ভালো উপহার
বিয়ের পর সোমার শ্বশুরবাড়িতে প্রথম ”বড়দিন “কাটাতে হবে। সোমার আঠারো নভেম্বর পয়লা অগ্রহায়ণ হয়েছিল বিয়ে। বিয়ের পর দশদিনের জন্য গোয়া।তারপর দুই তিন বার বাপের বাড়ি আসা।তাই সোমা বলতে পারে নি শাশুড়ি মা কে,একটু যাব বাড়িতে। কেননা বাবা যে একা একা থাকে।তবে বাবা খুব শক্ত।যাঁর মেয়ের মা, হঠাৎ হারিয়ে যায়, মেয়ের বয়স সবে আঠারো,এই চার পাঁচ বছর বাবা তো সংসার, অফিস, মেয়ে সামলিয়েছেন।যদি সোমা বলত , বাবা আমার বাড়িতে এসে বড়দিন পালন করো,তাহলে বাবা নির্ঘাত বলতেন ,না রে মা তোর মায়ের স্মৃতি নিয়ে থাকি।যদি তোর মা ফিরে আসে! সোমা আশা ছেড়ে দিয়ে বাবাকে বলত মা আর ফিরবে না! ওই উত্তরাখণ্ডের বন্যায় মা ভেসে গেছে।যদি বেঁচে থাকত , ঠিক খুঁজে পেতো পুলিশ। মা আর আসবে না।
চব্বিশ তারিখ সকাল থেকে সোমার মার কথা খুব মনে পড়ছে। কেননা মা কত রকমের কেক বানাতেন। সেই উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে গিয়ে কাল হয়েছিল।মা কে হারিয়ে ফেলেছিল। হঠাৎ সোমা লক্ষ্য করে দুটি বেড়াতে যাবার ব্যাগ।বর বলছে বারোটায় বার হবো তিনটের ফ্লাইট।তারপর কলিং বেলের শব্দ,সোমা দেখে তার দুই ননদের ফ্যামেলি।কারর এখনো বাচ্চা নেই। সবাই মিলে বেড়াতে যাওয়া।সোমা তাড়াতাড়ি ব্যাগ খুলে অবাক,কত নতুন ড্রেস। শাশুড়ি মা সব মাপমতন কিনে ব্যাগ গুছিয়ে দিয়েছেন। মনে মনে ভাবে সোমা, ঈশ্বর নতুন করে মা দিয়েছেন। এবার খুশি খুশি থাকতে হবে।সোমা বেড়াতে যাবার আনন্দে বাবার কথা ভুলে গেছে।তারপর প্লেনে ওঠার পর বাবাকে জানায়। বাবা তখন মেয়েকে বলে ,মা আমি তো সব জানি। তুই ভালো থাকলে তোর বাবা ভালো থাকবেন।
সিমলা নেমে ওরা হোটলে পৌঁছে আবার বেড়িয়ে পড়ে। ওরা চলতে চলতে বড়দিনে অর্থাৎ ২৪তারিখ রাত বারোটার পর সিমলা কালিবাড়ি পৌঁছে যায়।ওই চত্বরে বড়দিন উপলক্ষে খুব সুন্দর সাজানো।ওরা লক্ষ্য করে সবাই মিলে কি সুন্দর কেক কাটছেন,গান করছেন। শীতের কাঁপুনি দিচ্ছিল তাই সোমা একটু দূরে আগুন জ্বালিয়ে অনেকে তাপ নিচ্ছিল, ওখানে গিয়ে দাঁড়ায়।মনে হচ্ছিল ওরা ওই রাস্তায় রাস্তায় থাকে। হঠাৎ সোমার বর বলে ওই সোমা এখানে এসো, ছবি তুলব। ছবির নাম শুনতেই সোমা ছুটে যেতে যায়,এক মাঝবয়সী মহিলার সাথে ধাক্কা। মহিলা কম্বলে মুড়ে ছিল, মহিলার হাত থেকে কেকটা পড়ে যেতেই সোমার দিকে তেড়ে যায় মারতে। সোজাসুজি বাংলায় বলে আমার মেয়ে খাবে, ফেলে দিলি।সোমা তো ভয়ে কেঁদে ফেলে ।দীপন ছুটে এসে বলে চলুন আপনাকে কেক কিনে দিচ্ছি। হঠাৎ মহিলা কম্বল ফেলে দিয়ে মুখের চুল সড়িয়ে বলে তোর খুব টাকার গরম!সোমা বলে আপনি তুই সম্বোধন করছেন কেন! ননদ ছুটে এসে বলে এইসব ছোটলোকদের কথাবার্তা এরকম। হঠাৎ সোমা ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে বলে ,মা তুমি! ভদ্রমহিলা মা ডাক শুনে সোমাকে জড়িয়ে ধরে।দীপন সোমাকে বলে ,ইস সোমা উনি কতদিন স্নান করে নি , তুমি জড়াতে দিলে কেন! সোমা বলে দীপন উনি আমার হারিয়ে যাওয়া মা।
আবার মা কথা শুনে , উনি এগিয়ে আসে , ফিসফিস করে বলে আমার একটা মেয়ে ছিল,সব বন্যায় হারিয়ে ফেলেছি। একজন সাধুবাবা এগিয়ে এসে বলেন, দিদি অচ্ছি ঘর কি হেই। উসকি গলে মে সোনে কা চেন সোনে কি লোহা,বালা,আ়ংটি থি। অতীত সব কুছ ইয়াদ নেহি হেই। কালি মন্দির কি ঠাকুর মশাই কা পাস সুরক্ষিত হেই। সোমা মায়ের হাত ধরে বলে ঠিক বলেছেন , মায়ের গলায় বিছা হার ছিল। তারপর আর কি! বড়দিনে সান্টা এত ভালো উপহার দেবে! ভদ্রমহিলা থাকতে চায় না, কিন্তু মা ডাক টা শুনলে কেমন হয়ে যান। চলতে চলতে বড়দিনে মা উপহার পেয়ে সোমা অশ্রুসাগরে ভেসে গেছিল। কোলকাতায় এনে ডাক্তারে পরামর্শ মতে উনি পুরাতন স্মৃতি ফেরে পাচ্ছেন।মা ও বাবা ভালো আছেন। সোমা সুখে দিন কাটাচ্ছেন।বর্তমানে সোমা সুপুত্র সন্তানের মা।