বাদামী -14
কোন হর কিষণ তা বুঝলে ও বাদামী সেই লোকটির স্ত্রীর চোখে ধরা দিতে চায় নি। তাই অন্য কথা বলেছে—- —–অল্প বয়সে তো খুব সুন্দরী ছিলেন। সে কথায় আমল না দিয়ে হাসতে হাসতে অরুনা বললেন। ——কোন হর কিষণ কে দেখলেন?আপনার না আমার? বাদামীর মুখের যে ছবি ফুটে উঠেছে তা দেখেই অরুনার মালুম হয়েছে কিছুটা। হর কিষণ এর থেকে দু বছরের ছোট অরুনা। বাবা ছিলেন রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার। একটা সাধারণ এসিস্ট্যান্ট ব্রিজ ইন্সপেক্টর এর হাতে দিতে চাননি। কিন্তু আদুরে মেয়ে স্পোর্টস ম্যান হর কিষণের চেহারা দেখেই কাবু। অতএব মেয়ের কথায় রাজি হয়ে গেলেন। অত কাছাকাছি বয়স টা যে ভালো ভালো নয় তা বুঝেছে অরুনা ,বেশ কিছু দিন পরই। যখনই কম বয়সের মেয়ে দেখেছে, স্বামীর নজর সেদিকে ছুটেছে। ——মিসেস সিং আমার দেরি হয়ে গেল। বর্তমানে ফিরে আসে অরুনা। বয়সটা কম হয়নি ,তাই মেয়েদের মুখের ভাব দেখে তার গভীরতা আঁচ করতে পারে। আর হঠাৎ ই বাদামীর ব্যস্ত হয়ে পড়াটা স্বাভাবিক মনে হয় না অরুনার। সে শুধুই চেয়ে থাকে। মেয়ে টা ঘুরপাক খাচ্ছে অরুনার মনে। কতোটা হারাতে হলে অমন নজর –কাড়া মুখের রং পাল্টাতে পারে!কিন্তু ঐ মেয়ে তো হর কিষণ এর ছেলের থেকো ও ছোট হবে। অমৃতা সিং দেখতে মন্দ নয়। বরং বলা যায় তার রূপের ঠমক আছে। কিন্তু স্বভাবের মলিনতা ওর মুখে কয়েকটা আঁকিবুকি কেটেছে। তাতেই রূপটা খোলতাই হয়নি। দাদু রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। বাবা ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার।দাদা প্রফেসর। তার পা তাই মাটিতে পড়ে না। মাটিতে পা পড়লে হয়তো পরীক্ষার ফল ভালো হতো। এটা অবশ্য অমৃতার মায়ের ধারণা। স্বামীর বদ-গুনের লক্ষণগুলো যে ফুটে উঠছে তা আঁচ করে বুক কেঁপেছে অরুনার। স্বামীর মুখখানা যতই ভালো মানুষের বলে বোধ হোক না কেন সেটা আদপে মুখোশ। স্ত্রীর সামনে ভেতরের শয়তানটাকে আঁড়াল করার প্রচেষ্টা সেটা। তা হলফ করে বলতে পারে মিসেস অরুণা সিং। জেনারেল ম্যানেজারের মেয়েকে রেখেছে শুধু মাত্র চাকরির সিঁড়ি বেয়ে ওঠার তাগিদে। মুখ বুজে থেকেছে অরুনা। শুধুই ছেলে মেয়ের সার্থে। হর কিষণ প্রাতরাশ খেতে বসেছে ডাইনিং টেবলে । সঙ্গে মেয়ে ও আছে। মেয়ে পাইয়ে দেয়ার নিতি তে বিশ্বাসী।ইচ্ছে বাবাকে দিয়ে রণ জয় করা। রণ জয়তো বটেই। ফার্স্ট ক্লাস না পেলে এম.এ.তে ভর্তি হওয়া যাবে না।কড়া ধাঁচের ইংলিশ এর হেড অফ দা ডিপার্টমেন্ট বাদামী সিং। নতুন নিয়ম করেছেন। অ্যাডমিশন টেস্টে বসতে হবে সব ক্যান্ডিডেটকে। মেয়ের ধারণা অনুযায়ী মেয়ে নাছোড়। তাই বাবা কে বলে—— ——চলো না বাবা। ইউ আর আ হ্যান্ডসাম ইয়ং ম্যান। তোমাকে দেখলে ম্যাডাম একেবারে কাত হয়ে যাবে। আই নো ইউ ক্যান ডু দিস জব। ——-আরে, আমি গেলে কি হবে?ফার্স্ট ক্লাস তো পাও নি। মুখে ঐ কথা বললে ও মেয়ের কথায় আত্মপ্রসাদ লাভের ছাপ তাঁর চোখে মুখে উপচে পড়েছে। ——-আহা!মাত্র দু নম্বর কম হয়েছে। তুমি এতো বড়ো একটা পোস্ট হোল্ড করে আছ। তোমাকে রেসপেক্ট না করে পারে ?তুমি তোমার চার্মিং স্মাইল দিয়েই ম্যাডাম কে কাত করে দেবে। সব কথা ই অরুনার কানে আসছে । মেয়ের থেকে অরুনার দৃষ্টি ফিরছে ঘরের মানুষটার দিকে। মেয়ে ঠিক ই বলেছে। তবে এতো দিন যে সব নরম মাটিতে কাজ চালিয়েছে হর কিষণ, মেয়ের কথা শুনেই বোঝে এ মাটি সে মাটি নয়। এর ধাত বেশ কড়া বলেই মনে হলো অরুনার। বেলা দশটায় অফিসের গাড়ি এসেছে। হর কিষণ চলে গেছে। একটু পরেই অমৃতার লাল গাড়িওয়ালা বয়ফ্রেন্ড্ এসেছে। গাড়ি দেখেই—–হাই মাম,আমি বের হচ্ছি, । বলেই লাস্যময়ী ছুটেছে সেই গাড়ির দিকে। অরুনা ভাবে, একেবারে বাপের স্বভাব পেয়েছে। কী হবে এই মেয়ের? *** ভিজিটিং আওয়ার্স দুটো থেকে চারটা পর্যন্ত। হর কিষণ এর বাড়ি থেকে কাল ফেরার পর থেকেই মাথায় দপদপ করছিল প্রফেসর বাদামী সিং এর। রাতে ও ঘুম হয়নি তাঁর। যন্ত্রণায় মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে। ভাবল, না আজ আর দেখা করবে না কারো সাথে। যতো বড়ো রথী-মহারথীই হোক না কেন। তাই নারায়ণ –কে ডাকে প্রফেসর বাদামী সিং। ——নারায়ণ। ডাক শুনে নারায়ণ এসেছে। ——ম্যাডাম ডাকছেন? ——দরজায় রেড লাইট জ্বালিয়ে দাও। কেউ যেন ভেতরে না আসে। ব্যাস্ত আছি বলে দেবে। ধারে কাছে কোথাও মাথা ব্যথার ট্যাবলেট পাওয়া যাবে? ——-দিন না, এখুনি এনে দিচ্ছি। টাকা টা ছোঁ মেরে নিয়ে নিলো নারায়ণ। মাথা টিপে ধরে বসে আছে বাদামী। দরজায় পায়ের শব্দ শুনে বাদামী মুখ তুললো। যাক্, নারায়ণ এসে গেছে,ভাবল। ——-‘মে আই কাম ইন? উত্তরের পরোয়া না করেই ঢুকে গেছেন এক ভদ্রলোক। তার সঙ্গে যুবতী–কন্যা। সেই মেয়ের পোষাকের ধরণ– ধারণে তার রুচি টা বোঝা গেল। সঙ্গের মানুষটি বহু দিনের কাছের লোক বাদামীর। ঢুকে ই পড়েছে ভেতরে। ঠিক সেই সময়ই নারায়ণ ওদেরকে প্রায় ঠেলে ঠুলে ঢুকলো। গুরুগম্ভীর স্বর বাদামীর। ——-উইল ইউ প্লিজ গেট আউট অফ দা রুম? নারায়ণ ওদের বাইরে যেতে বলো। – ——এ কী, বাইরে রেড লাইট দেখেন নি?যান,বাইরে যান। ঝাঁঝের সাথে নারায়ণ বলে। নারায়ণের হৈচৈ শুনে আশে পাশে অনেকেই উঁকি মেরেছে। কে এসেছে তা বুঝেই বাদামীর রাগের মাত্রাটা বেড়েছে। পুরোনো ক্ষতটা আরও দগ দগে হলো ওদের দেখার পর। ঐ মানুষটার মোটা চামড়ায় এই অপমান লাগে না,তা বাদামী জানে।