Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বুদ্ধিমানের সাজা || Buddhimaner Saja by Sukumar Ray

বুদ্ধিমানের সাজা || Buddhimaner Saja by Sukumar Ray

আলি শাকালের মত ওস্তাদ আর ধূর্ত নাপিত সে সময়ে মেলাই ভার ছিল। বাগদাদের যত বড় লোক তাকে দিয়ে খেউড়ী করাতেন, গরিবকে সে গ্রাহ্যই করত না।
একদিন এক গরীব কাঠুরে ঐ নাপিতের কাছে গাধা বোঝাই ক’রে কাঠ বিক্রী করতে এল। আলি শাকাল কাঠুরেকে বলল, “তোমার গাধার পিঠে যত কাঠ আছে সব আমাকে দাও; তোমাকে এক টাকা দেব।” কাঠুরে তাতেই রাজী হয়ে গাধার পিঠের কাঠ নামিয়ে দিল। তখন নাপিত বলল, “সব কাঠ তো দাও নি; গাধার পিঠের ‘গদি’টা কাঠের তৈরী; ওটাও দিতে হবে।” কাঠুরে তো কিছুতেই রাজী হলো না; কিন্তু নাপিত তার আপত্তি গ্রাহ্য না ক’রে গদিটা জবরদস্তি ক’রে কেড়ে নিয়ে, কাঠুরেকে এক টাকা দিয়ে বিদায় করে দিল।
কাঠুরে বেচারা আর কি করে? সে গিয়ে খালিফের কাছে তার নালিশ জানাল। খালিফ বললেন, “তুমি তো ‘গাধার পিঠের সমস্ত কাঠ’ দিতে রাজী ছিলে; তবে আর এখন আপত্তি করছ কেন? কথামতই তো কাজ হয়েছে।” তারপর কাঠুরের কানে ফিস্‌ ফিস্‌ ক’রে কি জানি বললেন; কাঠুরেও মুচ্‌কি হেসে, “যো হুকুম” বলে সেলাম ঠুকে চলে গেল।
কিছুদিন বাদে কাঠুরে আবার নাপিতের কাছে এসে বলল, “নাপিত সাহেব, আমি আর আমার সঙ্গীকে খেউড়ী করার জন্য তোমাকে ১০ টাকা দেব, তোমার মত ওস্তাদের হাতে অনেক বেশি টাকা দিয়েও খেউড়ী হ’তে পারলে জন্ম সার্থক হয়। তুমি কি রাজী আছ?” নাপিত তো খোসামোদে ভুলে, কাঠুরেকে কামিয়ে চট্‌পট্‌ দিল; তারপর তাকে বলল, “কৈ হে তোমার সঙ্গী?” কাঠুরে তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে তার গাধাটি এনে হাজির করল। নাপিত তো বেজায় চটে গিয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে, ঘুষি বাগিয়ে বলল, “এত বড় বেয়াদবি আমার সঙ্গে! সুলতান, খালিফ, আগা, বেগ যার হাতে খেউড়ী হবার জন্য সর্বদাই খোসামোদ করে, সে কিনা গাধাকে কামাবে! বেরোও এখনি এখান থেকে!”
কাঠুরে নাপিতের কথার কোন উত্তর না দিয়ে সটান গিয়ে খালিফের কাছে হাজির। খালিফ তার নালিশ শুনে আলি শাকালকে ডেকে পাঠালেন। নাপিত এসেই হাত জোড় করে বলল, “দোহাই ধর্মাবতার! গাধাকে কি কখনও মানুষের সঙ্গী ব’লে ধরা যেতে পারে?” খালিফ বললেন, “তা’ না হ’তেও পারে, কিন্তু গাধার পিঠের গদিও কি কখনও কাঠের বোঝার মধ্যে ধরা যেতে পারে? তুমিই একথার জবাব দাও।” নাপিত তো একেবারে চুপ! কিছুক্ষণ বাদে খালিফ বললেন, “আর দেরি কেন? গাধাকে কামিয়ে ফেল; কথা-মত কাজ না করতে পারলে তার উচিত সাজার ব্যবস্থা হবে জানই তো।” নাপিত বেচারা আর করে কি? গাধাকে বেশ ক’রে খুর বুলিয়ে কামাতে লাগল। সে তামাসা দেখবার জন্য চারিদিকে ভিড় জমে গেল। কামান শেষ হতেই নাপিত অপমানে মাথা হেঁট ক’রে বাড়ি পালাল। কাঠুরেও নেড়া গাধায় চ’ড়ে নাচ্‌তে নাচ্‌তে বাড়ি পালাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *