পাহাড়ের নামগুলো মনে হয় কতয় না বিশেষ,
নাম শুনে জাগে মনে মায়াময় কুহকের বিস্ময় আবেশ।
কেউবা অরুণোদয়, কেউ বিন্ধ্যাচল,
কেউবা ধবলগিরি, কেউ অস্তাচল,নামের নেই শেষ।
কোথাও ত্রিশূল দেখি, কোথাও কেদার,
কোথাও কাঞ্চনগিরি কেউ পথ আছে জুড়ি,
কোথাও সে নাম ধরে শুভ্র হিমালয়।
কোথাও নন্দা দেবী, কোথাও কামেট,
কোথাও মুকুট নামে পরিচিত বেশ।
কোথাও ত্রিশূল সে যে কোথা পদ্মনাভ
কোথাও কেদারনাথ শৃঙ্গ, কোথাও ঋষি পাহাড়
কোথাও সে সরস্বতী কোথাও শ্রী কৈলাস,
অগণিত নাম জেনে জাগে উল্লাস।
মনে হয় যেন সেইসব পাহাড়ের আদিগন্ত স্রোতে,
সৃষ্টির প্রথম প্রভাতে, কোনো এক বাঁশিওয়ালা
খেলা করে, খেলা করে যায় অবিরল,
পৃথিবীর প্রথম সোপানে, একান্ত গোপনে,
সৃষ্টিসুখের এক পরম কল্যাণে, প্রভাত বেলায়।
যাদু করে রেখে দেয় অশান্ত সমুদ্র ঢেউ সেই নিরালায়,
স্রষ্টার অতি ক্ষুদ্র কোনো এক গুপ্ত ঈশারায়,
স্থবির পাহাড় জাগে চিরায়ত জীবনের দৃপ্ত মহিমায়।
নন্দনকানন রচিত হয় পাহাড়ের কোণায় কোণায়।
পাখি ডাকে ফুল ফোটে প্রজাপতি আসে ছুটে অচিন্ত্য শোভায়।
স্তব্ধ হয়ে চেয়ে দেখি আকাশের নীল নীলিমায়
পাহাড়ের তরঙ্গের পর তরঙ্গের ঢল,
যেন ঊর্দ্ধমুখে চেয়ে আছে মৈনব্রতী ঋষিদের দল,
অবাক আকাশ আর অগণ্য গ্রহ তারা হয়েছে বিহ্বল!
যখন প্রভাত কালে বরফের পাহাড়ের রজত হিমানী ঢালে
সোনালী কিরণে রোদ করে ঝলমল ,
মনে হয় , যেন এক রাজসিংহাসন অবিকল,
পাতা আছে স্রষ্টার ক্লান্ত হয়ে বসিবার আসন বিরল ।
আদিগন্ত পরিব্যাপ্ত সোনা মাখা সবুজ স্বপন!
বিহ্বল মনে জাগে অপার আনন্দের এক বিপুল সম্ভ্রম।।
আরপারে কবেকার স্থির হয়ে বসিবার কুহক মায়ার সেই কুবের ভবন।
পৃথিবীর যত কিছু আদরের সোহাগের অমিয় রতন,
চিরন্তন জমা করে ভারে ভারে পাহাড়ের সুনীল গহন।
দেবলোক হতে নামে স্নিগ্ধমাতা গঙ্গা সুরধনি
সাথে লয়ে অমৃতের ধারা অবিরল,
তোমার চরণতল ধৌত ধন্য করে দেয় এ ধরণীতল,
অসীম সোহাগ ভরে! মনে লয়ে বাসনার ধারা অবিরল।
মানস চক্ষেতে দেখি মহাদেব জটা হতে নেমে আসে জাহ্নবী প্রবল।
হে বিধাতা, অন্নদাতা, যে আছ অন্তরে তুমি ভিতরে বাহিরে
সবার হৃদয়পুরে,
যতকিছু দান তুমি দাও অবিরল,
অবিরল চেয়ে থাকি তোমার সে অপূর্ব দানে,
অযুত যুগের স্তব্ধ বিস্ময়ের পানে, আনতনয়ানে।
কান পেতে শুনি সেই সুমহান গান, জ্যোতির্লোক হতে
ভেসে আসে, ভুবন ভোলানো সেই মহাওঙ্কার তান
ভুবন মোহন সুরে বাজে সে হৃদয় পুরে সেই সামগান , সৃষ্টিসুখের সেই অনাদি অনন্ত এক মহাভারতের গান,
কালের কপোলতলে, যার কথা লেখা থাকে অমৃতসমান।।