ভূত (Bhoot)
হঠাৎ লোডসেডিং। ঘুটঘুটে অন্ধকার। মামার বাড়িতে গিয়েছিলাম উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে , ছুটি কাটাতে। জন্মের পরেই মা ছিল না। শুনেছিলাম তিনদিনের জ্বরে মা মারা গেছিলেন।তারপর বাবা আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি মাসীকে বিয়ে করেছিলেন।
মাসীকে বিবাহ করার জন্য বেশ রাগ ও হয়েছিল। আমি মা বলতে পারব না বলেছিলাম বলে বাবা চড় মেরেছিলেন।।ওই মাসি ডিভোর্সী ছিলেন ।মেশোকে আবছা এখনো মনে আছে।কি জানি তখন তো ছোট ছিলাম কেন বা বিয়ে ভাঙল,কেন বা মাসীকে বাবা বিয়ে করলেন কিছু জানা নেই।
এরপর আমি হস্টেলে চলে যায়। বাড়িতে আর ফিরতাম না ,ছয় বছরের মধ্যে হাত গুণে বলতে পারব কত বার বাড়িতে গেছিলাম। বাবা ও মাসীর একত্রে থাকা সহ্য করতে পারতাম না।তারপর আমি যখন মাধ্যমিক দিই তখন একটা বোন হয়েছে জানি।লজ্জায় আর বাড়িতে যেতাম না। মামার বাড়ি চলে যেতাম।কখনো মামা নিয়ে আসতেন। এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে মামা বাড়িতে গেছি।তারপর একদিন বিকেলে অদৃশ্য টানে গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে অনেক টা পথ এগিয়ে যাই।সন্ধে হয়ে আসছে। উল্টো পথে বাড়ির দিকে ছুটতে থাকি। হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাত। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বয়স্ক লোকটি বেশ চেনা মনে হয়।আমায় জিজ্ঞেস করে কোন বাড়ির মেয়ে তুমি?
আমি আমতা আমতা করে বলি আমি মতিলাল বাবুর ভাগ্নি।
আসলে এতটা পথ চলে এসেছি তো অন্ধকার হয়ে আসছে তাই ছুটে ছুটে ফেরবার চেষ্টা করছি।ভয় ও লাগছে। তুমি হস্টেলে বড় হয়েছ তাই না! তোমার তো নতুন মা আছে তাহলে হস্টেলে কেন থাকো! আমি আমতা আমতা করে বলি আমাকে একটু এগিয়ে দেবেন।
উনি বললেন চলো এগিয়ে দিচ্ছি। কথায় কথায় উনি আমার নতুন মায়ের কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন। আমি বলি আপনি কি মাসীর প্রাক্তন স্বামী। আপনাকে বেশ চেনা লাগছে। লোকটা র গায়ে আচমকা হাঁটতে গিয়ে স্পর্শ হতেই আমি চমকে উঠি। অসম্ভব ঠাণ্ডা দেহ। লোকটার বীভৎস ভূতুড়ে হাসি । আমি ভীতু রাম ভয় পেয়ে পেয়ে চলি। লোকটা বলে ওদিকে যেও না কবরডাঙা ওঠা। লোকটি হঠাৎ দেখি চলে যাচ্ছে। আমি ভয় পেয়ে লোকটি কে ডাকি। আরো একটু পথ এগিয়ে দেবেন মেশোমশাই। আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। লোকটা ভেউ ভেউ করে কেঁদে বলে ইচ্ছে করে টুকু আমায় ছেড়ে গেছে। তোমার মা তো গলায় দড়ি ….. কি বললেন ! ওই তোমার বজ্জাত মাসী তোমার মার ঘর আর আমার ঘর ভেঙেছে। তার সাথে নদের কেষ্ট তোমার বাপ ও আছেন। আমার মা গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেছিল! ছুটতে ছুটতে মামা বাড়ি এসে দিদাকে জিজ্ঞেস করি দিদা মা কেন গলায় ফাঁস দিয়েছিল। দিদা মেসো আমাকে সব বলেছেন। দিদা বলে কোন মেসো! ভোলানাথ সেন! ও তো নেই কবে মারা গেছেন! না দিদা উনি বেঁচে আছেন। উনি আজ আমাকে দিয়ে গেছেন।তবে দিদা উনি কি ভূত!! গায়ে হাত লাগতেই মড়ার মতো ঠাণ্ডা। ও তো পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন। আমি ঘরে গিয়ে গান করতে থাকি। এক পলকে একটু দেখা… আরেকটু হলে ক্ষতি কি! না ভূত মেসো তোমার সাথে দেখা করার ইচ্ছা নেই। তুমি বাবা ও মাসীর উপর রাগ করে আমাকে মেরে দিতে পারো। কবে যে পরীক্ষার ফল বার হবে! আবার হস্টেলে ফিরতে পারব।