ভিস্তিওয়ালা
মুন্না কাজ করে ফুল তুলে। রঙিন জারদৌসি কাপড়ে মাষ্টারের কারখানায়, সলমা চুমকির জীবন্ত নকশা আর গুনগুন গান। মাষ্টার বলেছে— “স্ফূর্তিসে কাম কর বেটা।”
রাতে ঘরে এলে বাপ বলে, “নে গোসল করে খেয়ে নে। আজ কত পেলি?”
দুঃখী বাপের চোখের নজর এখন কম, ফুল তুলতে আর পারে না। দেয়ালে ঝোলানো “মশক” , চামড়ার থলে, ঠিক যেন চুপসে পড়া ধুলোমাখা মুন্ডহীন এক কালো ছাগল। গলা দিয়ে জল ঢালতে হয়।
জাতব্যবসা আর নেই, মুন্না শুনেছে বাপের মুখে সেই বাদশা আকবরের আমল থেকে ভিস্তিওয়ালার কাজ নাকি ছিল তাদের পূর্ব পুরুষদের । বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের যোগান , কিন্তু হিন্দু বাড়িতে নয়। একে বিধর্মী তায় আবার চামড়ার থলে!! জাত চলে যাবে যে।
পরিবর্তনশীল সমাজে বন্ধ হলো সে পানীয় জল সরবরাহ । এলো কলের বিশুদ্ধ জল। তবে পরে পথে পথে ঘোড়ার জন্য চৌবাচ্চায় জল সংরক্ষণ , সে কাজ মুন্নার বাপের বাপও করেছে কিছুদিন ।
তারপর আবার মন্দা।
টমটম, এক্কাগাড়িই বা আর কোথায়?
ভিস্তিওয়ালা বাপ গেলো ফুল তুলতে । মন লাগত না , চোখও গেলো ভেস্তে।
মুন্না মন্দ নেই— ফুল তুলতে তুলতে চলে, গুনগুনিয়ে মিঠে ঠমকের হিন্দিবুলির গান। তবে এ কাজেও ভাঁটার টান, সক্রিয় মেশিন এখন মুন্নার খলনায়ক ।