ভূতের ভয়
সুখচরের একটা বাড়ি। স্বামী স্ত্রী এবং ছেলে বসবাস করে। ঘিঞ্জি পরিবেশে তাদের বাড়ি প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক। অনেকদিন ধরে কিছু অলৌকিক কার্যকলাপ বাড়িতে হয়ে চলেছে। কখনো টিভির কাচ, কখনো আলমারির কাচ ভাঙছে। গৃহস্থ মানুষ তারা, কারো সাথে শত্রুতা নেই। তবে গভীর রাতে বা দুপুরবেলা তাদের অজান্তে এমন কেন হচ্ছে। মাঝে তান্ত্রিক নিয়ে আসা হল ভূত তাড়াবার জন্য। নানা কিছু ক্রিয়া-কলাপ বাড়িতে করা হলো। এখন বাড়িতে কেউ মারাও যায়নি। বছর 15 আগে ছেলেটির ঠাকুমা এমনি বয়স জনিত কারণে মারা গেছে। আশপাশের লোকেরা উৎকণ্ঠায় রয়েছে। কেউ ওখানে রাত হলে বসবাস করতে পারছে না। তবে কি সত্যি ভূত ছাড়া এমন হচ্ছে কেন। ক্রমে কথাটা অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে গেল। মিডিয়া পর্যন্ত এটা কভারেজ করল। সমস্ত মানুষ আতঙ্কে একেবারে দিশেহারা। কি করবে ঠিক করতে পারছেনা গৃহকর্ত্রী। আজ পনেরো ষোল দিন ধরে খাওয়া-দাওয়া নেই ঘুম নেই। প্রতিবেশীরা এসে অনেক রাত পর্যন্ত ওদের ঘরে বসে থাকছে যাতে ওরা ভয় না পায়। তবুও সাহস হচ্ছে না। চোখের জলে, ভয় গৃহকর্তা এবং গৃহকর্ত্রী পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এই খবরটা বিজ্ঞান মঞ্চ পেয়েছিল। ওদের বাড়ির পাশে কৌশিক বাবু বিজ্ঞান মঞ্চ কে আনে। কোন এসে বহু সময় ধরে জিনিসগুলোর পর্যালোচনা করে। একটু পরেই এবিপি আনন্দর আসার কথা। বিজ্ঞান মঞ্চের দীপক দা ঘরের গামছা পরা এবং বিছানাপত্র পুড়ে যাওয়াকে ভূতের উপদ্রব মানতে নারাজ। যখন-তখন ঘরে আগুন লেগে যাচ্ছে। সোফা টা পুরো পুড়ে গেছে। দেওয়ালে গামছা ঝুলানো ছিল সেটাও পোড়া। ওনার মনে হচ্ছে পটাশিয়াম সাথে গ্লিসারিন মিশিয়ে কেউ এই আগুনটা ধরাচ্ছে। কারণ কোন জিনিস এমনি পোড়ালে সম্পূর্ণ পুড়ে যেত। তার এও ধারণা হলো এ কাজ সম্পূর্ণ বাড়ির লোকের। এবং তিনি ক্যামেরার সামনে জানালেন যদি বাড়ির কেউ করে থাকে তার জন্য ভয়ংকর শাস্তির ব্যবস্থা হবে। ওনারা যুক্তি বিজ্ঞান মঞ্চে এত বছর ধরে রয়েছেন, একটা অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এগুলো জানালেন। যদিও পটাশিয়াম এবং গ্লিসারিন টা সেদিন তিনি জ্বালতে পারেন নি। ভিডিওতে ওই দাদা কে কুৎসিত ভাবে আক্রমণ করা হলো। প্রত্যেকটি কমেন্ট ওনার বিরুদ্ধে। এখনো মানুষ মানুষকে সম্মান দিতে শেখেনি। যদিও বিজ্ঞান মঞ্চের মানুষদের এতে কিছু যায় আসে না। যাইহোক এভাবে কয়েকটা দিন যাওয়ার পর ভুতের খোঁজে আবার সবাই বেরিয়ে পড়ল। আবার এক ঘটনার সম্মুখীন। ওদের বাড়ির কাছাকাছি আমার বাড়ি।ওঝা তান্ত্রিক তাদের কাজ চালিয়ে গেল। যুক্তিবিজ্ঞান এর লোকেরা সতেরো বছরের ছেলেটিকে সন্দেহ করে। তাকে বোঝাতে থাকে সে কেন এটা করছে। যদিও এই বলাটা বাবা-মা গ্রহণ করতে পারে না। ওকে কয়েকদিন স্টাডি করার পর, ছেলেটি নিজের মুখে স্বীকার করে। সে জানায় এটা এমনি করেছে। বাড়ির সবাইকে ভয় দেখাবে। একাদশ শ্রেণীতে পড়ে। বিজ্ঞান মঞ্চের লোকেদের ও স্কুলে দেখেছে। ওনাদের কে চেনে । বাবা-মা ঘুমালে ও উঠে ওইগুলো করে। চন্দনপাটা দিয়ে সেদিন আলমারীর কাঁচ আর টিভ টা ভেঙেছে। ইচ্ছে করে অজান্তে আগুন লাগিয়েছে। সে আর কোনদিন করবে না। বিজ্ঞান মঞ্চ থেকে জানাচ্ছে আরেকটি এরকম বয়সের মেয়েওএকই ঘটনা অন্য জায়গায় করেছে। তবে কি একাকীত্ব লকডাউন – ঘরে বসে থাকা- স্কুল জীবন থেকে বিরত হওয়ার জন্য এই ঘটনা। নতুন প্রজন্মকে এভাবে কি কুরে কুরে খাচ্ছে। ভাববার সময় এসেছে। সমস্ত কিছু আবার আগের মতো খুব শীঘ্র হয়ে যাক। মানুষ তার ছন্দে ফিরুক। ভূত তার নির্দিষ্ট জায়গায় থাকুক। অবশ্য ভূত বলে কিছু নেই বলেই মনে করি।