Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সুমিতা র কথা মতো অ্যাপ্লিকেশন দিয়েছিল সে। তবে একটা না দুটো। একটা পি.এইচ.ডি.-র আর একটা চাকরির। শেষের টা ডক্টরেট সোম এর কথায়। —–দিয়ে দাও। দুটো পোস্ট আছে । তবে অনেকেই অ্যাপ্লাই করবে। হিস্ট্রি অফ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ এর জন্য অ্যাপ্লাই কর। এটায় কম ক্যান্ডিডেট আছে। সময় মতো স্কুলেই অ্যাপয়েন্টমন্ট লেটারটা এসেছে । সেদিন ও স্কুলে বোমা পড়েছিল। তবে আগের দিনের মতো হুল ফোটানোর । সাহস হয়নি আর কারো । মুখে কুলুপ এঁটেছে সবাই। খামটা খুলে পড়ার পর বাদামী সুখবরটা। মিসেস ভাটিয়া কে মুখে না দিয়ে চিঠিটা এগিয়ে দিয়েছে। —–কি এটা?—-প্রশ্ন মিসেস ভাটিয়ার। ——পড়ো না। পড়ার পর মিসেস ভাটিয়ার উল্লাস দেখার মতো। সুখবরে সবাই হতবাক হলেও মিসেস ভাটিয়ার আনন্দে কেউ বাধ সাধেনি। কেউ কেউ বলেছে মিসেস ভাটিয়াকে —–মীরা, তুমি পড়লে,তুমি ও পাশ করতে। ——-না ভাই। পড়ার হলে নিশ্চয়ই চেষ্টা করতাম। সে চেষ্টা আমাদের নেই। ওর আছে, প্রশংসা ওর প্রাপ্য। সাত দিনেই স্কুলের পাট চুকেছে। তবে মিসেস মীরা ভাটিয়া আর মুন্নিকে ছাড়তে পারেনি বাদামী। স্কুলের ধারে কাছের একটা ছোট্ট ফ্ল্যাট এ উঠে গেছে বাদামী, সঙ্গে তাঁর রাত দিনের সঙ্গী রাম রতিয়া। খুব ভোরেই উঠল বাদামী । আজ প্রথম যাবে লেকচারারশিপে জয়েন করতে । কোন রকমে যেন দেরি না করে ফেলে । তাই রামরতিয়া কে তাড়াতাড়ি উঠিয়ে দিল ঘুম থেকে। গুয়াহাটি থেকে ট্রেন ধরে কামাখ্যা রোড স্টেশনে নামল বাদামী। এম.এ করার সময় এতো সকালে কখনো আসেনি বাদামী। আজ এগারোটায় ক্লাস। ছক কেটে নিল মনে মনে। চল্লিশ মিনিটের লেকচার। তবে আজ প্রথম দিন স্টুডেন্টদের সঙ্গে পরিচয়ের পরই পড়ার প্রসঙ্গ আসবে। মাসে মাত্র কুড়িটা লেকচার। সিলেবাসটা ভাগ করে নিতে হবে সেই হিসেবে। যাতে পরীক্ষার আগে ই সিলেবাস কমপ্লিট করতে পারে। ভাবতে ভাবতে চলছিল বাদামী। দিন কতক পর ডক্টরেট দেবব্রত সোম এর ঘরে ডাক পড়ল বাদামীর। ——নমস্কার স্যার। ——আরে এসো,এসো। পি.এইচ.ডি করার ইচ্ছা আছে তোমার? ——হ্যাঁ স্যার। অনেক সময় আছে। ——-তুমি সিলেক্টেড হয়েছ। তবে পার্ট টাইম বেসিসে। যেহেতু তুমি চাকরি করছ তাই স্কলারশিপ পাবে না। রাজি আছ? —–হ্যাঁ স্যার। স্কলারশিপ চাই না। ডক্টরেট করতে চাই। ——সাবজেক্ট কিছু ভেবেছ? কীসের ওপরে করবে? ——স্যার, আমার ইচ্ছা আছে ‘শেক্সপিয়ার অ্যাজ এ ড্রামাটিস্ট ‘ এই টপিকটা নিয়ে এগোনো। ——-বাহ্। খুব ভালো চয়েস করেছ । কিন্তু অনেক পড়তে হবে তোমাকে । প্রথমে শেক্সপিয়ার এর ড্রামা গুলো পড়তে হবে। তার ওপর সবার ‘ক্রিটিক্যাল অ্যাপ্রিশিয়েশন’ ও পড়তে হবে। ——-স্যার, আপনার গাইডেন্স পেলে আমি ঠিক পারব। —–ঠিক আছে। কবে থেকে শুরু করছ? ——আপনি আজ বললে আজই শুরু করব। ——-তুমি পারবে। তোমার ক্লাস অনুযায়ী সময়টা ঠিক করতে হবে। শেক্সপিয়রের ভালো কালেকশন আছে আমার লাইব্রেরিতে। তাছাড়া দরকারে ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে যেতে পারবে। ——-ঠিক আছে স্যার। ——-বাবা মা কে বলবে দেরি হলে চিন্তা না করতে। ——আমার মা বাবা কেউ নেই। ——স্যরি, তোমার ও দেখি আমার মতো কপাল। যাক্ গে তাহলে কাল থেকে শুরু করছ। পরদিন ঝালুকবাড়ি পৌঁছাতে বেলা একটা বেজে গেল। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনেই রোহিতের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। রোহিত অরোরা ডক্টরেট করছে। এন. কে.বি র কাছে। নবীন কুমার বরদলৈ এর কাছে। রোহিতের সঙ্গে একজন সুদর্শন পুরুষ। দুর থেকে হাত নাড়ল রোহিত। ———বাদামী একটু দাঁড়া। দুর থেকেই ছুড়ে দিল কথাটা। অগত্যা দাঁড়াতেই হলো বাদামীকে। একে সহপাঠী, তায় রোহিতের মনটা খুব ভালো । এম.এ করার সময় অনেক সাহায্য করেছে বাদামীকে। স্কুলে চাকরি করতে করতে পড়া। কতো সময় দরকারি ক্লাস এটেন্ড করতে পারেনি। সব নোটস রোহিতের কাছে পেয়ে গেছে। ——যা বলার বল।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। রহিত কাছে আসতে বাদামী বলে। ——-আরে ইয়ার দাঁড়া না। মিট মা ই বিগ ব্রাদার হরজিত সিং। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রফেসর । থার্টি প্লাস,মা ই মামেরা ভাই। এন্ড নাউ আই উইল ইন্ট্রোডিউস মা ই ক্লাস মেট গুড্ডি গুড্ডি মিস বাদামী সিং। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট এম.এ ইংলিশ। নাউ শি ইজ আ লেকচারার অব ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট। রোহিতের সেই মামেরা ভাইয়ের গদগদ দৃষ্টি আঁচড়ে পড়ল বাদামীর শরীরে। তবে সেই পুরুষ যে সুন্দর তা যে কেউ বলবে। সেই সুন্দর চেহারা কিন্তু বাদামীর মনে আঁচড় কাটতে পারে না। সে দৃষ্টির দিকে নজর ফেলতে পারে না বাদামী । কারণ ঐ দৃষ্টি শালীনতার বেড়া ডিঙোতে চায় । বাদামী তখন ই নিজেকে কঠিন আস্তরণের মোড়কে মুড়ে ফেলে। ঐ ছেলেকে পাশ কাটাতেই হবে। তাই রহিত কে বলে। —–এখন ক্লাস আছে রে রহিত । দেরি হয়ে যাবে। ——ক্লাস এর পরে আয়। ——আজ থেকে রিসার্চ শুরু করছি। ডি.এস এর কাছে যেতে হবে। ——সচ মুচ্, যা রহী হো? ঠিক হ্যয় ভাই যাও। ঐ ছেলেকে নমস্কারের উদ্দেশ্যে বাদামী দু হাত জড়ো করল। মুখে অস্ফুট নমস্কার বলল। এগারোটা চল্লিশের ক্লাস শেষ হলো। বাদামী স্যার এর কোয়ার্টার এর দিকে রওনা দিলো । ডোরবেল টিপতে ই কোকিলের ডাক শুরু হলো। এমন ও ডোর বেল আছে বাদামীর জানা ছিল না। ডক্টরেট দেবব্রত সোম দরজা খুলে বললেন, —–আরে বাদামী, এসো এসো। বাইরের ঘর থেকে ভেতরের দিকে নিয়ে চললেন বাদামীকে। ভেতরে একটা চাপা অস্বস্তি বাদামীর। কি জানি ভেতরে কেন নিয়ে যাচ্ছেন। যে ঘরে ওঁরা পৌঁছল সে ঘর দেখেই বোঝা গেল,সেটা পড়াশুনার ই ঘর।দেয়াল জুড়ে বইয়ের সারি। মাঝখানে একখানা বড়ো মাপের টেবিল আর চারদিকে গদিমোরা চেয়ার। ——-এই হলো আমার স্টাডি রুম। ডক্টরেট সোম বাদামীকে বললেন। আপনা থেকেই চোখজোড়া চলে যাচ্ছে দেওয়ালে, যেখানে বইয়ের সারি রয়েছে। একে একে দেখে চলেছে বাদামী । স্যার বললেন—শেক্সপিয়রের ক্রিটিক্যাল অ্যাপ্রিশিয়েশন এর যা বই পাবে তুলে নাও। আজ শুধু বইগুলো পড়। পরে দরকার হলে নোট করবে। পুরুষ হীন জীবন যাপন করছে বাদামী। এই বাড়ির ড্রইং রুম থেকে শুরু করে সারা বাড়িতে পুরুষ পুরুষ গন্ধ। সব মিলিয়ে ঐ গন্ধ টাই বাদামীকে তাড়া করছে। সহজ হতে দিচ্ছে না। শুধু সিগারেট নয়,আফটার শেভ লোশন, তেল,তাছাড়া স্যারের শরীরের একটা নিজস্ব গন্ধ। ডক্টরেট সোম মত্ত হয়ে গেছেন বই-এ। হেলানো চেয়ারে আঁধ শোয়া ডক্টরেট সোম। স্যারের চশমার ফাঁকের ঢেউ খেলানো চোখের পল্লব চোখে পড়ল বাদামীর। ভালো লাগল তার। কৈ এমন ভাবে কখনো দেখেনি তো! হঠাৎ ই নজরে পড়ল স্যার এর ধারাল পাতলা ঠোঁট। শরীরে কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে! ! ছিঃ ছিঃ। এ কী করছে বাদামী। মুখ বইয়ের দিকে ফিরল বাদামীর। নাঃ। বৃথা চেষ্টা। সাতখানা বই নামেই খুলে রেখেছে। আবার নজর গেল স্যারের দিকে। একমনে বই দেখছেন তিনি। ধ্যানমগ্নতার এক রুপ। চোখ ফেরাতে পারে না বাদামী। দারুণ সুন্দর তো! তিন বছরধরে দেখছে ইউনিভার্সিটিতে, এমন টা তো কখনো মনে হয় নি! স্যারের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। তাতে কয়েক গাছা চুল লেপ্টে রয়েছে। হঠাৎ ই।ডক্টরেট সোম বই থেকে মুখ তুললেন। বললেন——কি হলো!ভালো লাগছে না?জোর করে করো না। স্যারের কথায় লজ্জা পেয়েছে বাদামী। ——চা খেতে ইচ্ছে করছে। করি স্যার? —–করবে, ?করো। নো মেইড সার্ভেন্ট। সুতরাং নিজেকে করতে হবে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress