Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সপ্তম উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! শ্রবণ কর,

চম্পা নগরে চন্দ্ৰাপীড় নামে নরপতি ছিলেন। তাঁহার সুলোচনা নামে ভাৰ্যা ও ত্ৰিভুবনসুন্দরী নামে পরম সুন্দরী কন্যা ছিল। কন্যা কালক্রমে বিবাহযোগ্যা হইলে, রাজা উপযুক্ত পাত্রের নিমিত্ত অতিশয় চিন্তিত হইলেন। নানাদেশীয় রাজারা ক্রমে ক্রমে অবগত হইলেন, রাজা চন্দ্রাপীড়ের এক পরম সুন্দরী কন্যা আছে; তদীয় রূপলাবণ্যের মাধুরী দর্শনে, মুনিজনেরও মন মোহিত হয়। তাঁহারা সকলেই, বিবাহপ্রার্থনায়, নিপুণতার চিত্রকর দ্বারা স্ব স্ব প্রতিমূৰ্তি চিত্রিত করাইয়া, চন্দ্ৰাপীড়ের নিকট পাঠাইতে লাগিলেন। রাজা, মনোনীত করিবার নিমিত্ত, সেই সকল চিত্ৰ কন্যার নিকটে উপনীত করিতে লাগিলেন। কিন্তু, কাহারও ছবি তাহার মনোনীত হইল। না। তখন রাজা কন্যার স্বয়ংবরের আদেশ দিলেন। সে তাহাতে অসম্মতা হইয়া কহিল, তাত! স্বয়ংবর বৃথা আড়ম্বর মাত্র; তাহাতে আমার প্রয়োজন নাই। যে ব্যক্তি বিদ্যা, বুদ্ধি, বিক্ৰম, এই তিনে অসাধারণ হইবেক, আমি তাহাকেই পতিত্বে পরিগৃহীত করিব

কিয়ৎ দিন পরে, দেশান্তর হইতে, চারি বর উপস্থিত হইল। রাজা তাহাদিগকে স্ব স্ব গুণের পরিচয় দিতে বলিলেন। তন্মধ্যে এক ব্যক্তি কহিল, মহারাজ! আমি বাল্যকাল অবধি, বহু যত্নে ও বহু পরিশ্রমে, নানা বিদ্যায় নিপুণ হইয়াছি; আর, আমার এক অসাধারণ গুণ এই যে, প্ৰতিদিন, একখানি মনোহর বস্ত্ৰ প্ৰস্তুত করিয়া, পাঁচ রত্ন মূল্যে বিক্রয় করি। তাহার মধ্যে, সর্বাগ্রে এক রত্ন ব্ৰাহ্মণহন্তে সমর্পণ করি; দ্বিতীয় দেবসাৎ করিয়া, তৃতীয় আপন অঙ্গে ধারণ করি; চতুর্থ ভাবী ভাৰ্যার নিমিত্ত রাখিয়া, পঞ্চম দ্বারা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যয়ের নির্বাহ করিয়া থাকি। এই গুণ আমাভিন্ন অন্য কোনও ব্যক্তির নাই। আর আমার রূপের পরিচয় দিবার আবশ্যকতা কি; মহারাজ স্বচক্ষে প্ৰত্যক্ষ করিতেছেন। দ্বিতীয় কহিল, আমি, জলচর, স্থলচর, সমস্ত পশুপক্ষীর ভাষা জানি; আমার সমান বলবান ত্ৰিভুবনে আর কোনও ব্যক্তি নাই; আর, আমার আকার আপনকার সমক্ষেই উপস্থিত রহিয়াছে। তৃতীয় কহিল, আমি শাস্ত্রে অদ্বিতীয়; আমার সৌন্দৰ্য সাক্ষাৎ দেখিতেছেন, আপন মুখে বর্ণন করিয়া, নির্লজ্জ হইবার প্রয়োজন কি। চতুর্থ কহিল, আমি শস্ত্রবিদ্যায় অদ্বিতীয়, শব্দবেধী শর নিক্ষিপ্ত করিতে পারি; আর, আমার রূপলাবণ্যের বিষয় সর্বত্ৰ প্ৰসিদ্ধ আছে, এবং আপনিও স্বচক্ষে দেখিতেছেন।

এইরূপে, ক্ৰমে ক্ৰমে, চারি জনের রূপ, গুণ, ও বিদ্যার পরিচয় লইয়া, রাজা মনে মনে বিবেচনা করিতে লাগিলেন, চারি জনকেই রূপে, গুণে, ও বিদ্যায় অসাধারণ দেখিতেছি, কাহাকে কন্যা দান করি। অনন্তর, ত্ৰিভুবনসুন্দরীর নিকটে গিয়া, চারিজনের গুণের পরিচয় দিয়া, জিজ্ঞাসা করিলেন, বৎসে। এই চারি বর উপস্থিত, তুমি কাহাকে মনোনীত কর। শুনিয়া, ত্ৰিভুবনসুন্দরী লজ্জায় অধোমুখী ও নিরুত্তর হইয়া রহিল।

ইহা কহিয়া, বেতাল জিজ্ঞাসা করিল, মহারাজ! কোন ব্যক্তি, যুক্তিমাৰ্গ অনুসারে, ত্ৰিভুবনসুন্দরীর পতি হইতে পারে। রাজা কহিলেন, যে ব্যক্তি বস্ত্ৰ নিৰ্মাণ করিয়া বিক্রয় করে, সে জাতিতে শূদ্র; যে ব্যক্তি পশুপক্ষীর ভাষা শিক্ষা করিয়াছে, সে জাতিতে বৈশ্য; যে সমস্ত শাস্ত্রে পারদর্শী হইয়াছে, সে জাতিতে ব্ৰাহ্মণ; কিন্তু শস্ত্ৰবেধী ব্যক্তি কন্যার সজাতীয়; সেই, শাস্ত্র ও যুক্তি অনুসারে, এই কন্যার পরিণেতা হইতে পারে।

ইহা শুনিয়া বেতাল ইত্যাদি।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *