Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মন উদাসীর কথকতা || Manisha Palmal

মন উদাসীর কথকতা || Manisha Palmal

হৈমন্তী বিহানসাঁঝ আমাকে স্মৃতিমেদুরতায় আবিল করে তোলে। ফেলে আসা শৈশব কৈশোরের মিঠেল স্মৃতির টানে ফিরে যাই সেই সোনালি সময়ে—–” কুমু —-” “কুমু”– দূর থেকে ভেসে আসছে ঠাম্মির মিষ্টি স্বর—” আয় ইতু পুজোতে বসবি আয়। সবাই যে অপেক্ষা করছে তোর জন্য।”
দশহাতী বৃন্দাবনী শাড়িটাকে কোনরকমে সামলাতে সামলাতে এসে দাঁড়ায় তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া দস্যি মেয়ে টা। মাথার লম্বা কোঁকড়া চুল থেকে তখনো টপটপ করে জল ঝরছে। পুজোর জন্য মাথা ভিজিয়ে স্নান করেছে যে।
তাড়াতাড়ি বড় ঠাম্মি এসে মাথা মুছিয়ে শাড়িটাকে গুছিয়ে পরিয়ে দেয়। এক দঙ্গল কিশোরী মেয়ে বসেছে তুলসী মঞ্চ কে ঘিরে। প্রত্যেকের সামনে ইতুর সরা। শুষনি কলমি মটর কচু গাছগুলো যেন শনশন করে বাড়ছে! যার সরার গাছের বৃদ্ধি বেশি সে আনন্দে ডগোমগো! কুমুর মন তো পড়ে আছে সদর দরজায়— কখন আসবে সেই মন আকুল করা ডাক–” রাইমনি”—- এসেছে– এসেছে! বৈষ্ণবী শতদল– ওর “শতদল দিদা”!
পুজো শেষে কিশোরীর দল ঘিরে ধরে বৈষ্ণবী কে! দিদার কাছে যে আছে গল্পের ঝুলি! গান আর গল্প এই দুই অস্ত্রে ঘায়েল মেয়ের দল। আঘুন দুপুরের মিষ্টি রোদে; ভিজে চুল এলিয়ে রোদে পিঠ দিয়ে চলেছে তাদের গল্পের আসর! গল্প শেষে শতদল বোষ্টমী চলল নিজের কুঞ্জে— সাথী হয় দস্যি মেয়ে টা। কাঁসাইচরের মোহময় ডাক যে সে এড়াতে পারে না। দিগন্ত বিস্তৃত শস্য ক্ষেত, নদী ঘাটের একলা আশুদ গাছটা তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। কাঁসাই পাড়ের মনসার আটনের ছলন গুলো যেন তাকে গল্প শোনায়। বিষম ঢাকির ধূমুলে, তুমরি বাঁশির সুরে তার ঘর বিবাগী মন ভেসে চলে! নদীতীরের সরষে ক্ষেতের বাসন্তী রং লাগে তার দুই নয়নে! সোনালী ফসলের খামে হৈমন্তী প্রকৃতি তাকে উৎসবের চিঠি পাঠায়। ইতু টুসু নবান্ন মকরের আনন্দের ডাকে মন ভরে ওঠে। তার কানে বেজে ওঠে ভাদু গানের কলি—” উলটপালট ফুলোট বাঁশিতে
ঢোলে তালে কাঠি পড়ে না–“
নবান্নের পৌষ লক্ষ্মীর পূজার পরমান্ন নলেন গুড় পিঠে র সুবাসে ম ম করতে থাকে প্রকৃতি।
কাঁসাইচরের গুড় কারিগরদের অস্থায়ী বাসস্থান যেন হাতছানি দেয় মেয়েটাকে। নলেন গুড়ের সুগন্ধে খেজুর লবাতের মিষ্টতায় সারা পরিবেশ মাখা থাকে। আকাশে বাতাসে উৎসবের আমেজ। মেলা খেলার আনন্দে ভরে উঠে চরাচর। ধান বোঝাই গরুর গাড়ি গুলোর চাকার ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজ যেন ওকে আনমনা করে দেয়। কাঁসাই চরের পরিযায়ী পাখি আর গুড় তৈরি করা পরিযায়ী মানুষগুলো দুই ই কুমুর মনের তারে অনুরণন তোলে।
একটা টুসু গানের কলি ওর মনে বারবার গুনগুন করতে থাকে—” টুসু যাবেন কলকাতা
খিদা পেলে খাবেন কি?
আন লো টুসুর নতুন গামছা
জিলিপি ছাঁদা বাঁধে দি।”
টুসুর চৌদলের রঙিন কাগজের রঙ যেন অস্তগামী সূর্যের রং এর সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। টুসু বিদায়ের ব্যথার সাথে মকর পরবের আনন্দের অশ্রু মিশে এক আনন্দ বিষাদমাখা ভালোবাসার জন্ম দেয় কুমুর মনে।
এই ফেলে আসা কিশোরী বেলা আনন্দ বিষাদের মোড়কে ঢেকে ফেলে মননকে। মনের তারে অনুরণন ওঠে—-” ভুলি কেমনে
আজো যে মনে
বেদনা সনে রহিলো আঁকা—–“!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress