন।

হুম।

বোধহয় জেট ল্যাগ। আমি বরং বিকেলের দিকে আসব।

এসো।

.

নির্মাল্য বলল, ভাবছিলাম, তুই পৌঁছোতে পারবি না। ওঠ, তোর বাইক কোথায়? কাল তো বাইকে ঘুরছিলি।

গোলমাল করছিল, সারাতে দিয়েছি।

ওটা একটা অপদ। দু’চোখে দেখতে পারি না। দিল্লিতে ওই বাইক বাহিনীর দৌরাত্মে গাড়ি চালাতে ভয় হয়। বলে নির্মাল্য ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলল। এটা একটা টাটা সাফারি। ড্রাইভার নেপালি।

নির্মাল্য ইংরেজিতে কথা শুরু করল, বাংলা বললে এই লোকটা বুঝতে পারবে। তাই জরুরি কথাগুলো ইংরেজিতেই বলা যাক। আমি কি তোকে বিশ্বাস করতে পারি?

অর্জুন বলল, সেটা তোর উপর নির্ভর করছে।

দ্যাখ, আমি এখানে এসেছি একটা বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রায়ই অভিযোগ করছে, এদিকের সীমান্ত পেরিয়ে প্রচুর মানুষ ঢুকে পড়ছে। সাধারণ মানুষ যেমন আসছে, তেমনই বাংলাদেশে তাড়া খাওয়া সন্ত্রাসবাদীরা ভারতে এসে লুকিয়ে পড়ছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, সীমান্ত পাহারা দেওয়া যাদের কাজ, সেই বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স কী করছে? পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অভিযোগ ঠিক হলে বলতে হবে, তারা তাদের কাজ ঠিকভাবে করছে না। কিছুদিন আগে দিল্লিতে যে বিস্ফোরণ সন্ত্রাসবাদীরা ঘটাল, তাতে কাদের সন্দেহ করা হচ্ছে? একান্ত গোপনে আমাদের এই এলাকার সীমান্তের গ্রামগুলোতে কথা বলে জানতে চেয়েছিলাম, ব্যাপারটা কী। তোকে বলতে দ্বিধা নেই। দিল্লিতে ফিরে গিয়ে আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমর্থনে কোনও রিপোর্ট দিতে পারব না। নির্মাল্য বলল।

কেন?

অন্তত জনাপঞ্চাশেক লোককে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু একজনও মুখ খোলেনি।

মানে?

কেউ কিছু জানে না, শোনেনি, দ্যাখেনি।

তা হলে?

তা হলে ঘটনাটা ঘটছে না।

সেই রকমই তো বলতে হয়।

কিন্তু আজ সকালে এই চিঠিটা পেয়েছি। দরোয়ানকে দিয়ে গিয়েছিল। যে দিয়েছে, তাকে দরোয়ান কখনও দ্যাখেনি। পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করে এগিয়ে ধরল নির্মাল্য। ইংরেজিতে লেখা। আপনি সীমান্তে ঘোরাঘুরি করে মানুষজনকে আতঙ্কগ্রস্ত করছেন। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে। অবশ্য জীবনের জন্য মায়া না থাকলে, আপনি থাকতে পারেন। নীচে লেখা, ওয়েল উইশার।

এই চিঠির মানে, তোর গতিবিধি আর গোপন নেই। তুই কোথায় উঠেছিস, তাও কিছু লোক জেনে গিয়েছে। এরা কারা? অর্জুন চিঠি ফেরত দিল।

যারা তোক পারাপারের ব্যাবসা করে। স্বার্থে ঘা লাগছে তাদেরই।

তুই থানাকে জানিয়েছিস?

না। এত তাড়াতাড়ি নিজেকে এক্সপোজ করতে চাই না।

গাড়ি ততক্ষণে তিস্তা ব্রিজ ছাড়িয়েছে। অর্জুন জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাচ্ছি আমরা?

ওই জন্যই তোর সাহায্য চাইছি। তুই গীতলদহের নাম শুনেছিস?

গীতলদহ? নিশ্চয়ই কথাটা অবশ্য গীদালের দহ অর্থাৎ নাম! গীদাল হল ওখানকার মানুষের ভাষায় গায়ক। গায়কের গ্রাম। গীদাল থেকে গীতাল। গীতাল মানে যারা গীত গায়। এরা কোচবিহারে তো বটেই, বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। তুই গীতলদহে যাচ্ছিস কেন? অর্জুন বলল।

একজন গীতালের সঙ্গে দেখা করতে। নির্মাল্য বলল।

কেন?

এই লোকটির কাছে সঠিক খবর পাওয়া যেতে পারে।

কিন্তু আমি তোকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

দ্যাখ, আমি জানি না কেউ আমাকে ফলো করছে কিনা। এই গাড়ি নিয়ে আমি গীতলদহে যাব না। তুই একটা ট্যাক্সি নিয়ে ওখানে গিয়ে লোকটার সঙ্গে দেখা করবি। বাজিয়ে দ্যাখ, ও কিছু জানে কিনা। তোকে কেউ সন্দেহ করবে না। নির্মাল্য বলল।

লোকটার নাম কী?

পাগল বর্মন।

অদ্ভুত নাম তো!

নির্দিষ্ট জায়গায় আবার দেখা হবে এবং সেটা ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে।

ট্যাক্সি নিয়ে সোজা গীতলদহে চলে গেল অর্জুন। ট্যাক্সিওয়ালাকে নাম বলতেই লোকটা হাসল, হ্যাঁ, চিনি। ওঁকে কে না চেনে! পাগলদাকে বাংলাদেশের মানুষও চেনে।

অতএব পাগল বর্মনের বাড়িতে পৌঁছোতে অসুবিধে হল না। বাড়ির সামনে কয়েকটি সুপারি গাছ। সুপারি পাড়ছে একটি কিশোর। নীচে দাঁড়িয়ে আছে লম্বা একটি লোক, খালি গা, পরনে লুঙ্গি। ড্রাইভার বলল, ওই তো পাগলদা।

ট্যাক্সি থেকে নেমে কাছে গিয়ে ‘নমস্কার’ বলতেই লোকটি কপালে দুটো হাত ঠেকিয়ে বলে উঠল, আসুন আসুন, কী সৌভাগ্য। তা মহাশয় অপরিচিত, কোত্থেকে আগমন?

জলপাইগুড়ি থেকে।

অভিপ্রায়?

আপনার গানের কথা খুব শুনেছি, এবার গান শুনতে চাই। অর্জুন বলল।

পাগল বর্মন হাসলেন। হরি বলো মন অসনা/মানব দেহটার গৈরব কৈরো না। চমৎকার গলায় দুটি লাইন গেয়ে বললেন, কোথায় যেতে হবে গো?

জলপাইগুড়ি।

যাব। নিশ্চয়ই যাব। দিনটা কবে?

সামনের মাসে। আমরা আপনাকে জানিয়ে দেব।

দিয়ো।

কত দক্ষিণা আপনার?

যা তোমার মন খুশি হয় দেবে। এই তো, গেল মাসে রংপুরে গাইলাম, ওরা আমাকে বারোখানা লুঙ্গি দিল। বলল, বারো মাসে পরবেন। প্রত্যেক মাসে নতুন নতুন লুঙ্গি। কী মজা! শিশুর মতো হাসলেন পাগল বর্মন।

আপনি রংপুরে গান গাইতে যান?

কেন যাব না? যারা ভালবেসে ডাকে, তাদের কাছে কেন যাব না?

আপনার নিশ্চয়ই পাসপোর্ট আছে। ভিসাও নিতে হয়।

হো-হো শব্দে হেসে উঠলেন পাগল বর্মন, ওই যে ওই চিল, এখানে উড়ছে আবার বাংলাদেশেও উড়ে বেড়াচ্ছে। ওর কোনও পাসপোর্ট ভিসার প্রয়োজন হয়? নদী বয়ে যায় এপার থেকে ওপারে, আটকাও দেখি কেমন ক্ষমতা। আমি ভালবাসার গান গাই। সবাই জানে। যখন যাই, তখন। মিলিটারিরা বলে, ওই চলল পাগলা। আমি তো অন্যায় করছি না, বাধা দেবে কেন? দেয় না।

কিন্তু যাদের মনে কুমতলব আছে, তাদের নিশ্চয়ই আটকানো হয়।

তারা সব জল গো। মুঠোয় ধরে চাপ দাও, আঙুলের ফাঁক গলে ঠিক বেরিয়ে যাবে। বলতে বলতে একটি লোকের দিকে নজর পড়ল পাগল বর্মনের। লোকটি এই পথে আসছিল। সম্ভবত ট্যাক্সি দেখে কৌতূহলী হয়েছে।

এই যে কালিপদ, ইদিকে এসো ভাই! পাগল বর্মন হাত তুলে ডাকলেন, এ ব্যাটা মহা শয়তান। মাগলিং করে।

মাগলিং মানে?

ওই যে এদিকের জিনিস ওদিকে, আবার ওদিকের জিনিস এদিকে নিয়ে এসে বিক্রি করে দেয়। ও একা নয়, দল আছে। ও কালিপদ, তোমাকে এখন মাসে কতবার বাংলাদেশে যেতে হয়? কাছে এসে দাঁড়ানো কালিপদকে জিজ্ঞেস করলেন পাগল বর্মন, সরল গলায়।

আঃ, কী হচ্ছে কী? বাইরের লোকের সামনে এসব কথা কেন? কালিপদ বিরক্ত।

আহা। তুমি তো সেই ঢাকা, ময়মনসিংহ ঘুরে এসেছ। এ তো গৌরবের কথা! তুমি তো একা যাও না, দলে যাও?

অর্জুন কথা বলল, ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়া ওদেশে যাওয়া যায়?

হাসল কালিপদ, মশাইয়ের কী করা হয়?

ব্যাবসা।

যাওয়ার বাসনা আছে?

নিশ্চয়ই। কত নাম শুনেছি জায়গাগুলোর!

বেশি না, লোক আছে। হাজারখানেক দিলে একেবারে ঢাকায় পৌঁছে দেবে। কালিপদ বলল, ওদের টাকার চেয়ে আমাদের টাকা দামি। তাই ওদের দেশে যেতে মাত্র এক হাজারেই হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওদের কাগজ ছাড়া এদেশে আসতে হলে সম্ভবত দশ হাজার নগদ গুনে দিতে হয়।

ওরেব্বাস! এত দিতে হয় কেন?

আরে মশাই, আপনি বংলাদেশে গেলে ঘুরে-ফিরে কাজ শেষ করে ফিরে আসবেন। পাকাপাকি তো থাকবেন না। কিন্তু ওদের দশজনের মধ্যে ন’জন থেকে যাওয়ার জন্য আসে। এসে রেশন কার্ড বানায়, ভোট দেয়। তাই এখানে আসার জন্য টাকাটা বেশি চাইবে দালালরা।

কিন্তু পাগল বর্মন মশাই…

ওঃ, ছেড়ে দিন। গায়ক বলে সাত খুন মাপ। আচ্ছা, চলি।

একটা কথা।

বলুন। কালিপদ দাঁড়াল।

যদি যাই, তা হলে বিপদে পড়ব না তো? অজুর্ন জিজ্ঞেস করল।

মাথা নাড়ল কালিপদ, আপনি রাম-রহিমের ব্যানারে গেলে কেউ কিছু বলবে না?

সেটা আবার কী?

দু’জন লোক। একজন ইন্ডিয়ার অন্যজন বাংলাদেশের মানুষ। আসল নাম কী, তা আমরাও জানি না। একজন ওপারের সীমান্ত পার করে, আর একজন এপার থেকে নিয়ে যায়। ওদের দলে গেলে কেউ কিছু বলবে না। পরশুদিন আমার যাওয়ার কথা। যেতে চান, চলে আসবেন বিকেলের আগে। আমি বলে রাখব। কিন্তু যাবেন কোথায়?

ঢাকায়।

বাংলাদেশের টাকা কিনতে হবে কিন্তু। আমাদের সত্তর টাকায় ওদের একশো পাবেন। ব্ল্যাকে কিনবেন বলে দাম বেশি পড়বে।

ঠিক আছে। বলতেই কালিপদ চলে গেল।

চুপচাপ শুনছিলেন পাগল বর্মন। এবার বললেন, একটা কথা বলি। আমাকে সবাই চেনে। ভালবাসে। জানে, আমার কোনও ধান্দা নেই। কিন্তু তুমি ভাই ন্যায়ের পথে না গিয়ে অন্যায়ের পথে যাবে কেন? শুনেছি, কলকাতার অফিসে আবেদন করলে সরকারি অনুমতি পাওয়া যায়। তাই নিয়ে গেলেই তো হয়। যেসব ছেলে ওপার থেকে আসে, তাদের মুখ দেখলে বড় কষ্ট হয়। সবসময় ভয়ে কুঁকড়ে থাকে।

আপনি ওদের দেখেছেন?

এই একটা দুর্ভাগ্য আমার মাঝে মাঝে হয়। হাতে-পায়ে ধরে, না বললে চোখ রাঙাবে। মেনে নিতে হয়। মাঝে মাঝে রাত্তিরবেলায় দু-চারজনকে নিয়ে এসে আমার এখানে রাখে। ভোর হওয়ার আগেই নিয়ে চলে যায়। ওদের ধারণা, আমার এখানে নিরাপদে থাকবে, কেউ সন্দেহ করবে না। চোখ-কান বুজে থাকি। কিন্তু মনের চোখ বুজব কী করে?

শেষ কবে এসেছিল?

গত হপ্তায়। বলে গিয়েছে, আজ আসতে পারে। আমি যেন কোথাও না যাই। বিষণ্ণ গলায় বললেন পাগল বর্মন।

.

জলপাইগুড়িতে ফেরার পথে নির্মাল্যকে সমস্ত ঘটনা জানাল অর্জুন।

নির্মাল্য বেশ উত্তেজিত হয়ে বলল, মুশকিল কী জানিস, সরকারিভাবে খোঁজ করতে গেলে কেউ মুখ খুলবে না। ওই রাম-রহিমের নাম কখনও কেউ শোনেইনি। তুই যা বললি, তা আমি রিপোর্টে লিখতে পারব না। কারণ, কোনও প্রমাণ দিতে পারছি না। ওই পাগল বর্মনই অস্বীকার করবেন এসব কথা।

অর্জুন বলল, মানুষটি কিন্তু খুব ভাল।

অস্বীকার করছি না। কিন্তু প্রাণের দায় বড় দায়।

প্রমাণ চাস? অর্জুন বলল, পুলিশকে বল, আজ রাতে পাগল বর্মনের বাড়িতে রেড করতে। কপাল ভাল থাকলে হাতেনাতে পেয়ে যাবি ওদের।

দুটো সমস্যা আছে। ধর, ওরা আজ পাগলের বাড়িতে এল না। খালি হাতে শুধু ফিরেই আসতে হবে না, খবরটা চাউর হয়ে যাবে। হাস্যাস্পদ হব। দ্বিতীয়ত, সরাসরি আমি পুলিশের কাছে যাব না। আমাকে দিল্লিতে জানাতে হবে। দিল্লি থেকে লোকাল পুলিশকে ইনফর্ম করবে। এক্ষেত্রে খবরটা ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। পাখি আগেই উড়ে যাবে। নির্মাল্য বলল।

তা হলে?

তোর মাথায় কিছু আসছে না?

অমল সোমের কথা মনে পড়ল অর্জুনের। অমলদা বলেছিলেন, শেয়াল কী করে কাঁকড়া ধরে জানো? কাঁকড়ার গর্তে লেজ ঢুকিয়ে দেয়। সেই লেজ যে নিরীহ তা বুঝে কাঁকড়া আক্রমণ করে। তখন ধীরে ধীরে লেজ বের করে আনে শেয়াল। লেজ ধরে ঝোলা কাঁকড়া তার খাদ্য হয়ে যায়। অর্থাৎ ভিতরে গিয়ে আক্রমণ না করে প্রতিপক্ষকে বাইরে এনে তারপর শিকার করে শেয়াল।

অর্জুন উত্তেজিত হল। এইসময় একটা সিগারেট খেতে পারলে ভাল লাগত। মা ঝামেলা করায় আজকাল প্যাকেট কেনা বন্ধ করেছে বলে সঙ্গে সিগারেট নেই। নির্মাল্যর দিকে তাকাল অর্জুন। তারপর বলল, তোকে আজ আমার সঙ্গে রাত জাগতে হবে। এই গাড়ি যদি কেউ চিনে ফেলে, তাই ঝুঁকি নিয়ে অন্য গাড়ি ভাড়া কর। তোর তিস্তা ভবনে আমি রাত এগারোটায় পৌঁছে যাব।

কিন্তু ব্যাপারটা কী? অবাক হল নির্মাল্য।

আর-একটু ভেবে নিই। রাতে তোকে বলব। অর্জুন হাসল, তোর পাল্লায় পড়ে আজ সারাদিন না খেয়ে আছি। বাড়িতে ঢুকলে মা ফায়ার করবেন। কিন্তু তার আগে এখনই একটু খাওয়া যাক। খিদে বেড়ে গেলে আমার মাথা কাজ করে না।

হাইওয়ের পাশে যে ধাবা রমরম করে চলে, সেখানে বসে খেতে নির্মাল্যর প্রবল আপত্তি। তার ধারণা, ওখানে খুব অযত্নে রান্না হয়। তা ছাড়া খাঁটিয়ায় বসে পাবলিকের সঙ্গে খাওয়া তার পক্ষে ঠিক হবে না। অতএব, ধাবার কাছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে অর্জুন বাংলায় ড্রাইভারকে অনুরোধ করল, দু’প্লেট মটন চাপ আর চারটে রুমালি রুটি নিয়ে আসতে। তাদের খাবার এনে দিয়ে সে নিজেও যেন খেয়ে নেয়। নির্মাল্য বলল, তার আগে দুটো জলের বোতল কিনে নিয়ে এসো। টাকা দিয়ে দিল সে।

লোকটা চলে গেলে নির্মাল্য জিজ্ঞেস করল, কী ভাবলি?

দাঁড়া, আগে পেটে কিছু পড়ুক। অর্জুন ঘড়ি দেখল। বিকেল হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে ঢুকে আর বেরোতে ইচ্ছে করবে না। ফেরার পথে শুভেন্দুশেখরের বাড়ি ঘুরে যেতে হবে।

খাবার এল। নির্মাল্যকেও স্বীকার করতে হল, দিল্লির যে-কোনও ভাল রেস্তরাঁর চেয়ে কোনও অংশে খারাপ নয়। বিল মিটিয়ে দিয়ে সে জিজ্ঞেস করল, তুই কি রাতে বেরোতে চাইছিস?

হ্যাঁ। ভোরের দিকে বেরোলেই হত। কিন্তু আমি রিস্ক নিতে চাইছি না।

কোথায় যাবি?

গীতলদহ।

ওই পাগলা বর্মনের বাড়িতে?

না। কাছাকাছি। ও হ্যাঁ। তুই কি আজই দিল্লিতে রির্পোট পাঠাবি?

হ্যাঁ।

কিন্তু তুই তো আমার মুখ থেকে শুনেছিস। অন্যের কথা কি প্রমাণ হিসেবে ওরা মানবে? তার চেয়ে আজ থাক, প্রয়োজন হলে আগামীকাল রিপোর্ট পাঠাস। অর্জুন বলল।

মাথা নাড়ল নির্মাল্য, ঠিক আছে।

শুভেন্দুশেখরের বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামতে নামতে অর্জুনের মনে পড়ল, যারা নির্মাল্যর উপর নজর রেখেছে, তারাও গাড়ি ভাড়া করতে চাইলেই জানতে পারবে। তার চেয়ে ভীমকে যদি পাওয়া যায়, তা হলে অনেক সাহায্য পাওয়া যাবে। নির্মাল্যকে গাড়ি ভাড়া করতে নিষেধ করল সে। রাতে সে ট্যাক্সি নিয়েই তিস্তা ভবনে যাবে, নির্মাল্য যেন তৈরি থাকে।

শুভেন্দুশেখর জিজ্ঞেস করলেন, কী হে, কত দূর এগোলে?

চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অর্জুন বসল।

আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। ওই মেয়ে, নিমা বাইরে বেরিয়ে নভেন্দুকে খুঁজতে চাইছে। আমি আপত্তি করছি। কিন্তু ধরো, আমি যদি আপত্তি না করি? শুভেন্দুশেখর হাসলেন।

তার মানে? আপনি তো সকালেও বলছিলেন…।

এখন বিকেল। সকালের ভাবনা বিকেলে পালটে যেতেই পারে!

কিন্তু কেন মত বদলালেন?

তুমি বাংলা সাহিত্য পড়ো? শুভেন্দুশেখর সামনে ঝুঁকলেন।

বাংলা বই পড়তে আমার ভাল লাগে।

গুড। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বলে একজন লেখক ছিলেন, জানো?

অর্জুন হাসল, জানি।

গুড। ওঁর লেখা একটা গল্পের নাম ‘টোপ’। ছাগলকে টোপ করেও যখন বাঘকে লোভী করা গেল না, তখন একটি শিশুকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করাতে কাজ হল। গল্পের শেষটা নিয়ে কিছু বলছি না, কিন্তু এই নিমাকে বাইরে যেতে দিলে নভেন্দু নিজের প্রয়োজনেই ওর কাছে আসবে। সেই সুযোগটা তোমাকে কাজে লাগাতে হবে। বুঝতে পেরেছ? শেষ দিকে কথাগুলো নিচু গলায় বলছিলেন ভদ্রলোক।

কিন্তু এতে নিমার প্রাণের ঝুঁকি থাকছে। অর্জুন বলল।

নো রিস্ক নো গেন।

একটাই প্রশ্ন, নভেন্দুকে পেলে আপনি কী করবেন?

আমেরিকান পুলিশের হাতে তুলে দেব।

আমি তা হলে এখন যাচ্ছি। ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা বলার তো আর । কোনও প্রয়োজন নেই। আপনি তো ওঁকে বাইরে যেতে দিচ্ছেন।

না। তুমি একটু অভিনয় করবে।

কীরকম?

ওর সঙ্গে দেখা করো। এদেশের কিছুই ওর জানা নেই। ওর সঙ্গে বসে তুমি কোথায় কোথায় ও নভেন্দুকে খুঁজবে, তার পরিকল্পনা তৈরি করে দাও। তা হলে ওর গতিবিধি তোমার জানা থাকবে। শুভেন্দুশেখর উপদেশ দিলেন।

ওঁর নির্দেশমতো কাজের লোক অর্জুনকে নিয়ে এল দোতলার পশ্চিম দিকের ঘরে। দরজায় নক করল লোকটা। তারপর সেটা ঈষৎ খুলে অর্জুনকে ভিতরে যেতে বলল। দরজা ঠেলে ঘরে পা দিতেই টিভির আওয়াজ কানে এল। সোফায় বসে টিভির খবরের দিকে তাকিয়ে ছিল নিমা। অর্জুনকে দেখেই উত্তেজিত হয়ে বলল, এসব কী হচ্ছে? ওই বুড়ো ভদ্রলোক আমাকে বন্দি করে রেখেছেন কেন?

আপনি মিছিমিছি উত্তেজিত হচ্ছেন। অর্জুন হাসল।

মিছিমিছি! আমাকে উনি স্পষ্ট বলেছেন, একমাত্র এয়ারপোর্ট ছাড়া অন্য কোথাও যেতে পারব না। উনি চাইছেন না, আমি ওঁর ছেলেকে বিরক্ত করি। কিন্তু আমি এসব সহ্য করব না। ঠিক আছে, আমি দেশে ফিরে যাচ্ছি, উনি আমাকে ডলারগুলো ফেরত দিয়ে দিন। সোজা বসে উঁচু গলায় কথাগুলো বলল নিমা।

আমি আপনাকে বলছি, আমার সঙ্গে কথা বলার পর উনি মত বদলেছেন। উনি ভয় পেয়েছিলেন, একা ঘুরলে আপনার বিপদ হতে পারে। আপনার ভাল চেয়েছিলেন উনি। কিন্তু আমি ওঁকে বোঝালাম, যিনি নিউ ইয়র্ক থেকে নর্থ বেঙ্গলে একা আসতে পারেন, তিনি নিজের নিরাপত্তার কথা নিশ্চয়ই ভাববেন। উনি কথাটা মেনে নিয়েছেন। এখন বলুন, আপনি কোথায় কোথায় যেতে চান। আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি। অর্জুন সোফায় বসল।

থ্যাঙ্ক ইউ।নিমা যেন একটু শান্ত হল। পাশে রাখা প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে লাইটার জ্বেলে ধরাতে গিয়েও থেমে প্যাকেট এগিয়ে ধরল।

সিগারেটের ইচ্ছেটা চলে গিয়েছিল, কিন্তু নিমার সঙ্গে ভাব জমাবার উদ্দেশ্যেই একটা নিল অর্জুন। নিজেরটা ধরিয়ে নিমা অর্জুনের সিগারেটে আগুন দিল।

অনেকটা ধোঁয়া ছেড়ে নিমা বলল, আপনার কথা যদি ঠিক হয়, এয়ারপোর্টে যদি নভেন্দু গাড়ি পাঠিয়ে থাকে, তা হলে ওই ড্রাইভার ওর ঠিকানা জানে। আচ্ছা, এদিকে বার্নিশ বলে কোনও জায়গা আছে?

হ্যাঁ। আছে।

গুড। নামটা ঠিক মনে রেখেছি। এয়ারপোর্ট থেকে আসার সময় একটা জায়গায় ড্রাইভার লাইসেন্স নিতে গিয়েছিল। ও যখন ফিরছিল, তখন ওর পরিচিত একজন কিছু জিজ্ঞেস করেছিল। তার মধ্যে বার্নিশ শব্দটা ছিল। বাংলায় বলেছিল বলে বুঝতে না পারায় জিজ্ঞেস করেছিলাম। লোকটা কোনওমতে ইংরেজিতে বলেছিল, মাই হোম, বার্নিশ। শব্দটা ভাল লাগায় মনে রেখে দিয়েছিলাম। হাসল নিমা, আমি প্রথমে বার্নিশে গিয়ে ওই ড্রাইভারের সঙ্গে দেখা করতে চাই।

সেটা এখন আর সম্ভব নয়। কেন?

কত বড় জায়গা? তা নয়।

লোকটা আর বেঁচে নেই।

মাই গড! কী বলছেন আপনি? ও খুব মার খেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তাই বলে মরে যাওয়ার মতো মার খায়নি। নিমার মুখে বিষাদের ছায়া।

আমি আপনার সঙ্গে একমত।

তা হলে মরল কেন?

আমি জানি না। হয়তো কেউ চায়নি ওই দুর্ঘটনার পরে ও বেঁচে থাকুক।

আশ্চর্য! দুর্ঘটনা তো ইচ্ছে করে ও ঘটায়নি। মাথা নাড়ল নিমা, ইস, একটা ভাল সোর্স চলে গেল। তারপরেই মনে পড়ে যাওয়ায় বলল, গাড়ির নম্বর থেকে এদেশে বাড়ি খুঁজে বের করা যায়?

নিশ্চয়ই যায়।

তা হলে পুলিশ স্টেশনে চলুন। আমি গাড়ির নম্বর আমার ডায়েরিতে নোট করে রেখেছি। পুলিশকে বলি, ঠিকানাটা বের করে দিতে।

হ্যাঁ, এটা করা যেতেই পারে। তবে তার জন্য আপনাকে যেতে হবে না। আমাকে নম্বর দিন, আমিই যাচ্ছি।

থ্যাঙ্ক ইউ। ডায়েরির একটা পাতা ছিঁড়ে নম্বর লিখে দিল নিমা।

কাগজটা নিয়ে অর্জুন উঠল, তা হলে আজ বাইরে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। কাল থেকে অভিযান শুরু করবেন।

মাথা নাড়ল নিমা, কিন্তু আমার যে এভাবে চুপচাপ একা বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না। আপনাদের শহরটা একটু ঘুরে দেখব না?

সব ব্যাপারে না বলতে খারাপ লাগল অর্জুনের।

বাইরে বেরিয়ে এসে শুভেন্দুশেখরকে সে নিমার অভিপ্রায়ের কথা জানাতে, তিনি কাঁধ নাচালেন, যাও। তবে বেশি রাত কোরো না। আমি তাড়াতাড়ি ডিনার করি। নইলে ঘুম হয় না।

.

সন্ধের অন্ধকার শহরে নেমে এলেও প্যান্ট-শার্ট পরা বিদেশিনি অর্জুনের পাশে হাঁটছে দেখে রাস্তার লোকজন কৌতূহলী হল। দু-তিনজন পরিচিত মুখ আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, কে অর্জুন?

বাধ্য হয়ে রিকশা নিল অর্জুন। জীবনে এর আগে কখনও রিকশায় চড়েনি নিমা। হেসে বলল, আমেরিকার অতলান্তিক সিটিতে এইরকম রিকশা আছে। লোকে মজা পাওয়ার জন্য চড়ে।

রিকশায় দু’জনের জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকে না। নিমার জামাকাপড় থেকে দারুণ সুগন্ধ বেরোচ্ছে। নিমা জিজ্ঞেস করল, এই শহরে কী কী দ্রষ্টব্য আছে?

অর্জুন ঝট করে কিছু ভেবে পেল না। জলপাইগুড়ি শহরটাকে তার ভাল লাগে। কিন্তু টুরিস্টরা আকর্ষণ বোধ করবে, এমন কিছুর কথা তার মনে পড়ছে না। সে মাথা নাড়ল, তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। আসলে এই শহরটা থেকে জঙ্গল, চা-বাগান, পাহাড়ে সহজে পৌঁছে যাওয়া যায়।

এখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত কত দূর?

খুব কাছে।

আমরা সেদিকে যেতে পারি?

সেখানে দিনের বেলায় যাওয়াই ভাল।

আপনি কি কাল সকালে আমাকে নিয়ে যেতে পারবেন?

অবশ্যই। আমাকে ওল্ড ম্যান বললেন, আপনি নাকি সত্যসন্ধান করেন?

চেষ্টা করি।

কদমতলার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে রিকশা দাঁড় করিয়ে চারপাশে তাকাতে ভীমকে দেখতে পেল অর্জুন। রিকশা থেকে নেমে ভীমের কাছে যেতে সে একগাল হাসল, নমস্কার। হুকুম করুন।

তুমি কি আজ রাতে ছুটি নিয়ে নিয়েছ?

রোজগার করতে নেমে ছুটি নিলে চলে! কী করতে হবে বলুন।

ধরো, সারারাত গাড়ির দরকার হবে। কত নেবে?

কখন থেকে?

এগারোটা।

আপনার বাড়িতে পৌঁছে যাব?

হ্যাঁ। কিন্তু টাকার কথা বলো।

তেল আর পাঁচশো দেবেন।

ঠিক আছে। আমার বাড়িতে পৌনে এগারোটায় আসবে। আর একথা যেন কেউ না জানতে পারে। তোমাকে বিশ্বাস করছি।

বউকেও বলব না। ভীম হাসল।

রিকশার কাছে একটা ছোট্ট ভিড়। সবাই কৌতূহলী চোখে নিমাকে দেখছে। রিকশায় উঠে বসে অর্জুন বলল, রাতে ঘুরে কোনও লাভ নেই। আপনি বরং বাড়ি ফিরে গিয়ে বিশ্রাম করুন।

আপনি কোথায় যাবেন?

বাড়িতে। সেই সকাল থেকে ঘুরছি।

নিমাকে শুভেন্দুশেখরের বাড়িতে পৌঁছে, বাড়ি ফিরে গেল অর্জুন।

Pages: 1 2 3 4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress