Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বাবা উপহার || Samarpita Raha

বাবা উপহার || Samarpita Raha

কাকু তাড়াতাড়ি দুই প‌্যাকেট বিরিয়ানি দাও।
কিসের নেবে দোকানদার প্রশ্ন করে লালিকে?
লালি একটু অন্যমনস্ক ছিল।কথার উত্তর দিল তাড়াতাড়ি দাও!
দোকানদার বলে তাহলে মাটন বিরিয়ানি দিচ্ছি।
না না কাকু দুটো চিকেন বিরিয়ানি দাও।
তারপর ভাবতে থাকে লালি আমার প্রথম রোজগারের টাকা। কলেজে ঢুকতেই বন্ধুদের সাহায্যে চারটে টিউশনি পেয়েছি। একমাস পড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা পেলাম।মা জানে না আমি টিউশনি করি।

লালিরা মামার বাড়ি থাকে। দাদু – দিদা আর কেউ বেঁচে নেয়।মাএকটি সন্তান ছিল বলে বাড়িটা আমাদের।

একতলা ভাড়া দিয়ে মা সংসার চালান।আগে মা চাকরি করতেন,তবে দাদু -দিদা চলে যাবার পর লালির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।লালি ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়ে।
ভাবতে ভাবতে লালি বেশ অন্যমনস্ক।
হঠাৎ দোকানদার বলে এই নাও তোমার বিরিয়ানি।
লালি দোকানদারকে বলে কত দেব
কাকু ??
দোকানদার বলে না টাকা লাগবে না
তোমারতো পেমেন্ট হয়ে গেছে।
লালি বলে কেন নেবেন না টাকা।আর আমার টাকা কে দিলেন???
ওই যে ভদ্রলোক তোমার আগে দাঁড়িয়ে ছিলেন, উনিতো দিলেন।
লালি বলে এ মা ওই ভদ্রলোক হয়তো ভুল করে দিয়েছেন। আমি তো চিনি না।
দোকানদার বলে ওই যাচ্ছেন উনি। তুমি তার সাথে বোঝাপড়া করো ।
লালি আচ্ছা বলে এক ছুট দেই।
হাঁফাতে হাঁফাতে বলে ও কাকু একটু দাঁড়ান।লালি চমকে ওঠে।উনিতো আমার ছাত্রীর বাবা!
কিছু বলবে তুমি?
আমার বিরিয়ানির দামটা আপনি নাকি দিয়ে দিয়েছেন।
হ্যাঁ দিয়েছি তো।

আরে এটা অন্যায়!!
একটু নরম সুরে বলি ,কাকু আপনি বলবেন তো।
আমি দোকানদারের সামনে অপ্রস্তুত হয়ে গেছি।
কেন আমিতো বেশ জোরেই বললাম আমার তিন প্যাকট আর তোমাকে দেখিয়ে বললাম ওরটাও ।
এমা আপনি যে সামনে ছিলেন সেটাও তো লক্ষ্য করি নি।
আসলে আমি আমার জীবনের প্রথম রোজগারের টাকায় বিরিয়ানি কিনতে গেছিলাম।হয়তো অন্যমনস্ক ছিলাম।তাই কিছু চোখে ও কানে আসেনি।
তখন লালি বলে তাহলে কাকু
টাকাটা রেখে নিন।_

হঠাৎ কাকু বলে তোমার বাড়ি কোথায়? তোমার মুখটা আমার খুব চেনা!!
লালি হাসতে হাসতে বলে তাই নাকি।
মোড়ের মাথায় এসে আমাদের দুজনের গন্তব্যস্থলের পথ আলাদা ।তাই কাকুকে আর বলা হয় নি আমি আমার মায়ের কার্বন কপি।
বাড়িতে ফিরে মাকে চমকে দিই টিউশনির কথা বলে।
মা সজোরে কান মুলে বলে আর কি কি লুকিয়েছিস বল?
মাকে যদি বলতাম একটা কাকুর টাকাতে বিরিয়ানি খাচ্ছি।
মা আছাড় তুলে মারতেন।তারপর বলতেন ভদ্রলোকের অভিসন্ধি ভালো নয়,কাল থেকে পড়াতে যাবে না।
আমি মুখে কুলুপ এঁটে হাত পা ধুয়ে বিরিয়ানি খেতে বসলাম।মা হঠাৎ বলে জানিস ভালো জিনিষ গলা দিয়ে নামে না।তোর বাবা কোথায় যে চলে গেলেন!!!
আঠারো বছর আগে আজকের দিনে বিয়ে হয়েছিল।
আচ্ছা মা আমি কোনদিন বাবার কথা জিজ্ঞেস করি নি কারণ তুমি….!
আজ আমাকে বাবার ছবি দেখাবে!!
সময় হোক দেখাব।
তারপর দিন আবার পড়াতে গেলাম।তখন টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল। ছাত্রীর শরীর খারাপ,তাই আজ পড়বে না। অগত্যা ওর সাথে বসে গল্প করছিলাম। তখন কথায় কথায় ছাত্রীর মা বলে ওনার স্বামী মিলিটারিতে আছেন।ওই কাকু হলেন এই কাকিমার দাদা।
আমার আগামী কাল পরীক্ষা তাই বাড়ি চলে আসব মনস্হির করি। কাকিমা বলে দাদা বের হবে স্কুটার নিয়ে তোমাকে পৌঁছে দেবে।
কিছু না ভেবেই বলি কাল অনার্সের পরীক্ষা আছেতো কাকিমা , বৃষ্টি থেমে গেছে মনে হয়, আমি চলে যেতে পারব।
আসলে আমার দাদার তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে, তোমার মার সঙ্গে দেখা করবে।
বলে কি কাকিমা ,এই কাকুর আমাকে পছন্দ হয়েছে।
কাকিমা আমারতো সবে কুড়ি বছর।

তাতে কি হয়েছে আমারতো আঠারোতে বিয়ে হয়েছে।
তারপর কাকিমা বলে আমার আরেক দাদার ছেলেকে দাদা মানুষ করেছেন।এখন সে ডাক্তার।
।লালি কোনো রকমে কাকুর স্কুটারে বসে। বাড়ির কাছে আসতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল
দুজনে কাক ভেজা হয়ে বাড়ির কলিং বেল টেপে। দরজা খুলতেই মা বলে তুই!!

কাকে সঙ্গে এনেছিস তুই!!!!
হ্যাঁ মা কাকু আমার পরীক্ষা শুনে দিতে এসে ভিজে গেছেন।
হঠাৎ কাকু মাকে আমার সামনেই জড়িয়ে বলে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে এসেছিলে কেন?
তুমি আবার বিয়ে করেছ শিখা?
লালি উনি তোর বাবা রে। একদিন ভুল বুঝে তাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম। তারপর আর খুঁজে পায় নি।।
লালি বলে ছোট ছোট ভুল বোঝাবুঝির জন্য তোমরা
ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হলে।আর আমার জীবন পিতৃহারা হয়ে কাটল।
আজ দাদু দিদা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন।বাইরেও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি বাবা -মার চোখে ও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে।
হঠাৎ বাবা পাওয়াতে আমি খুব আনন্দে আছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress