বাবারা এমনও হয়
আমি বাইশ বছর অবধি যাদের নিজের মা, বাবা জানি…যারা আমায় ভীষণ ভালোবাসে..এক মুহূর্ত চোখের আড়াল হলে আমাকে ব্যস্ত করে তোলে ..তারা নাকি আমার মা বাবা নন।
আমার সুপার হিরো বাবা আমার মায়ের মৃতদেহর সামনে কি বলছেন!!
কলেজ থেকে প্রায় ছুটতে ছুটতে বাড়িতে ফিরছিলাম।বাবা ফোন করে জানাল রুমি তোর মা আর নেই। তাড়াতাড়ি বাড়ি আয় মা।
বাস থেকে নেমে কোনো রিক্সা না পেয়ে ..ছুটতে ছুটতে বাড়ির দরজায় হাঁফাচ্ছিলাম তখনই বাবার মুখে ভয়ঙ্কর কথাগুলো শুনলাম।
তখন ভাবছি মা ঘুমিয়ে আছে।আর বাবা কোনো নাটকের সংলাপ বলছে। বাবা মাঝে মাঝে নাটক করত।মা হয়ত মৃত সৈনিকের পাঠ করছে।
হঠাৎ দেখি পাশের ঘরে কত লোকজন।মাসী ,মেসো সবাই কাঁদছে।
মাসী বাবাকে বলছে জামাইবাবু আপনি এটা ভালো করেন নি।
এতদিন যখন রুমিকে বলেন নি রুমি আপনাদের সন্তান নয় তাহলে দিদিকে দুদিন ধরে কেন বলছিলেন সব বলে দেবেন। আমার দিদি রুমিকে এত ভালোবাসে তাইত চলে গেল।
বাবা মাসীকে রেগে বলে তোরা কি ভাবছিস আমি রুমিকে ভালোবসি না!!!
আসলে কি জানিস আমি রুমিকে ঠকাতে চাই নি।
আমি দরজার বাইরে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে তা নিজেও জানি না।
এদিকে মায়ের মৃত্যু আবার আমি বাবা ও মায়ের পালিতা মেয়ে। একসঙ্গে এত ঘটনা ভাবতেই পারছিলাম না।মাকে জড়িয়ে গিয়ে কাঁদব পা টাই নড়ছিলো না।
এবার আমার সুপার হিরো বাবা বলে তোর দিদিতো বাচ্চাটাকে নিয়ে ছিল,আর এখন দেখ সব দায়িত্ব আমার কাঁধে চাপিয়ে ডাং ডাং করে চলে গেল।
আমি ভাবছিলাম মার চেয়ে বাবাকে বেশি ভালোবাসি আমি।আর আমি বাবার বোঝা হয়ে গেছি।
উফ্ একদিনে আমার পৃথিবীটা উলট পালট হয়ে গেল।
আর যখন বাবা ও মায়ের ঝগড়া হতো …আমিতো বাবার দলেই থাকতাম।
মনে মনে ভাবি *বাবারা এমনও হয় হয়ত।সব সংসারের দায়িত্ব মা দেরকে সামলাতে হয়।
মাসী বললো একবার ভাবুন জামাইবাবু …
রুমির জন্ম মুহূর্তে মা মারা যাওয়ার সাথে সাথে দাদা মেয়েকে আপনাদের দিয়ে কানাডা চলে গেল।
বাবা বলছে আসলে মেয়ের দায়িত্ব নেবার ভয়ে মেয়েকে ফেলে দিয়ে চলে গেল।
সেটা বলবেন না জামাইবাবু তখন আপনাদের সন্তান হবে না বলে বেশ মুশরিয়ে ছিলেন।
সন্তান পাওয়ার পর আপনারা খুব খুশিতে ছিলেন।
খুশিতে ছিলাম তো বটে শালী।
কিন্তু রুমিকে আমরা দত্তক নিইনি তো। হিসাব মতো ওর বাবাতো আমি নই।
আমিও কি রুমির মাসী হই,!!
ওরতো পিসি হই!!
তুই ভাবছিস না আজ বড় হয়েছে রুমি ,ওরতো জানা উচিৎ ওর আসল বাবা কে!!!
সেইজন্য তোর দিদি আমাকে ছেড়ে যাবে!!
আচ্ছা জামাইবাবু অত চিন্তা করবেন না। রুমিতো আমার বোনঝি না হোক ভাইঝিতো বটে।
তারপর চুপচাপ পরিবেশ। আমি মুখ বুজে কেঁদে চলেছি।
বাবা হঠাৎ চমকে যায় আমাকে দেখেই।
আমায় জড়িয়ে কাঁদতে থাকে।
আমি শোকে পাথর হয়ে যায়।
*বাবারা এমন ও হয় মনে মনে ভাবতে থাকি।একজন আসল বাবা তিনি কানাডায় আছেন।আরেকজন বাবা আমাকে জড়িয়ে কাঁদছেন তার সাথে আমার রক্তের কোন সম্পর্ক নেই।
আমি নিজের ঘরে গিয়ে খুব কাঁদলাম।সবাই বলছে মায়ের মুখে আগুন দিতে আমাকে শ্মশানে যেতে হবে।। বাবা বলল রুমিকে জোর করার দরকার নেয়। মুখাগ্নি করবে বাবার ভাইপো। আমিতো দে বাড়ির মেয়ে আমার পদবীতো রাহা জোর করে পিসি পিসাকে বাবা ও মা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার পদবী নেই আমার দুটো বাবা থাকতেও কোন অধিকার নেই।
আমার বাবা দেখছি…মা মারা যাবার সাথে সাথে কেমন পাল্টে গেল এক লহমায় ।আমাকে দিয়ে মুখাগ্নি করাবে না!!
চুপচাপ ছিলাম আমি।বাবাকে বুঝতে দিইনি আমি সব জানি।
মায়ের কাজের দিন বাবা ,মাসী কেউ আমাকে খুঁজে পায় না । আমি মায়ের কাজ করতে চাই না ।বাবাকে বললাম তোমার ভাইপো সব করুক। আমিতো তোমার কেউ না। আমার মায়ের মুখাগ্নির অধিকার যখন নেই তখন পিসির কাজ ভাইঝি কি করে করবে!!!
বাবা চমকে গিয়ে বলে তুই কি সেদিন সব শুনেছিস মা!
তুমি আমাকে মেয়ে না ভাবতে পারো তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিতে পারো। আমি তোমাকে বাবা হিসেবে জানি। তুমি আমার সুপার হিরো বাবা।আর পড়াশোনা শেষ করে নিয়ে একটি চাকরি পাই তুমি আমাকে ত্যাগ করতে পারো।
তবে আপদে বিপদে ভালোবাসাতে তোমার রুমি তোমার জন্য হাজির থাকবে পি…সা।
বাবা বলে টেনে এক চড়।তুই চলে গেলে আমি কার কাছে থাকব!!
কেন তোমার ভাইপো!!
ঠিক আছে মা আমি চলে গেলে তুই সব করবি।
এখন আমি বিবাহিত বাবা,ছেলে,বর নিয়ে সুখের জীবন।
ফেসবুকে মাঝে মাঝে খুলে দেখি আমার আসল বাবা , কানাডিয়ান মা ও ভাই বোনদের। ইচ্ছে হতেই একটি ফেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়েছিলাম।উনি আমাকে গ্রহণ করতেই আমার কিছু গল্প ট্যাগ করে দিয়েছিলাম।
একদিন উনি মেসেঞ্জারে লিখেছেন তুমি কে মা? তোমার প্রোফাইলে আমার দুই বোনের ছবি দেখলাম।
তার উত্তরে হা হা হা করে চোখ ভিজিয়ে হাসি দিলাম।
লিখলাম তোমার রক্ত।
Khub valo