কেল্লায় প্রবেশ করিয়া
কেল্লায় প্রবেশ করিয়া বাঁহাতি যে রাস্তাটা গঙ্গার দিকে গিয়াছে, তাহারি শেষ প্ৰান্তে কৈলাসবাবুর বাড়ি। স্থানটি বেশ নির্জন। অনুচ্চ প্রাচীর-ঘেরা বাগানের চারিদিকে কয়েকটি ঝাউ ও দেবদারু গাছ, মাঝখানে ক্ষুদ্র দ্বিতল বাড়ি। বৈকুণ্ঠবাবুকে যে ব্যক্তি খুন করিয়াছিল, বাড়িটির অবস্থিতি দেখিয়া মনে হয় ধরা পড়িবার ভয়ে তাহাকে বিশেষ দুশ্চিন্তাগ্ৰস্ত হইতে হয় নাই।
বরদাবাবু আমাদের লইয়া একেবারে উপরতলায় কৈলাসবাবুর শয়নকক্ষে উপস্থিত হইলেন। ঘরটি সম্পূর্ণ নিরাভরণ; মধ্যস্থলে একটি লোহার খাট বিরাজ করিতেছে এবং সেই খাটের উপর পিঠে বালিশ দিয়া কৈলাসবাবু বসিয়া আছেন।
একজন ভৃত্য কয়েকটা চেয়ার আনিয়া ঘরের আলো জ্বালিয়া দিয়া প্রস্থান করিল। ছাদ হইতে ঝুলানো কেরাসিন ল্যাম্পের আলোয় প্রায়ান্ধকার ঘরের ধূসর অবসন্নতা কিয়ৎ পরিমাণে দূর হইল। মুঙ্গেরে তখনো বিদ্যুৎ-বিভার আবির্ভাব হয় নাই।
কৈলাসবাবুর চেহারা দেখিয়া তিনি রুগ্ন এ বিষয়ে সংশয় থাকে না। তাঁহার রং বেশ ফিসার্চ কিন্তু রোগের প্রভাবে মোমের মত একটা অর্ধ-স্বচ্ছ পাণ্ডুরতা মুখের বর্ণকে যেন নিষ্প্রাণ করিয়া দিয়াছে। মুখে সামান্য ছাঁটা দাড়ি আছে, তাহাতে মুখের শীর্ণতা যেন আরো পরিস্ফুট। চোখের দৃষ্টিতে অশান্ত অনুযোগ উকিঝুকি মারিতেছে, কণ্ঠস্বরও দীর্ঘ রোগভোগের ফলে একটা অপ্রসন্ন তীক্ষ্ণতা লাভ করিয়াছে।
পরিচয় আদান-প্ৰদান শেষ হইলে আমরা উপবেশন করিলাম; ব্যোমকেশ জানালার কাছে গিয়া দাঁড়াইল। ঘরের ঐ একটিমাত্র জানালা-পশ্চিমমুখী; নীচে বাগান। দেবদারু গাছের ফাঁকে ফাঁকে দূরে গঙ্গার স্রোত-রেখা দেখা যায়। এদিকে আর লোকালয় নাই, বাগানের পাঁচল পার হইয়াই গঙ্গার চড়া আরম্ভ হইয়াছে।
ব্যোমকেশ বাহিরের দিকে উঁকি মারিয়া বলিল, ‘জানালাটা মাটি থেকে প্রায় পনের হাত উঁচু। আশ্চর্য বটে।’ তারপর ঘরের চারিপাশে কৌতুহলী দৃষ্টি হানিতে হানিতে চেয়ারে আসিয়া বসিল।
কিছুক্ষণ কৈলাসবাবুর সঙ্গে ভৌতিক ব্যাপার সম্বন্ধে আলোচনা হইল; নূতন কিছুই প্রকাশ পাইল না। কিন্তু দেখিলাম কৈলাসবাবু লোকটি অসাধারণ একগুঁয়ে। ভৌতিক কাণ্ড তিনি অবিশ্বাস করেন না; বিলক্ষণ ভয় পাইয়াছেন তাহাও তাঁহার কথার ভাবে প্ৰকাশ পাইল। কিন্তু তবু কোনোক্রমেই এই হানাবাড়ি পরিত্যাগ করিবেন না। ডাক্তার তাঁহার হৃদযন্ত্রের অবস্থা বিবেচনা করিয়া এবাড়ি ত্যাগ করিবার উপদেশ দিতেছেন, তাঁহার সহচরেরাও ভীত হইয়া মিনতি করিতেছে, কিন্তু তিনি রুগ্ন শিশুর মত অহেতুক জিদ ধরিয়া এই বাড়ি কামড়াইয়া পড়িয়া আছেন। কিছুঁতেই এখান হইতে নড়িবেন না।
হঠাৎ কৈলাসবাবু একটা আশ্চর্য কথা বলিয়া আমাদের চমকিত করিয়া দিলেন। তাঁহার স্বভাবসিদ্ধ খিটখিটে স্বরে বলিলেন, ‘সবাই আমাকে এবাড়ি ছেড়ে দিতে বলছে। আরো বাপু্, বাড়ি ছাড়লে কি হবে–আমি যেখানে যাব, সেখানেই যে এই ব্যাপার হবে। এসব অলৌকিক কাণ্ড কোন ঘটছে তা তো আর কেউ জানে না; সে কেবল আমি জানি। আপনারা ভাবছেন, কোথাকার কোন বৈকুণ্ঠবাবুর প্ৰেতাত্মা এখানে আনাগোনা করছে। মোটেই তা নয়-এর ভেতর অন্য কথা আছে।’
উৎসুকভাবে জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘কি রকম?
‘বৈকুণ্ঠ-ফৈকুণ্ঠ সব বাজে কথা—এ হচ্ছে পিশাচ। আমার গুণধর পুত্রের কীর্তি।’
‘সে কি!’
কৈলাসবাবুর মোমের মত গণ্ডে ঈষৎ রক্ত সঞ্চার হইল, তিনি সোজা হইয়া বসিয়া উত্তেজিত কণ্ঠে বলিলেন, ‘হ্যাঁ, লক্ষ্মীছাড়া একেবারে উচ্ছন্নে গেছে। ভদ্রলোকের ছেলে, জমিদারের একমাত্র বংশধর-পিশাচসিদ্ধ হতে চায়! শুনেছেন কখনো? হতভাগাকে আমি ত্যাজ্যপুত্ৰ করেছি, তাই আমার ওপর রিষ। তার একটা মহাপাষণ্ড গুরু জুটেছে, শুনেছি, শ্মশানে বসে বসে মড়ার খুলিতে করে মদ খায়। একদিন আমার ভদ্রাসনে চড়াও হয়েছিল; আমি দরোয়ান দিয়ে চাবকে বার করে দিয়েছিলুম। তাই দু’জনে মিলে ষড় করে আমার পিছনে পিশাচ লেলিয়ে দিয়েছে।’
‘কিন্তু—’
‘কুলাঙ্গার সন্তান–তার মতলবটা বুঝতে পারছেন না? আমার বুকের ব্যামো আছে, পিশাচ দেখে আমি যদি হার্টফেল করে মরি–ব্যস! মাণিক আমার নিষ্কণ্টকে প্রেতসিদ্ধ শুরুকে নিয়ে বিষয় ভোগ করবেন।’ কৈলাসবাবু তিক্তকণ্ঠে হাসিলেন; তারপর সহসা জানালার দিকে তাকাইয়া বিস্ফারিত চক্ষে বলিয়া উঠিলেন, ‘ঐ-ঐ—’
আমরা জানালার দিকে পিছন ফিরিয়া কৈলাসবাবুর কথা শুনিতেছিলাম, বিদ্যুদ্বেগে জানালার দিকে ফিরিলাম। যাহা দেখিলাম–তাহাতে বুকের রক্ত হিম হইয়া যাওয়া বিচিত্র নয়। বাহিরে তখন অন্ধকার হইয়া গিয়াছে; ঘরের অনুজ্জ্বল কেরাসিন ল্যাম্পের আলোকে দেখিলাম, জানালার কালো ফ্রেমে আটা একটা বীভৎস মুখ। অস্থিসার মুখের বর্ণ পাণ্ডুপীত, অধরোষ্ঠের ফাঁকে কয়েকটা পীতবর্ণ দাঁত বাহির হইয়া আছে; কালিমা-বেষ্টিত চক্ষুকোটর হইতে দুইটা ক্ষুধিত হিংস্র। চোখের পৈশাচিক দৃষ্টি যেন ঘরের অভ্যন্তরটাকে গ্ৰাস করিবার চেষ্টা করিতেছে।
মুহুর্তের জন্য নিশ্চল পক্ষাহত হইয়া গেলাম। তারপর ব্যোমকেশ দুই লাফে জানালার সম্মুখীন হইল। কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর মুখ তখন অদৃশ্য হইয়াছে।
আমিও ছুটিয়া বোমকেশের পাশে গিয়া দাঁড়াইলাম। বাহিরের অন্ধকারে দৃষ্টি প্রেরণ করিয়া মনে হইল যেন দেবদারু গাছের ঘন ছায়ার ভিতর দিয়া একটা শীর্ণ অতি দীর্ঘ মূর্তি শূন্যে মিলাইয়া গেল।
ব্যোমকেশ দেশলাই জ্বালিয়া জানালার বাহিরে ধরিল। গলা বাড়াইয়া দেখিলাম নীচে মই বা তজাতীয় আরোহণী কিছুই নাই। এমন কি, মানুষ দাঁড়াইতে পারে এমন কাৰ্ণিশ পর্যন্ত দেয়ালে নাই।
ব্যোমকেশের কাঠি নিঃশেষ হইয়া নিবিয়া গেল। সে ধীরে ধীরে ফিরিয়া আসিয়া চেয়ারে বসিল।
বরদাবাবু বসিয়াছিলেন, উঠেন নাই। এখন ব্যোমকেশের দিকে ফিরিয়া কহিলেন, ‘দেখলেন?’
‘দেখলুম।’
বরদাবাবু গভীরভাবে একটু হাসিলেন, তাঁহার চোখে গোপন বিজয়গর্ব স্পষ্ট হইয়া উঠিল। জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘কি রকম মনে হল?’
কৈলাসবাবু জবাব দিলেন। তিনি বালিশে ঠেস দিয়া প্ৰায় শুইয়া পড়িয়াছিলেন, হতাশামিশ্রিত স্বরে বলিয়া উঠিলেন, ‘কি আর মনে হবে–এ পিশাচ। আমাকে না নিয়ে ছাড়বে না। ব্যোমকেশবাবু্, আমার যাবার সময় ঘনিয়ে এসেছে। পিশাচের হাত থেকে কেউ কখনো উদ্ধার পেয়েছে শুনেছেন কি?’ তাঁহার ভয়বিশীর্ণ মুখের পানে চাহিয়া আমার মনে হইল, সত্যিই ইহার সময় আসন্ন হইয়াছে, দুর্বল হৃদযন্ত্রের উপর এরূপ স্নায়ুবিক ধাক্কা সহ্য করিতে পরিবেন না।
ব্যোমকেশ শাস্তস্বরে বলিল, ‘দেখুন, ভয়টাই মানুষের সবচেয়ে বড় শত্ৰু-প্ৰেত-পিশাচ নয়। আমি বলি, বাড়িটা না হয় ছেড়েই দিন না।’
বরদাবাবু বলিলেন, ‘আমিও তাই বলি। আমার বিশ্বাস, এ বাড়িতে দোষ লেগেছে-পিশাচ-টিশাচ নয়। বৈকুণ্ঠবাবুর অপঘাত মৃত্যুর পর থেকে–’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘পিশাচই হোক আর বৈকুণ্ঠবাবুই হোন—মোট কথা, কৈলাসবাবুর শরীরের যে রকম অবস্থা তাতে হঠাৎ ভয় পাওয়া ওঁর পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়। অতএব এ বাড়ি ছাড়াই কর্তব্য।’
‘আমি বাড়ি ছাড়ব না।’ কৈলাসবাবুর মুখে একটা অন্ধ একগুয়েমি দেখা দিলে—‘কেন বাড়ি ছাড়ব? কি করেছি। আমি যে অপরাধীর মত পালিয়ে বেড়াব? আমার নিজের ছেলে যদি আমার মৃত্যু চায়-বেশ, আমি মরব। পিতৃহত্যার পাপকে যে কুসন্তানের ভয় নেই, তার বাপ হয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাই না।’
অভিমান ও জিদের বিরুদ্ধে তর্ক করা বৃথা। রাত্রি হইয়াছিল। আমরা উঠিলাম। পরদিন প্ৰাতে আবার আসিবার আশ্বাস দিয়া নীচে নামিয়া গেলাম।
পথে কোনো কথা হইল না। বরদাবাবু দু-একবার কথা বলিবার উদ্যোগ করিলেন। কিন্তু ব্যোমকেশ তাহা শুনিতে পাইল না। বরদাবাবু আমাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাইয়া দিয়া গেলেন।
দুইতিমধ্যে বাড়ি ফিরিয়াছিলেন, আমরা বসিবার ঘরে প্রবেশ করতেই বললেন, কি হে, কি হ’ল?’
ব্যোমকেশ একটা আরাম-কেদারায় শুইয়া পড়িয়া উৰ্ধৰ্বমুখে বলিল, ‘প্রেতের আবির্ভাব হল।’ তাহার পর দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়িয়া কতকটা যেন আত্মগতভাবেই বলিল, ‘কিন্তু বরদাবাবুর প্রেত এবং কৈলাসবাবুর পিশাচ মিলে ব্যাপারটা ক্রমেই বুড় জটিল করে তুলেছে।’
পরদিন রবিবার ছিল। প্ৰাতঃকালে উঠিয়া ব্যোমকেশ শশাঙ্কবাবুকে বলিল, ‘চল, কৈলাসবাবুর বাড়িটা ঘুরে আসা যাক।’
শশাঙ্কবাবু বলিলেন, ‘আবার ভূত দেখতে চাও নাকি? কিন্তু দিনের বেলা গিয়ে লাভ কি? রাত্রি ছাড়া তো অশরীরীর দর্শন পাওয়া যায় না।’
‘কিন্তু যা অশরীরী নয়–অৰ্থাৎ বস্তু—তার তো দর্শন পাওয়া যেতে পারে।’
‘বেশ, চল।’
সাতটা বাজিতে না বাজিতে উদ্দিষ্ট স্থানে পৌঁছিলাম। কৈলাসবাবুর বাড়ি তখনো সম্পূর্ণ জাগে নাই। একটা চাকর নিদ্ৰালুভাবে নীচের বারান্দা ঝাঁট দিতেছে; উপরে গৃহস্বামীর কক্ষে দরজা জানালা বন্ধ। ব্যোমকেশ বলিল, ক্ষতি নেই। বাগানটা ততক্ষণ ঘুরে ফিরে দেখি এস।’
শিশির ভেজা ঘাসে সমস্ত বাগানটি আন্তীর্ণ। সোনালী রৌদ্রে দেওদারের চুনট-করা পাতা জরির মত ঝলমল করিতেছে। চারিদিকে শারদ প্রাতের অপূর্ব পরিচ্ছন্নতা। আমরা ইতস্তত ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলাম।
বাগানটি পরিসরে বিঘা চারেকের কম হইবে না। কিন্তু ফুলবাগান বলিয়া কিছু নাই। এখানে সেখানে গোটা-কতক দোপাটি ও করবীর ঝাড় নিতান্ত অনাদৃতভাবে ফুল ফুটাইয়া রহিয়াছে। মালী নাই, বোধকরি বৈকুণ্ঠবাবুর আমলেও ছিল না। আগাছার জঙ্গল বৃদ্ধি পাইলে সম্ভবত বাড়ির চাকরেরাই কাটিয়া ফেলিয়া দেয়।
তাহার পরিচয় বাগানের পশ্চিমদিকে এক প্ৰান্তে পাইলাম। দেয়ালের কোণ ঘোষিয়া আবর্জনা জমা হইয়া আছে। উনানের ছাঁই, কাঠ-কুটা, ছেড়া কাগজ, বাড়ির জঞ্জাল-সমস্তই এইখানে ফেলা হয়। বহুকালের সঞ্চিত জঞ্জাল রৌদ্রে বৃষ্টিতে জমাট বাঁধিয়া স্থানটাকে স্বকীত করিয়া তুলিয়াছে।
এই আবর্জনার গাদার উপর উঠিয়া ব্যোমকেশ অনুসন্ধিৎসুভাবে এদিক-ওদিক তাকাইতে লাগিল। জুতা দিয়া ছাই-মাটি সরাইয়া দেখিতে লাগিল। একবার একটা পুরানো টিনের কোটা তুলিয়া লইয়া ভাল করিয়া পরীক্ষা করিয়া আবার ফেলিয়া দিল। শশাঙ্কবাবু তাহার রকম দেখিয়া বলিলেন, ‘কি হে, ছাইগাদার মধ্যে কি খুঁজছ?’
ব্যোমকেশ ছাইগাদা হইতে চোখ না তুলিয়াই বলিল, ‘আমাদের প্রাচীন কবি বলেছেন-যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ। তাই, পাইলে পাইতে পার-এটা কি?’
একটা চিড়্ধরা পরিত্যক্ত লণ্ঠনের চিমনি পড়িয়াছিল; সেটা তুলিয়া লইয়া ব্যোমকেশ তাহার খোলের ভিতর দেখিতে লাগিল। তারপর সম্ভার্পণে তাহার ভিতর আঙুল ঢুকাইয়া একখণ্ড জীর্ণ কাগজ বাহির করিয়া আনিল। সম্ভবত বায়ুতাড়িত হইয়া কাগজের টুকরাটা চিমনির মধ্যে আশ্রয় লইয়াছিল; তারপর দীর্ঘকাল সেইখানে রহিয়া গিয়াছে। ব্যোমকেশ চিমনি ফেলিয়া দিয়া কাগজখানা নিবিষ্টচিত্তে দেখিতে লাগিল। আমিও উৎসুক হইয়া তাহার পাশে গিয়া দাঁড়াইলাম।
কাগজখানা একটা ছাপা ইস্তহারের অর্ধাংশ; তাহাতে কয়েকটা অস্পষ্ট জন্তু জানোয়ারের ছবি রহিয়াছে মনে হইল। জল-বৃষ্টিতে কাগজের রং ব্বিৰ্ণ হইয়া গিয়াছে, ছাপার কালিও এমন অস্পষ্ট হইয়া পড়িয়াছে যে পাঠোদ্ধার দুঃসাধ্য।
শশাঙ্কবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘কি দেখছি হে? ওতে কি আছে?’
‘কিছু না।’ ব্যোমকেশ কাগজখানা উল্টাইয়া তারপর চোখের কাছে আনিয়া ভাল করিয়া দেখিয়া বলিল, হাতের লেখা রয়েছে। দ্যাখ তো পড়তে পার কিনা।’ বলিয়া কাগজ আমার হাতে দিল।
অনেকক্ষণ ধরিয়া পরীক্ষা করিলাম। হাতের লেখা যে আছে তাহা প্রথমটা ধরাই যায় না। কালির চিহ্ন বিন্দুমাত্র নাই, কেবল মাঝে মাঝে কলমের আঁচড়ের দাগ দেখিয়া দুএকটা শব্দ অনুমান করা যায়—
বিপদে…… হাতে টাক…
বাবা….. নচেৎ ….. মরীয়া
…তোমার স্বাথী…
ব্যোমকেশকে আমার পাঠ জানাইলাম। সে বলিল, ‘হ্যাঁ, আমারও তাই মনে হচ্ছে। কাগজটা থাক।’ বলিয়া ভাঁজ করিয়া পকেটে রাখিল।
আমি বলিলাম, ‘লেখক বোধ হয় খুব শিক্ষিত নয়–বানান ভুল করেছে। ‘স্বাথী’ লিখেছে।’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘শব্দটা ‘স্বাধী নাও হতে পারে।’
শশাঙ্কবাবু ঈষৎ অধীরকণ্ঠে বলিলেন, “চল চল, আস্তাকুড় ঘেঁটে লাভ নেই। এতক্ষণে বোধহয় কৈলাসবাবু উঠেছেন।’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘হ্যাঁ, ঐ যে তাঁর ভৌতিক জানালা খোলা দেখছি। চল।’