Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বেসুরো বেহালার পরের কাহিনি || Sujan Dasgupta » Page 5

বেসুরো বেহালার পরের কাহিনি || Sujan Dasgupta

চারটে নাগাদ আঙ্কল-আন্টির বাড়িতে ঢুকতেই হলওয়েতে আঙ্কলের সঙ্গে দেখা। অচেনা একজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। আমাদের দেখে এগিয়ে এলেন।

“এসো এসো, তোমাদের আন্টি চিন্তা করছিল ভেনু পালটে যাবার খবরটা পেয়েছিলে কিনা।”

“না না, প্রীতম জানিয়ে দিয়েছিল।”

প্রমথর হাতে বিয়ের উপহারটা ছিল। আগের বার আসেনি বলে উপহার কেনা ও আনার দায়িত্ব প্রমথর ঘাড়ে চাপানো হয়েছিল। বাক্সটা সাইজে বড় এবং ভারী। যে প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা ছিল, সেটা আবার ছিঁড়ে গেছে। প্রমথ হিমিসিম খাচ্ছিল। সেই অবস্থাতেই প্রমথর সঙ্গে আঙ্কলের পরিচয় করিয়ে দিলাম।

“বাঃ, খুশি হয়েছি তুমি এসেছো।” প্রমথর অবস্থা দেখে হলওয়ের একদিকে একটা বড়সড় টেবিল দেখিয়ে আঙ্কল বললেন সেখানে রাখতে।

ওডিনের গিফটটা আঙ্কলকে দিয়ে বললাম, “এটা আমার এক অ্যাসিস্টেন্ট ওডিন আপনাকে দিতে বলেছে। ওর আঙ্কল আর আন্টি আপনার কোম্পানিতে কাজ করত। তারা এটা আপনাকে পাঠিয়েছে।”

আঙ্কল একটু বিস্মিত হয়ে প্যাকেটটা নিলেন। চিরকুট পড়ে নামটা চিনেছেন বলে মনে হল না।

“ডাকনাম বললে চিনবেন ওডিন বলেছিল, কিন্তু তাড়াহুড়োতে সেটা লিখতেই ভুলে গেছে!”

“হতে পারে। তোমার অ্যাসিস্টেন্টকে আমার ধন্যবাদ জানিয়ে দিও। পরে তোমাকে একটা থ্যাঙ্ক ইউ নোট পাঠিয়ে দেব। ঠিক জায়গায় পৌঁছে দিও।”

“নিশ্চয় আঙ্কল।”

“ভালো কথা, তুমি যে বল্লরীকে পড়িয়েছিলে আমি জানতাম না। কালকেই শুনলাম, গুড।”

বল্লরী একটা টার্ম পেপার নিয়ে হিমসীম খাচ্ছিল। তখন প্রীতম ওকে নিয়ে আমার অফিসে এসেছিল। খুব অল্পই সাহায্য করেছিলাম। সেটাই কারো কাছে শুনে বোধহয় আঙ্কলের ধারণা হয়েছে আমি বল্লরীকে পড়িয়েছি! এই ভ্রান্ত ধারণাটা ভাঙার সুযোগ পেলাম না। কিছু বলার আগেই এলিভেটরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে বললেন, আমাদের টেরাসে নিয়ে যেতে।

ডাইনিং রুমের টেরাসে ককটেল ও স্ন্যাকস-এর বন্দোবস্ত। সেখানে অনেকগুলো টেবিল আর চেয়ার সাজানো। তারই একটা দখল করে আমরা বসলাম। আর একজন সেখানে বসে ছিল, ধোপ-দুরস্ত পোশাক, আমাদেরই মতো বয়স। চেহারাটা চেনা চেনা লাগল, কিন্তু কোথায় আগে দেখেছি মনে করতে পারলাম না। হ্যালো’ বলে উনিই আলাপ সুরু করলেন। নাম অমল মিত্র। নিজের পরিচয় দিলেন ক্যাম্পর ইন্ডাস্ট্রির সেলস ডিপার্টমেন্টের এক্সিকিউটিভ বলে। আমরা সবাই নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত শুনে বললেন, উনিও এদেশে এসে প্রথমে ভেবেছিলেন গ্র্যাজুয়েট স্কুলে যাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়ে ওঠেনি।

“তাতে খুব ক্ষতি হয়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না!”

প্রমথর এটা বলার কোনও দরকার ছিল না। এমনিতেই ও ডিপ্লোমেসির ধার ধারে না, তার ওপর এতটা পথ ভারী গিফট বইতে হয়েছে, মেজাজটা প্রসন্ন ছিল না। টেরাসে ঢুকে মেজাজটা আরও বিগড়েছে। এটা যে এত ফর্মাল ব্যাপার আমরা কেউই বুঝিনি। সবাই দামি স্যুটবুট পরা, আমরাই শুধু হংস মধ্যে বক যথা। সাধারণ সার্ট আর প্যান্ট। একেনবাবুর পোষাকের বিবরণ না দেওয়াই ভালো।

আমাদের পরিচয়টা জানার পর অমল মিত্র দেখলাম জানার চেষ্টা করছেন, আমরা কার আমন্ত্রণে এখানে এসেছি। সরাসরি প্রশ্ন নয়, নানান অ্যাঙ্গেল থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। বুঝতে পারছিলাম প্রমথ তাতে আরও চটছে। তাই বেশি প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে কানেকশনটা বলে দিলাম। সেটা শুনে অমল মিত্র উঠে কোথায় জানি গেলেন।

.

প্রীতম আর ওর নববধূ মল্লিকা সবাইকে অপ্যায়ন করছে। মল্লিকাকে আমরা বিয়ের আগে থেকেই চিনি। অক্সফোর্ড থেকে বি এ পাশ করে এখন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে ল’ পড়ছে। খুব হাসিখুশি মিষ্টি মেয়ে। ইংল্যান্ডে জন্মেছে বলে ব্রিটিশ অ্যাকসেন্টে কথা বলে। ‘শেইম’ বলে না, বলে ‘শাইম’। র-এর উচ্চারণ প্রায় শোনাই যায় না, গার্ল, ফার্স্ট–এইসব কথাতে।

প্রীতমের মামাতো বোন বল্লরীও ফুরফুর করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দীর্ঘাঙ্গি, ঢলঢলে মুখ। টানা উজ্জ্বল চোখ। দু’কাঁধ বেয়ে নেমে আসা লম্বা ঘন চুল, সচ্ছন্দে শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন দেওয়ার মতো। এমনিতেই সুন্দর দেখতে, আজকে একটু বেশী সাজায় স্টানিং লাগছে। শাড়িটাই শুধু একটু– কোথায় জানি শুনেছিলাম কথাটা, ঝাল্লা মাড়োয়াড়ি ওভার-ব্রাইট টাইপের। ওর সঙ্গে ঘুরছে গুচি’র ডেনিম জিন-জ্যাকেট পরা একটা হলিউডি চেহারা। চকচকে মুখ, খোঁচা খোঁচা দাড়ি, আর ব্যাকব্রাশ করা জেল-মাখা চুল। গলায় রুপোর চেন, বুক-খোলা লাল রঙের সার্টের মাঝখানে সেটা চকচক করছে। হাতে রুপোর ব্রেসলেট। ছেলেটাকে আগে দেখিনি। বল্লরী যখন আমাদের টেবিলে ‘হ্যালো’ বলতে এল, তখন পরিচয় করিয়ে দিল। ওর বন্ধু বিপ্লব।

ইতিমধ্যে অমল মিত্র ফিরে এসেছেন। দেখলাম বল্লরীকে ভালো করেই চেনেন, বিপ্লবকেও। ওরা চলে যেতে নিজের থেকেই জানালেন ম্যানহাটানে বিপ্লবের বাবার একটামিউজিক্যাল ইনস্ট্রমেন্টের স্পেশালিটি স্টোর আছে। বিপ্লবের আগে একটা ব্যান্ড ছিল। সেখানে সুবিধা না করতে পেরে এখন মডেলিং করছে। কথার সুরেই বুঝলাম বিপ্লবকে খুব একটা পছন্দ করেন না।

কিছু কিছু লোক আছেন যাঁরা গল্প করতে ভালোবাসেন। অমল নিঃসন্দেহে তাঁদের একজন। ওঁরা তিন পুরুষ আফ্রিকায় সেটল্ড। ঠাকুরদা যে প্রীতমের দাদুর উকিল ছিলেন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে জেনে গেলাম! সেই সূত্রেই প্রীতমের পরিবারের সঙ্গে পরিচয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইংল্যান্ডেও গিয়েছিলেন। সেখানে কী হল না হল জানানোর কোনও দরকার ছিল না.. কান একেবারে ঝালাপালা! সত্যিকথা বলতে কি, কী করে এই বক্কেশ্বরকে টেবিল থেকে ভাগাব, সেটাই ভাবছিলাম। ভাগ্যক্রমে একটু বাদেই আন্টি এসে অমলকে ডেকে নিয়ে গেলেন কী একটা কাজ করানোর জন্যে। অমল চলে যেতেই প্রমথ আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল, “হ্যাঁরে, বিপ্লবকে হটিয়ে তুই ফিল্ডে নেম পড় না! বল্লরীর মতো বউ পাবি, আর বিশাল রাজত্ব।”

ভাগ্যিস কেউ শুনতে পায় নি, রাস্কেল একটা! কিন্তু তাতে কি নিস্তার আছে! একেনবাবু ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন, “কী গোপন কথা হচ্ছে স্যার?”

প্রমথ অম্লান বদনে বলল, “বাপিকে একটু সেল করানোর চেষ্টা করছি।” আমি বললাম, “শাট আপ! তুই নিজে আগে সে হ।”

“একটু বুঝিয়ে বলুন স্যার, কী নিয়ে সে?”

“ওর কথায় কান দেবেন না একেনবাবু, প্রমথ বাজে বকছে।”

“কী যে বলেন স্যার, প্রমথবাবু কখনও বাজে বকেন না।”

একেনবাবুর একটা অনুসন্ধিৎসা জাগলে, সেটা না মেটা পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবেন না। ঘ্যানঘ্যান করে মারবেন আর তখন বিশ্বশুদ্ধ লোক আমাদের দিকে তাকিয়ে বোঝবার চেষ্টা করবে কী ঘটেছে! সেটা বন্ধ করার জন্যেই একেনবাবুকে কানে কানে প্রমথর স্টুপিড মন্তব্যটা শুনিয়ে দিলাম।

একেনবাবু মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, “এটা প্রমথবাবু ভালো বলেছেন। হলে তো খুবই ভালো হত স্যার।”

“দুম করে কথাটা বলে দিলেন? তাহলে বেভ ম্যাডামের কী হত?”

বেভের পরিচয় আগেই দিয়েছি, আমাদের ডিপার্টমেন্টের কাজ করে, অফিস অ্যাসিস্টেন্ট। আমাকে পছন্দ করে, আমিও করি। তার বেশি কিছু নয়। প্রমথ সেটাকেই তিল থেকে তাল করে আমাকে হেনস্তা করার জন্য। একেনবাবুও মাঝে মাঝে সায় দেবার চেষ্টা করেন।

“তাও তো বটে স্যার।”

“ব্যাস, এ নিয়ে আর কোনও কথা নয়!” আমি ধমক লাগালাম।

এর মধ্যে দুটো ছেলে এসে একসঙ্গে বৃটিশ উচ্চারণে জিজ্ঞেস করল, “তোমরা কে?”

বোধহয় যমজ, বয়স বড় জোর দশ এগারো হবে। বোঝা যায় বেশ বজ্জাত। উত্তর দিলাম, “আমরা ব্রাইডগ্রুমের বন্ধু, তোমরা কে?”

“আমরা?” হা হা করতে করতে পালাল, আর কাউকে জ্বালাতে!

“নিশ্চয়, প্রীতমের মামা বাড়ির কেউ হবে। বজ্জাত দ্য গ্রেট!” একেনবাবু আর প্রমথকে বললাম।

প্রমথ কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। সময়ে আমাদের পাশের টেবিল থেকে ড্রিংকস-ভর্তি একটা গ্লাস ফেলে দিয়ে ছোঁড়াদুটো আবার পালাল।

“আরে, আরে!” সবার মনোযোগ সেদিকে গেল। কাঁচের কয়েকটা টুকরো ছিটকে এসে আমার জুতোর ওপরেও পড়েছিল। দাঁড়িয়ে উঠে প্যান্টটা আর জুতোটা একটু ঝাঁকিয়ে টেবিল থেকে সরে এলাম। কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটা ব্রাশ, হ্যাণ্ড-ভ্যাকুয়াম ক্লিনার নিয়ে পরিষ্কার করার লোক এসে হাজির। বাঁচা গেল!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *