স্বাধীনতা তোমাকে হাজার সেলাম।
তোমার পতাকার আড়ালে ঢাকা পড়েছে কত মৃতদেহ
এতদিন যাদের কপালের ঘাম আর রক্তে জমি হয়েছে উর্বর –
চাষ হয়েছিল তাদের গতর নিঙড়ে, রক্ত চুইয়ে , অথচ –
তাদেরই নেই সে ফসলের অধিকার। তাদের কালো চামড়ায় লেখা ভুখার ইতিহাস।
স্বাধীনতা তোমায় হাজার সেলাম
ওই নিম্ন বংশোদ্ভূত – দলিতের তোমার কলে জল খাওয়া অপরাধ
ভালোবাসার অধিকার নেই তোমার রক্তে উদ্গতকে
নেই কোন প্রবেশাধিকার তোমার পথে দীপ্ত পদেক্ষেপে চলার কিংবা উপবেশনের
অথচ ওদের শক্তিতেই তুমি শক্তিধর,শোষণ করেই বিত্তশালী, তোমার অঢেল টাকার পাহাড় ।
স্বাধীনতা তোমায় হাজার সেলাম।
ওই যে দলিত কন্যা তোমার বিধানে ভোগের সামগ্রী
তোমার সেবাদাসী,অসময়ে যৌন ক্ষুধার খাদ্য –
প্রয়োজনে বলাৎকার,যোনিতে লৌহ শলাকা কিংবা
সারা গায়ে ক্ষমতার কলংক নিপীড়ন। প্রয়োজনবোধে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপে মৃত্যু,
স্বাধীনতা তোমায় হাজার সেলাম।
কফি ক্ষেতে যে হাজার শ্রমিক কফি চাষ করে
নিজেকে পুড়িয়ে,পুড়িয়ে নিজ বর্ণের রঙে পরিণত করে কফি ,
সাদা চামড়া উল্লসিত,দম্ভের হাসি
সে কফিতে নেই সেই নিগ্রোর অধিকার।
পুড়ছে মানুষের মূল্যবোধ,বিবেক,মনুষ্যত্ব,পুড়ছে অধিকারবোধ আজ ,
হে স্বাধীনতা তোমায় হাজার সেলাম।
চেয়ে দেখো এখনো বেঁচে আছে –
মায়কোভস্কি হিকমত নেরুদা আরাগঁ এলুয়ার
জ্বলজ্বলে চোখে দীর্ঘ প্রত্যাশায় চেয়ে আছে –
চে , গুয়েভারা ,নেলসন ম্যান্ডেলা আর সুভাষের আদর্শ বুকে রেখে –
তোমাদের কবিতাকে আমরা হেরে যেতে দিইনি।
কবিতা কখনো মরে না, নিরস্ত্র হলেও অসীম শক্তি
কবিতা নির্ভীক,কবিতাই মহাবিল্পবী, কবিতা স্বাধীন
বন্দুক মানে না, কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে মৃত্যুর পরোয়া করে না
বুটের ঠোক্করে হাসে,বরফের ট্রেতে শুয়ে শব্দ চয়ন করে
মাথার খুলিতে পিস্তল ঠেকালে প্রশ্ন তোলে – মৃত্যু কি ?
মৃত্যুঞ্জয়ী কবিতার আমরাই একেকটি দামাল সন্তান ।
দাবিংশ শতকের তাবৎ বিশ্বের কবিরা
লোরকার মতো বীর বিক্রমে প্রস্তুত থাকুন
হত্যা করুক,ধর্ষণ করুক, স্বাসরোধে লাশ করুক
তবুও সত্যের পথে কখনও থমকে যাবনা ।
আমাদের কলমই তো একেকটি স্টেনগান,মেশিনগান
স্বাধীনতা হস্তগতে মৃত্যুভয়ে আমরা কখনোই ভীত নই।
আমি তো জানি কবির মৃত্যুনেই,অমরত্বের সন্তান
মাটিতে ,মাটিতে ,সবুজে সবুজে ,শতাব্দীতে শতাব্দীতে
আমি নতুন বিপ্লবের গান হয়ে,কবিতা হয়ে –
যুগে,যুগে বিপ্লবী হয়ে তোমাকে পাওয়ার জন্যে ফিরে আসবই হে স্বাধীনতা।