Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মা সরস্বতী-পলাশ প্রিয়ার কাহিনী || Manisha Palmal

মা সরস্বতী-পলাশ প্রিয়ার কাহিনী || Manisha Palmal

মা সরস্বতী-পলাশ প্রিয়ার কাহিনী

ঋকবেদে বাগদেবী ত্রিমূর্তি–ভূ–ভূব–স্ব– জ্ঞানময়ী রূপে সর্বত্র ব্যাপিনী। বিশ্বভুবন প্রকাশ তারই জ্যোতিতে। হৃদয়ে সে আলোক যখন প্রজ্জ্বলিত হয় তখন জমাটবাঁধা অজ্ঞানতা রূপ অন্ধকার যায় দূর হয়ে। অন্তরে ও বাইরে সর্বত্র তখন জ্বলতে থাকে জ্ঞানের পুণ্য জ্যোতি। এই জ্যোতিজ্ঞানীই ব্রম্হজ্ঞান। এই জ্যোতিই সরস্বতী। আলোকময়ী তাই তিনি সর্বশুক্লা। তিন গুণের মধ্যে তিনি সত্ত্ব গুণময়ী। অনন্ত জ্ঞানময় ঈশ্বরের বাক শক্তির প্রতীক বাগদেবী। গতিময় জ্ঞানের জন্যই ঋকবেদে তাকে নদী রুপা কল্পনা করা হয়েছে। যিনি প্রবাহ রূপে কর্মের দ্বারা মহার্ণব অনন্ত সমুদ্রে মিলিত হয়েছেন। কল্যাণময়ী নদী তটে সাম গায়কেরা বেদ মন্ত্র উচ্চারণে ও সাধনে নিমগ্ন থাকতেন। তাদের কণ্ঠে উদ্গিত সাম সংগীতের প্রতীকী বীণা দেবীর করকমলে। সরস্বতী বিধৌত ব্রহ্মাবর্ত ভূমি বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত আশ্রয় করে সাধনা করতেন আশ্রম বাসি ঋষিগণ। সেই ভাবটি নিয়েই দেবী” পুস্তক হস্তে”! গ্রন্থ রচনায় সহায়ক লেখনীটি ও তার সঙ্গে। স্কন্দপুরাণে প্রভাস খন্ডে দেবী সরস্বতীর নদীরূপে অবতরণের কাহিনী বর্ণিত আছে। বায়ু পুরাণ অনুযায়ী কল্পান্তে সমুদয় জগত রুদ্র কর্তৃক সংহূত পুনর্বার প্রজা সৃষ্টির জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মা নিজ অন্তর থেকেই দেবী সরস্বতী কে সৃষ্টি করেন। সরস্বতী কে আশ্রয় করেই ব্রহ্মার প্রজা সৃষ্টির সূচনা। গরুড পুরাণে সরস্বতী শক্তি অষ্টবিধা। শ্রদ্ধা রিদ্ধি কলা মেধা তুষ্টি তুষ্টি প্রভা ও স্মৃতি। তন্ত্র শাস্ত্রমতে এই অষ্টশক্তি যথাক্রমে যোগ সত্য বিমল জ্ঞান-বুদ্ধি স্মৃতি মেধা ও প্রজ্ঞা। তন্ত্র শাস্ত্র মতে সরস্বতী বাগীশ্বরী—-অং থেকে ক্ষং পঞ্চাশটি বর্ণে তাঁর দেহ।
আবার পদ্মপূরাণে বলা হয়েছে দেবী সরস্বতী শ্বেত পদ্মে আসীনা, শ্বেত পুষ্পশোভিতা, শ্বেতবস্ত্র পরিহিতা,ও শ্বেত গন্ধে অনুলিপ্তা। অধিকন্তু তার হস্তে শ্বেত রুদ্রাক্ষের মালা, তিনি শ্বেতচন্দনে চর্চিতা, শ্বেতবীণা ধারিণী, শুভ্রবর্ণা ,শ্বেত অলঙ্কারে ভূষিতা। সরস্বতী ক্ষেত্রভেদে দ্বিভূজা অথবা চতুর্ভূজা এবং মরালবাহনা অথবা ময়ূরবাহনা। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ময়ূরবাহনা চতুর্ভূজা সরস্বতী পূজিতা হন। ইনি অক্ষমালা কমণ্ডলু ও বেদপুস্তকধারিণী। বাংলা তথা পূর্ব ভারতে সরস্বতী দ্বিভূজা ও মরাল বাহনা। মরাল বা রাজহংস কেন দেবীর বাহন তার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে— জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে সর্বত্রই হাঁসের সমান গতি! যেমন জ্ঞানময় পরমাত্মা সর্বব্যাপী –স্থলে ,অনলে অনিলে সর্বত্র তার সমান প্রকাশ। হংস জল দুধের মিশ্রণ থেকে শুধু সারবস্তু দুধ টুকু গ্রহণ করে জল পড়ে থাকে। জ্ঞানসাধনার ক্ষেত্রেও হংসের স্বভাব তাৎপর্য বহন করে। সংসারের নিত্য ও অনিত্য দুটি বস্তুই বিদ্যমান। বিবেক বিচার দ্বারা নিত্য বস্তুর বিদ্যমানতা স্বীকার করে তা গ্রহণ শ্রেয়। অসার বা অনিত্য বস্তু সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য হাঁস জলে বিচরন করে তবুও তার দেহে জল লাগে না। মহাবিদ্যা প্রতিটি জীবের মধ্যে থেকেও জীবদেহের কোন কিছুতে তার আসক্তি নেই ,তিনি নির্লিপ্তা।

হিন্দুদের দেবী হওয়া সত্ত্বেও বৌদ্ধ ও জৈন দের কাছে পুজো পেয়েছেন সরস্বতী। গান্ধারের পাওয়া বীণাবাদিনী সরস্বতীর মূর্তি থেকে বা সারনাথে সংরক্ষিত মূর্তিতে এর প্রমাণ মেলে। অনেক বৌদ্ধ উপাসনালয়ে পাথরের ছোট ছোট বীণাবাদিনী সরস্বতী মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। শ্বেতাম্বর দের মধ্যে সরস্বতী পুজোর অনুমোদন ছিল। জৈনদের 24 জন শাসন দেবীর মধ্যে সরস্বতী একজন। 16 জন বিদ্যাদেবীর মধ্যে অন্যতমা হলেন সরস্বতী। সরস্বতী শব্দের দুটি অর্থ একটি ত্রৈলোক্য ব্যাপিনী সূর্যাগ্নি অন্যটি নদী। সরস্বতী বৈদিক দেবী হলেও সরস্বতী পূজার বর্তমান রূপটি আধুনিককালে প্রচলিত হয়েছে। প্রাচীনকালে তান্ত্রিক সাধকরা সরস্বতী সদৃশা দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন বলে জানা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় শ্রী পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির ওপর তালপাতার দোয়াত-কলম রেখে পুজো করার প্রথা ছিল। এই তিথিতে ছাত্ররা বাড়িতে বাংলা বা সংস্কৃত গ্রন্থ ,শ্লেট ,দোয়াত কলমে সরস্বতী পুজো করতো। ইংরেজি ম্লেচ্ছভাষা হওয়ায় ঐদিন ইংরেজি বইয়ের পূজা নিষিদ্ধ ছিল।
সরস্বতী পুজোর কয়েকটি বিশেষ উপাচার বা সামগ্রিক প্রয়োজন হয়– যেমন অভ্র-আবীর আমের মুকুল ,দোয়াত কলম, যবের শিষ, বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুল ,পলাশ ফুল! বসন্ত পঞ্চমীর পরের দিনটি বাংলায় শীতল ষষ্ঠী! এইদিন অরন্ধন ও “গোটা সেদ্ধ” খাওয়ার প্রথা প্রচলিত আছে। শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী বসন্ত উৎসবের সূচনা করে।

তথ্যসূত্র- বিভিন্ন পুরাণ ও গুগোল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *