Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বুকপকেটে বিশ্ব ঘোরে || Sanjib Chattopadhyay

বুকপকেটে বিশ্ব ঘোরে || Sanjib Chattopadhyay

বুকপকেটে বিশ্ব ঘোরে

একটু পরেই আসানসোল। দিল্লি অনেক দূর। ঊর্ধ্বশ্বাসে ট্রেন ছুটছে। মাঠ ময়দান পেছনে ফেলে। এতক্ষণে একটু গুছিয়ে বসা গেছে। বাক্স-প্যাঁটরা নিজেদের নিরাপদ জায়গায় স্থির। একটু-আধটু নড়ছে। অনেকদিন পরে সপরিবারে বেরিয়ে পড়া গেছে। দাদা আর বউদি সঙ্গে থাকায় এবারের আনন্দ আরও মজবুত।

বাঙ্কের পশ্চিম কোণে সেই পরিচিত বাজনা। মহিমা এতক্ষণ জানলার ধারে বিষণ্ণ মুখে বসেছিল। জানলার ধারে বসার আনন্দ, দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আনন্দ মুখে কেন ফুটছিল না সেই গবেষণায় এতক্ষণ ব্যস্ত ছিলুম। ছোট্ট একটা মিনিট খানেকের ঝগড়া কাল রাতে হয়েছিল। সে। এমন কিছু নয়। রুটিন ঝগড়া। পেরেক আর হাতুড়ির সম্পর্ক। যত ঠুকবে জম্পেস হয়ে দেয়ালে ঢুকবে। জীবনের বৃহৎ লীলা-চিত্র নিরাপদে ঝুলবে।

মহিমা লাফিয়ে উঠল, ওই তো, ওই তো! যেন হারানো ছেলের কান্না শুনেছে! এমনই বেহুশ উত্তেজনা, আমার কোলের ওপর দাঁড়িয়ে মাথার ওপর থেকে একটা বাচ্চা ব্যাগ টেনে নামাল। তখনও বাজছে। একটা গানের লাইন পড়তে পড়তে খুলছে।

দাদা বললে, মা, শিবের বুকে দাঁড়িয়েছিলেন, এ মা, কোলের ওপর। মহিমার কী মহিমা!

হ্যালো কে? মিন্টু! কী হয়েছে! অ্যাাঁ, সব জানলা খোলা! আকাশে কালো মেঘ! এইটটি কিলোমিটার? ওরে মিন্টু রে! কী হবে রে! এই লোকটাকে নিয়ে আমি আর পারি না রে!

মহিমা প্রায় অচৈতন্য। আমার কোলে। ফোন আমার কানে। সোঁ সোঁ বাসের শব্দ। মহিমা কথা বলছে। উঠে বসেছে। খোঁপা ভেঙে গেছে। টিপ নেমে এসেছে নাকের ডগায়। দেখাচ্ছে অবশ্যই দারুণ। প্রথম কথা, সব জানলা বন্ধ করার দায়িত্ব কে নিয়েছিল?

মনে নেই। তুমি চেক করলে না কেন?

তোমার ওপর সেন্ট পারসেন্ট বিশ্বাস।

বয়েস হয়েছে।

তিন বছরও বিয়ে হয়নি, এরই মধ্যে বয়েস হয়ে গেল!

ম্যারেড ম্যানদের বয়েস এক বছরে দশবছর বাড়ে।

আলো কোথায় কোথায় জ্বেলে রেখে এসেছ?

বাথরুমে তো অবশ্যই।

মহিমা দাদাকে খুব হতাশ হয়ে বললে, দাদা! এটাকে আপনার আমেরিকায় নিয়ে যান। এ থাকলে দেউলে হতে হবে।

দাদা বললে, তোর এটা কাদের ফোন! ভগবানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় না?

এটা বিএসএনএল। যেভাবে নেটওয়ার্ক ছড়াচ্ছে, আর কিছুদিন পরে ভগবানকেও ধরা যাবে।

মহিমা বললে, ফোনটা দাও, আমি মিন্টুর সঙ্গে কথা বলব।

কী কথা বলবে?

তুমি বুঝতে পারছনা, দক্ষিণের জানলায় কী সাংঘাতিক ছাট আসে। আমার গীতবিতান, আমার হারমোনিয়াম, বিছানা, বালিশ, কার্পেট। সর্বনাশ হয়ে গেল।

ফোন বেজে উঠল। হ্যালো। কে মিন্টু! তুই কোথায়? আমাদের বাড়িতে! বাড়ির ভেতরে ঢুকলি কী করে? তালা খোলা ছিল? তার মানে? দরজায় তালা দেওয়া হয়নি! চাবি আর তালা বাইরের রকে শুয়ে আছে! তোর দাদাকে আমার কিছু বলার নেই। এক পিসই জন্মেছিল। তুই না থাকলে কী হত মিন্টু!

মহিমা বললে, মিন্টু না থাকলে কী হত?

মিন্টু থাকলেও কিছু হত না, যদি না এই পরম বন্ধুটি সঙ্গে থাকত, বিএসএনএল; অনর্গল গল, গল।

তুমি এত ভুলে যাও কী করে?

দাদা বললে, ওটা আমাদের বংশের ট্রাডিশন। আমার কেসটা শুনবে? বিয়ের পর প্রথম জামাইষষ্ঠী। সেজেগুঁজে সন্ধেবেলা ভুল শ্বশুরবাড়িতে ঢুকলুম। সামনেই এক প্রবীণা। মা, বলে প্রণাম। তিনি একটু অবাক হলেন। স্মার্টলি বললুম, জামাইকে চিনতে পারছেন না? তিনি। বললেন, আমার মেয়েই নেই তো জামাই! এমন সময় তাদের কাজের মেয়েটি ঘরে এল। আমার আপাদমস্তক দেখে বললে, তোমার শ্বশুরঘর তো ছ-নম্বর ট্যাংকির কাছে। সাক্ষীগোপাল বাবুর বাড়ি।আমার শ্বশুরবাড়ি সল্টলেকে হলেও দ্বিতীয় বৃন্দাবন। আমার শালার নাম, গিরিগোবর্ধন। যাকে বিয়ে করেছি, তার নাম সত্যভামা। ওর নামে একটা ছড়া আছে, সত্যভামা দেয় হামা। আমেরিকায় সবাই ডাকে, ধামা। সায়েবরা বলে ঢ্যামা।

রাত নেমেছে। বাইরের দৃশ্য অদৃশ্য। ট্রেনের যা কাজ! চলছে তো চলছেই। ঘরে ঘরে নানা জাতির নানা ভাষার লোক। কামরার আলোর জোর বেড়েছে। সকলেরই চোখ নিদ্রালু। বউদি আর মহিমা যেন দুই বোন। জানলার পাশে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আছে। পাশের কুপেতে কে একজন। হেঁড়ে গলায় ভীষণ চেল্লাচ্ছে। কোন কোম্পানির সেলফোন কে জানে! টাওয়ার পাচ্ছেনা।

দাদা বললে, তোর ফোনে ভূপাল ধরা যাবে?

উত্তর আমাকে দিতে হল না। দিলেন রেলকর্মী। জিগ্যেস করতে এসেছিলেন, ভেজ অর নন। ভেজ? হাসি-খুশি, তরতাজা এক যুবক। অপূর্ব গলায় গান গেয়ে উঠলেন, প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে কে কোথা ধরা পড়ে কে জানে। বিএসএনএল-এর লাইন রেললাইনের মতো দেশ হতে দেশান্তরে জীবন হতে জীবনে সঞ্চারিত। বসুধৈব কুটুম্বকম। এত সুন্দর গলা! গান করেন না কেন? যুবকের উত্তর, চাকার গান শুনি।

এ সুখধরণীতে কেবলই চাহ নিতে, জান না হবে দিতে…।

ছোট্ট যন্ত্রের নীল চোখে আবার বার্তার কম্পন। মিন্টুর গলা, বউদি! তোমরা কত দূরে?

আমরা তোমার হাতের মুঠোয়। বুকপকেটে বিশ্ব ঘোরে। আঙুলে আকাশ। যাঃ, ক্যাশকার্ড ফুরোল। কথা কি ফুরবার উপায় রেখেছেন বিএসএনএল! কণ্ঠ রিফিল সর্বত্র সহজলভ্য। ঘণ্টা দরে দোকানে দোকানে। ভরো আর কও। অফুরন্ত কথা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *