Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ব্লু-প্রিন্ট || Nihar Ranjan Gupta » Page 8

ব্লু-প্রিন্ট || Nihar Ranjan Gupta

দুপুরে কিরীটী, সুব্রত ও দেবেশ বের হলো

দুপুরে কিরীটী, সুব্রত ও দেবেশ বের হলো গাড়ি নিয়ে—কিন্তু সেই পাড়ায় গিয়ে গতরাত্রের বাড়িটা ওরা কিছুতেই স্পট-আউট করতে পারল না। অনেক বাড়ি হচ্ছে, অনেকগুলো তৈরীও হয়ে গিয়েছে, কিন্তু সবই প্রায় এক প্যাটার্নের যেন।

অনেকক্ষণ ধরে ঐ তল্লাটে গাড়িতে ঘুরে ঘুরে আবার ওরা ফিরে এলো।

সন্ধ্যায় মন্ত্রীর গৃহে ককটেল-পার্টি।

দুপুরে একবার কিরীটী বের হয়েছিল রামস্বামীর সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর অফিস চেম্বারে বসেই অনেকক্ষণ ধরে কথাবার্তা হলো।

মন্ত্রীর ওখান থেকে ফিরতে কিরীটীর বিকেল প্রায় সাড়ে তিনটে হয়ে গেল। দেবেশ ঐদিন অফিস যায়নি।

ক্রমে দিনের আলো নিভে এলো। ছোট শীতের বেলা ফুরিয়ে এলো।

মন্ত্রী মশাই বলেছিলেন, তিনি তাঁর গাড়ি পাঠাবেন কিন্তু কিরীটী বলেছিল তার কোন প্রয়োজন নেই।

কটায় আসছেন মিঃ রায়?

ঠিক সময়েই যাবো।

রাত নটা নাগাদ কিরীটী আর সুব্রত বের হলো বেশভূষা করে।

দুজনারই মুখে চাপদাড়ি, মাথায় পাগড়ি, পরনে দামী সুট।

গুলজার সিং–হরবন্স সিং।

দেবেশের গাড়িতে করে বের হয়ে গেল। কনট প্লেসে এসে ওরা গাড়ি ছেড়ে দিল। ড্রাইভারকে বলে দিল, রাত দশটার পর যেন সে গাড়ি নিয়ে রামস্বামীর গৃহের সামনে গিয়ে ওদের জন্য অপেক্ষা করে

ওখান থেকে একটা ট্যাক্সি নিল ওরা।

মন্ত্রী মশাইয়ের গৃহের সামনে যখন ওরা এসে পৌঁছাল রাত তখন প্রায় সাড়ে নটা।

বাংলোর সামনে প্রচুর গাড়ি দাঁড়িয়ে।

দোতলার হলঘরে পার্টির ব্যবস্থা হয়েছিল।

ওরা যখন ঘরে গিয়ে ঢুকল, মদের তখন যেন ফোয়ারা বয়ে চলেছে। প্রায় জনাত্রিশেক নানা বয়েসী পুরুষ ও নারী।

সব দেশের ডিপ্লোম্যাটরাই সেখানে ভিড় করেছে। ইউ. কে, আমেরিকা, ফরাসী, জার্মানী, যুগোশ্লাভিয়া, কানাডা, জাপান সব ফরেন অফিসের ডিপ্লোম্যাটরা এসেছে এবং সস্ত্রীক।

গুনগুন একটা গুঞ্জন চলেছে ঘরের মধ্যে।

সিগারেটের ধোঁয়ায় যেন একটা কুয়াশা জমেছে।

পূর্ব-পরিকল্পনা মত কিরীটী ও সুব্রত হলঘরের মধ্যে ঢুকে দুজনে দুদিকে ছড়িয়ে যায়।

রামস্বামীর দৃষ্টি সজাগ ছিল।

কিরীটীকে দেখতে পেয়ে রামস্বামী এগিয়ে এলেন, গুড ইভনিং মিঃ সিং!

গুড ইভনিং।

একজন বেয়ারা ট্রেতে করে হুইস্কি নিয়ে এলো।

কিরীটী একটা গ্লাস তুলে নিল!

আমার দিকে আপনি নজর দেবেন না মিঃ রামস্বামী–ইউ লুক আফটার ইয়োর গেস্ট।

রামস্বামী সরে গেলেন।

কিরীটী চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল। এবং সে চমকে উঠলো ভিড়ের মধ্যে শকুন্তলা অর্থাৎ মীনাক্ষীকে দেখে। শকুন্তলার পরিধানে আজ দামী সিফন, চোখে-মুখে উগ্র প্রসাধনের প্রলেপ।

সারা দেহে যৌবন যেন উপচে পড়ছে। রঞ্জিৎ কাপুরকে কিন্তু তাদের মধ্যে কোথাও দেখতে পেল না কিরীটী।

কিরীটী শকুন্তলার উপরে দৃষ্টি রাখে।

এক হাতে মদের গ্লাস, অন্য হাতে সিগারেট। বেশ স্বচ্ছন্দেই যেন ধূমপান করছে। শকুন্তলা।

হঠাৎ শকুন্তলার পাশে এসে দাঁড়াল রামস্বামীর সেক্রেটারী মিঃ সিং।

দুজনে কথা বলতে বলতে ঘরের এক কোণে এগুতে থাকে।

কিরীটী ওদের কাছাকাছি থাকবার চেষ্টা করে।

হঠাৎ কিরীটীর কানে এলো মিঃ সিং বলছেন শকুন্তলাকে, মিস খাতুন, কালই তাহলে আপনি চললেন হংকং?

ও ইয়েস!

মিস খাতুন।

মিস খাতুন! তাহলে ভদ্রমহিলা হিন্দু নন-মুসলিম।

কিরীটী কান খাড়া করে রাখে।

রাত সাড়ে দশটা নাগাদ হলে এসে ঢুকলো রঞ্জিৎ কাপুর ও গতরাত্রের সেই মহিলা অর্থাৎ ম্যাডাম।

রামস্বামীর সেক্রেটারী মিঃ সিং ওদের ঘরে ঢুকতে দেখে তাড়াতাড়ি এগিয়ে ওদের অভ্যর্থনা জানায়।

ভদ্রমহিলার এক হাতে একটা বড় ঘড়ি।

ঘড়িটা যেন সঙ্গে সঙ্গে কিরীটীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

একটু পরে কিরীটী দেখে সেই মহিলা ও শকুন্তলা ভিড়ের একপাশে দাঁড়িয়ে পরস্পরের সঙ্গে ফিসফিস করে কি যেন কথা বলছে।

পার্টি ভাঙলো প্রায় রাত দুটো নাগাদ।

একে একে গেস্টরা বিদায় নিতে থাকে।

কিরীটী একসময় রামস্বামীর সামনে এসে ফিসফিস করে বললে, একবার পাশের ঘরে চলুন মিঃ রামস্বামী, কয়েকটা কথা আছে।

রামস্বামী কিরীটীকে নিয়ে তার বেডরুমে গিয়ে ঢুকলেন।

কি কথা বলুন তো?

মিস খাতুনকে আপনি চেনেন?

ঐ মীনাক্ষী খাতুন! হ্যাঁ চিনি। কেন বলুন তো?

কতদিন থেকে ওঁকে চেনেন?

তা বছর দুই হবে।

কোথায় থাকেন উনি–কি করেন?

কি করেন ঠিক জানি না, তবে সব এমব্যাসিতেই ওঁর যাতায়াত আছে।

উনি কাল হংকং যাচ্ছেন।

তাই নাকি?

হ্যাঁ, আপনাকে একটা সংবাদ নিতে হবে। কাল সকালে যেসব ইন্টারন্যাশানাল প্লেন ছাড়ছে তার মধ্যে কো-কোটা হংকং টাচ করবে!

ঠিক আছে।

যদি পারেন তো আজ রাত্রে সংবাদটা আমাকে জানাবেন।

জানাবো।

ভোর চারটে নাগাদ টেলিফোন বেজে উঠলো।

কিরীটী জেগেই ছিল। উঠে গিয়ে ফোনটা ধরলো।

রামস্বামী স্পিকিং। মিঃ রায়!

হ্যাঁ আমিই—বলুন।

একটা থাই প্লেন কাল সকাল সাড়ে নটায় ছাড়ছে, সেট হংকং টাচ করবে।

আর কোন প্লেন?

না।

ঠিক আছে। আপনার ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চের অফিসারকে বলবেন, তিনি যেন প্রস্তুত হয়ে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ পালাম এয়ারপোর্টে উপস্থিত থাকেন।

চতুর্বেদীকে তো আপনি চেনেন।

হ্যাঁ।

তাঁকেই বলবো থাকতে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *