পুণ্য নগরে রঘুনাথ রাও
পেশোয়া – নৃপতি – বংশ
রাজাসনে উঠি কহিলেন বীর ,
‘ হরণ করিব ভার পৃথিবীর –
মৈসুরপতি হৈদরালির
দর্প করিব ধ্বংস ।’
দেখিতে দেখিতে পুরিয়া উঠিল
সেনানী আশি সহস্র ।
নানা দিকে দিকে নানা পথে পথে
মারাঠার যত গিরিদরি হতে
বীরগণ যেন শ্রাবণের স্রোতে
ছুটিয়া আসে অজস্র ।
উড়িল গগনে বিজয়পতাকা ,
ধ্বনিল শতেক শঙ্খ ।
হুলুরব করে অঙ্গনা সবে ,
মারাঠা – নগরী কাঁপিল গরবে ,
রহিয়া রহিয়া প্রলয় – আরবে
বাজে ভৈরব ডঙ্ক ।
ধুলার আড়ালে ধ্বজ – অরণ্যে
লুকালো প্রভাতসূর্য ।
রক্ত অশ্বে রঘুনাথ চলে ,
আকাশ বধির জয়কোলাহলে —
সহসা যেন কী মন্ত্রের বলে
থেমে গেল রণতূর্য !
সহসা কাহার চরণে ভূপতি
জানালো পরম দৈন্য ?
সমরোন্মাদে ছুটিতে ছুটিতে
সহসা নিমেষে কার ইঙ্গিতে
সিংহদুয়ার থামিল চকিতে
আশি সহস্র সৈন্য ?
ব্রাহ্মণ আসি দাঁড়ালো সমুখে
ন্যায়াধীশ রামশাস্ত্রী ।
দুই বাহু তাঁর তুলিয়া উধাও
কহিলেন ডাকি , ‘ রঘুনাথ রাও ,
নগর ছাড়িয়া কোথা চলে যাও ,
না লয়ে পাপের শাস্তি ? ‘
নীরব হইল জয়কোলাহল ,
নীরব সমরবাদ্য ।
‘ প্রভু , কেন আজি’ কহে রঘুনাথ ,
‘ অসময়ে পথ রুধিলে হঠাৎ !
চলেছি করিতে যবননিপাত ,
জোগাতে যমের খাদ্য ।’
কহিলা শাস্ত্রী , ‘ বধিয়াছ তুমি
আপন ভ্রাতার পুত্রে ।
বিচার তাহার না হয় যজ্ঞদিন
ততকাল তুমি নহ তো স্বাধীন ,
বন্দী রয়েছ অমোঘ কঠিন
ন্যায়ের বিধানসূত্রে ।’
রুষিয়া উঠিলা রঘুনাথ রাও ,
কহিলা করিয়া হাস্য ,
‘ নৃপতি কাহারো বাঁধন না মানে —
চলেছি দীপ্ত মুক্ত কৃপাণে ,
শুনিতে আসি নি পথমাঝখানে
ন্যায়বিধানের ভাষ্য ।’
কহিলা শাস্ত্রী , ‘ রঘুনাথ রাও ,
যাও করো গিয়ে যুদ্ধ !
আমিও দণ্ড ছাড়িনু এবার ,
ফিরিয়া চলিনু গ্রামে আপনার ,
বিচারশালার খেলাঘরে আর
না রহিব অবরুদ্ধ ।’
বাজিল শঙ্খ , বাজিল ডঙ্ক ,
সেনানী ধাইল ক্ষিপ্র ।
ছাড়ি দিয়া গেলা গৌরবপদ ,
দূরে ফেলি দিলা সব সম্পদ ,
গ্রামের কুটিরে চলি গেলা ফিরে
দীন দরিদ্র বিপ্র ।