মান ভঞ্জন
লখিন্দর সেনাপতির গানে র দল জঙ্গলমহলে খুবই নামকরা । সে নিজে মূলগায়েন । মেয়ে ললিতা ও ভালোই গায়।লখিন্দরের গুরুভাই বলরাম বেরা…ওর ছেলে শ্রীমন্ত …নামেও শ্রী যুক্ত…গলা খানি ও তেমন মিঠা।লখিন্দরের খুব ইচছা যে শ্রীম ন্ত ওর দলে গান করুক…বলরাম তা চাইতো না ॥ এত দিনে সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে…হঠাৎ বলরামের মৃত্যূতে॥বাধ্য হয়ে শ্রীমন্ত ওর দলে যোগ দিয়েছে। ললিতা ওকে দুচোক্ষে দেখতে পারেনা । ওর গানে র প্রশংসা শুনলে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে।শ্রী মনে মনে হাসে…ওর মন পড়ে আছে নয়াগ্রামে…বৃন্দার কাছে…ওর বকুলফূল বৃন্দা …..মায়ের সই এর মেয়ে। ওর মা ও সইমা এই ফুল পাতিয়ে গেছেন কোন ছোটবেলায়।বৃন্দা ও ভালো গান করে।শ্রী..বৃন্দা র জড়ি র পদাবলী কীর্তন খুবই জন প্রিয়।
লখিন্দর শ্রী র সাথে আলোচনা করে বৃন্দা কেও দলে নেয় ।অল্প ক দিনে র মধ্যেই শ্রী..বৃন্দা জুটি
সবার মন জয় করে নেয় । হিংসায় জ্বলতে থাকে ললিতা।অধিকারীর মেয়ে বলে সবার ওপর হুকুম চালাতে থাকে…বিশেষ করে ওর অত্যাচারের লক্ষ্য হয় বৃন্দা ॥ কথায় কথায় অপমান ॥ শ্রী যে বৃন্দা কে ভালোবাসে…এটা যেন ও কিছুতেই মান তে পারেনা । শ্রী কেও দু কথা শোনা তে ছাড়ে না । ও মনে মনে ফন্দি ফিকির করতে থাকে শ্রী কে নি জের করার ॥
সেবার পূজার আগেই অনেক গুলো বায়না আসে পালা গানে র । শ্রী বৃন্দা জুটির ”মান ভঞ্জন ‘ ‘ পালার চাহিদা ই বেশি।এ পালার মহলা চলেছে পুরোদমে। শ্রী…কৃষ্ণ , বৃন্দা …রাধা…ললিতা…চন্দ্রাবলী।ললিতার গান একদমই জমছে না ….দলের সবাই কানা ঘুশো করতে থাকে…একে না বদলালে দলের বদনাম হবে বেসুরো বলে।
মহলা চলার সময় শ্রী ও বৃন্দা র সাথে একটু কথা কাটা কাটি হয়। বৃন্দা র কথায় ললিতা রাগ করে মহলা ছেড়ে চলে যায় । বাবাকে সোজাসুজি বলে যেবৃন্দা কে দল থেকে সরাতে হবে…না হলে ও দলে থাকবেনা । লখিন্দর অবাক হয়ে যায় …আস্তে আস্তে ললিতার আচার আচরণ বিচার করে বুঝতে পারে আসল ঘটনা . ..ললিতা ভালোবেসেছে শ্রীমন্ত কে …তাই বৃন্দা কে দেখতে পারছে না ।
বৃন্দা তাই চক্ষুশূল। লখিন্দরের ও খুব ইচ্ছা শ্রী কে জামাই করে। দলের ভার ওর হাতে দিয়ে অবসর নে বে॥ আজ শেষ মহলা….এর পর থেকে শুরু হবে পালা॥
মহলা শেষে লখিন্দর শ্রী কে ডেকে নিয়ে যায় ….সোজাসজি বলে ললিতা কে বিয়ে করার কথা… এও জানা য় যৌতুকে দলের মালিকানা ও পাবে॥ শ্রীমন্ত হাসে….বলে….”কাকা,আমি তো ছোট্টবেলা থেকেই বৃন্দা র হয়ে গেছি….যেদিন মা ও সইমা আমাদের বকুল ফুল পাতিয়ে দিলো …সেদিন ই বিনি সুতোর বাঁধনে বাঁধাপড়ে ছি দুজনে ……এ জন্মে তো ও বাঁধন ছেড়া র নয় !আমাকে তুমি ক্ষমা কোর॥
দরজার আড়ালে ঘরের ভেতরে ললিতা ও মহলা ঘরের বাইরে বৃন্দা শোনে কথা গুলো…..দুজনে র চোখ ই অশ্রুসজল…..ললিতার প্রত্যাখানে র..বিষাদের……আর বৃন্দা র আনন্দে র….সব পাওয়ার ।বাতাসে বসন্ত রাগ বাজতে থাকে….
রাইকিশোরীর মান ভঞ্জনে র ॥