Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মন বাউলের আপন কথা || Manisha Palmal

মন বাউলের আপন কথা || Manisha Palmal

আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগের কথা! জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রান্তিক গ্রামে ঘুরে বেড়াই। এমনই এক বেড়ানোতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছি গরবেতাতে। শিলাবতী নদী পেরিয়ে গিয়ে জিরাপাড়া নোয়ারি এইসব গ্রামগুলোতে ঘুরছি। গনগনির শিলাবতী নদীর নদীখাত– দু’পাশে জঙ্গল দেখলেই গা ছমছম করে! বড় রাস্তার পর ধুধু ডাঙ্গা জমির পরে এই জায়গাটা। নদী খাতের আগে খালি দুসারি কোয়ার্টার বিডিও অফিসের। কোয়াটারের পেছন থেকে শুরু হয়েছে গনগনির নদী খাত-স্হানীয়ভাষায় –“গনগনির খুলা”! ওখানে নাকি বকাসুরের হাড পড়েছিল। অর্থাৎ কোন জীবাশ্ম বা ফসিল ছিল ওখানে।
শীতের সন্ধ্যা হঠাৎ নেমে এলো জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। বাড়ির সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি– হঠাৎ পেছন নদী খাতের দিক থেকে একটা অদ্ভুত ডাক ভেসে আসতে লাগলো— ভয়ে বুকের ভেতরে কাঁপন ধরল। কিছুক্ষণ পর আবার সেই ডাক। যার বাড়িতে গিয়েছিলাম তিনি বললেন—” ফেউ ডাকছে, বাঘ বেরিয়েছে তো!” আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম! পরদিন সকালে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ভয় ছু মন্তর! সদলবলে গেলাম নদী খাতের দিকে! নদীর বালিতে পায়ের ছাপ দেখলাম। এখানেই শুনলাম যে জঙ্গলের গভীরে দলমার হাতির দল এসেছে। ওরা ময়ূর ঝরনার দিকে জঙ্গলে আছে। ফির দলে গর্ভিনী হাতি আছে। প্রতিবছর ওরা আসে ব্রিডিংয়ের জন্য এই ময়ূর ঝরনার জঙ্গলে। এই জঙ্গল এখনো আদিম মনুষ্য বসতিহীন। এই নির্জন মনুষ্য বসতি হীনজঙ্গল তাই হাতিদের এত প্রিয়। জঙ্গল লাগোয়া ক্ষেতে ধান সবজির সমারোহ। আমি তো এক পায়ে খাড়া। সবাই বলল হাঁটতে হবে প্রায় 15 কিলোমিটার জঙ্গল পথে। আমরা ছয় জনের দল। দুজন আদিবাসী ভাইও আছে আমাদের সাথে– বুধন ও হপন মুর্মু। 2জেঠতুতো খুড়তুতো ভাই। ওরাই গাইড— ওদের বাড়ি ওই জঙ্গলের ভেতরের গ্রামে— সেখানেই যাব! দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে বেরিয়ে পড়লাম! শাল জঙ্গল। মাঝে এয়োতির রাঙ্গা সিঁথির মতো লাল পথ। এখনো পাতা ঝরা শুরু হয়নি। সবুজ হলুদ বাদামি পাতার ঝালরে ঢাকা বনভূমি। পাশে দিগন্তবিস্তৃত পান্নাসবুজ মাঠ। মাঝে কাকচক্ষু জলের বাঁধ। বাঁধে শাপলা-শালুক নাল ফুটে আলো হয়ে আছে। কি সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য। জঙ্গলের গাছে গাছে কতনা পাখ পাখালি। বুলবুল হরিয়াল দুধরাজ শালিক টিয়াএদের চিনি। জঙ্গলের জমি ভুতভৈরবী, কুর্চি, কুকসিমা, আলোক লতার ঝোপে ঢাকা। নাম না জানা কোন বুনোফুলের তীব্র গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে আছে। জনমানবহীন জঙ্গল ঝিঁঝির আওয়াজে কানে তালা লেগে যায়। আমরা যখন গ্রামে পৌছালাম তখন সন্ধে নামতে চলেছে। 5/6 ঘরআদিবাসীর বাস ওখানে! মাটির দেওয়াল খড়ের চালের দোতলা বাড়ি! বুধন হপন দের। আমরা ওখানে পৌঁছে কাঠের আগুন জ্বালিয়ে তার পাশে বসলাম। ভীষণ ঠান্ডা। শাল কাঠের আগুন কখনো নীলচে কখনো কমলা। চটপট শব্দে কাঠ ফাটছে। ধুনার গন্ধে মম করছে আঙিনা টা। আমরা রান্না ঘরের চালায় বসে। ছিটাবেড়ার রান্নাঘর । দূর থেকে রাত চরা পাখি অচেনা ডাকে চমকে চমকে উঠছি । কাল পেঁচার দুরগুম দুরগুম ডাকে বুক হিম হয়ে যাচ্ছে। খেতে বসেছি— লাল মোটা চালের মিষ্টি ভাত দেশি মুরগির ঝোল একটা পাঁচমিশালী তরকারি। সবাই খুব তৃপ্তি করে খেয়ে দোতালার ঘরে শুতে গেল। হপনের ঠাকুমার কাছে বসে গল্প শুনছি। উনি বলছেন জঙ্গলের গল্প—- এই ময়ূর ঝর্ণা, পাশে রুপা র ঘাঘরা এই জায়গা গুলো হাতিদের ভাব ভালোবাসার জায়গা। হাতিরা খুবই লাজুক। ওদের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য নির্জনতা চাই। তাই এই আদিম অরণ্য ওদের এত প্রিয়। এখানেই জঙ্গলের গভীরে একটা জায়গা আছে যেখানে হাতিরা সন্তান জন্ম দেয়। বাইরের কেউ সেই জায়গাটায় যেতে পারে না। স্থানীয়রা বলে-“-হাতিডিহ “! ঠাকুরমা বললেন এখন জঙ্গলে হাতির দল আছে— ঠিক তখনই দূরে জঙ্গলে আলোডন উঠলো। ঠাকুরমা বললেন গণেশ ঠাকুরের দল। কথায় কথায় রাত গভীর হয়ে উঠলো। লেপের ওমে অজানা জঙ্গলের অদ্ভুত পরিবেশ কেমন নেশায় জড়িয়ে ধরল। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। একটা অপার্থিব চিৎকারে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। উঠে বসে দেখি সবাই ঘুম ভেঙ্গে উঠে পড়েছে। অপার্থিব বৃংহণ একটানা চলল প্রায় 15 মিনিট ধরে। তারপর ধীরে ধীরে তা থেমে গেল। জঙ্গল আবার তার স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে গেল। ঠাকুমা বললেন– হাতির বাচ্চা হয়েছে! কাল সকালে জানতে পারবি! সত্যিই, সকালে বনরক্ষীদের কাছে জানতে পারলাম
হাতির বাচ্চা হয়েছে! হাতিরা এখন বেশ কিছুদিন এই জঙ্গলে থাকবে। দলমার দামালরা এই পথে যাতায়াত করে প্রাচীনকাল থেকে। এই পরিযান এর জন্য এখানকার বিভিন্ন লোক দেব দেবীর আটনে হাতির ছলনের আতিশয্য। পোড়ামাটির হাতি ঘোড়া ঠাকুর এখানে সহজলভ্য। এমনকি এই গভীর জঙ্গলের মাঝেও মা-বনচন্ডীর আটনে এই হাতির ছলন দেখলাম। জঙ্গলের ভিতরে এক ছোট্ট
নদীর সোঁতা। তির তির করে জল বয়ে চলেছে।
নদির বালিতে মাংসাশী প্রাণীর পায়ের ছাপ দেখলাম– হায়না বা নেকড়ে হবে । দূর থেকে হাতি দলের জলকেলি দেখলাম। ফোয়ারার মত শুঁডে জল নিয়ে একে অপরকে ভিজিয়ে দিচ্ছে।
মানুষ ও জীবজন্তুর একই প্রকৃতিতে পারস্পরিক সহাবস্থানে রয়েছে এইতো জীবন রঙ্গ।
আজও কোন শীতের রাতে ওই রাতের কথা মনে পড়ে রোমাঞ্চিত হই, কানে ভেসে আসে সেই অপার্থিব বৃংহণ—- ভুলি কেমনে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *